নির্মল সেনের মরদেহ আজ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে হস্তান্তর
খ্যাতিমান সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বাম রাজনৈতিক নেতা নির্মল সেনের মরদেহ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হবে। ইতোমধ্যে তাঁর মরদেহ ল্যাবএইড হাসপাতালের হিমঘর থেকে ওই বিএসএমএমইউয়ের হিমঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
নির্মল সেনের মরদেহ আজ সকাল ন’টায় তোপখানার গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কার্যালয়ে, সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব ও ১১টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ হস্তান্তরের কথা রয়েছে।তিনি এখন নেই। ভক্ত, বন্ধু আর রাজনৈতিক সহকর্মীরা তাঁকে হারিয়ে গভীর শোকাহত। তাই তো বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বুধবারও শোক জানানো হয়েছে। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন আজীবন নিরঅহঙ্কার ও নির্লোভ নির্মল সেন। ৮২ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তাঁর ভাতিজা কঙ্কণ সেন জানান, মৃত্যুর আগে নির্মল সেন চারটি ইচ্ছার কথা লিখে রেখে গেছেন। এর একটি ছিল তাঁর মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও গবেষণায় যে কোনো মেডিক্যাল কলেজে দান করা। তাঁর সেই ইচ্ছানুযায়ী মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর একটি বেসরকারী হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
তাঁর মুত্যৃতে শোক প্রকাশ করেছেন সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এছাড়া বাংলাদেশ কমিউনিস্ট লীগ (সিএলবি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠিত), গণঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, খেলাঘর ঢাকা মহানগরী কমিটি, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম শোক প্রকাশ করেছে।
স্মৃতি রক্ষায় সুপারিশ ॥ সদ্যপ্রয়াত প্রবীণ সাংবাদিক নির্মল সেনের স্মৃতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই তাঁর রচিত সব লেখনী একত্রিত করে একটি প্রকাশনা বের করার এবং নির্মল সেন স্মারক বক্তৃতা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি তাঁর কর্মময় জীবনের ওপর বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বেগম শাহিন মনোয়ারা হক, রেজা আলী, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, বিএম মোজাম্মেল হক ও আনিসুল ইসলাম ম-ল ও তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য শাহিন মনোয়ারা হক সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সাংবাদিকতার আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন নির্মল সেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বৈঠকে সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে নির্মল সেনের মৃত্যুতে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
গোপালগঞ্জ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা গোপালগঞ্জ থেকে জানান, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনীতিক নির্মল সেনের মৃত্যুতে তাঁর জন্মস্থান কোটালীপাড়াসহ গোপালগঞ্জের সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন বুধবার কোটালীপাড়ায় স্থানীয় মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শোক-র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে র্যালিটি উপজেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া সকালে জেলা শহরে প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ফোরাম ও দৈনিক যুগকথা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী, রবীন্দ্র-সঙ্গীত সম্মেলন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়ে পৃথকভাবে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা কালোব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে ৩ দিনের শোক-কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর খায়রুল আলম খান, জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রশাসক সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট কাজী আব্দুর রশীদ, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, পৌর-মেয়র রেজাউল হক সিকদার রাজু, স্থানীয় নজরুল পাবলিক লাইব্রেরীর ৬ দশকের অবৈতনিক লাইব্রেরীয়ান মোঃ মঈন উদ্দিন, উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ, উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ নাজমুল ইসলাম, জেলা কমিউনিস্ট পার্টীর সাধারণ-সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ আবু হোসেন, জেলা জাসদের সাধারণ-সম্পাদক শেখ মাসুদুর রহমান, জেলা বিএমএ সভাপতি ডাঃ আবিদ হাসান শেখ, কবি ও সাংবাদিক রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, কোটালীপাড়ার আওয়ামী লীগ সভাপতি সুভাষ চন্দ্র জয়ধর, উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, পৌর-মেয়র এইচ.এম. অহেদুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন বণিক সমিতি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
No comments