৪ বছরে ৩৩৭ কার্যদিবস- ১১ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সংসদে গেছেন ২০০ দিনের কম
নবম জাতীয় সংসদে মন্ত্রী ও সাংসদদের উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। এ পর্যন্ত ৩৩৭ কার্যদিবসে মন্ত্রী-সাংসদদের মধ্যে ১৫৩ জনের উপস্থিতি ২৫০ দিনের কম। ১১ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন ২০০ দিনেরওৎ কম।
এ বিষয়ে স্পিকার এবং সরকারি দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ সাংসদ কয়েকবার সমালোচনামুখর হলেও বিশেষ কাজ হয়নি। জাতীয় সংসদ অধিবেশনের বুলেটিন থেকে জানা গেছে, ৩০০ কার্যদিবসের বেশি সংসদে উপস্থিত থেকেছেন মাত্র চারজন মন্ত্রী। তাঁরা হলেন: ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা (৩০৯ দিন), সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ (৩০৮), কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী (৩০১) এবং রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক (৩২১)।সবচেয়ে কম সময় ১১৯ দিন উপস্থিত থেকেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার।
৩৫০ জন সাংসদের মধ্যে সরকারি দলের এ এ মারুফ সাকলানের উপস্থিতি সর্বোচ্চ। তিনি ৩৩৬ কার্যদিবস সংসদে ছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতি সর্বনিম্ন। তিনি সংসদে উপস্থিত ছিলেন আট দিন। দীর্ঘ সময় ধরে সংসদ বর্জন করে আসা বিএনপির সাংসদেরা দলীয়ভাবে ৫৪ দিন অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
দীপংকর তালুকদার ছাড়া ২০০ কার্যদিবসের কম সংসদে উপস্থিত থাকা বাকি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা হলেন: পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ১২৭, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ১৩৫, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ১৫০, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক ১৬০, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১৬৬, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৬৮, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ১৭৪, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৭৬, শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ ১৭৭ এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ১৮৮ দিন।
২০০ থেকে ২৫০ কার্যদিবস সংসদে উপস্থিত থাকা ১৯ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে আছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রমুখ।
২৫১ থেকে ৩০০ দিন উপস্থিত থেকেছেন ১২ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। তাঁরা হলেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান।
মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির ব্যাপারে মহাজোট সরকারের জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ অনেকেই একাধিকবার স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্পিকার আবদুল হামিদও বেশ কয়েকবার মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেছেন, মন্ত্রীরা অনুপস্থিত থাকলে জবাবদিহি কীভাবে আদায় হবে! ২০১১ সালের ২১ জুন মন্ত্রীদের অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে স্পিকার বলেছিলেন, ‘ষোলো আনার মধ্যে চৌদ্দ আনা মন্ত্রীই এখন সংসদে নেই।’
সাংসদদের উপস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। এ পর্যন্ত সবচেয়ে কম সময় সংসদে উপস্থিত থেকেছে বিভিন্ন দাবি তুলে সংসদ বর্জনরত বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। দলীয়ভাবে বিএনপির উপস্থিতি ৫৪ দিন। বিএনপি সাংসদ আবুল খায়ের ভূঁইয়া ৫৪ দিনই উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের উপস্থিতি ১৮ থেকে ৫১ দিনের মধ্যে।
মন্ত্রীর বাইরে মহাজোটের বেশির ভাগ সাংসদের উপস্থিতি ২০০ দিনের বেশি। ৪৯ জন সাংসদের উপস্থিতি ২০০ দিনের কম। এর মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন ১৫০ দিনেরও কম। তাঁদের মধ্যে আছেন: রওশন এরশাদ, খন্দকার আসাদুজ্জামান, মির্জা আজম, বীর বাহাদুর উশৈ সিং, চয়ন ইসলাম, শেখ হেলাল উদ্দিন, নাসিম ওসমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, খালেদুর রহমান টিটো ও সাবের হোসেন চৌধুরী।
৩০০ বা তার বেশি দিন সংসদে উপস্থিত থেকেছেন মাত্র ২৪ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় উপস্থিত থেকেছেন সরকারি দলের এ এ মারুফ সাকলান (৩৩৬), জহিরুল হক ভূঁইয়া (৩৩৩), মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (৩৩২), সুকুমার রঞ্জন ঘোষ (৩৩০) এবং এস কে আবু বাকের (৩২৯)। ৩০০ দিনের বেশি উপস্থিত থাকা বাকি সাংসদদের মধ্যে আছেন: আজিজুল হক চৌধুরী, আবদুল মান্নান, ইসরাফিল আলম, এনামুল হক, মকবুল হোসেন, আফাজউদ্দিন আহমেদ, সফিকুল ইসলাম, হাবিবুন নাহার, আ স ম ফিরোজ প্রমুখ।
No comments