পার্বত্য চুক্তির ১৫ বছর- অস্থিতিশীলতা বাড়ছে by অরুণ কর্মকার ও হরি কিশোর চাকমা
পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অবৈধ অস্ত্রবিস্তারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাহাড়ি ও বসতি স্থাপনকারী (সেটেলার) বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যকার বিদ্বেষ। ফলে সেখানে বাড়ছে অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা।
এই পরিস্থিতির মধ্যে আজ রোববার পালিত হচ্ছে পার্বত্য চুক্তির পঞ্চদশ বার্ষিকী। এ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবারই প্রথম রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসমাবেশ কর্মসূচি নিয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাঙামাটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেএসএসের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ওই কর্মসূচির কথা জানান। ঢাকায়ও অন্যান্য বছরের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জেএসএসের মধ্যে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনকামী পাহাড়িদের সঙ্গে মধ্য-সত্তরের দশক থেকে চলা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু গত ১৫ বছরে চুক্তির একটি মৌলিক বিষয়ও বাস্তবায়িত না হওয়ায় চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে। গত বছর থেকে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিও।
এই অবস্থায় চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্পর্কে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে চুক্তির বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। তবে নব বিক্রমের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন সন্তু লারমা। তিনি বলছেন, সরকারের নীতিনির্ধারক ও রাষ্ট্র পরিচালকদের সদিচ্ছার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যবিধিমালা অনুমোদন ও পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যবিধিমালা সংশোধনের মতো জরুরি বিষয়ও সম্পন্ন করা হচ্ছে না।
সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের বিভিন্ন সূত্র জানায়, চুক্তির বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে সন্দেহ ও হতাশা পার্বত্যবাসীর মধ্যে গভীরতর হয়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত প্রভৃতি কারণে তাদের মধ্যে এক অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কাও বিরাজ করছে। পার্বত্য জনগণ এখন সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরও তাদের ভরসা নেই।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতারা মনে করেন, কোনো সরকারই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করবে না। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হবে না। তাই তাঁরা স্বায়ত্তশাসনের দাবির পক্ষে পার্বত্য জনগণকে সমবেত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
হত্যা-ধর্ষণ বেড়েছে: পার্বত্য চুক্তি-পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ লোক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জেএসএসের ৮৬ জন সক্রিয় সদস্যসহ নিহত ব্যক্তির সংখ্যা কমপক্ষে ৩০০ জন। এর মধ্যে ২৬ জন সাবেক শান্তিবাহিনীর সদস্য। ইউপিডিএফের ২৪৪ জনের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন ১৩ জন। জেএসএসের (এম এন লারমা) ২৪ জন।
পার্বত্য চুক্তি-পরবর্তী সময়ে বাঙালি-আদিবাসী সংঘর্ষ হয়েছে ১৫টি। এসব সংঘর্ষের সময় ১৬ জন আদিবাসী নারী ধর্ষিত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক নারী। সংঘর্ষগুলোতে তিনজন বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ ১০ জন আদিবাসী ও চারজন বাঙালি মারা যান।
চলতি বছর রাজনৈতিক সংঘর্ষে জেএসএসের সাতজন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন। ইউপিডিএফের ১২ জন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। জেএসএসের (এম এন লারমা) একজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, রাজনৈতিক সংঘর্ষের শিকার হয়ে ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীসহ সাধারণ আদিবাসী নিহত হয়েছেন কমপক্ষে পাঁচজন।
কাপেং ফাউন্ডেশন নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের (২০১২ সাল) নভেম্বর পর্যন্ত আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংস ঘটনা ঘটেছে ৫১টি। ২০১১ সালে ঘটেছিল ৩১টি। ২০০৮ সালে ঘটেছিল মাত্র চারটি।
সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর আদিবাসী নারী ধর্ষিত হয়েছেন ২০ জন। ২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ১০ জন।
নথিপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়নি কিংবা ঘটনা অজ্ঞাত রয়েছে এমন হত্যাকাণ্ডের সংখ্যাও অনেক। অনেককে অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু অপহূত ব্যক্তি দীর্ঘদিনেও ফিরে আসেননি বা কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তিন পার্বত্য জেলায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহূত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। এর মধ্যে অনেকে মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন। অনেকে হয়েছেন নিখোঁজের তালিকাভুক্ত।
গত মঙ্গলবার রাঙামাটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেএসএসের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ওই কর্মসূচির কথা জানান। ঢাকায়ও অন্যান্য বছরের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জেএসএসের মধ্যে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনকামী পাহাড়িদের সঙ্গে মধ্য-সত্তরের দশক থেকে চলা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু গত ১৫ বছরে চুক্তির একটি মৌলিক বিষয়ও বাস্তবায়িত না হওয়ায় চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে। গত বছর থেকে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিও।
এই অবস্থায় চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্পর্কে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে চুক্তির বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। তবে নব বিক্রমের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন সন্তু লারমা। তিনি বলছেন, সরকারের নীতিনির্ধারক ও রাষ্ট্র পরিচালকদের সদিচ্ছার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যবিধিমালা অনুমোদন ও পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যবিধিমালা সংশোধনের মতো জরুরি বিষয়ও সম্পন্ন করা হচ্ছে না।
সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের বিভিন্ন সূত্র জানায়, চুক্তির বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে সন্দেহ ও হতাশা পার্বত্যবাসীর মধ্যে গভীরতর হয়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত প্রভৃতি কারণে তাদের মধ্যে এক অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কাও বিরাজ করছে। পার্বত্য জনগণ এখন সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরও তাদের ভরসা নেই।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতারা মনে করেন, কোনো সরকারই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করবে না। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হবে না। তাই তাঁরা স্বায়ত্তশাসনের দাবির পক্ষে পার্বত্য জনগণকে সমবেত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
হত্যা-ধর্ষণ বেড়েছে: পার্বত্য চুক্তি-পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ লোক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জেএসএসের ৮৬ জন সক্রিয় সদস্যসহ নিহত ব্যক্তির সংখ্যা কমপক্ষে ৩০০ জন। এর মধ্যে ২৬ জন সাবেক শান্তিবাহিনীর সদস্য। ইউপিডিএফের ২৪৪ জনের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন ১৩ জন। জেএসএসের (এম এন লারমা) ২৪ জন।
পার্বত্য চুক্তি-পরবর্তী সময়ে বাঙালি-আদিবাসী সংঘর্ষ হয়েছে ১৫টি। এসব সংঘর্ষের সময় ১৬ জন আদিবাসী নারী ধর্ষিত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক নারী। সংঘর্ষগুলোতে তিনজন বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ ১০ জন আদিবাসী ও চারজন বাঙালি মারা যান।
চলতি বছর রাজনৈতিক সংঘর্ষে জেএসএসের সাতজন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন। ইউপিডিএফের ১২ জন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। জেএসএসের (এম এন লারমা) একজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, রাজনৈতিক সংঘর্ষের শিকার হয়ে ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীসহ সাধারণ আদিবাসী নিহত হয়েছেন কমপক্ষে পাঁচজন।
কাপেং ফাউন্ডেশন নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের (২০১২ সাল) নভেম্বর পর্যন্ত আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংস ঘটনা ঘটেছে ৫১টি। ২০১১ সালে ঘটেছিল ৩১টি। ২০০৮ সালে ঘটেছিল মাত্র চারটি।
সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর আদিবাসী নারী ধর্ষিত হয়েছেন ২০ জন। ২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ১০ জন।
নথিপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়নি কিংবা ঘটনা অজ্ঞাত রয়েছে এমন হত্যাকাণ্ডের সংখ্যাও অনেক। অনেককে অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু অপহূত ব্যক্তি দীর্ঘদিনেও ফিরে আসেননি বা কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তিন পার্বত্য জেলায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহূত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। এর মধ্যে অনেকে মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন। অনেকে হয়েছেন নিখোঁজের তালিকাভুক্ত।
No comments