টেস্ট সিরিজের আক্ষেপ ছিল, লড়াই করেও সে লড়াই ধরে রাখতে না পারা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দৃঢ়চেতা পারফরম্যান্স সেই আক্ষেপ ছাপিয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছে সম্ভাবনার -সোনালি সকাল, বর্ণালি প্রত্যাশা by জালাল আহমেদ চৌধুরী
সিরিজের প্রথম সকাল এক পুলকসঞ্চারী স্নিগ্ধতা নিয়ে হাজির। টেলিভিশনের পর্দায় খুলনার রোদ খেজুরের গুড়ের মতোই মিঠেল মনে হচ্ছিল। শুক্রবারের এ ক্রিকেটীয় ভোরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার আগে মনের মধ্যে এক স্বপ্নহীনতার গুমোট মেঘ হেমন্তের আমেজ নষ্ট করছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুই দুটো টেস্ট আনন্দের পরিমাণ পরিমাপক মাত্রাচিত্রটাকে উঁচু থেকে উঁচুতে নিতে নিতে ধপাস করে ফেলে দিয়েছে। উড়াল পাখির ডানায় বেঁধা তীক্ষ্ম হতাশার তির এক দিবসী সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমর্থক প্রত্যাশাগুলোকে বড় বেশি কাঁপাচ্ছিল। পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রথমটা শুরু হতেই সেই কাঁপুনি প্রথম প্রহরেই হেমন্তের উপভোগ্য বাতাসের সঙ্গে মিশে গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং করছে। পাওয়ার প্লের প্রথম পালার ১০ ওভার পেরিয়ে গেল। ওভারপ্রতি চার রান তুলতে পারছে না সফরকারীরা। ক্রিস গেইল-সিমন্সকে দারুণভাবে আটকে রেখেছে মাশরাফি-আবুল হাসান। এর মধ্যে হাসানের বলে সিমন্সের কট বিহাইন্ডের আবেদনের সঙ্গে সারা বিশ্বের দর্শকের সঙ্গে একমত হলেন না ঘটনার সবচেয়ে কাছের দর্শক আম্পায়ার। বিচলিত সিমন্স আবার হাসানকে মিড-অফে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেন সোহাগের হাত ফসকে। মেজাজ হারিয়ে হাসান দু-তিনটা এলেবেলে বল ফেলে গেইলকে কিছুটা স্বস্তি দিলেন। সেটা ইনিংসের দশম ওভার। পরের ওভারে মাশরাফির ভেতরে আসা বলে পরাস্ত সিমন্স জড়ালেন এলবিডব্লুর ফাঁদে। দ্বাদশ ওভারে প্রথম বোলিং পরিবর্তন। হাসানের জায়গায় প্রথমবারের মতো বল করতে এলেন সোহাগ গাজী। দ্বিতীয় বলেই টেস্টের মতোই আবার গাজীর শিকার গেইল। লং অনে তামিম ইকবালের নয়ন মোহন ক্যাচ। সোহাগের পরের ওভারে কোনো রান না করেই স্যামুয়েলস রিয়াদকে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথে। খেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম ঘণ্টায় যে ছবি ফুটিয়েছে মুশফিকের দল, তাতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজটা যে জমজমাট হবে তার সম্ভাবনা প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে। ফলাফল কী হবে তার ধারণা দেওয়ার মতো বিজ্ঞ নয় এ অভাজন লিখিয়ে। শুধু এটুকুই বলতে পারি, একপেশে হবে না মোটেই সদ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা স্যামির দলের পক্ষে। প্রথম দিন শেষে চিত্রটা কী দাঁড়িয়েছিল তা এতক্ষণে অজানা নয় কারোরই। কিন্তু এ লেখা লেখার মুহূর্তে আমার পুঁজি ওই প্রথম ঘণ্টা, যেটা বুঝিয়ে দিয়েছিল অন্য রকম প্রণোদনা-সিক্ত এ সিরিজে বাংলাদেশ। সকালটাকে ভীষণভাবে অন্য রকম লাগছে। সক্ষমতার মানসিক দৃঢ়তার একটা অতিরিক্ত পারদ যেন কেউ পরিয়ে দিয়েছে প্রতিটি ব্যক্তি খেলোয়াড়ের সামগ্রিকতায়। ক্ষিপ্ততার ঝাঁজালো মাত্রায় যেখানে নাসিরের, মমিনুলের ফিল্ডিং। বিস্ফোরক লম্ফে তামিম যেভাবে গেইলকে লুফলো, ক্যাচ নেওয়ার পর যেভাবে ভারসাম্য রাখল, সেটা ইঙ্গিত দেয় স্বাভাবিকতার মাত্রা ছড়ানো কিছু একটা করার অন্তর্গত তাগিদের।
সকাল সকাল নতুন বলের কী অসাধারণ ব্যবহারই না করল মাশরাফি আর অভিষিক্ত আবুল হাসান। হ্রস্ব-সংস্করণের ক্রিকেটে বিশ্বত্রাস ওপেনার গেইল মধ্যমাঠে বর্তমান। উইকেটও যথামাত্রায় ব্যাটিংবান্ধব। তারপরও প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৪০ রান তুলতে ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গেইল-সিমন্সকে কনুই খুলতে দিচ্ছে না বোলারদের লাইন-লেন্থ আর গতির হেরফের। এভাবে চললে ঝুঁকির মাত্রা বাড়াতেই হয় পরবর্তী ওভারসমূহে আর তাতে ফসল ঘরে তুলে ফিল্ডিং সাইড। আবুল হাসান তরুণ। উদ্দীপ্ত বোলিং তাকে করতেই হবে। কিন্তু অবাক করা মাশরাফির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। দিন দশেক আগে জাতীয় লিগে দেখেছি বোলিং করতে করতে বারবার মাঠ ছাড়ছে ছেলে। হাঁটুতে ফোলা ফোলা ভাব। সেই মাশরাফি খুলনার এই সকালে কতই না প্রাণবন্তু। মনে হচ্ছিল না ওর দেহে কোনো স্পর্শকাতর এলাকা আছে। মনে আছে কোনো শঙ্কার উদ্বেগ। আজকের মাশরাফি গোছাল, নিয়ন্ত্রিত, প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর এবং আগ্রাসী। সর্বোপরি আমাদের কাঙ্ক্ষিত দর্শনানন্দের যোগ্য উপযোগ। তার ওপর সকাল সকাল সোহাগ এসে জানিয়ে গেল টেস্টে তার অভিষেকী কারিশমা মোটেই ‘ফ্লুক’ ছিল না। এক দিবসী সিরিজেও সফরকারীদের সে ভালোই ভোগাবে।
কিন্তু এসব পুরোনো কাসুন্দি আমি কেন ঘাঁটছি। ঘাঁটছি কারণ, ওই সকালটা দুই টেস্টের টানা সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটানো পরাভব বহমান ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশাগুলোকে যতটুকু অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল, সেখান থেকে অনেক বর্ণময়তার বলয়ে টেনে এনেছে। টেস্ট দুটোতে আমাদের দুর্বলতাগুলো আমদের মুখ ভেংচিয়েছে। সেই ভেংচি দেখে আমরা আমাদের দারুণ দারুণ ইতিবাচক দিকগুলোকে মনে করতে চাচ্ছিলাম না। উপরন্তু প্রতিপক্ষের বিধ্বংসী ভাবমূর্তি, বর্ণাঢ্য উত্তরাধিকার, আমাদের সাকিবের না থাকা, স্পিনার বৈরী নতুন পাওয়ার প্লে আইন, সব মিলিয়ে আমরা এ সিরিজ নিয়ে বড় কিছু ভাবতে পারছিলাম না। সিরিজের প্রথম সকাল আমাদের আগ্রহকে আমাদের আশাবাদকে আবারও জোরালো আলোর মিছিলে যুক্ত করল। ইদানীং আমরা সম্ভাবনা জাগানোর কাজটা ঘন ঘন করছি। ধারাবাহিকভাবে করছি। এ সিরিজে আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ আমাদের সঙ্গে নেই। কিন্তু আমাদের অভিষিক্তরা দারুণ করছে। সোহাগ গাজী-আবুল হাসানের সঙ্গে এবার মমিনুল-এনামুলরা যুক্ত হচ্ছে। এরা জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে আসেনি। জাতীয় দলের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে এসেছে। এসব তরুণ অনল প্রবাহের উষ্ণতায় আমাদের সম্ভাবনা জাগানোর ধারাবাহিকতা নিকট ভবিষ্যতেই সম্ভাবনা পূরণের ধারাবাহিকতায় রূপলাভ অবশ্যই করবে। সে পর্যন্ত কিছু বক্রোক্তি, কিছু কঠাক্ষ তো আমাদের ক্রিকেটকে সয়ে যেতে হবে।
সকাল সকাল নতুন বলের কী অসাধারণ ব্যবহারই না করল মাশরাফি আর অভিষিক্ত আবুল হাসান। হ্রস্ব-সংস্করণের ক্রিকেটে বিশ্বত্রাস ওপেনার গেইল মধ্যমাঠে বর্তমান। উইকেটও যথামাত্রায় ব্যাটিংবান্ধব। তারপরও প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৪০ রান তুলতে ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গেইল-সিমন্সকে কনুই খুলতে দিচ্ছে না বোলারদের লাইন-লেন্থ আর গতির হেরফের। এভাবে চললে ঝুঁকির মাত্রা বাড়াতেই হয় পরবর্তী ওভারসমূহে আর তাতে ফসল ঘরে তুলে ফিল্ডিং সাইড। আবুল হাসান তরুণ। উদ্দীপ্ত বোলিং তাকে করতেই হবে। কিন্তু অবাক করা মাশরাফির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। দিন দশেক আগে জাতীয় লিগে দেখেছি বোলিং করতে করতে বারবার মাঠ ছাড়ছে ছেলে। হাঁটুতে ফোলা ফোলা ভাব। সেই মাশরাফি খুলনার এই সকালে কতই না প্রাণবন্তু। মনে হচ্ছিল না ওর দেহে কোনো স্পর্শকাতর এলাকা আছে। মনে আছে কোনো শঙ্কার উদ্বেগ। আজকের মাশরাফি গোছাল, নিয়ন্ত্রিত, প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর এবং আগ্রাসী। সর্বোপরি আমাদের কাঙ্ক্ষিত দর্শনানন্দের যোগ্য উপযোগ। তার ওপর সকাল সকাল সোহাগ এসে জানিয়ে গেল টেস্টে তার অভিষেকী কারিশমা মোটেই ‘ফ্লুক’ ছিল না। এক দিবসী সিরিজেও সফরকারীদের সে ভালোই ভোগাবে।
কিন্তু এসব পুরোনো কাসুন্দি আমি কেন ঘাঁটছি। ঘাঁটছি কারণ, ওই সকালটা দুই টেস্টের টানা সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটানো পরাভব বহমান ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশাগুলোকে যতটুকু অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল, সেখান থেকে অনেক বর্ণময়তার বলয়ে টেনে এনেছে। টেস্ট দুটোতে আমাদের দুর্বলতাগুলো আমদের মুখ ভেংচিয়েছে। সেই ভেংচি দেখে আমরা আমাদের দারুণ দারুণ ইতিবাচক দিকগুলোকে মনে করতে চাচ্ছিলাম না। উপরন্তু প্রতিপক্ষের বিধ্বংসী ভাবমূর্তি, বর্ণাঢ্য উত্তরাধিকার, আমাদের সাকিবের না থাকা, স্পিনার বৈরী নতুন পাওয়ার প্লে আইন, সব মিলিয়ে আমরা এ সিরিজ নিয়ে বড় কিছু ভাবতে পারছিলাম না। সিরিজের প্রথম সকাল আমাদের আগ্রহকে আমাদের আশাবাদকে আবারও জোরালো আলোর মিছিলে যুক্ত করল। ইদানীং আমরা সম্ভাবনা জাগানোর কাজটা ঘন ঘন করছি। ধারাবাহিকভাবে করছি। এ সিরিজে আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ আমাদের সঙ্গে নেই। কিন্তু আমাদের অভিষিক্তরা দারুণ করছে। সোহাগ গাজী-আবুল হাসানের সঙ্গে এবার মমিনুল-এনামুলরা যুক্ত হচ্ছে। এরা জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে আসেনি। জাতীয় দলের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে এসেছে। এসব তরুণ অনল প্রবাহের উষ্ণতায় আমাদের সম্ভাবনা জাগানোর ধারাবাহিকতা নিকট ভবিষ্যতেই সম্ভাবনা পূরণের ধারাবাহিকতায় রূপলাভ অবশ্যই করবে। সে পর্যন্ত কিছু বক্রোক্তি, কিছু কঠাক্ষ তো আমাদের ক্রিকেটকে সয়ে যেতে হবে।
No comments