চরাচর-রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই by দিল মনোয়ার মনু
আমাদের দেশে বহু সংগঠনের জন্ম হয়; কিন্তু টিকে থাকে খুব কমই। অনুকূল পরিবেশ ও নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের অভাবে বহু সংগঠনই জন্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঝরে যায়; অথচ দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে সগৌরবে টিকে আছে দেশের বৃহত্তম শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা।
আর তার কারণ এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির হাল দীর্ঘ ৪৪ বছর অত্যন্ত দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সঙ্গে ধরেছিলেন দেশের শ্রেষ্ঠ শিশু সংগঠক, শিশু-কিশোরদের প্রাণপ্রিয় রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। বহু ঝড়-ঝাপটা, অত্যাচার, উৎপীড়ন, প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে এই সংগঠনকে। অসংখ্যবার এই সংগঠনকে নিয়ে তাঁকে নানা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েনি এই সংগঠন। দাদাভাইও ভেঙে পড়ার পাত্র ছিলেন না। ১৯৭১-এ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে মেলার কাকলী পাঠাগার ভস্মীভূত হয়েছে। কিন্তু আবার দাদাভাইয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। এই সংগঠনের বিপুল জনপ্রিয়তা ও সাফল্যের কারণ কী? উত্তরে বলতে হয়, এর কর্ণধার ছিলেন রোকনুজ্জামান খানের মতো সংগ্রামী, প্রগতিশীল একজন মানুষ, তিনি শিশুদের শুধু সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ জাগিয়ে তোলার কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করে গেছেন।
ষাটের দশকে দাদাভাইয়ের সম্পাদনায় মেলার যে মুখপত্র বের হতো 'কচিকাঁচা' নামে, সে সময়ের পরিক্রমায় তা হয়ে উঠেছিল কিশোরদের পাঠ্য একটি অনবদ্য পত্রিকা। তাঁর পরিচালিত ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, তা সেদিনের সব পাঠকেরই জানা। এই আসরকে কেন্দ্র করে কচিকাঁচার মেলা যেমন সংগঠিত, শক্তিশালী হয়েছে, তেমনি দেশে কবি-সাহিত্যিক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত ৫৬ বছরে যত কৃতী ছেলেমেয়ে বেরিয়েছেন এই সংগঠন থেকে, পরবর্তী সময়ে কর্মজীবনে দেশময় তাঁরা ছড়িয়ে পড়েছেন। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব, নীতিনির্ধারণ শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁরা সম্পর্কিত হয়েছেন। তাঁরা মনে রেখেছেন, জীবনের ঊষালগ্নে যুক্ত ছিলেন মেলার ভাবাদর্শের সঙ্গে। দাদাভাইয়ের একটি কথা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কচিকাঁচার মেলার অনেক সদস্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, কিন্তু কেউ রাজাকার হননি। অজ্ঞতা, সংকীর্ণতা নয়; মুক্ত দৃষ্টি, উদারতার শিক্ষা মেলার সদস্যরা পেয়েছিলেন বলে তাঁরা পরবর্তী সময়ে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন, বিশ্বাসঘাতকতার নয়।
কাজেই জোর গলায় বলতে পারি, দেশের প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক-সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে কালের মুখোমুখি কচিকাঁচার মেলা সেদিন যেমন সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সফলতার সঙ্গে, তেমনি মাথা উঁচু করে আজও টিকে আছে, আগামীতেও সব বাধা উপেক্ষা করে শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দিল মনোয়ার মনু
ষাটের দশকে দাদাভাইয়ের সম্পাদনায় মেলার যে মুখপত্র বের হতো 'কচিকাঁচা' নামে, সে সময়ের পরিক্রমায় তা হয়ে উঠেছিল কিশোরদের পাঠ্য একটি অনবদ্য পত্রিকা। তাঁর পরিচালিত ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, তা সেদিনের সব পাঠকেরই জানা। এই আসরকে কেন্দ্র করে কচিকাঁচার মেলা যেমন সংগঠিত, শক্তিশালী হয়েছে, তেমনি দেশে কবি-সাহিত্যিক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত ৫৬ বছরে যত কৃতী ছেলেমেয়ে বেরিয়েছেন এই সংগঠন থেকে, পরবর্তী সময়ে কর্মজীবনে দেশময় তাঁরা ছড়িয়ে পড়েছেন। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব, নীতিনির্ধারণ শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁরা সম্পর্কিত হয়েছেন। তাঁরা মনে রেখেছেন, জীবনের ঊষালগ্নে যুক্ত ছিলেন মেলার ভাবাদর্শের সঙ্গে। দাদাভাইয়ের একটি কথা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কচিকাঁচার মেলার অনেক সদস্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, কিন্তু কেউ রাজাকার হননি। অজ্ঞতা, সংকীর্ণতা নয়; মুক্ত দৃষ্টি, উদারতার শিক্ষা মেলার সদস্যরা পেয়েছিলেন বলে তাঁরা পরবর্তী সময়ে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন, বিশ্বাসঘাতকতার নয়।
কাজেই জোর গলায় বলতে পারি, দেশের প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক-সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে কালের মুখোমুখি কচিকাঁচার মেলা সেদিন যেমন সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সফলতার সঙ্গে, তেমনি মাথা উঁচু করে আজও টিকে আছে, আগামীতেও সব বাধা উপেক্ষা করে শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দিল মনোয়ার মনু
No comments