জন্মসনদ-ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কবে?
জন্মের ৬৫ বছর পর একই দিনে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন নামক ভূখণ্ডটির মর্যাদা 'পর্যবেক্ষক' থেকে 'পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র' পর্যায়ে উন্নীত হলো। সংগ্রামী ফিলিস্তিনি জনগণই নয় বিবেকবান বিশ্ববাসীর জন্যও এ এক সুসংবাদ। ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কিছুটা দায় পূরণও বলা যেতে পারে।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ১৩৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। প্রত্যাশিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ভোট ছিল বিপক্ষে। তাদের সঙ্গী মাত্র সাতটি দেশ। বড় বড় বাক্য উচ্চারণে অভ্যস্ত ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ ৪১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এটি যদিও রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের পুরোপুরি স্বীকৃতি নয়, তার পরও এর কূটনৈতিক গুরুত্ব কম নয়। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমা ও ওই ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর অধিকারের সীমা সম্পর্কেও এই নতুন মর্যাদা পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। বিশ্বসভায় জাতিসংঘের এ নবমর্যাদা ইসরায়েল মেনে নিতে পারেনি। প্রতিহিংসাপরায়ণ এই দেশটি তাৎক্ষণিকভাবে অধিকৃত পশ্চিম তীরে তিন হাজার বসতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এর নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্র শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। এই সমস্যার সমাধান যে দুই রাষ্ট্র গঠনের মধ্যেই নিহিত, সেটা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোকেও বুঝতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিকও এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বলে সর্বশেষ জনমত জরিপে প্রকাশ। এদিকে, ফিলিস্তিনের জাতিসংঘে নতুন মর্যাদার আসন লাভ তাকে বেশ কয়েকটি সুযোগ করে দেবে। যেমন রোম সংবিধি গ্রহণের মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসন, হত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে। এভাবে দোষীসাব্যস্ত হওয়া ইসরায়েলি সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এমনকি, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যেসব ইহুদি বেসামরিক ব্যক্তি অবৈধ বসতি গড়ে তুলে বসবাস করছেন তারাও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে শাস্তিযোগ্য অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হতে পারেন। আপস আলোচনার স্বার্থে নিশ্চয়ই ফিলিস্তিনিরা এ ধরনের কঠোর অবস্থান হয়তো গ্রহণ করতে যাবেন না। তবে, তাদের হাতে এ ধরনের আইনি হাতিয়ার জাতিসংঘ নতুন মর্যাদা অর্জনের ফলে চলে আসায় ইসরায়েলকে একটু সাবধান হতে হবে বৈকি! এতে আলাপ-আলোচনার পথে অগ্রসর হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে এখন নতুন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ণ স্বীকৃতি এবং দখলিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডগুলো থেকে অবৈধ ইহুদি বসতি তুলে নেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই ভাবা উচিত। ফিলিস্তিনকে অধিকারবঞ্চিত রেখে ইসরায়েলও নিরাপদ থাকবে না। তাই পারস্পরিক স্বার্থেই উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথেই অগ্রসর হওয়া উচিত। ফিলিস্তিনের জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ নিঃসন্দেহে একটি বিরাট অর্জন।
No comments