জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন- কোর্ট ফি বাড়লেও কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে গড়িমসি by প্রশান্ত কর্মকার
কোর্ট ফি বাড়ানোর পরও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন, ২০০৯-এর প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন করা হয়নি। ২০০৯ সালে ৩০ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়। প্রায় তিন বছর পর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১ নভেম্বর ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ করা হয়।
এ বিষয়ে ১ নভেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আপিল বিভাগ শতভাগ বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য সময় দেন। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৬২ বছর করার নির্দেশনা থাকলেও সরকার তা বাস্তবায়ন করতে রাজি নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বয়সসীমা ৫৯ বছরই রাখার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারের এ সুপারিশ মানতে রাজি হননি সুপ্রিম কোর্ট। ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, পে-কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিচারকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হলে সরকারের অতিরিক্ত ২২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। এ কারণে ২০১০ সালের ১ আগস্ট কোর্ট ফি বৃদ্ধি করা হয়। অথচ বিচারকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উচ্চ আদালত থেকে সময় নিচ্ছে সরকার।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে কোর্ট ফি থেকে সরকারের আয় হয় ৩২ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে কোর্ট ফি বাড়ানোর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫০ শতাংশ বেতন-ভাতা বাড়ানোর ফলে সরকারের ব্যয় বেড়েছে ৩৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পে-কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার পর কোর্ট ফি বাড়ানো হয়। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আসে।
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক্করণের পাঁচ বছরেও মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা-২০০৭ বিধি-৩(১) অনুসারে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ এবং এ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য আট সদস্যবিশিষ্ট একটি পে-কমিশন গঠন করা হয়। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে চেয়ারম্যান করে কমিটি গঠন করা হয়।
সিভিল আপিল ৭৯/১৯৯৯-এর রায়ে প্রদত্ত পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা এবং জাতীয় বেতন কমিশনের বিধিমালার আলোকে বিচারকদের নতুন বেতন স্কেল, বেতনবহির্ভূত ভাতা কমিটি এবং সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত সুপারিশসহ ২০০৯ সালের ২ জুন প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক নির্বাহী, আইনপ্রণেতা ও বিচারকেরা পরস্পর তুলনীয় হতে পারেন, কিন্তু তা কোনোক্রমেই বিচারক ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। বলা হয়, একজন বিচারক যে পর্যায়েরই হোন না কেন, তিনি রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করেন, যা রাজনৈতিক নির্বাহীদের সিদ্ধান্তের কাজে নিয়োজিত প্রশাসনিক নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে ভিন্ন। তাই অন্য কোনো সার্ভিসকে কোনোভাবেই জুডিশিয়াল সার্ভিসের সমতায় স্থান দেওয়া যাবে না। এ কারণে স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো প্রণয়ন করতে আপিল বিভাগ দিকনির্দেশনা দেন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে সরকারের সচিবেরা পে-স্কেল-২০০৭ অনুসারে ২৩ হাজার ৬৫ থেকে ৪৬ হাজার ২৩৫ রুপি বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একজন জেলা ও দায়রা জজের বেতন ছিল ২৮ হাজার রুপি। পাঞ্জাব সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছরে নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা না বাড়িয়ে বিচারকদের বেতন-ভাতা চার গুণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে একজন জেলা ও দায়রা জজের মূল বেতন ২৮ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার করা হয়। একই অনুপাতে অধস্তন বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়।
বলা হয়, কমিশন মনে করে, পাশের দেশগুলোর মতো বিচারকদের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো ও স্কেলের পাশাপাশি যুক্তিযুক্ত হারে জুডিশিয়াল ভাতা বাড়ানো উচিত। কমিশন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাজের প্রকৃতি এবং সাম্প্রতিক কালে জঙ্গি হামলা ও হামলার হুমকি বিদ্যমান থাকার কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। কাজেই বিচারককে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা-সুবিধাসংবলিত বাড়িতে বসবাস করতে হয়। এ ধরনের সুবিধাজনিত বাসাবাড়ির ভাড়া সর্বত্রই স্বাভাবিকভাবে বেশি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় ২০০ জন বিচারক রয়েছেন। পাঁচটি বিল্ডিংয়ে ৪০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাকি বিচারকেরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া করে থাকেন। এতে তাঁদের বেতনের সিংহভাগই চলে যায়। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গ। জাতীয় বেতন কমিশন ২০০৮ সালে সরকারি, বেসরকারি ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা নতুন বেতন স্কেল এবং ভাতা প্রস্তাব করে। স্বাভাবিকভাবেই জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার প্রস্তাবসহ অতিরিক্ত সম্পদ জোগানের প্রস্তাব করা হয়। এতে সার্ভিসের বেতন-ভাতার কারণে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়বে, যা আনুমানিক ২২ কোটি টাকা। কোর্ট ফির হার কমিশনের প্রস্তাবে পুনর্নির্ধারণ করা হলে জুডিশিয়াল সার্ভিসের বর্ধিত বেতন-ভাতার ব্যয় মেটানোর পর সরকারের ৬১ কোটি টাকা রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকবে। কমিশন প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিশনের প্রণীত সুপারিশমালা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন না করে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকেই বাস্তবায়ন করবে।
মাসদার হোসেন মামলার আলোকে আদালতের অবকাঠামোগত এসব সমস্যা সমাধানের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের। বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পর পাঁচ বছর কেটে গেলেও আদালতের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
পদোন্নতি, বেতনবৈষম্য দূর করা, নিরাপত্তা, কাজের স্বাধীনতাসহ নানাবিধ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় সারা দেশের বিচারকেরা ক্ষুব্ধ। গত কয়েক বছর সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি জানিয়েও নিম্ন আদালতের বিচারকদের সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়নি।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে কোর্ট ফি থেকে সরকারের আয় হয় ৩২ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে কোর্ট ফি বাড়ানোর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫০ শতাংশ বেতন-ভাতা বাড়ানোর ফলে সরকারের ব্যয় বেড়েছে ৩৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পে-কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার পর কোর্ট ফি বাড়ানো হয়। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আসে।
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক্করণের পাঁচ বছরেও মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা-২০০৭ বিধি-৩(১) অনুসারে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ এবং এ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য আট সদস্যবিশিষ্ট একটি পে-কমিশন গঠন করা হয়। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে চেয়ারম্যান করে কমিটি গঠন করা হয়।
সিভিল আপিল ৭৯/১৯৯৯-এর রায়ে প্রদত্ত পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা এবং জাতীয় বেতন কমিশনের বিধিমালার আলোকে বিচারকদের নতুন বেতন স্কেল, বেতনবহির্ভূত ভাতা কমিটি এবং সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত সুপারিশসহ ২০০৯ সালের ২ জুন প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক নির্বাহী, আইনপ্রণেতা ও বিচারকেরা পরস্পর তুলনীয় হতে পারেন, কিন্তু তা কোনোক্রমেই বিচারক ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। বলা হয়, একজন বিচারক যে পর্যায়েরই হোন না কেন, তিনি রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করেন, যা রাজনৈতিক নির্বাহীদের সিদ্ধান্তের কাজে নিয়োজিত প্রশাসনিক নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে ভিন্ন। তাই অন্য কোনো সার্ভিসকে কোনোভাবেই জুডিশিয়াল সার্ভিসের সমতায় স্থান দেওয়া যাবে না। এ কারণে স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো প্রণয়ন করতে আপিল বিভাগ দিকনির্দেশনা দেন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে সরকারের সচিবেরা পে-স্কেল-২০০৭ অনুসারে ২৩ হাজার ৬৫ থেকে ৪৬ হাজার ২৩৫ রুপি বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একজন জেলা ও দায়রা জজের বেতন ছিল ২৮ হাজার রুপি। পাঞ্জাব সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছরে নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা না বাড়িয়ে বিচারকদের বেতন-ভাতা চার গুণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে একজন জেলা ও দায়রা জজের মূল বেতন ২৮ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার করা হয়। একই অনুপাতে অধস্তন বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়।
বলা হয়, কমিশন মনে করে, পাশের দেশগুলোর মতো বিচারকদের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো ও স্কেলের পাশাপাশি যুক্তিযুক্ত হারে জুডিশিয়াল ভাতা বাড়ানো উচিত। কমিশন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাজের প্রকৃতি এবং সাম্প্রতিক কালে জঙ্গি হামলা ও হামলার হুমকি বিদ্যমান থাকার কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। কাজেই বিচারককে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা-সুবিধাসংবলিত বাড়িতে বসবাস করতে হয়। এ ধরনের সুবিধাজনিত বাসাবাড়ির ভাড়া সর্বত্রই স্বাভাবিকভাবে বেশি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় ২০০ জন বিচারক রয়েছেন। পাঁচটি বিল্ডিংয়ে ৪০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাকি বিচারকেরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া করে থাকেন। এতে তাঁদের বেতনের সিংহভাগই চলে যায়। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গ। জাতীয় বেতন কমিশন ২০০৮ সালে সরকারি, বেসরকারি ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা নতুন বেতন স্কেল এবং ভাতা প্রস্তাব করে। স্বাভাবিকভাবেই জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার প্রস্তাবসহ অতিরিক্ত সম্পদ জোগানের প্রস্তাব করা হয়। এতে সার্ভিসের বেতন-ভাতার কারণে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়বে, যা আনুমানিক ২২ কোটি টাকা। কোর্ট ফির হার কমিশনের প্রস্তাবে পুনর্নির্ধারণ করা হলে জুডিশিয়াল সার্ভিসের বর্ধিত বেতন-ভাতার ব্যয় মেটানোর পর সরকারের ৬১ কোটি টাকা রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকবে। কমিশন প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিশনের প্রণীত সুপারিশমালা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন না করে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকেই বাস্তবায়ন করবে।
মাসদার হোসেন মামলার আলোকে আদালতের অবকাঠামোগত এসব সমস্যা সমাধানের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের। বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পর পাঁচ বছর কেটে গেলেও আদালতের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
পদোন্নতি, বেতনবৈষম্য দূর করা, নিরাপত্তা, কাজের স্বাধীনতাসহ নানাবিধ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় সারা দেশের বিচারকেরা ক্ষুব্ধ। গত কয়েক বছর সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি জানিয়েও নিম্ন আদালতের বিচারকদের সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়নি।
No comments