মঙ্গলে কিউরিওসিটির ১১৯ দিন- মঙ্গলে মধুরেণুর সন্ধানে by জাহিদ হোসাইন
নয় মাসের যাত্রা শেষে গত ৬ আগস্ট মঙ্গলের বুকে পদার্পণ করে রোভার কিউরিওসিটি। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভারেল থেকে যাত্রা শুরু করে কিউরিওসিটি। সাড়ে আট মাসের এই অভিযানে যানটি এরই মধ্যে বিকিরণের ওপর নানা তথ্য সংগ্রহ করেছে।
মঙ্গলের পথে কিউরিওসিটি ৩৫ কোটি ২০ লাখ মাইল পাড়ি দিয়েছে। ১২ বছরের প্রস্তুতি শেষে এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৫০ কোটি ডলার। মাকড়সা আকৃতির নাসার রোবট যান রোভার কিউরিওসিটি ৬ আগস্ট গ্রিনিচ মান সময় ভোর পাঁচটা ৩২ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টা) লাল গ্রহটিতে সফলভাবে অবতরণ করে।
অবতরণের জন্য গিরিখাদ গ্যালে কার্টার বেছে নেওয়া হয়েছিল।
নিঃসঙ্গ সারথি
লাল গ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কিউরিওসিটি, যেন অবকাশের কোনোই সুযোগ নেই। পৃথিবীর মানুষেরা যখন রাতে বিশ্রাম নেয়, তখন মঙ্গলের বুকে দাপিয়ে বেড়ায় রোভারযানটি। নিঃসঙ্গ সারথি ঘুরে বেড়াচ্ছে মঙ্গলের বুকের নানা রহস্যের কূলকিনারা করতে। আগামী দুই বছর কিউরিওসিটি গিরিখাদের তলা থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠবে। এটি পাথুরে ভূমি খুঁড়ে দেখবে, সেখানে প্রাণের বিকাশের কোনো পরিবেশ আছে কি না। অবতরণের কয়েক মিনিট পর থেকে কিউরিওসিটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে যন্ত্রপাতি পরীক্ষায় ব্যস্ত সময় কাটে কিউরিওসিটির। প্রথম দিন মঙ্গলের তেজস্ক্রিয় মাপতে আর যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে সময় কেটেছে কিউরিওসিটির। মঙ্গলের দ্বিতীয় দিনে এ পরীক্ষার অংশ হিসেবেই কিউরিওসিটি মাস্তুল খাড়া করেছে।
প্রথম ছবি, পৃথিবীর জন্য পোস্টকার্ড
কিউরিওসিটির মাস্তুলে দুটি ক্যামেরা লাগানো আছে। ৩৪ মিলিমিটার ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত আছে ১০০ মিলিমিটার টেলিফটো লেন্সের ক্যামেরা। দুটি ক্যামেরা মিলিয়ে উন্নতমানের ছবি তুলতে পারে রোভারটি। মাস্তুলের সঙ্গে লাগানো ক্যামেরা ব্যবহার করে তৃতীয় দিনে মঙ্গলের প্রাকৃতিক দৃশ্যের রঙিন ছবি তোলে কিউরিওসিটি। পৃথিবীবাসীর কাছে মঙ্গলের পরিচয় লাল হলেও কিউরিওসিটির তোলা ছবিতে ভেসে আছে ধূসর খটখটে মঙ্গলপৃষ্ঠের ছবি। কিউরিওসিটির পাঠানো সে ছবিগুলো যেন মঙ্গল থেকে পৃথিবীবাসীকে পাঠানো ‘রঙিন পোস্টকার্ড’। মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে তো এখন মুঠোফোন, টেলিফোন বা ফ্যাক্স যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি, তাই পোস্টকার্ডগুলোই কিউরিওসিটির ভরসা!
অণুজীব খোঁজে শিলাসন্ধানী রোভার
‘কিউরিওসিটি’ লেজার ব্যবহার করে মঙ্গলের বিভিন্ন শিলাখণ্ড বিশ্লেষণ করে। লেজার রশ্মি দিয়ে মঙ্গলের পৃষ্ঠে প্রথম ‘করোনেশন’ নামের শিলাখণ্ড ভেঙে বিশ্লেষণ করে কিউরিওসিটি। রাসায়নিক ও ক্যামেরা যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরি কেমক্যাম শিলাখণ্ডের অণু বিশ্লেষণ করে পৃথিবীতে তথ্য পাঠাচ্ছে। শিলাখণ্ড পরীক্ষার এ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ‘লেজার-ইনডিউসড বেকডাউন স্পেকট্রোকপি’। সম্প্রতি যানটি মঙ্গলে এমন পাথর খুঁজে পেয়েছে, যা এর আগে পাওয়া মঙ্গলের পাথরের মতো নয়। কিউরিওসিটি একটি ফুটবলের সমান ওই পাথরটি খুঁজে পায়। বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, পাথরটি মঙ্গলের আর দশটি সাধারণ পাথরের মতোই। তবে পাথরটি সে রকম নয়। গবেষকেরা দেখতে পান, হাওয়াই বা সেন্ট হেলেনার মতো সামুদ্রিক দ্বীপগুলো এবং রিও গ্রান্ডির মতো মহাদেশীয় উপত্যকা অঞ্চলে (যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো থেকে মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলের বিস্তৃতি) প্রাপ্ত অস্বাভাবিক ধরনের পাথরের সঙ্গে এই পাথরটির যথেষ্ট মিল আছে। যানটি বর্তমানে এর প্রথম বৈজ্ঞানিক গন্তব্য গ্লেনেগ্লের দিকে যাচ্ছে। ওই এলাকায় রয়েছে পৃথক তিন ধরনের শিলা।
ধূলিদানবের সন্ধানে রোভার
মঙ্গলপৃষ্ঠে ধূলিদানবদের দৌড়াদৌড়ি এত দিন পৃথিবীবাসীকে রহস্যের সৃষ্টি করলেও, রহস্যের কূলকিনারা করতে ব্যর্থ ছিল মর্ত্যের মানুষ। গ্রহপৃষ্ঠে সহসা বিশাল আকারের টর্নেডো বা ধূলির ঝড় ওঠে। একে ‘ডাস্ট ডেভিল’ বা ‘ধূলিদানব’ বলা হয়। লাল গ্রহে মর্ত্যবাসী শার্লক হোমসের মতো অনুসন্ধানী ‘কিউরিওসিটি’ এ ধূলিদানবের অস্তিত্ব টের পেয়েছে। গ্যালে কার্টারেও এ ধূলিদানবের অস্তিত্ব রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন নাসার গবেষকেরা। মঙ্গল গ্রহের বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে একধরনের ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। মঙ্গলের ঘূর্ণি পৃথিবীর ঘূর্ণির চেয়ে আলাদা। মঙ্গলের এ ঘূর্ণির রহস্যভেদ করতে পারলে মঙ্গলের আবহাওয়া ও গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যাবে। কিউরিওসিটির ওয়েদার স্টেশনের সাহায্যে এ ডাস্ট ডেভিলের তথ্য পাওয়ার আশা করছেন গবেষকেরা। কিউরিওসিটির বিশেষ মাস্তুল বা মাথার ওপর বসানো অ্যান্টেনা ক্যামেরা ও কেমিক্যাল লেজারের সাহায্যে বাতাসের দিক, গতি, বাতাসের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা নির্ণয় করার সুবিধা রয়েছে। কিউরিওসিটির সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত রয়েছে বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্র ও আলট্রাভায়োলেট সেন্সর, যা ছয়টি আলাদা তরঙ্গদৈর্ঘ্য শনাক্ত করতে পারে। ধূলিদানবের ছবি তুলতে ব্যর্থ হলেও কিউরিওসিটির ওয়েদার স্টেশন ধূলিদানবের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পেরেছে। এ ধূলিদানবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাতাসের চাপ, দিক, গতি, তাপমাত্রা ও অতিবেগুনি রশ্মির মতো বিষয়গুলো।
এক নজরে
কিউরিওসিটি রোভার
পৃথিবী থেকে অভিযাত্রা: ২৬ নভেম্বর ২০১১
মঙ্গলে অবতরণ: ৬ আগস্ট ২০১২
অবতরণস্থল: এয়োলিস পলাস, গ্যালে জ্বালামুখ
বর্তমান অবস্থান: অবতরণের স্থল থেকে ২৮৯ মিটার দূরে
তথ্যসূত্র: নাসা, উইকিপিডিয়া
অবতরণের জন্য গিরিখাদ গ্যালে কার্টার বেছে নেওয়া হয়েছিল।
নিঃসঙ্গ সারথি
লাল গ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কিউরিওসিটি, যেন অবকাশের কোনোই সুযোগ নেই। পৃথিবীর মানুষেরা যখন রাতে বিশ্রাম নেয়, তখন মঙ্গলের বুকে দাপিয়ে বেড়ায় রোভারযানটি। নিঃসঙ্গ সারথি ঘুরে বেড়াচ্ছে মঙ্গলের বুকের নানা রহস্যের কূলকিনারা করতে। আগামী দুই বছর কিউরিওসিটি গিরিখাদের তলা থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠবে। এটি পাথুরে ভূমি খুঁড়ে দেখবে, সেখানে প্রাণের বিকাশের কোনো পরিবেশ আছে কি না। অবতরণের কয়েক মিনিট পর থেকে কিউরিওসিটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে যন্ত্রপাতি পরীক্ষায় ব্যস্ত সময় কাটে কিউরিওসিটির। প্রথম দিন মঙ্গলের তেজস্ক্রিয় মাপতে আর যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে সময় কেটেছে কিউরিওসিটির। মঙ্গলের দ্বিতীয় দিনে এ পরীক্ষার অংশ হিসেবেই কিউরিওসিটি মাস্তুল খাড়া করেছে।
প্রথম ছবি, পৃথিবীর জন্য পোস্টকার্ড
কিউরিওসিটির মাস্তুলে দুটি ক্যামেরা লাগানো আছে। ৩৪ মিলিমিটার ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত আছে ১০০ মিলিমিটার টেলিফটো লেন্সের ক্যামেরা। দুটি ক্যামেরা মিলিয়ে উন্নতমানের ছবি তুলতে পারে রোভারটি। মাস্তুলের সঙ্গে লাগানো ক্যামেরা ব্যবহার করে তৃতীয় দিনে মঙ্গলের প্রাকৃতিক দৃশ্যের রঙিন ছবি তোলে কিউরিওসিটি। পৃথিবীবাসীর কাছে মঙ্গলের পরিচয় লাল হলেও কিউরিওসিটির তোলা ছবিতে ভেসে আছে ধূসর খটখটে মঙ্গলপৃষ্ঠের ছবি। কিউরিওসিটির পাঠানো সে ছবিগুলো যেন মঙ্গল থেকে পৃথিবীবাসীকে পাঠানো ‘রঙিন পোস্টকার্ড’। মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে তো এখন মুঠোফোন, টেলিফোন বা ফ্যাক্স যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি, তাই পোস্টকার্ডগুলোই কিউরিওসিটির ভরসা!
অণুজীব খোঁজে শিলাসন্ধানী রোভার
‘কিউরিওসিটি’ লেজার ব্যবহার করে মঙ্গলের বিভিন্ন শিলাখণ্ড বিশ্লেষণ করে। লেজার রশ্মি দিয়ে মঙ্গলের পৃষ্ঠে প্রথম ‘করোনেশন’ নামের শিলাখণ্ড ভেঙে বিশ্লেষণ করে কিউরিওসিটি। রাসায়নিক ও ক্যামেরা যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরি কেমক্যাম শিলাখণ্ডের অণু বিশ্লেষণ করে পৃথিবীতে তথ্য পাঠাচ্ছে। শিলাখণ্ড পরীক্ষার এ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ‘লেজার-ইনডিউসড বেকডাউন স্পেকট্রোকপি’। সম্প্রতি যানটি মঙ্গলে এমন পাথর খুঁজে পেয়েছে, যা এর আগে পাওয়া মঙ্গলের পাথরের মতো নয়। কিউরিওসিটি একটি ফুটবলের সমান ওই পাথরটি খুঁজে পায়। বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, পাথরটি মঙ্গলের আর দশটি সাধারণ পাথরের মতোই। তবে পাথরটি সে রকম নয়। গবেষকেরা দেখতে পান, হাওয়াই বা সেন্ট হেলেনার মতো সামুদ্রিক দ্বীপগুলো এবং রিও গ্রান্ডির মতো মহাদেশীয় উপত্যকা অঞ্চলে (যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো থেকে মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলের বিস্তৃতি) প্রাপ্ত অস্বাভাবিক ধরনের পাথরের সঙ্গে এই পাথরটির যথেষ্ট মিল আছে। যানটি বর্তমানে এর প্রথম বৈজ্ঞানিক গন্তব্য গ্লেনেগ্লের দিকে যাচ্ছে। ওই এলাকায় রয়েছে পৃথক তিন ধরনের শিলা।
ধূলিদানবের সন্ধানে রোভার
মঙ্গলপৃষ্ঠে ধূলিদানবদের দৌড়াদৌড়ি এত দিন পৃথিবীবাসীকে রহস্যের সৃষ্টি করলেও, রহস্যের কূলকিনারা করতে ব্যর্থ ছিল মর্ত্যের মানুষ। গ্রহপৃষ্ঠে সহসা বিশাল আকারের টর্নেডো বা ধূলির ঝড় ওঠে। একে ‘ডাস্ট ডেভিল’ বা ‘ধূলিদানব’ বলা হয়। লাল গ্রহে মর্ত্যবাসী শার্লক হোমসের মতো অনুসন্ধানী ‘কিউরিওসিটি’ এ ধূলিদানবের অস্তিত্ব টের পেয়েছে। গ্যালে কার্টারেও এ ধূলিদানবের অস্তিত্ব রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন নাসার গবেষকেরা। মঙ্গল গ্রহের বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে একধরনের ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। মঙ্গলের ঘূর্ণি পৃথিবীর ঘূর্ণির চেয়ে আলাদা। মঙ্গলের এ ঘূর্ণির রহস্যভেদ করতে পারলে মঙ্গলের আবহাওয়া ও গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যাবে। কিউরিওসিটির ওয়েদার স্টেশনের সাহায্যে এ ডাস্ট ডেভিলের তথ্য পাওয়ার আশা করছেন গবেষকেরা। কিউরিওসিটির বিশেষ মাস্তুল বা মাথার ওপর বসানো অ্যান্টেনা ক্যামেরা ও কেমিক্যাল লেজারের সাহায্যে বাতাসের দিক, গতি, বাতাসের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা নির্ণয় করার সুবিধা রয়েছে। কিউরিওসিটির সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত রয়েছে বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্র ও আলট্রাভায়োলেট সেন্সর, যা ছয়টি আলাদা তরঙ্গদৈর্ঘ্য শনাক্ত করতে পারে। ধূলিদানবের ছবি তুলতে ব্যর্থ হলেও কিউরিওসিটির ওয়েদার স্টেশন ধূলিদানবের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পেরেছে। এ ধূলিদানবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাতাসের চাপ, দিক, গতি, তাপমাত্রা ও অতিবেগুনি রশ্মির মতো বিষয়গুলো।
এক নজরে
কিউরিওসিটি রোভার
পৃথিবী থেকে অভিযাত্রা: ২৬ নভেম্বর ২০১১
মঙ্গলে অবতরণ: ৬ আগস্ট ২০১২
অবতরণস্থল: এয়োলিস পলাস, গ্যালে জ্বালামুখ
বর্তমান অবস্থান: অবতরণের স্থল থেকে ২৮৯ মিটার দূরে
তথ্যসূত্র: নাসা, উইকিপিডিয়া
No comments