অনুসন্ধান-কার গাড়ি কে চড়ে-এলজিইডির ৩৮টি দামি গাড়ি প্রভাবশালীদের 'উপঢৌকন'! by অমিতোষ পাল
গত ২৭ নভেম্বর সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৪৪০৫ নম্বরের পাজেরো ভি সিক্স গাড়ি থেকে নেমে গোপালগঞ্জ পৌর ভবনে ঢুকতে দেখা যায় পৌর মেয়র রেজাউল হক শিকদার রাজুকে। জানা যায়, গাড়িটি মেয়রের নিজের নয়। আবার কোনো সরকারি গাড়িও বরাদ্দ পান না পৌর মেয়ররা।
তাহলে গাড়িটি কার?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়িটি আসলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। একটি প্রকল্পের জন্য এই দামি গাড়ি কেনা হয়। পরে সেটা দেওয়া হয় গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়রকে। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ছয় মাস পর এলজিইডি থেকে গাড়িটি পেয়ে তিনি নিজের মতো করে ব্যবহার করছেন। আরো জানা যায়, জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণসহ গাড়িটির যাবতীয় ব্যয় বহন করছে এলজিইডি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নন, অনেক 'ভিআইপি'কেই এলজিইডির পক্ষ থেকে গাড়ি 'উপঢৌকন' দেওয়া হয়েছে। এ রকম অন্তত ৩৮টি গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলোর মালিক এলজিইডি কিন্তু ব্যবহার করছেন রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা বা তাঁদের আত্মীয়স্বজন। এলজিইডির একটি তালিকাও কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে, যেখানে কত নম্বরের গাড়ি কাকে দেওয়া হয়েছে, তা বলা আছে। এ রকম অনৈতিকভাবে গাড়িগুলো বরাদ্দ দিয়ে তাঁদের খুশি রেখেছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র বা আওয়ামী লীগের নেতারাও এসব গাড়ি নিয়ে ব্যবহার করছেন। এমনকি তাঁদের অনেকে মাঝেমধ্যে গাড়ি পরিবর্তন করে পছন্দমতো গাড়িও বরাদ্দ নিচ্ছেন। এতে করে আটকে যাচ্ছে রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্টসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এলজিইডির গৃহীত নানা প্রকল্পের কাজ।
এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য কেনা এসব গাড়ি ব্যবহারের প্রথম শর্ত হলো, গাড়িগুলো শুধু প্রকল্পের কাজেই ব্যবহার করতে হবে। প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে গাড়িগুলো সরকারি পরিবহন পুলে জমা দিতে হবে। কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ম আমলে নেয়নি। অনেক গাড়ি মেয়াদ শেষে ফেরত না দিয়ে আস্থাভাজন হওয়ার জন্য প্রভাবশালীদের দেওয়া হয়। এমনকি যাঁরা পরিবহন পুল থেকে গাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে এলজিইডি থেকেও গাড়ি নিয়েছেন। অনেকে আবার এসব গাড়ি তাঁদের পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে রেখেছেন।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার গাড়িটি সম্পর্কে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সদস্য ও গোপালগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক আহ্বায়ক পৌর মেয়র রেজাউল হক শিকদার রাজু কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধির কাছে বেশি কিছু বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। পীড়াপীড়ির একপর্যায়ে তিনি বলেন, 'মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি গাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম। ছয় মাস পর ঢাকা থেকে গাড়িটি পাঠিয়েছে। আমিই গাড়িটি ব্যবহার করি। মাঝেমধ্যে কাউন্সিলররাও আমার সঙ্গে থাকেন। তবে গাড়ির জ্বালানি খরচ এলজিইডি নয়, পৌরসভা থেকে বহন করা হয়।' তিনি আরো বলেন, 'গাড়িটির অবস্থা তেমন ভালো নয়। তাই বদলে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।'
এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন, রেজাউল হক শিকদারকে দেওয়া গাড়িটি পরিবর্তন করে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮০৪৫ নম্বরের গাড়িটি দেওয়ার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেছে এলজিইডি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গোপালগঞ্জের মেয়র এলজিইডির স্থানীয় পর্যায়ের প্রকল্পের একটি গাড়ি মাঝেমধ্যে ব্যবহার করেন। কারণ ওই প্রকল্পের সঙ্গে মেয়র নিজেও সম্পৃক্ত।' সচিব আরো বলেন, 'সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গাড়ি দিয়েছে এলজিইডি। এটা এলজিইডির কাজ নয়, তার পরও দিতে হয়েছে। এতে এলজিইডির কর্মকর্তাদের একটু কষ্ট হয়। কিন্তু উন্নয়নকাজে কোনো প্রভাব পড়ে না। তাঁরা অতিরিক্ত সময় কাজ করে পুষিয়ে দেন।'
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান এভাবে গাড়ি বরাদ্দের কথা কালের কণ্ঠের কাছে আংশিক স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। দু-একজনকে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তিনি আর কিছু মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গাড়ি যাঁদের দেওয়া হয়েছে : এলজিইডির সর্বশেষ তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-১৮৬১ নম্বরের গাড়িটি দেওয়া হয়েছে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে। অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিনকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮০৪৫ নম্বরের গাড়িটি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ মমতাজ বেগমের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬১৬২ নম্বরের গাড়িটি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আব্দুস সোবহান গোলাপের নামে গেছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮০৪৬ নম্বরের গাড়ি। এর আগে তিনি ব্যবহার করতেন ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-৩২৬৫ নম্বরের গাড়িটি। গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কুমার বিশ্বাসকে দেওয়া হয়েছে এমক-১০৯ নম্বরের গাড়িটি।
এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি অন্যত্র যাওয়া এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-০২৯৪; গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮২৬; একজন হুইপকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৮৩৩; মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-০২৯৪ নম্বরের গাড়ি।
আবার ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮০৪৫ নম্বরের গাড়িটি দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফকে। পরে তিনি সেটা বদলে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-১৮৯৩ নম্বরের গাড়িটি নিয়েছেন। ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৩৬২ নম্বরের গাড়িটি গেছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ফেরদৌস আহমেদ খানের কাছে। দুজন প্রতিমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬১৬২ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৭৭৮ নম্বরের দুটি গাড়ি। আরেকজন প্রতিমন্ত্রীর জন্য ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬০৯৯ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬২৫২ নম্বরের দুটি গাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। একজন সচিব পেয়েছেন ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-০২৯৪ নম্বরের গাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর একজন সহকারী একান্ত সচিবের জন্য গেছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-২৫০০ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬১৬৩ নম্বরের দুটি গাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আরো কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যবহার করছেন ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮২৬, ঢাকা মেট্রো-গ ২১-৯১৬৫, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৮৩৩, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৪-১৩৩৮, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬৩৪৯, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮২৬ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-২২৮৬ নম্বরের গাড়িগুলো।
এ ছাড়া ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮১৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৬১১০, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-১৮৯৪, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮১৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-১৮৬১, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮৯১৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-১০৪৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-১৮১৫, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫১৬৩, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৮৩৩ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮৩১৪ নম্বরের গাড়িগুলোও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে এলজিইডি।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কালের কণ্ঠের শিক্ষানবিশ প্রতিবেদক রুহুল আমিন ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি প্রসূন মণ্ডল)
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়িটি আসলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। একটি প্রকল্পের জন্য এই দামি গাড়ি কেনা হয়। পরে সেটা দেওয়া হয় গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়রকে। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ছয় মাস পর এলজিইডি থেকে গাড়িটি পেয়ে তিনি নিজের মতো করে ব্যবহার করছেন। আরো জানা যায়, জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণসহ গাড়িটির যাবতীয় ব্যয় বহন করছে এলজিইডি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নন, অনেক 'ভিআইপি'কেই এলজিইডির পক্ষ থেকে গাড়ি 'উপঢৌকন' দেওয়া হয়েছে। এ রকম অন্তত ৩৮টি গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলোর মালিক এলজিইডি কিন্তু ব্যবহার করছেন রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা বা তাঁদের আত্মীয়স্বজন। এলজিইডির একটি তালিকাও কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে, যেখানে কত নম্বরের গাড়ি কাকে দেওয়া হয়েছে, তা বলা আছে। এ রকম অনৈতিকভাবে গাড়িগুলো বরাদ্দ দিয়ে তাঁদের খুশি রেখেছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র বা আওয়ামী লীগের নেতারাও এসব গাড়ি নিয়ে ব্যবহার করছেন। এমনকি তাঁদের অনেকে মাঝেমধ্যে গাড়ি পরিবর্তন করে পছন্দমতো গাড়িও বরাদ্দ নিচ্ছেন। এতে করে আটকে যাচ্ছে রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্টসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এলজিইডির গৃহীত নানা প্রকল্পের কাজ।
এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য কেনা এসব গাড়ি ব্যবহারের প্রথম শর্ত হলো, গাড়িগুলো শুধু প্রকল্পের কাজেই ব্যবহার করতে হবে। প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে গাড়িগুলো সরকারি পরিবহন পুলে জমা দিতে হবে। কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ম আমলে নেয়নি। অনেক গাড়ি মেয়াদ শেষে ফেরত না দিয়ে আস্থাভাজন হওয়ার জন্য প্রভাবশালীদের দেওয়া হয়। এমনকি যাঁরা পরিবহন পুল থেকে গাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে এলজিইডি থেকেও গাড়ি নিয়েছেন। অনেকে আবার এসব গাড়ি তাঁদের পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে রেখেছেন।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার গাড়িটি সম্পর্কে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সদস্য ও গোপালগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক আহ্বায়ক পৌর মেয়র রেজাউল হক শিকদার রাজু কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধির কাছে বেশি কিছু বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। পীড়াপীড়ির একপর্যায়ে তিনি বলেন, 'মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি গাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম। ছয় মাস পর ঢাকা থেকে গাড়িটি পাঠিয়েছে। আমিই গাড়িটি ব্যবহার করি। মাঝেমধ্যে কাউন্সিলররাও আমার সঙ্গে থাকেন। তবে গাড়ির জ্বালানি খরচ এলজিইডি নয়, পৌরসভা থেকে বহন করা হয়।' তিনি আরো বলেন, 'গাড়িটির অবস্থা তেমন ভালো নয়। তাই বদলে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।'
এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন, রেজাউল হক শিকদারকে দেওয়া গাড়িটি পরিবর্তন করে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮০৪৫ নম্বরের গাড়িটি দেওয়ার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেছে এলজিইডি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গোপালগঞ্জের মেয়র এলজিইডির স্থানীয় পর্যায়ের প্রকল্পের একটি গাড়ি মাঝেমধ্যে ব্যবহার করেন। কারণ ওই প্রকল্পের সঙ্গে মেয়র নিজেও সম্পৃক্ত।' সচিব আরো বলেন, 'সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গাড়ি দিয়েছে এলজিইডি। এটা এলজিইডির কাজ নয়, তার পরও দিতে হয়েছে। এতে এলজিইডির কর্মকর্তাদের একটু কষ্ট হয়। কিন্তু উন্নয়নকাজে কোনো প্রভাব পড়ে না। তাঁরা অতিরিক্ত সময় কাজ করে পুষিয়ে দেন।'
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান এভাবে গাড়ি বরাদ্দের কথা কালের কণ্ঠের কাছে আংশিক স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। দু-একজনকে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তিনি আর কিছু মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গাড়ি যাঁদের দেওয়া হয়েছে : এলজিইডির সর্বশেষ তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-১৮৬১ নম্বরের গাড়িটি দেওয়া হয়েছে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে। অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিনকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮০৪৫ নম্বরের গাড়িটি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ মমতাজ বেগমের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬১৬২ নম্বরের গাড়িটি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আব্দুস সোবহান গোলাপের নামে গেছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮০৪৬ নম্বরের গাড়ি। এর আগে তিনি ব্যবহার করতেন ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-৩২৬৫ নম্বরের গাড়িটি। গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কুমার বিশ্বাসকে দেওয়া হয়েছে এমক-১০৯ নম্বরের গাড়িটি।
এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি অন্যত্র যাওয়া এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-০২৯৪; গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮২৬; একজন হুইপকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৮৩৩; মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-০২৯৪ নম্বরের গাড়ি।
আবার ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮০৪৫ নম্বরের গাড়িটি দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফকে। পরে তিনি সেটা বদলে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-১৮৯৩ নম্বরের গাড়িটি নিয়েছেন। ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৩৬২ নম্বরের গাড়িটি গেছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ফেরদৌস আহমেদ খানের কাছে। দুজন প্রতিমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬১৬২ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৭৭৮ নম্বরের দুটি গাড়ি। আরেকজন প্রতিমন্ত্রীর জন্য ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬০৯৯ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬২৫২ নম্বরের দুটি গাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। একজন সচিব পেয়েছেন ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-০২৯৪ নম্বরের গাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর একজন সহকারী একান্ত সচিবের জন্য গেছে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-২৫০০ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬১৬৩ নম্বরের দুটি গাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আরো কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যবহার করছেন ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮২৬, ঢাকা মেট্রো-গ ২১-৯১৬৫, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৮৩৩, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৪-১৩৩৮, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৬৩৪৯, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮২৬ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-২২৮৬ নম্বরের গাড়িগুলো।
এ ছাড়া ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮১৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৬১১০, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-১৮৯৪, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৮১৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-১৮৬১, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮৯১৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-১০৪৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-১৮১৫, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫১৬৩, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৮৩৩ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৮৩১৪ নম্বরের গাড়িগুলোও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে এলজিইডি।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কালের কণ্ঠের শিক্ষানবিশ প্রতিবেদক রুহুল আমিন ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি প্রসূন মণ্ডল)
No comments