ক্রীড়াঙ্গনের নেতৃত্ব থেকে ‘অবসর’ নিয়েছেন। কুতুবউদ্দিন আহমেদ আপন দর্পণে তুলে আনলেন দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কোলাজ। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) বিদায়ী মহাসচিবের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ আলম -‘বিওএকে শক্ত ভিত্তি দিতে পেরেছি’
বিওএর এবারের নির্বাচনে মহাসচিব পদে প্রার্থী হননি। আগেই বলেছেন হাতে সময় নেই। এটাই কি মূল কারণ? কুতুবউদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ, এটাই মূল কারণ। ব্যবসা (এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি) ও পরিবারকে সময় দিতে হচ্ছে। তাই বিওএ ছেড়েছি।
মোহামেডান ক্লাব লিমিটেডের প্রথম সভাপতি ছিলাম। একই কারণে সেখান থেকেও সরে এসেছি। সময়ের অভাবে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের পদও আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।
কোনো চাপ এসেছিল?
কুতুবউদ্দিন: কোনো চাপই আসেনি। কোনো রাগ-অভিমান বা ক্ষোভও নয়। বরং শাহেদ ভাই (কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ শাহেদ রেজা, ২৯ নভেম্বরের বিওএর নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহাসচিব নির্বাচিত) আমাকে ফোনে বলেছেন, আমি দাঁড়ালে তিনি নির্বাচন করবেন না। আমি তাঁকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাই। আমি আসলে নির্বাচন না করার ব্যাপারটা মাস তিনেক আগেই জানিয়েছিলাম। প্রথম আলোয় সেটা ছাপাও হয়েছে।
বিওএর মহাসচিব হিসেবে নিজেকে কতটা সফল মনে করেন?
কুতুবউদ্দিন: বিওএর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা সাত বছরের। জাফর ভাই মারা যাওয়ার পর সহসভাপতি থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হই। এরপর নির্বাচিত মহাসচিব। এই সময়ে বিওএর একটা ভিত্তি দাঁড় করাতে পেরেছি। আগে বিওএতে খণ্ডকালীন কয়েকজন কর্মী ছিল, এখন প্রায় ২৭-২৮ জনের পেশাদার গ্রুপ। বিওএর নিজস্ব আয়, নিজস্ব ভবন হয়েছে। প্রশাসনিক খরচ ভবনের অডিটরিয়াম ভাড়া থেকেই মেটানো সম্ভব। সভা, সমিতি, সিম্পোজিয়াম করা যাচ্ছে অডিটরিয়ামে। ফেডারেশনগুলোকে আমরা অনেক কিছু দিতে পেরেছি।
কোন জায়গাটায় আপনি তৃপ্ত?
কুতুবউদ্দিন: ২০১০ সালে ১১তম এসএ গেমসের সফল আয়োজন। মাঠের পারফরম্যান্সেও আমরা খুব ভালো করেছি। দেড় বছরব্যাপী ট্রেনিং করানোতেই এই ফলাফল। আগেরবারের তিনটা সোনা থেকে রেকর্ড ১৮টি সোনা এসেছে এসএ গেমসে। এসএ গেমস উপলক্ষে আমাদের কিছু অবকাঠামো হয়েছে।
আর অতৃপ্তি?
কুতুবউদ্দিন: এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে আমাদের পদক আছে। শুধু নেই অলিম্পিকে। এই জায়গায় দেশবাসীর মতো আমিও অতৃপ্ত। আশা ছিল, এবার লন্ডন অলিম্পিকে মেয়ে শ্যুটাররা ভালো করবে। বিওএর টাকায় বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও ওরা পারেনি।
বিওএকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি ছিল আপনার। সেই জায়গায় কতটা সফলতা এল?
কুতুবউদ্দিন: বিওএ এখন সাংগঠনিকভাবে দারুণ শক্তিশালী। আমরা একটা সিস্টেমের মধ্যে এসেছি। এসএ গেমসের উদ্বোধনী, সমাপনী অনুষ্ঠান খুব ভালো হয়েছে। আমরা একটা বেঞ্চমার্ক তৈরি করেছি। ‘ভবনের নিচের অংশ শেষ, এখন ওপরের অংশটা’ তৈরির দায়িত্ব নতুন নেতৃত্বের।
বিওএর বিকেন্দ্রীকরণ তো হলো না...
কুতুবউদ্দিন: এর কারণ, আমাদের বড় সমস্যা ছিল অর্থ। আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিওএর তহবিলে ছিল এক কোটি টাকা। এখন ২৬ কোটি। সরকারের টাকা পেতে পেতে অনেক সময় শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। কিন্তু আমরা বসে না থেকে বিওএর টাকা দিয়েই ট্রেনিং চালিয়েছি। সরকার থেকে বছরে পাওয়া পাঁচ-সাত লাখ টাকা দিয়ে বিওএ চলে না। বুঝুন, আমরা কত এগিয়েছি। এখন বিভাগীয় পর্যায়ে বিওএকে নিয়ে যাওয়া যায়।
খেলোয়াড়-ফেডারেশনের জন্য কতটা কী করতে পেরেছেন?
কুতুবউদ্দিন: খেলোয়াড়দের জন্য স্কলারশিপ, জেলায় জেলায় ‘স্পোর্টস ফর অল’ ক্রীড়া চালু করেছি। ফেডারেশনগুলোকে সাধ্যমতো সহায়তা দিতে পেরেছি। ইন্দো-বাংলা গেমস চালু হয়েছে আমার সময়ে। অলিম্পিক একাডেমি, অলিম্পিক মিউজিয়াম, লাইব্রেরি—এসব উদ্যোগও উল্লেখযোগ্য। আইওসি থেকে লবিং করে ২৬ সিটের মার্সিডিজ বেঞ্চ গাড়ি এনেছি। আমরা দুই কোটি টাকা এফডিআর করেছি। যেন ইন্টারেস্টটা দুস্থ খেলোয়াড়, সংগঠকদের দিতে পারি।
কিন্তু ইন্দো-বাংলা গেমসটা তো অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ গেমসটা তো ২০০২ সালের পর আর হয়নি। কেন?
কুতুবউদ্দিন: ইন্দো-বাংলা গেমসের ব্যাপারে দুই পক্ষেই কিছু সমস্যা রয়েছে। এবার এই গেমসের স্বাগতিক আমরা। সরকার টাকা দিলে গেমসটা হতে পারে। সরকারের কাছে বাজেট দেওয়া হয়েছে। আর সরকার টাকা না দেওয়ায় বাংলাদেশ গেমস হয়নি। গত মার্চে সব ফেডারেশনকে বললাম, ন্যাশনাল না করে বাংলাদেশ গেমসটা করা যেতে পারে। অনেকে বলেছে, ন্যাশনাল করে ফেলেছে। ওরা এক মাসের মধ্যে ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানাবে বলেছে। জানায়নি। যা-ই হোক, গেমসটা হওয়া উচিত। আশা করি হবে।
আপনি ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতিও ছিলেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ফেডারেশনগুলোকে কেমন দেখলেন?
কুতুবউদ্দিন: এই অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অনেক ফেডারেশনে বসার মতো অবস্থা নেই। যার ফলে প্রেসিডেন্টরা আসেনই না। এনএসসি টাওয়ারটা ভাড়া না দিয়ে ফেডারেশনগুলোর অফিস করার দাবি অনেক আগেই করেছিলাম। আবারও বলি, ভালো-ভদ্র জায়গায় ফেডারেশনগুলোর অফিস নেওয়া হোক, যাতে সভাপতি সেক্রেটারিসহ সবাই আসেন। তা ছাড়া ফেডারেশনকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে হবে সরকারকে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দোকানপাটের ভাড়া বাড়িয়ে সেই টাকা ফেডারেশনকে দিতে পারে এনএসসি। নইলে খেলোয়াড় তৈরি হবে না। অলিম্পিক শুধু সাহায্য কিংবা তত্ত্বাবধান করতে পারে।
বিওএকে পেশাদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার একটা অঙ্গীকারও ছিল আপনার। সেটা কতটা পেরেছেন?
কুতুবউদ্দিন: বিওএ এখন শতভাগ পেশাদার। এখন আমাদের হিসাবের হালনাগাদ অডিট আছে। সবচেয়ে খারাপ জায়গা অ্যাকাউন্টস। আমার বড় সার্থকতা, আর্থিক দিক দিয়ে আমাদের নামে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। কোনো বদনাম নিয়ে যাচ্ছি না। এটাও আমার বড় প্রাপ্তি।
... ... ....
বিওএর নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন। পান্থপথে এনভয় গ্রুপের অফিস থেকে বঙ্গভবনের পাশে বিওএ ভবন। গাড়িতে তাঁর সঙ্গী হলাম। উঠে এল আরও অনেক কিছু
... ... ....
একসময় বিওএ ছিল প্রয়াত মহাসচিব জাফর ইমামের ‘ব্রিফকেস সংগঠন’, সে অবস্থায় আপনি দায়িত্ব নেন। তখনকার অবস্থা আসলে কেমন ছিল?
কুতুবউদ্দিন: একদিন দুপুরে বিওএতে গিয়ে দেখলাম, দুজন পিয়নের একজনও নেই। ওরা নাকি খাবার আনতে গেছে। সে সময় বিওএর টাকায় খাওয়াদাওয়ার ধুম পড়ত প্রতিদিন। পরে চিফ (বিওএর সভাপতি, সেনাপ্রধান) এটা বন্ধ করেছেন। আমরা এই কালচার থেকে বের হয়ে এসেছি। তখন ৮০ স্কয়ারফিটের একটা রুম ছিল মহাসচিবের। ওই অবস্থার মধ্যে কাজ করে খেলাধুলার উন্নতি সম্ভব ছিল না। তাই ভবন করার চিন্তা করি।
ভবন করার সময় নাকি ঝামেলায় পড়েছিলেন?
কুতুবউদ্দিন: বড় একটা ঝামেলা হয়েছিল। মাটির তলেই খরচ হয়ে গেল দেড়-দুই কোটি টাকা। একপর্যায়ে জানা গেল, ড্রয়িংটা ওভার ডিজাইন। এটা বিশাল এক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযাগ ছিল না বিওএর সংশ্লিষ্ট কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। বিওএ সভাপতি ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন, সে এক লম্বা কাহিনি। সমস্যা হয়েছে, তবে আমরা পিছপা হইনি। এ ব্যাপারে ছানাউল হক বকুল, আনিসুর রহমান দীপু সহযোগিতা করেছে অনেক।
নিশ্চয়ই পেছনে ফিরে আপনার এখন অনেক কথা মনে পড়ছে?
কুতুবউদ্দিন: অনেক...অনেক কথা আছে। এসএ গেমসের উদ্বোধনী-সমাপনীর জন্য ৪০ কোটি টাকা তুলতে হবে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বললাম, সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিকে ডাকি। ডাকাও হলো। এর মধ্যে টিটুর সঙ্গে (সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার টিটু) কথা হয়, বললাম, ‘তুমি আলাদা করে এক কোটি টাকা চেক নিয়ে আসো। সবার আগে দিলে আলাদা প্রচার পাবে।’ ক্যামেরা-ট্যামেরা সব রেডি। ওই অনুষ্ঠানে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নজরুল সাহেব বললেন, ‘কী করলেন, আমাদের কেন বলেননি টাকা আনতে।’ আমি বললাম, ‘আপনি একটা খালি খাম দিন, ভেতরে কী আছে কেউ দেখবে না।’ উনি একটা খালি খাম তুলে দেন। পরদিন এক কোটি টাকার চেক পাঠান (হা হা হা)।
আপনি ক্রীড়াঙ্গনে কোনো পদে থাকছেন না। তাহলে কি ক্রীড়াঙ্গন আপনাকে হারাল?
কুতুবউদ্দিন: ক্রীড়াঙ্গনে যেকোনো প্রয়োজনেই পাশে থাকব। পৃষ্ঠপোষণা অব্যাহত রাখব। স্পোর্টস আমার রক্তে। এটা ছাড়া থাকা অসম্ভব। ভীষণ এনজয় করি খেলাটা। পেপার খুলে প্রথমেই যাই খেলার পাতায়।
তাহলে খেলোয়াড় হলেন না কেন?
কুতুবউদ্দিন: লক্ষ্য ছিল ইঞ্জিনিয়ার হব। হয়েছিও। তবে আজিমপুর টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে থাকার সময় ক্লাস নাইন পর্যন্ত খেলা ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। এমন কোনো খেলা নেই, আমি খেলিনি, সব খেলা সম্পর্কেই জানি (হাসি)। অমি কুস্তি পর্যন্ত লড়তাম!
তাই নাকি, সব খেলাই পারেন?
কুতুবউদ্দিন: আমি ইয়াং পেগাসাসের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেলেছি। হায়ারে যেতাম। বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের গোলকিপার ছিলাম, আমরা চ্যাম্পিয়নও হই। ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক থাকতে ইরান গেলাম ব্যাডমিন্টন টিম নিয়ে। খেলোয়াড় কম থাকায় হাশেমের সঙ্গে ডাবলসে নেমে যাই (হা হা হা)।
... ... ....
বিওএ ভবন এসে গেল গাড়ি। ভোট দিতে নেমে সবার মাঝে হারিয়ে গেলেন ক্রীড়াঙ্গনের ‘কুতুব ভাই’।
কোনো চাপ এসেছিল?
কুতুবউদ্দিন: কোনো চাপই আসেনি। কোনো রাগ-অভিমান বা ক্ষোভও নয়। বরং শাহেদ ভাই (কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ শাহেদ রেজা, ২৯ নভেম্বরের বিওএর নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহাসচিব নির্বাচিত) আমাকে ফোনে বলেছেন, আমি দাঁড়ালে তিনি নির্বাচন করবেন না। আমি তাঁকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাই। আমি আসলে নির্বাচন না করার ব্যাপারটা মাস তিনেক আগেই জানিয়েছিলাম। প্রথম আলোয় সেটা ছাপাও হয়েছে।
বিওএর মহাসচিব হিসেবে নিজেকে কতটা সফল মনে করেন?
কুতুবউদ্দিন: বিওএর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা সাত বছরের। জাফর ভাই মারা যাওয়ার পর সহসভাপতি থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হই। এরপর নির্বাচিত মহাসচিব। এই সময়ে বিওএর একটা ভিত্তি দাঁড় করাতে পেরেছি। আগে বিওএতে খণ্ডকালীন কয়েকজন কর্মী ছিল, এখন প্রায় ২৭-২৮ জনের পেশাদার গ্রুপ। বিওএর নিজস্ব আয়, নিজস্ব ভবন হয়েছে। প্রশাসনিক খরচ ভবনের অডিটরিয়াম ভাড়া থেকেই মেটানো সম্ভব। সভা, সমিতি, সিম্পোজিয়াম করা যাচ্ছে অডিটরিয়ামে। ফেডারেশনগুলোকে আমরা অনেক কিছু দিতে পেরেছি।
কোন জায়গাটায় আপনি তৃপ্ত?
কুতুবউদ্দিন: ২০১০ সালে ১১তম এসএ গেমসের সফল আয়োজন। মাঠের পারফরম্যান্সেও আমরা খুব ভালো করেছি। দেড় বছরব্যাপী ট্রেনিং করানোতেই এই ফলাফল। আগেরবারের তিনটা সোনা থেকে রেকর্ড ১৮টি সোনা এসেছে এসএ গেমসে। এসএ গেমস উপলক্ষে আমাদের কিছু অবকাঠামো হয়েছে।
আর অতৃপ্তি?
কুতুবউদ্দিন: এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে আমাদের পদক আছে। শুধু নেই অলিম্পিকে। এই জায়গায় দেশবাসীর মতো আমিও অতৃপ্ত। আশা ছিল, এবার লন্ডন অলিম্পিকে মেয়ে শ্যুটাররা ভালো করবে। বিওএর টাকায় বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও ওরা পারেনি।
বিওএকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি ছিল আপনার। সেই জায়গায় কতটা সফলতা এল?
কুতুবউদ্দিন: বিওএ এখন সাংগঠনিকভাবে দারুণ শক্তিশালী। আমরা একটা সিস্টেমের মধ্যে এসেছি। এসএ গেমসের উদ্বোধনী, সমাপনী অনুষ্ঠান খুব ভালো হয়েছে। আমরা একটা বেঞ্চমার্ক তৈরি করেছি। ‘ভবনের নিচের অংশ শেষ, এখন ওপরের অংশটা’ তৈরির দায়িত্ব নতুন নেতৃত্বের।
বিওএর বিকেন্দ্রীকরণ তো হলো না...
কুতুবউদ্দিন: এর কারণ, আমাদের বড় সমস্যা ছিল অর্থ। আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিওএর তহবিলে ছিল এক কোটি টাকা। এখন ২৬ কোটি। সরকারের টাকা পেতে পেতে অনেক সময় শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। কিন্তু আমরা বসে না থেকে বিওএর টাকা দিয়েই ট্রেনিং চালিয়েছি। সরকার থেকে বছরে পাওয়া পাঁচ-সাত লাখ টাকা দিয়ে বিওএ চলে না। বুঝুন, আমরা কত এগিয়েছি। এখন বিভাগীয় পর্যায়ে বিওএকে নিয়ে যাওয়া যায়।
খেলোয়াড়-ফেডারেশনের জন্য কতটা কী করতে পেরেছেন?
কুতুবউদ্দিন: খেলোয়াড়দের জন্য স্কলারশিপ, জেলায় জেলায় ‘স্পোর্টস ফর অল’ ক্রীড়া চালু করেছি। ফেডারেশনগুলোকে সাধ্যমতো সহায়তা দিতে পেরেছি। ইন্দো-বাংলা গেমস চালু হয়েছে আমার সময়ে। অলিম্পিক একাডেমি, অলিম্পিক মিউজিয়াম, লাইব্রেরি—এসব উদ্যোগও উল্লেখযোগ্য। আইওসি থেকে লবিং করে ২৬ সিটের মার্সিডিজ বেঞ্চ গাড়ি এনেছি। আমরা দুই কোটি টাকা এফডিআর করেছি। যেন ইন্টারেস্টটা দুস্থ খেলোয়াড়, সংগঠকদের দিতে পারি।
কিন্তু ইন্দো-বাংলা গেমসটা তো অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ গেমসটা তো ২০০২ সালের পর আর হয়নি। কেন?
কুতুবউদ্দিন: ইন্দো-বাংলা গেমসের ব্যাপারে দুই পক্ষেই কিছু সমস্যা রয়েছে। এবার এই গেমসের স্বাগতিক আমরা। সরকার টাকা দিলে গেমসটা হতে পারে। সরকারের কাছে বাজেট দেওয়া হয়েছে। আর সরকার টাকা না দেওয়ায় বাংলাদেশ গেমস হয়নি। গত মার্চে সব ফেডারেশনকে বললাম, ন্যাশনাল না করে বাংলাদেশ গেমসটা করা যেতে পারে। অনেকে বলেছে, ন্যাশনাল করে ফেলেছে। ওরা এক মাসের মধ্যে ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানাবে বলেছে। জানায়নি। যা-ই হোক, গেমসটা হওয়া উচিত। আশা করি হবে।
আপনি ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতিও ছিলেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ফেডারেশনগুলোকে কেমন দেখলেন?
কুতুবউদ্দিন: এই অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অনেক ফেডারেশনে বসার মতো অবস্থা নেই। যার ফলে প্রেসিডেন্টরা আসেনই না। এনএসসি টাওয়ারটা ভাড়া না দিয়ে ফেডারেশনগুলোর অফিস করার দাবি অনেক আগেই করেছিলাম। আবারও বলি, ভালো-ভদ্র জায়গায় ফেডারেশনগুলোর অফিস নেওয়া হোক, যাতে সভাপতি সেক্রেটারিসহ সবাই আসেন। তা ছাড়া ফেডারেশনকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে হবে সরকারকে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দোকানপাটের ভাড়া বাড়িয়ে সেই টাকা ফেডারেশনকে দিতে পারে এনএসসি। নইলে খেলোয়াড় তৈরি হবে না। অলিম্পিক শুধু সাহায্য কিংবা তত্ত্বাবধান করতে পারে।
বিওএকে পেশাদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার একটা অঙ্গীকারও ছিল আপনার। সেটা কতটা পেরেছেন?
কুতুবউদ্দিন: বিওএ এখন শতভাগ পেশাদার। এখন আমাদের হিসাবের হালনাগাদ অডিট আছে। সবচেয়ে খারাপ জায়গা অ্যাকাউন্টস। আমার বড় সার্থকতা, আর্থিক দিক দিয়ে আমাদের নামে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। কোনো বদনাম নিয়ে যাচ্ছি না। এটাও আমার বড় প্রাপ্তি।
... ... ....
বিওএর নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন। পান্থপথে এনভয় গ্রুপের অফিস থেকে বঙ্গভবনের পাশে বিওএ ভবন। গাড়িতে তাঁর সঙ্গী হলাম। উঠে এল আরও অনেক কিছু
... ... ....
একসময় বিওএ ছিল প্রয়াত মহাসচিব জাফর ইমামের ‘ব্রিফকেস সংগঠন’, সে অবস্থায় আপনি দায়িত্ব নেন। তখনকার অবস্থা আসলে কেমন ছিল?
কুতুবউদ্দিন: একদিন দুপুরে বিওএতে গিয়ে দেখলাম, দুজন পিয়নের একজনও নেই। ওরা নাকি খাবার আনতে গেছে। সে সময় বিওএর টাকায় খাওয়াদাওয়ার ধুম পড়ত প্রতিদিন। পরে চিফ (বিওএর সভাপতি, সেনাপ্রধান) এটা বন্ধ করেছেন। আমরা এই কালচার থেকে বের হয়ে এসেছি। তখন ৮০ স্কয়ারফিটের একটা রুম ছিল মহাসচিবের। ওই অবস্থার মধ্যে কাজ করে খেলাধুলার উন্নতি সম্ভব ছিল না। তাই ভবন করার চিন্তা করি।
ভবন করার সময় নাকি ঝামেলায় পড়েছিলেন?
কুতুবউদ্দিন: বড় একটা ঝামেলা হয়েছিল। মাটির তলেই খরচ হয়ে গেল দেড়-দুই কোটি টাকা। একপর্যায়ে জানা গেল, ড্রয়িংটা ওভার ডিজাইন। এটা বিশাল এক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযাগ ছিল না বিওএর সংশ্লিষ্ট কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। বিওএ সভাপতি ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন, সে এক লম্বা কাহিনি। সমস্যা হয়েছে, তবে আমরা পিছপা হইনি। এ ব্যাপারে ছানাউল হক বকুল, আনিসুর রহমান দীপু সহযোগিতা করেছে অনেক।
নিশ্চয়ই পেছনে ফিরে আপনার এখন অনেক কথা মনে পড়ছে?
কুতুবউদ্দিন: অনেক...অনেক কথা আছে। এসএ গেমসের উদ্বোধনী-সমাপনীর জন্য ৪০ কোটি টাকা তুলতে হবে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বললাম, সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিকে ডাকি। ডাকাও হলো। এর মধ্যে টিটুর সঙ্গে (সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার টিটু) কথা হয়, বললাম, ‘তুমি আলাদা করে এক কোটি টাকা চেক নিয়ে আসো। সবার আগে দিলে আলাদা প্রচার পাবে।’ ক্যামেরা-ট্যামেরা সব রেডি। ওই অনুষ্ঠানে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নজরুল সাহেব বললেন, ‘কী করলেন, আমাদের কেন বলেননি টাকা আনতে।’ আমি বললাম, ‘আপনি একটা খালি খাম দিন, ভেতরে কী আছে কেউ দেখবে না।’ উনি একটা খালি খাম তুলে দেন। পরদিন এক কোটি টাকার চেক পাঠান (হা হা হা)।
আপনি ক্রীড়াঙ্গনে কোনো পদে থাকছেন না। তাহলে কি ক্রীড়াঙ্গন আপনাকে হারাল?
কুতুবউদ্দিন: ক্রীড়াঙ্গনে যেকোনো প্রয়োজনেই পাশে থাকব। পৃষ্ঠপোষণা অব্যাহত রাখব। স্পোর্টস আমার রক্তে। এটা ছাড়া থাকা অসম্ভব। ভীষণ এনজয় করি খেলাটা। পেপার খুলে প্রথমেই যাই খেলার পাতায়।
তাহলে খেলোয়াড় হলেন না কেন?
কুতুবউদ্দিন: লক্ষ্য ছিল ইঞ্জিনিয়ার হব। হয়েছিও। তবে আজিমপুর টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে থাকার সময় ক্লাস নাইন পর্যন্ত খেলা ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। এমন কোনো খেলা নেই, আমি খেলিনি, সব খেলা সম্পর্কেই জানি (হাসি)। অমি কুস্তি পর্যন্ত লড়তাম!
তাই নাকি, সব খেলাই পারেন?
কুতুবউদ্দিন: আমি ইয়াং পেগাসাসের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেলেছি। হায়ারে যেতাম। বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের গোলকিপার ছিলাম, আমরা চ্যাম্পিয়নও হই। ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক থাকতে ইরান গেলাম ব্যাডমিন্টন টিম নিয়ে। খেলোয়াড় কম থাকায় হাশেমের সঙ্গে ডাবলসে নেমে যাই (হা হা হা)।
... ... ....
বিওএ ভবন এসে গেল গাড়ি। ভোট দিতে নেমে সবার মাঝে হারিয়ে গেলেন ক্রীড়াঙ্গনের ‘কুতুব ভাই’।
No comments