মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই-দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন, তাঁদের অনেকেই আজ লড়ছেন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য। তাঁদের জীবনচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন-রিকশা চালিয়ে জীবন কাটছে হাদিস প্যাদার by দেবদাস মজুমদার
ষাটোর্ধ্ব মুক্তিযোদ্ধা হাদিস প্যাদাকে প্রতিদিন সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরোতে হয় পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় রিকশাটা নিয়ে। রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে আট কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদর। দিনভর সেখানেই রিকশা চালান তিনি।
এভাবে রিকশা চালিয়ে জীবন চলছে তাঁর ১৯ বছর ধরে। স্ত্রী, এক ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে বড় সংসার তাঁর। বড় সংসারে অভাব আরো বড়। দুই মেয়ে বিয়ের যোগ্য। হতদরিদ্র বাবার কাঁধে এ যেন 'বোঝার ওপর শাকের আঁটি'।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরের গ্রাম বেতমোর রাজপাড়ায় থাকেন হাদিস প্যাদা। ১৬ শতাংশ জমিতে তাঁর একখানা নড়বড়ে ঘর। জমি-জিরাত বলতে এটুকুই।
পরিবারের সাত সদস্যের মুখে প্রতিদিনের খাবার তুলে দিতে মুক্তিযোদ্ধা হাদিস প্যাদাকে মফস্বল শহরে বেহাল সড়কে রিকশা চালাতে হয়। এই বয়সে দিনভর রিকশা চালানো যে কি কষ্টের! এর ওপর রিকশাটাও এখন চালানোর উপযোগী নেই। মঠবাড়িয়ায় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত মানুষকে নতুন রিকশা ও ভ্যান দিয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। মুক্তিযোদ্ধা হাদিস প্যাদার ভাগ্যে নতুন রিকশা জোটেনি। তিনি আবেদনও করেছিলেন ওই সব বেসরকারি সংস্থার কাছে। কিন্তু নতুন রিকশা কিংবা ভ্যান কিছুই মেলেনি।
হাদিস প্যাদা কালের কণ্ঠকে জানান, ১৯৭১ সালে দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মঠবাড়িয়ার রাজপাড়া গ্রামের মেজর লতিফ হাওলাদারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সুন্দরবনের বগী ক্যাম্পে যান। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর নৌকায় করে চালনা হয়ে চলে যান ভারতে। ভারতের আমলানী ক্যাম্পে তিন মাস ট্রেনিং নেওয়ার পর খুলনায় চলে আসেন। এরপর দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্নাবান্না ও খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত থাকেন।
হাদিস প্যাদা আরো জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি চাকরি নেন জাহাজে। এমভি রোকেয়া নামের ওই জাহাজে সুকানির কাজ শুরু করেন। পরে তিনি ওই জাহাজের সারেং হন। এভাবে কাটে ২০ বছর। একদিন রাতে নদীতে জাহাজ চালাতে গিয়ে ডুবোচরে ধাক্কা লাগে। দুই চোখে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়। বাড়িতে এসে কিছুদিন পর সুস্থ হন। শুরু করেন অন্যের ক্ষেত-খামারে দিনমজুরির কাজ। এরপর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া ভাতার টাকা জমিয়ে পুরনো একটি রিকশা কেনেন। সেই থেকে জীবন তাঁর বাঁধা পড়ে রিকশার চাকায়।
আক্ষেপ করে হাদিস প্যাদা বলেন, 'বয়স বেড়ে গেছে, তাই রিকশা চালানো আর শরীরে কুলায় না। এক মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে এখন সর্বস্বান্ত। আরো দুই মেয়ে বিয়ের যোগ্য। সরকার একটু দোকানঘরের জমি বন্দোবস্ত দিলে শেষ বয়সে দোকানদারি করে খাইতে পারতাম।'
মুক্তিযুদ্ধকালে সুন্দরবন অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজিবুল হক খান মজনু কালের কণ্ঠকে বলেন, হাদিস প্যাদা একজন অতি দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা। তাঁকে আজও পুনর্বাসন করতে না পারাটা দুঃখজনক।
মঠবাড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, 'হাদিস প্যাদার মতো অনেক দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে কার্যকর সহায়তা দিতে পারিনি আমরা। একজন মুক্তিযোদ্ধার এ বয়সে স্বাধীন দেশে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।'
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরের গ্রাম বেতমোর রাজপাড়ায় থাকেন হাদিস প্যাদা। ১৬ শতাংশ জমিতে তাঁর একখানা নড়বড়ে ঘর। জমি-জিরাত বলতে এটুকুই।
পরিবারের সাত সদস্যের মুখে প্রতিদিনের খাবার তুলে দিতে মুক্তিযোদ্ধা হাদিস প্যাদাকে মফস্বল শহরে বেহাল সড়কে রিকশা চালাতে হয়। এই বয়সে দিনভর রিকশা চালানো যে কি কষ্টের! এর ওপর রিকশাটাও এখন চালানোর উপযোগী নেই। মঠবাড়িয়ায় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত মানুষকে নতুন রিকশা ও ভ্যান দিয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। মুক্তিযোদ্ধা হাদিস প্যাদার ভাগ্যে নতুন রিকশা জোটেনি। তিনি আবেদনও করেছিলেন ওই সব বেসরকারি সংস্থার কাছে। কিন্তু নতুন রিকশা কিংবা ভ্যান কিছুই মেলেনি।
হাদিস প্যাদা কালের কণ্ঠকে জানান, ১৯৭১ সালে দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মঠবাড়িয়ার রাজপাড়া গ্রামের মেজর লতিফ হাওলাদারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সুন্দরবনের বগী ক্যাম্পে যান। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর নৌকায় করে চালনা হয়ে চলে যান ভারতে। ভারতের আমলানী ক্যাম্পে তিন মাস ট্রেনিং নেওয়ার পর খুলনায় চলে আসেন। এরপর দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্নাবান্না ও খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত থাকেন।
হাদিস প্যাদা আরো জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি চাকরি নেন জাহাজে। এমভি রোকেয়া নামের ওই জাহাজে সুকানির কাজ শুরু করেন। পরে তিনি ওই জাহাজের সারেং হন। এভাবে কাটে ২০ বছর। একদিন রাতে নদীতে জাহাজ চালাতে গিয়ে ডুবোচরে ধাক্কা লাগে। দুই চোখে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়। বাড়িতে এসে কিছুদিন পর সুস্থ হন। শুরু করেন অন্যের ক্ষেত-খামারে দিনমজুরির কাজ। এরপর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া ভাতার টাকা জমিয়ে পুরনো একটি রিকশা কেনেন। সেই থেকে জীবন তাঁর বাঁধা পড়ে রিকশার চাকায়।
আক্ষেপ করে হাদিস প্যাদা বলেন, 'বয়স বেড়ে গেছে, তাই রিকশা চালানো আর শরীরে কুলায় না। এক মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে এখন সর্বস্বান্ত। আরো দুই মেয়ে বিয়ের যোগ্য। সরকার একটু দোকানঘরের জমি বন্দোবস্ত দিলে শেষ বয়সে দোকানদারি করে খাইতে পারতাম।'
মুক্তিযুদ্ধকালে সুন্দরবন অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজিবুল হক খান মজনু কালের কণ্ঠকে বলেন, হাদিস প্যাদা একজন অতি দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা। তাঁকে আজও পুনর্বাসন করতে না পারাটা দুঃখজনক।
মঠবাড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, 'হাদিস প্যাদার মতো অনেক দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে কার্যকর সহায়তা দিতে পারিনি আমরা। একজন মুক্তিযোদ্ধার এ বয়সে স্বাধীন দেশে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।'
No comments