উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব- ‘শাস্ত্রীয় সংগীতে এই বাংলার অবদান আছে’ by দিঠি হাসনাত
গত শুক্রবার বিকেল। আমরা তখন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সামনে, একটি হোটেলের লবিতে। আগের রাতেই উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে সংগীত পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতার মন ভরিয়েছেন তিনি। বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন তখন। ফলে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে একটুও সমস্যা হয়নি আমাদের।
বলি, উৎসবে এসে কেমন লাগছে?
উত্তর দিতে সময় নেন না তিনি। বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমার দাদা-নানার বাড়ি ময়মনসিংহে। কাজেই আমিও এই বাংলারই মানুষ। আর বাংলাদেশের ছোট-বড় সবার প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের চেয়ে বড় আর কিছু নেই। মানুষের আত্মার বিকাশের জন্য যা জরুরি, তাই গান।’
এবার আইটিসি-এসআরএ নিয়েও বলেন তিনি।
‘১৯৭৭-এ আইটিসি-এসআরএ প্রথম স্কলার হিসেবে যোগ দিই। তখন হাজার পঞ্চাশ টাকার একটা চেক পেতাম। বাবার ইচ্ছাতেই সংগীত শিক্ষা শুরু হয়। দুই বছর বয়সে প্রথম গুরু ছিলেন শ্রীকানাই দাস বৈরাগী। আইটিসি-এসআরএতে আসার পর আমি বড় বড় গুরুর সান্নিধ্য পাই। হিরাবাঈ বারোদকার, ওস্তাদ নিসার হোসেন খান, পণ্ডিত ভি জি যোগ, ওস্তাদ মুনাক্কর আলী খান, যিনি বড়ে গোলাম আলী খানের পুত্র। সংগীতের আসল তালিম পাই পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে। তিনি সংগীত নিয়ে আমার ধারণাটা বদলে দিলেন। তাই এসআরএ আমার কাছে স্বর্গ।’
ঘরানা প্রসঙ্গটি অবধারিতভাবেই উঠে আসে।
‘প্রথমে দরকার একটা নির্দিষ্ট ঘরানায় তালিম নিয়ে তারপর অন্য ঘরের ভালো জিনিস নিজের মধ্যে আত্মস্থ করা। এতে নতুন শৈলী তৈরি হয়। আমার গুরু পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, ফারুখাবাদ, আগ্রা, বেনারস, দিল্লি আজরারা এই চার ঘরানায় তালিম পেয়েছেন। তিনি এত বিনয়ী ছিলেন, এসব ঘরানার সব ভালো জিনিস নিয়ে নিজস্ব একটা শৈলী, একটা দর্শন তৈরি করতে পেরেছেন। আমাকে বলতেন, শুধু সংগীতের সূক্ষ্ম অনুভূতি দিয়ে অলংকরণ করা যাবে না। মানুষের আত্মার আসল কথা নেতিবাচক শক্তি-চিন্তাকে সরিয়ে ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে আসতে হবে। সব সময় নিজের দোষ দেখে আর অপরের গুণ দেখতে পারলেই ভালো কিছু হবে। মনে রেখো, তুমি যতটুকু দাগ টানবে আরেকজন তাকে আরও বড় করবে।’
আপনি অনেক বড় মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছেন...।
‘হ্যাঁ। আমি সৌভাগ্যবান আমার প্রথম খেয়ালের রেকর্ডের ফুটনোট সত্যজিৎ রায় নিজে লিখে দিয়েছিলেন। নওশাদজীর আশীর্বাদ পেয়েছি। এগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’
ছোটদের জন্য প্রতিষ্ঠান শ্রুতিনন্দন করার কথা কেন মাথায় এল?
‘আসলে এসআরএ অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছিল ভিতটা আরও মজবুত হওয়া দরকার। তখন মনে হলো, শিশুদের তৈরি করতে ঠিকমতো তালিম দিলে এ সমস্যার সমাধান হবে। তখন আমি আইটিসির তখনকার পরিচালক বিজয় কিসলুকে কথাটা বললাম। তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। তখন এমন কোনো নিয়ম ছিল না। পরে আমি তা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’
বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের উচ্চাঙ্গসংগীতের সম্ভাবনা কেমন দেখতে পাচ্ছেন?
‘সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বেঙ্গল-আইটিসি-এসআরএর নতুন একাডেমির ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আমি আর কমালকারজি একসঙ্গে এই দায়িত্ব নিচ্ছি। আমার আরেকটা কাজ হবে জেলায় জেলায় গিয়ে প্রতিভার অন্বেষণ করা। এই যে উৎসবটা হচ্ছে, এটা এক দিনে হয়নি। বাবা আলাউদ্দিন খাঁ, রাধিকামোহন মৈত্র—এ ধরনের বড় সংগীতজ্ঞের ফসল এটা। আমার ইচ্ছা বাংলাদেশ থেকে উচ্চাঙ্গসংগীতে বড় শিল্পী তৈরি হোক। শাস্ত্রীয় সংগীতে এই বাংলার অবদান আছে। বিলাবল-মূল রাগ তো বাংলারই অবদান। লোকসংগীতের যে সুর, দোতরার সুর, কীর্তনের সুর—তা বাংলার অবদান।’
বিদায়ের সময় হয়। বিদায়ের সময়েও মন জুড়ে থাকে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর উজ্জ্বল উপস্থিতি।
উত্তর দিতে সময় নেন না তিনি। বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমার দাদা-নানার বাড়ি ময়মনসিংহে। কাজেই আমিও এই বাংলারই মানুষ। আর বাংলাদেশের ছোট-বড় সবার প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের চেয়ে বড় আর কিছু নেই। মানুষের আত্মার বিকাশের জন্য যা জরুরি, তাই গান।’
এবার আইটিসি-এসআরএ নিয়েও বলেন তিনি।
‘১৯৭৭-এ আইটিসি-এসআরএ প্রথম স্কলার হিসেবে যোগ দিই। তখন হাজার পঞ্চাশ টাকার একটা চেক পেতাম। বাবার ইচ্ছাতেই সংগীত শিক্ষা শুরু হয়। দুই বছর বয়সে প্রথম গুরু ছিলেন শ্রীকানাই দাস বৈরাগী। আইটিসি-এসআরএতে আসার পর আমি বড় বড় গুরুর সান্নিধ্য পাই। হিরাবাঈ বারোদকার, ওস্তাদ নিসার হোসেন খান, পণ্ডিত ভি জি যোগ, ওস্তাদ মুনাক্কর আলী খান, যিনি বড়ে গোলাম আলী খানের পুত্র। সংগীতের আসল তালিম পাই পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে। তিনি সংগীত নিয়ে আমার ধারণাটা বদলে দিলেন। তাই এসআরএ আমার কাছে স্বর্গ।’
ঘরানা প্রসঙ্গটি অবধারিতভাবেই উঠে আসে।
‘প্রথমে দরকার একটা নির্দিষ্ট ঘরানায় তালিম নিয়ে তারপর অন্য ঘরের ভালো জিনিস নিজের মধ্যে আত্মস্থ করা। এতে নতুন শৈলী তৈরি হয়। আমার গুরু পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, ফারুখাবাদ, আগ্রা, বেনারস, দিল্লি আজরারা এই চার ঘরানায় তালিম পেয়েছেন। তিনি এত বিনয়ী ছিলেন, এসব ঘরানার সব ভালো জিনিস নিয়ে নিজস্ব একটা শৈলী, একটা দর্শন তৈরি করতে পেরেছেন। আমাকে বলতেন, শুধু সংগীতের সূক্ষ্ম অনুভূতি দিয়ে অলংকরণ করা যাবে না। মানুষের আত্মার আসল কথা নেতিবাচক শক্তি-চিন্তাকে সরিয়ে ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে আসতে হবে। সব সময় নিজের দোষ দেখে আর অপরের গুণ দেখতে পারলেই ভালো কিছু হবে। মনে রেখো, তুমি যতটুকু দাগ টানবে আরেকজন তাকে আরও বড় করবে।’
আপনি অনেক বড় মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছেন...।
‘হ্যাঁ। আমি সৌভাগ্যবান আমার প্রথম খেয়ালের রেকর্ডের ফুটনোট সত্যজিৎ রায় নিজে লিখে দিয়েছিলেন। নওশাদজীর আশীর্বাদ পেয়েছি। এগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’
ছোটদের জন্য প্রতিষ্ঠান শ্রুতিনন্দন করার কথা কেন মাথায় এল?
‘আসলে এসআরএ অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছিল ভিতটা আরও মজবুত হওয়া দরকার। তখন মনে হলো, শিশুদের তৈরি করতে ঠিকমতো তালিম দিলে এ সমস্যার সমাধান হবে। তখন আমি আইটিসির তখনকার পরিচালক বিজয় কিসলুকে কথাটা বললাম। তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। তখন এমন কোনো নিয়ম ছিল না। পরে আমি তা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’
বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের উচ্চাঙ্গসংগীতের সম্ভাবনা কেমন দেখতে পাচ্ছেন?
‘সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বেঙ্গল-আইটিসি-এসআরএর নতুন একাডেমির ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আমি আর কমালকারজি একসঙ্গে এই দায়িত্ব নিচ্ছি। আমার আরেকটা কাজ হবে জেলায় জেলায় গিয়ে প্রতিভার অন্বেষণ করা। এই যে উৎসবটা হচ্ছে, এটা এক দিনে হয়নি। বাবা আলাউদ্দিন খাঁ, রাধিকামোহন মৈত্র—এ ধরনের বড় সংগীতজ্ঞের ফসল এটা। আমার ইচ্ছা বাংলাদেশ থেকে উচ্চাঙ্গসংগীতে বড় শিল্পী তৈরি হোক। শাস্ত্রীয় সংগীতে এই বাংলার অবদান আছে। বিলাবল-মূল রাগ তো বাংলারই অবদান। লোকসংগীতের যে সুর, দোতরার সুর, কীর্তনের সুর—তা বাংলার অবদান।’
বিদায়ের সময় হয়। বিদায়ের সময়েও মন জুড়ে থাকে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর উজ্জ্বল উপস্থিতি।
No comments