যোগাযোগ-ঢাকার যানজট নিরসনে একটি প্রস্তাবনা by বিজয় কৃষ্ণ দে
প্রকৃতপক্ষেই টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নততর যোগাযোগ বলতে আধুনিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাই সর্বাগ্রে বিবেচ্য।
রেলপথের আধুনিকায়নের মাধ্যমে তথা রেলপথ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ঢাকাকে যানজটমুক্ত করে জনবহুলতার অভিশাপ থেকে রক্ষা তথা বসবাস উপযোগী একটি তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করা একান্ত অপরিহার্য।
বর্তমানে রেল যোগাযোগের তথা রেলপথ বৃদ্ধি করা অন্য যে কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থার চেয়ে আপাত দৃষ্টিতে খরচবহুল মনে হলেও উপকারভোগী তথা দেশবাসী স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে সুবিধাভোগ করতে সমর্থ হবে। মানবেতর জীবন থেকে উন্নততর জীবনের স্বাদ পেতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সক্ষম হবে। এ জন্য প্রয়োজন রাজধানী ঢাকা থেকে সব বিভাগের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগযোগ স্থাপন করা এবং এটা খুব দুরূহ কাজও নয়। কেননা রাজধানী ঢাকা থেকে অন্য ৬টি বিভাগীয় শহরের সরাসরি দূরত্ব নিম্নরূপ:
ঢাকা থেকে ৬টি বিভাগের সরাসরি দূরত্ব
১। ঢাকা থেকে বরিশাল ৭০.৫৯ মাইল।
২। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ১৩২.১৫ মাইল।
৩। ঢাকা থেকে খুলনা ৮৩.৮৯ মাইল।
৪। ঢাকা থেকে রাজশাহী ১২২.৪৭ মাইল।
৫। ঢাকা থেকে রংপুর ১৫৭.৭৯ মাইল।
৬। ঢাকা থেকে সিলেট ১২২.৭২ মাইল।
মোট = ৬৮৯.৬১ মাইল (১১১০.২৭২ কিলোমিটার)
দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৬৮৯.৬১ মাইল বা ১১১০.২৭ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করা প্রয়োজন হবে। যার জন্য খরচ হবে আনুমানিক প্রতি কিলোমিটারে ১০ কোটি টাকা হিসাবে ১১১০২.৭২ কোটি টাকা। এ টাকা খরচ করে রেলপথ স্থাপন করা হলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে তা নিম্নরূপ :
প্রথমত রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসন হবে। ৬টি বিভাগের প্রায় ৩০ লাখ শ্রমজীবী মানুষ ঢাকা শহরে পরিবারসহ অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। কম করে প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩ জন হলেও প্রায় ৯০ লাখ অতিরিক্ত মানুষের বসবাসের কারণে ঢাকা হয়ে উঠেছে বিষাক্ত নগরীতে। সুলভ ও স্বল্পতম সময়ে রেলযোগে যাতায়াতের সুযোগ পেলে তারা প্রতিদিন তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে ঢাকায় গিয়ে নিত্যকার কাজ শেষে আবার নিজ স্থানে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে। ফলে একদিকে যেমন ঢাকার যানজট নিরসন হবে, অন্যদিকে স্বল্প আয়ের মানুষ অল্প খরচে জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ পাবে। অর্থাৎ ৩০ লাখ পরিবারের প্রতিটির কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা সংসার খরচ হিসাব করলে প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যয় হলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ অবশ্যই সাধিত হবে।
দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কৃষি পণ্য পরিবহনে সড়কপথের চেয়ে রেলপথে খরচ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কম হবে। ফলে পণ্যমূল্য, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার মূল্য কম করে হলেও শতকরা ২৫ ভাগ কমবে। সাশ্রয় হবে সাধারণ মানুষ ও কৃষকের। অন্যদিকে সরকারের জ্বালানি খাতের বার্ষিক ১৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি প্রশমিত হবে, কারণ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি 'ভলভো' বাসে ৫০ জন যাত্রী নিয়ে যেতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রায় আনীত তেল খরচ হয় একই পরিমাণ তেল খরচে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ৫ হাজার যাত্রী নিয়ে এবং শত শত টন মাল নিয়ে একটি রেলগাড়ি যেতে পারবে। এতে দেখা যাচ্ছে, সড়কপথের চেয়ে রেলপথের যাতায়াত খরচ অনেক কম এবং শ্রম ঘণ্টাও অনেক সাশ্রয় হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত অন্যান্য যে কোনো পরিবহনের চেয়ে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি পরিবেশের জন্য অনেক উপকারী। ফলে গ্রামীণ জনপদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য রক্ষায় রেলপথ অনেক সহায়ক হবে।
এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের 'ভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ওয়ান' কার্যকর করতে বা দিনবদলের ইশতেহারে ঘোষিত উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্ণিত মতে সম্প্রসারণের প্রস্তাবটি সদয় বিবেচনার জন্য আপনার সমীপে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম দেশবাসী আন্তরিক মূল্যায়ন করে থাকে। তার 'ভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ওয়ান' বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য আমার এ প্রস্তাব সদয় বিবেচনা করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
বিজয় কৃষ্ণ দে : পরিচালক, অমৃত কনজ্যুমারস ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড
বর্তমানে রেল যোগাযোগের তথা রেলপথ বৃদ্ধি করা অন্য যে কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থার চেয়ে আপাত দৃষ্টিতে খরচবহুল মনে হলেও উপকারভোগী তথা দেশবাসী স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে সুবিধাভোগ করতে সমর্থ হবে। মানবেতর জীবন থেকে উন্নততর জীবনের স্বাদ পেতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সক্ষম হবে। এ জন্য প্রয়োজন রাজধানী ঢাকা থেকে সব বিভাগের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগযোগ স্থাপন করা এবং এটা খুব দুরূহ কাজও নয়। কেননা রাজধানী ঢাকা থেকে অন্য ৬টি বিভাগীয় শহরের সরাসরি দূরত্ব নিম্নরূপ:
ঢাকা থেকে ৬টি বিভাগের সরাসরি দূরত্ব
১। ঢাকা থেকে বরিশাল ৭০.৫৯ মাইল।
২। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ১৩২.১৫ মাইল।
৩। ঢাকা থেকে খুলনা ৮৩.৮৯ মাইল।
৪। ঢাকা থেকে রাজশাহী ১২২.৪৭ মাইল।
৫। ঢাকা থেকে রংপুর ১৫৭.৭৯ মাইল।
৬। ঢাকা থেকে সিলেট ১২২.৭২ মাইল।
মোট = ৬৮৯.৬১ মাইল (১১১০.২৭২ কিলোমিটার)
দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৬৮৯.৬১ মাইল বা ১১১০.২৭ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করা প্রয়োজন হবে। যার জন্য খরচ হবে আনুমানিক প্রতি কিলোমিটারে ১০ কোটি টাকা হিসাবে ১১১০২.৭২ কোটি টাকা। এ টাকা খরচ করে রেলপথ স্থাপন করা হলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে তা নিম্নরূপ :
প্রথমত রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসন হবে। ৬টি বিভাগের প্রায় ৩০ লাখ শ্রমজীবী মানুষ ঢাকা শহরে পরিবারসহ অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। কম করে প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩ জন হলেও প্রায় ৯০ লাখ অতিরিক্ত মানুষের বসবাসের কারণে ঢাকা হয়ে উঠেছে বিষাক্ত নগরীতে। সুলভ ও স্বল্পতম সময়ে রেলযোগে যাতায়াতের সুযোগ পেলে তারা প্রতিদিন তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে ঢাকায় গিয়ে নিত্যকার কাজ শেষে আবার নিজ স্থানে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে। ফলে একদিকে যেমন ঢাকার যানজট নিরসন হবে, অন্যদিকে স্বল্প আয়ের মানুষ অল্প খরচে জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ পাবে। অর্থাৎ ৩০ লাখ পরিবারের প্রতিটির কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা সংসার খরচ হিসাব করলে প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যয় হলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ অবশ্যই সাধিত হবে।
দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কৃষি পণ্য পরিবহনে সড়কপথের চেয়ে রেলপথে খরচ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কম হবে। ফলে পণ্যমূল্য, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার মূল্য কম করে হলেও শতকরা ২৫ ভাগ কমবে। সাশ্রয় হবে সাধারণ মানুষ ও কৃষকের। অন্যদিকে সরকারের জ্বালানি খাতের বার্ষিক ১৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি প্রশমিত হবে, কারণ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি 'ভলভো' বাসে ৫০ জন যাত্রী নিয়ে যেতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রায় আনীত তেল খরচ হয় একই পরিমাণ তেল খরচে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ৫ হাজার যাত্রী নিয়ে এবং শত শত টন মাল নিয়ে একটি রেলগাড়ি যেতে পারবে। এতে দেখা যাচ্ছে, সড়কপথের চেয়ে রেলপথের যাতায়াত খরচ অনেক কম এবং শ্রম ঘণ্টাও অনেক সাশ্রয় হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত অন্যান্য যে কোনো পরিবহনের চেয়ে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি পরিবেশের জন্য অনেক উপকারী। ফলে গ্রামীণ জনপদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য রক্ষায় রেলপথ অনেক সহায়ক হবে।
এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের 'ভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ওয়ান' কার্যকর করতে বা দিনবদলের ইশতেহারে ঘোষিত উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্ণিত মতে সম্প্রসারণের প্রস্তাবটি সদয় বিবেচনার জন্য আপনার সমীপে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম দেশবাসী আন্তরিক মূল্যায়ন করে থাকে। তার 'ভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ওয়ান' বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য আমার এ প্রস্তাব সদয় বিবেচনা করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
বিজয় কৃষ্ণ দে : পরিচালক, অমৃত কনজ্যুমারস ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড
No comments