বিশেষ সাক্ষাৎকার : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশন অপরিহার্য
বাংলাদেশের নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মোস্তফা হোসেইন
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নেই- এমন অভিযোগ শোনা যায় প্রায়ই। চলমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা কতটা আছে বলে আপনি মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ছোটখাটো কিছু বিষয় ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনই বলতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত একটি আইন করা হয়েছিল। কিছু সংশোধনী হওয়া উচিত এ আইনের। আসলে স্বাধীনতা তখনই কার্যকর হয় যখন নির্বাচন কমিশন নিজে কিছু করার সাহস রাখে এবং করতে চায়।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশনের সচিব তো সরকার নিয়োজিত এবং তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ঘনিষ্ঠতর হয়ে কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে কি কমিশন স্বাধীন থাকতে পারে?
এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশনের সচিবালয় হওয়া উচিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীন। সিইসিই কমিশনের ক্ষমতায়ন করার অধিকারী হবেন। আমরা তেমনটিই চেয়েছিলাম। আমাদের সময় আমাদের তিনজনের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ ছিল। দেখুন, সচিব সরকার নিয়োজিত। তিনি আসেন প্রেষণে। তাঁর ওপর সরকারের প্রভাব থাকা স্বাভাবিক। সচিবের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার সুযোগ কিন্তু থেকে যায়।
কালের কণ্ঠ : ব্যয় নির্বাহের ব্যাপারে সরকারের মুখাপেক্ষী হওয়ার বিষয়টি-
এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশনকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাজেট আসে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। সেখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকে। কাটছাঁট করার প্রবণতা থাকে। যেমন মনে করুন, নির্বাচন কমিশন বলল, নিরাপত্তা বিধানের জন্য ১০ কোটি টাকা লাগবে। এটা নির্বাচন কমিশন হিসাব-নিকাশ করেই ঠিক করেছে। যখন তা সরকারের কাছে গেল তারা করল কি কেটেছেঁটে করে দিল সাত কিংবা আট কোটি টাকা। আমাদের আমলেই এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমরা সরকার থেকে প্রাপ্ত পুরো টাকাই বিডিআরকে দিয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু বাজেটে কাটছাঁট হয়ে গেছে, ফলে সেখানে পাওনা পরিশোধে অসুবিধা হয়।
কালের কণ্ঠ : তাহলে আর্থিক স্বাধীনতা কিভাবে আসতে পারে?
এম সাখাওয়াত হোসেন : বাজেটে সরাসরি চার্জ হবে। বাজেট থেকে সরাসরি টাকা আসবে নির্বাচন কমিশনে। ব্যয় ইত্যাদি নিরীক্ষা করবেন অডিটর জেনারেল। আর দায়বদ্ধ থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন যদি কার্যকর করতে হয়, তাহলে আর্থিক স্বাধীনতা দিতেই হবে।
কালের কণ্ঠ : জনবল নিয়োগের বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
এম সাখাওয়াত হোসেন : আমরা যখন নির্বাচন কমিশনে ছিলাম তখন কর্মকর্তা নিয়োগের দায়িত্বটা নিতে চাইনি। সরাসরি নিয়োগ হলে কিছু অসুবিধা আছে। দেখুন, পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ হলেও যেখানে দলীয়করণের অভিযোগ হয়, সেখানে নির্বাচন কমিশন যদি নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনই সমালোচনার মুখে পড়তে পারে। সেই সুযোগ থেকে যায়। আমরা চাইছিলাম পিএসসি নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ করে নির্বাচন কমিশনকে দেবে। এটা সরাসরি হওয়া উচিত। সেটা যদি পিএসসি করার পর আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়, তাহলে সেখানেও দলীয়করণের সুযোগ থেকে যাবে। আরেকটা বিষয়, নির্বাচন কমিশনের কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হলো। সেটাকে অনুমোদন করিয়ে আনার জন্য যদি আবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, তাহলে স্বাধীনতা কোথায় রইল। কোনো বিধি প্রণয়নের সময় তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলো সেটা সাংঘর্ষিক কি না দেখার জন্য, আর সেখানে যদি তারা হস্তক্ষেপ করে বসে তাহলে স্বাধীনতা অর্জন কতটা কার্যকর হবে। এর পরও আমি বলব, নির্বাচন কমিশন যেটুকু স্বাধীন সেটুকু যথাযথভাবে কাজে লাগানোর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপরই নির্ভর করে। তারা যদি সব কিছুতেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তাহলে স্বাধীনতা বজায় রাখা সম্ভব হবে না। আইন প্রয়োগের সাহস থাকতে হবে। একটি উদাহরণ দিই। দেয়ালে কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না বলে আইন করা হলো। এখন দেখুন, সেখানে বলবর্ধক বটিকা থেকে শুরু করে কত না পোস্টার লাগানো হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : আমাদের এখানে নির্বাচন কমিশনকে আস্থার সংকটে ভুগতে হয়। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বিশাল। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা নির্বাচন করবে সেই লোকগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিনতর হয়ে পড়বে। তারা তখন ম্যানেজ করতে পারবে না। আমরা বিচারপতি আজিজ সাহেবের আমলের কথা আনতে পারি। তখনো কিন্তু আইন ছিল। অথচ জনগণের আস্থা না থাকায় কী পরিস্থিতিই না তৈরি হয়েছিল।
কালের কণ্ঠ : আস্থা অর্জনের জন্য কী করা প্রয়োজন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : আমি মনে করি, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিনটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- প্রথমত, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা; দ্বিতীয়ত, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এবং তৃতীয়ত, জনগণের আস্থা। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জনগণের আস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে তার আন্তরিকতা ও সততা প্রমাণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এখন প্রচারের যুগ। মিডিয়ার যুগে সব কিছু মানুষ জানতে পারে এবং জানার চাহিদাও বেড়েছে। মিডিয়াকে কিভাবে কাজে লাগাবেন সেটা কিন্তু ভেবে দেখতে হবে। কাপাসিয়ার উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে বড়জোর ২০ শতাংশ আর আপনি বলে দিলেন ৪৫ শতাংশ। মানুষ জেনে গেল আপনি অসত্য বলেছেন। সারা দেশেই এর প্রভাব পড়বে।
কালের কণ্ঠ : ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে আপনারা উৎসাহী ছিলেন। তখন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি জানানো হয়েছিল। আবার এখন নির্বাচন কমিশনই বলছে, আগামীতে ইভিএম ব্যবহৃত হবে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ইভিএম ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সময় আমি, ছহুল সাহেব ভারতে গিয়েছিলাম তাদের নির্বাচন দেখার জন্য। ১৫তম পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছিল তাদের। সেখানে দেখা গেল কী নিখুঁতভাবে সহজ ও সন্দেহাতীত কাজ করছে ইভিএম। ব্যালট, সিলগালা এসব ব্যবহারের কোনো ঝামেলা নেই। আমাদের এখানে ব্যালট ছিনতাইয়ের যে প্রবণতা আছে সেটাও হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইভিএম ব্যবহার বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি।
কালের কণ্ঠ : তার পরও ইভিএম ব্যবহার করা থেকে পিছিয়ে আসতে হলো কেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : আমরা প্রথম দিকেই বুয়েটের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা সুন্দর কিছু পদ্ধতি বের করল। তাদের উদ্দীপনা ও সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করল। ২০০৯ সালের কথা। আমরা চট্টগ্রামে ইভিএমের ব্যবহার করলাম সফলভাবে। ঢাকার জন্য ৪০০ মেশিন বানানোর পরিকল্পনা করা হলো। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপিত হলো। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করলেন। কিন্তু চূড়ান্ত কিছু হওয়ার আগেই তিনি বললেন, আগামী নির্বাচন হবে ইভিএম ব্যবহার করে। তখনই গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেল। যেহেতু আওয়ামী লীগ বলেছে, তাই বিএনপিকে এর বিরোধিতা করতে হবে। এমনই তো কালচার আমাদের। তারা বলল, ডিজিটাল কারচুপির রাস্তা হচ্ছে। কিন্তু কুমিল্লায় এর সফল ব্যবহার হলো। এটা পৃথক একটি মেশিন। কোনো সার্ভারের মাধ্যমে একে হ্যাক করা সম্ভব নয়। আসলে চিলে কান নিয়ে গেছে বলে চিলের পেছনে দৌড়ানোর মতো ঘটনা বলতে পারেন। কারচুপি করা সম্ভব, হ্যাক করা সম্ভব- এমন একটি অবাস্তব যুক্তি দাঁড় করিয়ে এর বিরোধিতা করা হলো। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন করতে হলে ইভিএমের ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। আমাদের এখানে বুথ দখল করার কথা সবাই জানি। স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে গেলে এর বিকল্প নেই।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচনের অপরিহার্য শর্ত ভোটার তালিকা। সেই ভোটার তালিকা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। আপনাদের আমলে আগের তালিকা থেকে বহু ভোটারকে বাতিল করা হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে বলুন।
এম সাখাওয়াত হোসেন : ২০০৬-০৭ সালে ভোটার তালিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। অথচ স্বচ্ছ নির্বাচনের অপরিহার্য অঙ্গ তথা প্রথম শর্তই হচ্ছে সঠিক ভোটার তালিকা। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য নির্ভুল এবং জনবান্ধব ভোটার তালিকা করতেই হবে। ভোটার তালিকার ওপর জনগণের আস্থা থাকতে হবে। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন সত্যি কঠিন ছিল। ভোটার তালিকা যাঁরা করতেন তাঁদের ওপর রাজনৈতিক চাপ থাকত। অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক ভোটার হতো, মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতো না। রাজনৈতিক চাপের কারণে অনেক ভুয়া ভোটারকে তালিকাভুক্ত করা হতো। আসলে তখন জনসম্পৃক্ততা ছিল না তেমন একটা। অনেক বিশ্লেষক একে নিষ্ক্রিয় ভোটার তালিকা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। আমরা যখন নির্বাচন কমিশনে এলাম তখন দেখলাম, সেখানে এক কোটি ১২ থেকে ২০ লাখ ভোটারের কোনো অস্তিত্ব নেই। শুধু দ্বৈত ভোটারই নয়, কোনো ব্যক্তি চার জায়গায়ও ভোটার হয়েছেন।
কালের কণ্ঠ : ওই সময় তো জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যা ভোটার তালিকা প্রণয়নে সহায়ক হয়েছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের কাজটি করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আমরা চেয়েছিলাম যুগের উপযোগী ও কার্যকর একটি ভোটার তালিকা তৈরি হোক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের যে উদ্যোগ নেয়, আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর সেই তালিকা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণীত হওয়ায় ভুয়া ভোটারদের পক্ষে আর অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকল না। ফলে আগে যেখানে সাড়ে ৯ কোটি ভোটার ছিল; তখন তা কমে আট কোটি ১৫-২০ লাখে গিয়ে দাঁড়ায়। এ কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা ছিল পুরো মাত্রায়।
কালের কণ্ঠ : ছবিসহ ভোটার তালিকার কথা শোনা গিয়েছিল। সেটা হলো না কেন? এখনো কি সেটা সম্ভব নয়?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কথা উঠেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোও মন্তব্য করছিল এ বিষয়ে। তাদের মতামতে দেখা গেল, আওয়ামী লীগ বলছে ছবি তোলার পর সেটা ভোটার তালিকায় লাগিয়ে দেওয়া হোক। এটা ঝামেলার কাজই শুধু নয়, ভুল হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে মানা করল। পৃথিবীর ১১টি দেশে ছবিসহ ভোটার তালিকা হয়ে আসছে। আমাদের এখানে যে কাজটা হয়েছে তা কিন্তু একা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে করা কঠিন ছিল। শক্তিশালী একটি সংগঠন পেছনে কাজ করেছিল। সেনাবাহিনীর যে লজিস্টিক সাপোর্ট আছে, তাদের যে জনবল আছে তা কাজে লাগানোর ফলেই সুষ্ঠু একটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছিল। নতুন নির্বাচন কমিশন হালনাগাদ ভোটার তালিকা করতে গিয়ে কিছু বিতর্কের মুখে পড়েছে। যেমন সাভারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশন এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যার স্বচ্ছতা অপরিহার্য। তার পরও কথা থেকে যায়, তাদের তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে হয়। অন্যদিকে ভোটারদের সঙ্গেও তাদের সংযোগ থাকবে। ফলে নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় রাজনীতি ও ভোটারদের আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করতে হয়। তাদের স্বচ্ছতা নির্ভর করে তাদের কাজ, তাদের স্বাধীনতা, ব্যাপক গণসংযোগ ইত্যাদির ওপর। তারা কী করতে যাচ্ছে সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কী সম্পর্ক তা স্পষ্টভাবে জনগণকে জানাতে হবে। মানুষ এখন একঘরে নয়। সারা দুনিয়ার খবর রাখে তারা। এই যে ওবামা আর রমনির বিতর্ক হলো টেলিভিশনে, সেই বিতর্ক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। আর দেশের ব্যাপারটা তো সহজেই অনুমান করা যায়। মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থাকতে হবে। ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, মিডিয়া, বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দল তাঁদের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এটা আমাদের এখানেও প্রয়োজন। ভারতের নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে সেখানকার মানুষের অত্যন্ত স্পষ্ট ধারণা আছে। তাদের ব্যাপারে মানুষের আস্থাও বিশাল। আমাদের এখানেও তেমনটা প্রয়োজন, আর এটা সম্ভব নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতার মাধ্যমে।
কালের কণ্ঠ : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যদি পরিবর্তন আসে তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে না। নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আসে মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের আস্থাহীনতার কারণে। দুটি বড় দলের মধ্যে অবিশ্বাসের পরিবেশ প্রকট। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় সরকার পদত্যাগ করার পর ছোট আকারের সরকার গঠিত হয়। সেখানে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন কমিশন ছাড়া অন্যরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে না। আমাদের এখানে বিচারব্যবস্থাও খুব শক্তিশালী নয়। জুডিশিয়াল সাপোর্ট শক্তিশালী না হওয়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ঝুলে আছে। শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা যদি থাকত তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ আসত না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের এখানে জরুরি।
কালের কণ্ঠ : সরকারি দল বলছে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং জাতীয় নির্বাচনও তারাই করতে পারবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : উপনির্বাচন আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের পার্থক্য আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যদি সরকারি দল হেরে যায় তাহলেও তাদের ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। কিংবা উপনির্বাচনেও যদি সরকারি দলের প্রার্থী হেরে যায় তাতেও সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি হওয়ার কোনো কারণ থাকবে না। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতার সম্পর্ক থাকে বলে সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়। তবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে, তা নাহলে যে ধরনের সরকারই হোক না কেন, সমস্যা সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব হবে না।
কালের কণ্ঠ : সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছে। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের চারটি প্রধান কাজের একটি। ১৯৭২ সালে এ বিষয়ে আইন হয়েছে, ১৯৭৬ সালে তা সংশোধন হয়েছে আবার। নির্বাচন কমিশনকে তাই সীমানা নির্ধারণের ব্যাপারে অবশ্যই কাজ করতে হবে। তবে তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শলাপরামর্শ করা খুব জরুরি নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে তা সংশয় তৈরি করবে। তাদের মনে রাখা দরকার, সবাইকে খুশি করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
কালের কণ্ঠ : কিন্তু আলোচনা না করলেও তো সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : এই সমালোচনা সহ্য করতে হবে। আপনার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। কাজেও বাধা আসবে। রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ অর্বাচীন বলে নির্বাচন কমিশনকে গালি দিয়েছে, এমন উদাহরণও তো আছে। এটা হবেই। পিছু হটার সুযোগ নেই। সংবিধান নির্বাচন কমিশনের কাজের ধারা উল্লেখ করে দিয়েছে। সংবিধানের ১১৯/১/গ-তে উল্লেখ আছে, 'সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করিবেন।' এটা নির্বাচন কমিশনের কাজ। সুতরাং এত কনফিউশন কেন। আবার সংবিধানের ১২৫/ক ধারায় বলা আছে, 'এই সংবিধানে যাহা বলা আছে তাহা সত্ত্বেও ক) এই সংবিধানের ১২৪ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত বা প্রণীত বলিয়া বিবেচিত নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ কিংবা অনুরূপ নির্বাচনী এলাকার জন্য আসন বণ্টন সম্পর্কিত যে কোনো আইনের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।' নির্বাচন কমিশনকে যেখানে সংবিধানই এত বড় শক্তি জুগিয়েছে, সেখানে তারা কেন দলগুলোর সঙ্গে শলাপরামর্শ করছে তা বোঝা যায় না। এতে কালক্ষেপণ হচ্ছে মাত্র।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কি অপরিহার্য বলে মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : জাতীয় নির্বাচনের সময় জনসম্পৃক্ততা বাড়ে স্বাভাবিক কারণেই। জনগণের আস্থা বড় হয়ে ওঠে তখন। পৌনে দুই লাখ কেন্দ্রে একই দিনে ভোটাররা হাজির হয়। সেখানে প্রতিটি কেন্দ্রে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিনজন সদস্যও দেওয়া হয় তাহলেও প্রায় ছয় লাখ লোকের প্রয়োজন। আমাদের এখানে পুলিশ, সশস্ত্র আনসার ও র্যাব মিলিয়েও এত সদস্য নেই। এ কারণে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন আছে।
কালের কণ্ঠ : অনেক দেশেই তো এভাবে সেনাবাহিনী নিয়োগের প্রয়োজন হয় না।
এম সাখাওয়াত হোসেন : গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় জাতীয় নির্বাচন আমাদের মতো একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় না। আমাদের এখানে হয় একই দিনে। এ কারণে তাদের অসুবিধা হয় না, আমাদের হয়। তাই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিতে হয়। আবার পরিবেশগত একটা বিষয়ও আছে। ব্রিটেনে একেকটি কেন্দ্রে হয়তো একজন পুলিশ বসে থাকে। তাকে ভোটকেন্দ্র চিনিয়ে দেওয়ার কাজও করতে দেখা যায়। কোনো গোলযোগ সেখানে করতে দেখা যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে সশস্ত্র পুলিশ থাকার পরও কোথাও না কোথাও গোলযোগ হয়ে থাকে। ইন্দোনেশিয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনই নির্বাচনী কাজে সহযোগিতা করে। ওই সব দেশের মানুষের মানসিকতা আর আমাদের মানসিকতার মধ্যে পার্থক্য অনেক।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
এম সাখাওয়াত হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নেই- এমন অভিযোগ শোনা যায় প্রায়ই। চলমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা কতটা আছে বলে আপনি মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ছোটখাটো কিছু বিষয় ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনই বলতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত একটি আইন করা হয়েছিল। কিছু সংশোধনী হওয়া উচিত এ আইনের। আসলে স্বাধীনতা তখনই কার্যকর হয় যখন নির্বাচন কমিশন নিজে কিছু করার সাহস রাখে এবং করতে চায়।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশনের সচিব তো সরকার নিয়োজিত এবং তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ঘনিষ্ঠতর হয়ে কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে কি কমিশন স্বাধীন থাকতে পারে?
এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশনের সচিবালয় হওয়া উচিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীন। সিইসিই কমিশনের ক্ষমতায়ন করার অধিকারী হবেন। আমরা তেমনটিই চেয়েছিলাম। আমাদের সময় আমাদের তিনজনের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ ছিল। দেখুন, সচিব সরকার নিয়োজিত। তিনি আসেন প্রেষণে। তাঁর ওপর সরকারের প্রভাব থাকা স্বাভাবিক। সচিবের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার সুযোগ কিন্তু থেকে যায়।
কালের কণ্ঠ : ব্যয় নির্বাহের ব্যাপারে সরকারের মুখাপেক্ষী হওয়ার বিষয়টি-
এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশনকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাজেট আসে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। সেখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকে। কাটছাঁট করার প্রবণতা থাকে। যেমন মনে করুন, নির্বাচন কমিশন বলল, নিরাপত্তা বিধানের জন্য ১০ কোটি টাকা লাগবে। এটা নির্বাচন কমিশন হিসাব-নিকাশ করেই ঠিক করেছে। যখন তা সরকারের কাছে গেল তারা করল কি কেটেছেঁটে করে দিল সাত কিংবা আট কোটি টাকা। আমাদের আমলেই এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমরা সরকার থেকে প্রাপ্ত পুরো টাকাই বিডিআরকে দিয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু বাজেটে কাটছাঁট হয়ে গেছে, ফলে সেখানে পাওনা পরিশোধে অসুবিধা হয়।
কালের কণ্ঠ : তাহলে আর্থিক স্বাধীনতা কিভাবে আসতে পারে?
এম সাখাওয়াত হোসেন : বাজেটে সরাসরি চার্জ হবে। বাজেট থেকে সরাসরি টাকা আসবে নির্বাচন কমিশনে। ব্যয় ইত্যাদি নিরীক্ষা করবেন অডিটর জেনারেল। আর দায়বদ্ধ থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন যদি কার্যকর করতে হয়, তাহলে আর্থিক স্বাধীনতা দিতেই হবে।
কালের কণ্ঠ : জনবল নিয়োগের বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
এম সাখাওয়াত হোসেন : আমরা যখন নির্বাচন কমিশনে ছিলাম তখন কর্মকর্তা নিয়োগের দায়িত্বটা নিতে চাইনি। সরাসরি নিয়োগ হলে কিছু অসুবিধা আছে। দেখুন, পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ হলেও যেখানে দলীয়করণের অভিযোগ হয়, সেখানে নির্বাচন কমিশন যদি নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনই সমালোচনার মুখে পড়তে পারে। সেই সুযোগ থেকে যায়। আমরা চাইছিলাম পিএসসি নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ করে নির্বাচন কমিশনকে দেবে। এটা সরাসরি হওয়া উচিত। সেটা যদি পিএসসি করার পর আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়, তাহলে সেখানেও দলীয়করণের সুযোগ থেকে যাবে। আরেকটা বিষয়, নির্বাচন কমিশনের কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হলো। সেটাকে অনুমোদন করিয়ে আনার জন্য যদি আবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, তাহলে স্বাধীনতা কোথায় রইল। কোনো বিধি প্রণয়নের সময় তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলো সেটা সাংঘর্ষিক কি না দেখার জন্য, আর সেখানে যদি তারা হস্তক্ষেপ করে বসে তাহলে স্বাধীনতা অর্জন কতটা কার্যকর হবে। এর পরও আমি বলব, নির্বাচন কমিশন যেটুকু স্বাধীন সেটুকু যথাযথভাবে কাজে লাগানোর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপরই নির্ভর করে। তারা যদি সব কিছুতেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তাহলে স্বাধীনতা বজায় রাখা সম্ভব হবে না। আইন প্রয়োগের সাহস থাকতে হবে। একটি উদাহরণ দিই। দেয়ালে কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না বলে আইন করা হলো। এখন দেখুন, সেখানে বলবর্ধক বটিকা থেকে শুরু করে কত না পোস্টার লাগানো হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : আমাদের এখানে নির্বাচন কমিশনকে আস্থার সংকটে ভুগতে হয়। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বিশাল। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা নির্বাচন করবে সেই লোকগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিনতর হয়ে পড়বে। তারা তখন ম্যানেজ করতে পারবে না। আমরা বিচারপতি আজিজ সাহেবের আমলের কথা আনতে পারি। তখনো কিন্তু আইন ছিল। অথচ জনগণের আস্থা না থাকায় কী পরিস্থিতিই না তৈরি হয়েছিল।
কালের কণ্ঠ : আস্থা অর্জনের জন্য কী করা প্রয়োজন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : আমি মনে করি, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিনটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- প্রথমত, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা; দ্বিতীয়ত, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এবং তৃতীয়ত, জনগণের আস্থা। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জনগণের আস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে তার আন্তরিকতা ও সততা প্রমাণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এখন প্রচারের যুগ। মিডিয়ার যুগে সব কিছু মানুষ জানতে পারে এবং জানার চাহিদাও বেড়েছে। মিডিয়াকে কিভাবে কাজে লাগাবেন সেটা কিন্তু ভেবে দেখতে হবে। কাপাসিয়ার উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে বড়জোর ২০ শতাংশ আর আপনি বলে দিলেন ৪৫ শতাংশ। মানুষ জেনে গেল আপনি অসত্য বলেছেন। সারা দেশেই এর প্রভাব পড়বে।
কালের কণ্ঠ : ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে আপনারা উৎসাহী ছিলেন। তখন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি জানানো হয়েছিল। আবার এখন নির্বাচন কমিশনই বলছে, আগামীতে ইভিএম ব্যবহৃত হবে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ইভিএম ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সময় আমি, ছহুল সাহেব ভারতে গিয়েছিলাম তাদের নির্বাচন দেখার জন্য। ১৫তম পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছিল তাদের। সেখানে দেখা গেল কী নিখুঁতভাবে সহজ ও সন্দেহাতীত কাজ করছে ইভিএম। ব্যালট, সিলগালা এসব ব্যবহারের কোনো ঝামেলা নেই। আমাদের এখানে ব্যালট ছিনতাইয়ের যে প্রবণতা আছে সেটাও হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইভিএম ব্যবহার বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি।
কালের কণ্ঠ : তার পরও ইভিএম ব্যবহার করা থেকে পিছিয়ে আসতে হলো কেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : আমরা প্রথম দিকেই বুয়েটের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা সুন্দর কিছু পদ্ধতি বের করল। তাদের উদ্দীপনা ও সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করল। ২০০৯ সালের কথা। আমরা চট্টগ্রামে ইভিএমের ব্যবহার করলাম সফলভাবে। ঢাকার জন্য ৪০০ মেশিন বানানোর পরিকল্পনা করা হলো। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপিত হলো। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করলেন। কিন্তু চূড়ান্ত কিছু হওয়ার আগেই তিনি বললেন, আগামী নির্বাচন হবে ইভিএম ব্যবহার করে। তখনই গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেল। যেহেতু আওয়ামী লীগ বলেছে, তাই বিএনপিকে এর বিরোধিতা করতে হবে। এমনই তো কালচার আমাদের। তারা বলল, ডিজিটাল কারচুপির রাস্তা হচ্ছে। কিন্তু কুমিল্লায় এর সফল ব্যবহার হলো। এটা পৃথক একটি মেশিন। কোনো সার্ভারের মাধ্যমে একে হ্যাক করা সম্ভব নয়। আসলে চিলে কান নিয়ে গেছে বলে চিলের পেছনে দৌড়ানোর মতো ঘটনা বলতে পারেন। কারচুপি করা সম্ভব, হ্যাক করা সম্ভব- এমন একটি অবাস্তব যুক্তি দাঁড় করিয়ে এর বিরোধিতা করা হলো। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন করতে হলে ইভিএমের ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। আমাদের এখানে বুথ দখল করার কথা সবাই জানি। স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে গেলে এর বিকল্প নেই।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচনের অপরিহার্য শর্ত ভোটার তালিকা। সেই ভোটার তালিকা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। আপনাদের আমলে আগের তালিকা থেকে বহু ভোটারকে বাতিল করা হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে বলুন।
এম সাখাওয়াত হোসেন : ২০০৬-০৭ সালে ভোটার তালিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। অথচ স্বচ্ছ নির্বাচনের অপরিহার্য অঙ্গ তথা প্রথম শর্তই হচ্ছে সঠিক ভোটার তালিকা। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য নির্ভুল এবং জনবান্ধব ভোটার তালিকা করতেই হবে। ভোটার তালিকার ওপর জনগণের আস্থা থাকতে হবে। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন সত্যি কঠিন ছিল। ভোটার তালিকা যাঁরা করতেন তাঁদের ওপর রাজনৈতিক চাপ থাকত। অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক ভোটার হতো, মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতো না। রাজনৈতিক চাপের কারণে অনেক ভুয়া ভোটারকে তালিকাভুক্ত করা হতো। আসলে তখন জনসম্পৃক্ততা ছিল না তেমন একটা। অনেক বিশ্লেষক একে নিষ্ক্রিয় ভোটার তালিকা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। আমরা যখন নির্বাচন কমিশনে এলাম তখন দেখলাম, সেখানে এক কোটি ১২ থেকে ২০ লাখ ভোটারের কোনো অস্তিত্ব নেই। শুধু দ্বৈত ভোটারই নয়, কোনো ব্যক্তি চার জায়গায়ও ভোটার হয়েছেন।
কালের কণ্ঠ : ওই সময় তো জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যা ভোটার তালিকা প্রণয়নে সহায়ক হয়েছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের কাজটি করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আমরা চেয়েছিলাম যুগের উপযোগী ও কার্যকর একটি ভোটার তালিকা তৈরি হোক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের যে উদ্যোগ নেয়, আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর সেই তালিকা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণীত হওয়ায় ভুয়া ভোটারদের পক্ষে আর অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকল না। ফলে আগে যেখানে সাড়ে ৯ কোটি ভোটার ছিল; তখন তা কমে আট কোটি ১৫-২০ লাখে গিয়ে দাঁড়ায়। এ কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা ছিল পুরো মাত্রায়।
কালের কণ্ঠ : ছবিসহ ভোটার তালিকার কথা শোনা গিয়েছিল। সেটা হলো না কেন? এখনো কি সেটা সম্ভব নয়?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কথা উঠেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোও মন্তব্য করছিল এ বিষয়ে। তাদের মতামতে দেখা গেল, আওয়ামী লীগ বলছে ছবি তোলার পর সেটা ভোটার তালিকায় লাগিয়ে দেওয়া হোক। এটা ঝামেলার কাজই শুধু নয়, ভুল হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে মানা করল। পৃথিবীর ১১টি দেশে ছবিসহ ভোটার তালিকা হয়ে আসছে। আমাদের এখানে যে কাজটা হয়েছে তা কিন্তু একা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে করা কঠিন ছিল। শক্তিশালী একটি সংগঠন পেছনে কাজ করেছিল। সেনাবাহিনীর যে লজিস্টিক সাপোর্ট আছে, তাদের যে জনবল আছে তা কাজে লাগানোর ফলেই সুষ্ঠু একটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছিল। নতুন নির্বাচন কমিশন হালনাগাদ ভোটার তালিকা করতে গিয়ে কিছু বিতর্কের মুখে পড়েছে। যেমন সাভারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশন এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যার স্বচ্ছতা অপরিহার্য। তার পরও কথা থেকে যায়, তাদের তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে হয়। অন্যদিকে ভোটারদের সঙ্গেও তাদের সংযোগ থাকবে। ফলে নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় রাজনীতি ও ভোটারদের আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করতে হয়। তাদের স্বচ্ছতা নির্ভর করে তাদের কাজ, তাদের স্বাধীনতা, ব্যাপক গণসংযোগ ইত্যাদির ওপর। তারা কী করতে যাচ্ছে সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কী সম্পর্ক তা স্পষ্টভাবে জনগণকে জানাতে হবে। মানুষ এখন একঘরে নয়। সারা দুনিয়ার খবর রাখে তারা। এই যে ওবামা আর রমনির বিতর্ক হলো টেলিভিশনে, সেই বিতর্ক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। আর দেশের ব্যাপারটা তো সহজেই অনুমান করা যায়। মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থাকতে হবে। ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, মিডিয়া, বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দল তাঁদের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এটা আমাদের এখানেও প্রয়োজন। ভারতের নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে সেখানকার মানুষের অত্যন্ত স্পষ্ট ধারণা আছে। তাদের ব্যাপারে মানুষের আস্থাও বিশাল। আমাদের এখানেও তেমনটা প্রয়োজন, আর এটা সম্ভব নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতার মাধ্যমে।
কালের কণ্ঠ : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যদি পরিবর্তন আসে তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে না। নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আসে মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের আস্থাহীনতার কারণে। দুটি বড় দলের মধ্যে অবিশ্বাসের পরিবেশ প্রকট। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় সরকার পদত্যাগ করার পর ছোট আকারের সরকার গঠিত হয়। সেখানে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন কমিশন ছাড়া অন্যরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে না। আমাদের এখানে বিচারব্যবস্থাও খুব শক্তিশালী নয়। জুডিশিয়াল সাপোর্ট শক্তিশালী না হওয়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ঝুলে আছে। শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা যদি থাকত তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ আসত না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের এখানে জরুরি।
কালের কণ্ঠ : সরকারি দল বলছে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং জাতীয় নির্বাচনও তারাই করতে পারবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : উপনির্বাচন আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের পার্থক্য আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যদি সরকারি দল হেরে যায় তাহলেও তাদের ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। কিংবা উপনির্বাচনেও যদি সরকারি দলের প্রার্থী হেরে যায় তাতেও সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি হওয়ার কোনো কারণ থাকবে না। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতার সম্পর্ক থাকে বলে সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়। তবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে, তা নাহলে যে ধরনের সরকারই হোক না কেন, সমস্যা সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব হবে না।
কালের কণ্ঠ : সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছে। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের চারটি প্রধান কাজের একটি। ১৯৭২ সালে এ বিষয়ে আইন হয়েছে, ১৯৭৬ সালে তা সংশোধন হয়েছে আবার। নির্বাচন কমিশনকে তাই সীমানা নির্ধারণের ব্যাপারে অবশ্যই কাজ করতে হবে। তবে তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শলাপরামর্শ করা খুব জরুরি নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে তা সংশয় তৈরি করবে। তাদের মনে রাখা দরকার, সবাইকে খুশি করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
কালের কণ্ঠ : কিন্তু আলোচনা না করলেও তো সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : এই সমালোচনা সহ্য করতে হবে। আপনার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। কাজেও বাধা আসবে। রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ অর্বাচীন বলে নির্বাচন কমিশনকে গালি দিয়েছে, এমন উদাহরণও তো আছে। এটা হবেই। পিছু হটার সুযোগ নেই। সংবিধান নির্বাচন কমিশনের কাজের ধারা উল্লেখ করে দিয়েছে। সংবিধানের ১১৯/১/গ-তে উল্লেখ আছে, 'সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করিবেন।' এটা নির্বাচন কমিশনের কাজ। সুতরাং এত কনফিউশন কেন। আবার সংবিধানের ১২৫/ক ধারায় বলা আছে, 'এই সংবিধানে যাহা বলা আছে তাহা সত্ত্বেও ক) এই সংবিধানের ১২৪ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত বা প্রণীত বলিয়া বিবেচিত নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ কিংবা অনুরূপ নির্বাচনী এলাকার জন্য আসন বণ্টন সম্পর্কিত যে কোনো আইনের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।' নির্বাচন কমিশনকে যেখানে সংবিধানই এত বড় শক্তি জুগিয়েছে, সেখানে তারা কেন দলগুলোর সঙ্গে শলাপরামর্শ করছে তা বোঝা যায় না। এতে কালক্ষেপণ হচ্ছে মাত্র।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কি অপরিহার্য বলে মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : জাতীয় নির্বাচনের সময় জনসম্পৃক্ততা বাড়ে স্বাভাবিক কারণেই। জনগণের আস্থা বড় হয়ে ওঠে তখন। পৌনে দুই লাখ কেন্দ্রে একই দিনে ভোটাররা হাজির হয়। সেখানে প্রতিটি কেন্দ্রে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিনজন সদস্যও দেওয়া হয় তাহলেও প্রায় ছয় লাখ লোকের প্রয়োজন। আমাদের এখানে পুলিশ, সশস্ত্র আনসার ও র্যাব মিলিয়েও এত সদস্য নেই। এ কারণে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন আছে।
কালের কণ্ঠ : অনেক দেশেই তো এভাবে সেনাবাহিনী নিয়োগের প্রয়োজন হয় না।
এম সাখাওয়াত হোসেন : গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় জাতীয় নির্বাচন আমাদের মতো একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় না। আমাদের এখানে হয় একই দিনে। এ কারণে তাদের অসুবিধা হয় না, আমাদের হয়। তাই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিতে হয়। আবার পরিবেশগত একটা বিষয়ও আছে। ব্রিটেনে একেকটি কেন্দ্রে হয়তো একজন পুলিশ বসে থাকে। তাকে ভোটকেন্দ্র চিনিয়ে দেওয়ার কাজও করতে দেখা যায়। কোনো গোলযোগ সেখানে করতে দেখা যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে সশস্ত্র পুলিশ থাকার পরও কোথাও না কোথাও গোলযোগ হয়ে থাকে। ইন্দোনেশিয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনই নির্বাচনী কাজে সহযোগিতা করে। ওই সব দেশের মানুষের মানসিকতা আর আমাদের মানসিকতার মধ্যে পার্থক্য অনেক।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
এম সাখাওয়াত হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments