চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর- বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশ্বাস চীনা প্রতিনিধি দলের
বাংলাদেশে যোগাযোগ প্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে বলে একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে চীন। দু’দিনের সফরে ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি’র পলিটব্যুরো সদস্য লি ছাংছুন-এর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠককালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক ছাড়াও বিদ্যুৎ ও আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্র বাড়াতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দু’দিনের সফর শেষে গতকালই প্রতিনিধি দল চীন ফিরে গেছে।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশ্বাস
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি প্রতিনিধি দল গতকাল বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রেসিডেন্ট প্রতিনিধি দলের সব সদস্যকে ঢাকায় স্বাগত জানান এবং চীনকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে উল্লেখ করেন। জবাবে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে অবকাঠামো, বাণিজ্য বিনিয়োগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। প্রেসিডেন্ট মিয়ানমার হয়ে ঢাকা-খুনমিং সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে বলে অভিমত দেন। ‘এক চীন নীতিতে’ বাংলাদেশের বিশ্বাসের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রেসিডেন্ট গত সাড়ে তিন দশক ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত সহায়তার জন্য চীন সরকার ও দেশটার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও একই আশাবাদ
বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা সফরে আসা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য লি ছাংছুন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য লি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করেন। তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থনীতি, বিদ্যুৎ ও আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্র বাড়াতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদ ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী চিয়াং চেংওয়েই সই করেন। বাংলাদেশে ঋণ দেয়া সম্পর্কিত একটি রূপরেখা চুক্তিতেও সই করেন তারা। এছাড়া চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর একটি ‘সমঝোতা’ সই হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে চীনা কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে সফরকারী চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা নির্দেশনা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন জানিয়ে আজাদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি, জ্বালানি, কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনা কোম্পানিগুলোর আরও বেশি অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। জবাবে প্রতিনিধি দলের প্রধান পাগলার পানি শোধনাগার সমপ্রসারণে চীন সরকারের সহযোগিতা বাড়ানো এবং চীনে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দ্বিগুণ করার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের কাঙিক্ষত উন্নয়নে সেতুসহ অন্য অবকাঠামোতে চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। জবাবে অন্যদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী ওই নেতা। তিনি এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও স্থিতি বজায় রাখতে দুই দেশ আগামীতেও একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেন। আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই বন্ধুত্বকে আরও এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতায় চীনা প্রতিনিধি দলের সদস্য দেশটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক মন্ত্রী ওয়াং চিয়ারুই, শিক্ষামন্ত্রী ইউয়ান কুইরেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ছাই উ, রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র বিষয়ক মন্ত্রী ছাই ফুখকাও, প্রেস ও প্রকাশনা বিষয়ক মন্ত্রী লিন পিনচেই, প্রচার বিভাগের উপমন্ত্রী সুন চিচুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী চিয়াং চেংউই, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি চুন আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদ, বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান ও প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা-লি চুন বৈঠক: গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সহযোগিতার আশ্বাস
বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশকে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। পদ্মা নদীর ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণেও সহায়তা দেবে দেশটি। বাংলাদেশ সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) পলিটব্যুরো সদস্য লি চ্যাং চুন গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠককালে এ কথা জানান। সিপিসির পঞ্চম সর্বোচ্চ এ নেতা দলের প্রচার বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী জানান, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। সেই সঙ্গে পদ্মার ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে সহায়তা ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও সহযোগিতা করবে আশ্বাস দিয়েছে চীন। এজন্য মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ওই রেল ও সড়ক যোগাযোগ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন চীনা প্রতিনিধি দল। এছাড়া বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং পর্যন্ত রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও আলোচনা হয়। বৈঠকে সিপিসি নেতা লি চ্যাং জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্ক। সে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতেই সমপ্রতি চীন সফর করেন খালেদা জিয়া। খালেদাকে ফের চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান চীনের প্রভাবশালী এ নেতা। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টম কংগ্রেস সফল হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৈঠকে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির সভাপতি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মোবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান এবং চীনের পক্ষে লি চ্যাংয়ের সঙ্গে শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। উল্লেখ্য, লি চ্যাং চুনের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলটি শনিবার ঢাকা সফরে এসেছে। একই দিন চীন থেকে ব্যাংকক হয়ে দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া। এদিকে সফরে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেন লি চ্যাং চুন। সফর শেষে গতকাল বিকালেই দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রতিনিধি দলটি। এর আগে শনিবার রাতে সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত এ নৈশভোজে বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সরকারি দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ অংশ নেন।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি প্রতিনিধি দল গতকাল বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রেসিডেন্ট প্রতিনিধি দলের সব সদস্যকে ঢাকায় স্বাগত জানান এবং চীনকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে উল্লেখ করেন। জবাবে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে অবকাঠামো, বাণিজ্য বিনিয়োগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। প্রেসিডেন্ট মিয়ানমার হয়ে ঢাকা-খুনমিং সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে বলে অভিমত দেন। ‘এক চীন নীতিতে’ বাংলাদেশের বিশ্বাসের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রেসিডেন্ট গত সাড়ে তিন দশক ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত সহায়তার জন্য চীন সরকার ও দেশটার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও একই আশাবাদ
বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা সফরে আসা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য লি ছাংছুন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য লি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করেন। তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থনীতি, বিদ্যুৎ ও আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্র বাড়াতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদ ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী চিয়াং চেংওয়েই সই করেন। বাংলাদেশে ঋণ দেয়া সম্পর্কিত একটি রূপরেখা চুক্তিতেও সই করেন তারা। এছাড়া চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর একটি ‘সমঝোতা’ সই হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে চীনা কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে সফরকারী চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা নির্দেশনা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন জানিয়ে আজাদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি, জ্বালানি, কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনা কোম্পানিগুলোর আরও বেশি অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। জবাবে প্রতিনিধি দলের প্রধান পাগলার পানি শোধনাগার সমপ্রসারণে চীন সরকারের সহযোগিতা বাড়ানো এবং চীনে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দ্বিগুণ করার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের কাঙিক্ষত উন্নয়নে সেতুসহ অন্য অবকাঠামোতে চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। জবাবে অন্যদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী ওই নেতা। তিনি এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও স্থিতি বজায় রাখতে দুই দেশ আগামীতেও একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেন। আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই বন্ধুত্বকে আরও এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতায় চীনা প্রতিনিধি দলের সদস্য দেশটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক মন্ত্রী ওয়াং চিয়ারুই, শিক্ষামন্ত্রী ইউয়ান কুইরেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ছাই উ, রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র বিষয়ক মন্ত্রী ছাই ফুখকাও, প্রেস ও প্রকাশনা বিষয়ক মন্ত্রী লিন পিনচেই, প্রচার বিভাগের উপমন্ত্রী সুন চিচুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী চিয়াং চেংউই, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি চুন আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদ, বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান ও প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা-লি চুন বৈঠক: গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সহযোগিতার আশ্বাস
বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশকে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। পদ্মা নদীর ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণেও সহায়তা দেবে দেশটি। বাংলাদেশ সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) পলিটব্যুরো সদস্য লি চ্যাং চুন গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠককালে এ কথা জানান। সিপিসির পঞ্চম সর্বোচ্চ এ নেতা দলের প্রচার বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী জানান, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। সেই সঙ্গে পদ্মার ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে সহায়তা ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও সহযোগিতা করবে আশ্বাস দিয়েছে চীন। এজন্য মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ওই রেল ও সড়ক যোগাযোগ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন চীনা প্রতিনিধি দল। এছাড়া বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং পর্যন্ত রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও আলোচনা হয়। বৈঠকে সিপিসি নেতা লি চ্যাং জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্ক। সে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতেই সমপ্রতি চীন সফর করেন খালেদা জিয়া। খালেদাকে ফের চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান চীনের প্রভাবশালী এ নেতা। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টম কংগ্রেস সফল হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৈঠকে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির সভাপতি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মোবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান এবং চীনের পক্ষে লি চ্যাংয়ের সঙ্গে শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। উল্লেখ্য, লি চ্যাং চুনের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলটি শনিবার ঢাকা সফরে এসেছে। একই দিন চীন থেকে ব্যাংকক হয়ে দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া। এদিকে সফরে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেন লি চ্যাং চুন। সফর শেষে গতকাল বিকালেই দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রতিনিধি দলটি। এর আগে শনিবার রাতে সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত এ নৈশভোজে বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সরকারি দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ অংশ নেন।
No comments