রুশ রস- সংকলন ও অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ
masud328@gmail.com চিরসঙ্গী দ. এরদিনেয়েভ পারস্পরিক অভিযোগ আর ভৎর্সনার কারণে আমি চূড়ান্ত বিরক্ত। কোনো কিছু করতে যাওয়ার আগে তার সঙ্গে সলা-পরামর্শ করা ছেড়ে দিয়েছি তাই। এমনকি আমাকে সে কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও কান দিই না তাতে। আমার জন্য এটাই সুবিধাজনক। নার্ভও শান্ত থাকে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা বানিয়ে খেয়ে নিই। নাশতা শেষে কাপড়চোপড় পরে প্রায় নিঃশব্দে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।
বিশ্রাম নিক সে—এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিই।
অফিসে মাঝেমধ্যে মনে পড়ে তার কথা। মূলত একেবারেই বেমক্কাভাবে এবং অসময়ে। তারপর কাজের চাপে আবার তাকে ভুলে যাই।
ঘরে ফিরি সচরাচর বেশ দেরিতে। ফিরে অনুভব করি, সে বরাবরের মতোই ঘুমিয়ে আছে।
দংশন না করলেই আর কোনো সমস্যা নেই—ভেবে ঘুমাতে যাই ক্লান্ত আমি।
কিন্তু সে আমাকে ঘুমোতে দেয় না। অতিবাহিত দিনের প্রতিটি ক্ষুদ্রতম ঘটনারও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে থাকে। সবকিছুতেই তার নাক গলানো চাই!
এমনও হয়, ভোর পর্যন্ত অভিযোগমালা দাখিল করতে থাকে সে—আমার বিবেক।
সহ্যের পেয়ালা
আন্তোন নেভস্কি
ফালেয়েভ তার মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলল। আলমারি থেকে নীরবে একটা মানিব্যাগ বের করে আনল স্ত্রী।
উৎফুল্ল ফালেয়েভ তার বোনাসের টাকা ভরল নতুন সেই মানিব্যাগে। কিন্তু বোনাসের টাকা হারিয়ে ফেলতে সক্ষম হলো সে।
আলমারি থেকে নীরবে বোনাসের টাকা বের করে আনল স্ত্রী।
উৎফুল্ল ফালেয়েভ ছুটল ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। স্ত্রীর জন্য উপহার কিনল। কিন্তু ফেরার পথে হারিয়ে ফেলল সেটা।
আলমারি থেকে নীরবে উপহার বের করে আনল স্ত্রী। নিজেই নিজেকে দিল।
এক সপ্তাহ পরে ফালেয়েভ মাইনের পুরো টাকা ভুল করে বাসে রেখে নেমে পড়ল। বাড়ি যেতে যেতে তার মনে হতে লাগল, স্ত্রীর ধৈর্যে ফাটল ধরবে নিশ্চয়ই।
‘যথেষ্ট হয়েছে!’ বলল তার স্ত্রী। ‘আমার ধৈর্যের পেয়ালা পূর্ণ হয়ে উপচে পড়ছে।’
ডিভোর্স? না...আলমারি থেকে নতুন পেয়ালা বের করে আনল স্ত্রী। আকারে আগেরটার চেয়ে বড়।
ফালেয়েভ নিজেকে শুধরে নেবে স্থির করল। নইলে তার স্ত্রী যে কখন আলমারি থেকে নতুন স্বামী বের করে আনবে, কে জানে!
পুরুষালি সহযোগিতা
আলেক্সান্দর পেরল্যুক
‘গ্রিগোরি, হাঁড়িটা একটু ধরবে, প্লিজ?’ ‘গরম নাকি?’
‘না।’
‘ভর্তি?’
‘ভয় পেয়ো না, উপচে পড়বে না।’
‘কী আছে তাতে?’
‘স্যুপ।’
‘মাংসের টুকরো দেওয়া?’
‘হ্যাঁ। তুমি মাংসের টুকরো দেওয়া স্যুপ পছন্দ করো, সেটা আমি জানি তো।’
‘তুমি এত ঢং করো কেন, বলো তো? শুরুতে বললেই পারতে, গ্রিগোরি, মাংসের টুকরো দেওয়া তোমার প্রিয় স্যুপের ঠান্ডা ও অপূর্ণ হাঁড়িটা একটু ধরবে, প্লিজ? তা হলে এক নিমেষ বিলম্ব না করে হাঁড়িটা ধরতাম। আমার জন্য এ আর কী এমন কঠিন কাজ। প্রত্যেক সত্যিকারের পুরুষের উচিত সাহায্য করা তার স্ত্রীকে, যখন সে গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত। এমনকি দু-একবার বাসনকোসন ধুলেও জাত যায় না। কোথায় ওটা? দাও দেখি।’
‘কী?’
‘তোমার হাঁড়ির কথা বলছি। তুমিই না বললে একটু ধরতে।’
‘ধন্যবাদ, গ্রিগোরি। আর প্রয়োজন নেই সেটার।’
তাতে কী!
ইনা গামাজকোভা
সবাই খুব হিংসে করে আমাকে। আমি কিন্তু কাউকেই করি না। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখি, ঈর্ষায় হলুদ হয়ে গেছে তারা। আমি নির্লিপ্ত। কারণ, আমার আছে দুটি শব্দ—‘তাতে কী’!
ধরা যাক, সেরেদকিনা একেবারে হাল ফ্যাশনের এক জোড়া জুতা কিনেছে। আমি ভাবি, তাতে কী! সে তো গ্রীষ্মকালে ছুটি পাবে না, পাবে ডিসেম্বর মাসে।
নুত্রোভের ভাইয়ের বিশাল বাড়ি আছে ইয়াল্টায়। তার বোন অতিকায় এক দোকানের ডিরেক্টর। আমি ভাবি, তাতে কী! তার নিজের তো গ্যাস্ট্রিক!
সেকলেতারেঙ্কোর স্বামী পিএইচডি করেছে। আমি ভাবি, তাতে কী! স্কুলে তাদের মেয়ের তো রেজাল্ট খুবই খারাপ।
রেপকিন এক কাঁড়ি টাকা জিতেছে লটারিতে। আমি ভাবি, তাতে কী! অন্য শহর থেকে অতিথি এসে তার বাসায় পড়ে আছে এক মাস ধরে।
হিংসা-ঈর্ষার প্রয়োজনটা যে কী, সেটাই তো বুঝি না!
দরখাস্ত
ম. ভজদভিজেনস্কি
বুরভ বলল, ‘এই অকাট মূর্খ আমলা সুন্দুকভকে দরখাস্ত লিখতে হবে। শালা আস্ত একটা ইডিয়ট!’ ‘সে আর বলতে!’ তার কথায় সায় দিল মাসলভ। ‘ব্যাটা অসৎ ক্যারিয়ারিস্ট...’
‘এই শালাকে নিয়ে আলোচনা করা মানেই সময়ের অপচয়!’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল বুরভ।
তারপর সাদা একটা কাগজ নিয়ে দরখাস্ত লিখতে শুরু করল: ‘সর্বজনশ্রদ্ধেয় ত. সুন্দুকভ...’
বিশ্রাম নিক সে—এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিই।
অফিসে মাঝেমধ্যে মনে পড়ে তার কথা। মূলত একেবারেই বেমক্কাভাবে এবং অসময়ে। তারপর কাজের চাপে আবার তাকে ভুলে যাই।
ঘরে ফিরি সচরাচর বেশ দেরিতে। ফিরে অনুভব করি, সে বরাবরের মতোই ঘুমিয়ে আছে।
দংশন না করলেই আর কোনো সমস্যা নেই—ভেবে ঘুমাতে যাই ক্লান্ত আমি।
কিন্তু সে আমাকে ঘুমোতে দেয় না। অতিবাহিত দিনের প্রতিটি ক্ষুদ্রতম ঘটনারও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে থাকে। সবকিছুতেই তার নাক গলানো চাই!
এমনও হয়, ভোর পর্যন্ত অভিযোগমালা দাখিল করতে থাকে সে—আমার বিবেক।
সহ্যের পেয়ালা
আন্তোন নেভস্কি
ফালেয়েভ তার মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলল। আলমারি থেকে নীরবে একটা মানিব্যাগ বের করে আনল স্ত্রী।
উৎফুল্ল ফালেয়েভ তার বোনাসের টাকা ভরল নতুন সেই মানিব্যাগে। কিন্তু বোনাসের টাকা হারিয়ে ফেলতে সক্ষম হলো সে।
আলমারি থেকে নীরবে বোনাসের টাকা বের করে আনল স্ত্রী।
উৎফুল্ল ফালেয়েভ ছুটল ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। স্ত্রীর জন্য উপহার কিনল। কিন্তু ফেরার পথে হারিয়ে ফেলল সেটা।
আলমারি থেকে নীরবে উপহার বের করে আনল স্ত্রী। নিজেই নিজেকে দিল।
এক সপ্তাহ পরে ফালেয়েভ মাইনের পুরো টাকা ভুল করে বাসে রেখে নেমে পড়ল। বাড়ি যেতে যেতে তার মনে হতে লাগল, স্ত্রীর ধৈর্যে ফাটল ধরবে নিশ্চয়ই।
‘যথেষ্ট হয়েছে!’ বলল তার স্ত্রী। ‘আমার ধৈর্যের পেয়ালা পূর্ণ হয়ে উপচে পড়ছে।’
ডিভোর্স? না...আলমারি থেকে নতুন পেয়ালা বের করে আনল স্ত্রী। আকারে আগেরটার চেয়ে বড়।
ফালেয়েভ নিজেকে শুধরে নেবে স্থির করল। নইলে তার স্ত্রী যে কখন আলমারি থেকে নতুন স্বামী বের করে আনবে, কে জানে!
পুরুষালি সহযোগিতা
আলেক্সান্দর পেরল্যুক
‘গ্রিগোরি, হাঁড়িটা একটু ধরবে, প্লিজ?’ ‘গরম নাকি?’
‘না।’
‘ভর্তি?’
‘ভয় পেয়ো না, উপচে পড়বে না।’
‘কী আছে তাতে?’
‘স্যুপ।’
‘মাংসের টুকরো দেওয়া?’
‘হ্যাঁ। তুমি মাংসের টুকরো দেওয়া স্যুপ পছন্দ করো, সেটা আমি জানি তো।’
‘তুমি এত ঢং করো কেন, বলো তো? শুরুতে বললেই পারতে, গ্রিগোরি, মাংসের টুকরো দেওয়া তোমার প্রিয় স্যুপের ঠান্ডা ও অপূর্ণ হাঁড়িটা একটু ধরবে, প্লিজ? তা হলে এক নিমেষ বিলম্ব না করে হাঁড়িটা ধরতাম। আমার জন্য এ আর কী এমন কঠিন কাজ। প্রত্যেক সত্যিকারের পুরুষের উচিত সাহায্য করা তার স্ত্রীকে, যখন সে গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত। এমনকি দু-একবার বাসনকোসন ধুলেও জাত যায় না। কোথায় ওটা? দাও দেখি।’
‘কী?’
‘তোমার হাঁড়ির কথা বলছি। তুমিই না বললে একটু ধরতে।’
‘ধন্যবাদ, গ্রিগোরি। আর প্রয়োজন নেই সেটার।’
তাতে কী!
ইনা গামাজকোভা
সবাই খুব হিংসে করে আমাকে। আমি কিন্তু কাউকেই করি না। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখি, ঈর্ষায় হলুদ হয়ে গেছে তারা। আমি নির্লিপ্ত। কারণ, আমার আছে দুটি শব্দ—‘তাতে কী’!
ধরা যাক, সেরেদকিনা একেবারে হাল ফ্যাশনের এক জোড়া জুতা কিনেছে। আমি ভাবি, তাতে কী! সে তো গ্রীষ্মকালে ছুটি পাবে না, পাবে ডিসেম্বর মাসে।
নুত্রোভের ভাইয়ের বিশাল বাড়ি আছে ইয়াল্টায়। তার বোন অতিকায় এক দোকানের ডিরেক্টর। আমি ভাবি, তাতে কী! তার নিজের তো গ্যাস্ট্রিক!
সেকলেতারেঙ্কোর স্বামী পিএইচডি করেছে। আমি ভাবি, তাতে কী! স্কুলে তাদের মেয়ের তো রেজাল্ট খুবই খারাপ।
রেপকিন এক কাঁড়ি টাকা জিতেছে লটারিতে। আমি ভাবি, তাতে কী! অন্য শহর থেকে অতিথি এসে তার বাসায় পড়ে আছে এক মাস ধরে।
হিংসা-ঈর্ষার প্রয়োজনটা যে কী, সেটাই তো বুঝি না!
দরখাস্ত
ম. ভজদভিজেনস্কি
বুরভ বলল, ‘এই অকাট মূর্খ আমলা সুন্দুকভকে দরখাস্ত লিখতে হবে। শালা আস্ত একটা ইডিয়ট!’ ‘সে আর বলতে!’ তার কথায় সায় দিল মাসলভ। ‘ব্যাটা অসৎ ক্যারিয়ারিস্ট...’
‘এই শালাকে নিয়ে আলোচনা করা মানেই সময়ের অপচয়!’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল বুরভ।
তারপর সাদা একটা কাগজ নিয়ে দরখাস্ত লিখতে শুরু করল: ‘সর্বজনশ্রদ্ধেয় ত. সুন্দুকভ...’
No comments