তিমিরবিনাশী মা দুর্গা by দেবজ্যোতি সাহা দুলাল

শারদীয়া দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা যাই বলি না কেন, একটি উপলক্ষ নিয়ে বছর ঘুরে এই দিনটি আমাদের মধ্যে আসে। লক্ষ্য হলো মনুষ্যলোকের বা সমাজে দুর্গতি নাশ করা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, যখন মর্ত্যলোকে ধর্ম অধর্ম কর্তৃক আক্রান্ত হয়, তখন অবতাররূপে আমি পৃথিবীতে আবির্ভূত হই।


মানুষকে ধর্ম, সত্য ও ন্যায়ের পথে চালিত হওয়ার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকি। যাতে অধর্মের বিনাশ হয়। কেননা সব মানুষ যদি ধর্মের পথ থেকে সরে আসে, তখন অধর্মের জয় হবে, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। দুষ্টের দমন, আর শিষ্টের পালন হিসেবে দশভুজা দেবী দুর্গামাতা পূজিত হয়ে থাকেন। দেবী দুর্গার ১০ হাতে আছে ১০ রকমের বিশেষ ক্ষমতা। এ জন্য দুর্গা মাকে দশভুজা বলা হয়ে থাকে।
দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান। যুগ যুগ ধরে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় আশ্বিনের শুকলা পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত তিমিরবিনাশী মা দুর্গা প্রতিমার পূজার মাধ্যমে বিশ্বের মহাশক্তির আরাধনা করে আসছে। তিমিরবিনাশী মা দুর্গার মধ্যে বিশ্বশক্তি বিরাজিত। আর তাঁর সঙ্গে রয়েছেন জ্ঞায়দায়িনী সরস্বতী, ঐশ্বর্যদায়িনী লক্ষ্মী, সিদ্ধিদাতা গণেশ এবং অপরিমেয় ক্ষাত্রশক্তির প্রতীক কার্তিক। দেবী দুর্গার চরণতলে রয়েছে রজোগুণের সিংহ এবং তমোগুণের অসুর। সারা বছর আমরা অপেক্ষায় থাকি, কখন শারদীয় দুর্গোৎসব আমাদের মাঝে অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় যেন মায়ের আগমনী সুর বেজে ওঠে। আমরা তিমিরবিনাশী মা দুর্গাকে অর্ঘ্য দিয়ে হৃদয় মন্দিরে আবাহন করি। ঘরে ঘরে চিরকল্যাণময়ী মায়ের আশীর্বাদ অমিও ধারায় বর্ষিত হয়। এ সময় অশুভ শক্তির বদলে শিবশক্তির আবির্ভাব ঘটে, প্রাণে প্রাণে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। এ অনাবিল শান্তির ঢেউ আমাদের হৃদয়ে প্রবাহিত হয়। দুর্গাপূজার আনন্দঘন দিনগুলো হোক অমঙ্গল আর দারিদ্র্যের চির অবসান। বিজয়ী হোক প্রগতি আর শুভ চেতনার।
যুগে যুগে সিংহবাহিনী মা আসেন ধরার ধূলিতে। তাঁর আগমনের কারণ, বিনাশের হাত থেকে সৃষ্টিকে রক্ষা করা। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারের অবসান ঘটানো। অনাদি-অনন্তকাল থেকেই মা আসেন বিভিন্ন সাজে। কখনো দুর্গা, কখনো চণ্ডী, কখনো কাত্যায়িনী আবার কখনো নারায়ণী রূপে। দুর্গাপূজা বছরে আমরা দুবার করি। প্রথমটি হয় শরৎকালে আর দ্বিতীয়টি হয় বসন্তে। শরতের পূজাকে শারদীয়া আর বসন্তের পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়ে থাকে। শারদীয় দুর্গাপূজা অকালে হয়েছিল। রাবণ-বধের জন্য ভগবান শ্রী রামচন্দ্র করেছিলেন এই পূজা। ভগবান শ্রী রামচন্দ্র মাকে অকালে জাগিয়ে পূজা করেছিলেন বলেই শরৎকালের পূজায় বোধন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বোধন মানে জাগরণ। শ্রী রামচন্দ্র এই মহামায়াকে শক্তির রূপেই পূজা করেছিলেন। অন্যদিকে বাসন্তী পূজায় বোধনের প্রয়োজন হয় না। কারণ এ সময় দেবতারা জাগরিত থাকেন।
পরিশেষে উচ্চকণ্ঠে বলতে চাই, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এবারের দুর্গোৎসব সৌভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা বোধের চেতনায় মধুময় ও অর্থবহ হোক। সবাই সুখী হোক। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার কল্যাণ হোক। সবাই শান্তিতে থাকুক- এটাই মায়ের চরণে আমাদের কামনা। ওঁ শান্তি।

লেখক : শিক্ষক

No comments

Powered by Blogger.