উন্মুক্ত কয়লাখনির পক্ষেই বিশেষজ্ঞ কমিটির মত-আন্দোলনের হুমকি
ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পক্ষেই চূড়ান্ত মত দিয়েছে সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটির ১৩ সদস্য চূড়ান্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছেন।
দুই সদস্য দেশের বাইরে রয়েছেন। প্রতিবেদনটি শিগগিরই সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, কমিটি প্রতিবেদনে দিনাজপুরের আরেক কয়লাক্ষেত্র বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে একটি উন্মুক্ত খনি করার সুপারিশ করেছে। তবে উন্মুক্ত খননের জন্য ওই এলাকার মাটি উপযুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিকে উন্মুক্ত কয়লা খনির বিরোধিতাকারী নাগরিক আন্দোলন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। রক্ষা কমিটি উন্মুক্ত খনির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দিয়েছে।
সরকারি বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। উন্মুক্ত খননের আগে বিভিন্ন বিষয়ে সমীক্ষা করতে হবে। সব সমীক্ষা এখনো করা হয়নি।
কমিটির প্রধান বলেন, উন্মুক্ত খনি হলে পানির স্তরে কোন ধরনের সমস্যা হবে, যে মাটি সেখান থেকে সরানো হবে তার ব্যবস্থা কী হবে, বালু ও মাটির ভার সহ্য করা আদৌ সম্ভব হবে বিষয়ে সমীক্ষার পর যদি দেখা যায় উন্মুক্ত খনি করলে কোনো সমস্যা হবে না তাহলেই কেবল ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত খনি হবে। আর যদি দেখা যায় উন্মুক্ত খনি হলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে তাহলে ভূগর্ভস্থ খনি করা হবে; তাতে যতটুকু কয়লা পাওয়া যায় ততটুকুই তুলতে হবে।
ক্ষতির বিষয়টি খনি করার আগে কিভাবে নিরূপণ চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে একটি পাইলট প্রজেক্ট করব। এটা ওপেন পিট হবে। যদি এ প্রজেক্ট সফল হয় তাহলে ফুলবাড়ীতে ওপেন পিট করা হবে।' তিনি বলেন, 'ওপেন পিট করার যৌক্তিকতা হলো, এই পদ্ধতিতে ৯৯ শতাংশ কয়লা উত্তোলন করা যায়।'
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত কয়লা খনিগুলোর অবস্থা, কোন গভীরতায় কয়লা রয়েছে, ভূতাত্তি্বক গঠন, পানির স্তর প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। ফুলবাড়ী কয়লাখনির বিষয়ে এশিয়া এনার্জির দেওয়া তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের সবচেয়ে বড় সমস্যা পানির স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা নিরূপণ করা। সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভূ-তাত্তি্বক জরিপ অধিদপ্তরসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানকে এসব বিষয়ে কাজ করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ী থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ মিলিয়ন লিটার পানি তোলার কথা বলেছে। খনি উন্নয়ন ও পরিচালনার ৩৮ বছরে এ হারে পানি তোলা হবে। এর মাত্র ১৫ ভাগ তারা রি-ইনজেক্ট করবে। এতে ওই এলাকার পানি সরবরাহ এবং কৃষিকাজে পানিপ্রাপ্তি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। তাই তাদের প্রস্তাব নিয়ে আরো পর্যালোচনার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে ১০ ভাগের বেশি কয়লা তোলা সম্ভব নয়, এমন প্রচারণার বিরোধিতা করা হয়েছে। বলা হয়েছে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে এখন ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ কয়লা তোলা সম্ভব। যেখানে যে পদ্ধতি উপযুক্ত সেখানে সেই পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এদিকে আন্দোলনকারীরা বলছেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে যে পরিমাণ কয়লা তোলা হবে তা ব্যবহার করার মতো অবকাঠামো বাংলাদেশে নেই। ফলে এ কয়লা রপ্তানি করা হবে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘি্নত হবে। আন্দোলনকারীদের এ বক্তব্যের সত্যতা রয়েছে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়ায় প্রতিদিন যে কয়লা তোলা হচ্ছে তার অর্ধেকও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ব্যবহার করতে পারে না।
এ বিষয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, "যদি উন্মুক্ত খনি এই সরকারের আমলে করা হয়, তাহলে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। কারণ শেখ হাসিনা ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এক জনসভায় বলেছিলেন, 'আমার দল সরকার গঠন করলে উন্মুক্ত কয়লা খনি হবে না।'"
টিপু বিশ্বাস বলেন, 'উন্মুক্ত খনি হলে ওই অঞ্চলের মাটি, পানি ও পরিবেশ ধ্বংস হবে। বিনিময়ে আমাদের দেওয়া হবে উত্তোলিত মোট কয়লার মাত্র ৬ শতাংশ। অথচ ওই অঞ্চলের তিন ফসলি জমির ফসলের মূল্য খনি থেকে প্রাপ্ত ৬ শতাংশ কয়লার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি।'
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত (উন্মুক্ত খননের) নেওয়া হলে লাখ লাখ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে।'
বিশেষজ্ঞ কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বড়পুকুরিয়া এবং ফুলবাড়ী বাদে অন্য তিনটি কয়লাক্ষেত্র খালাসপীর, দীঘিপাড়া ও জামালগঞ্জে উন্মুক্ত খনি করা যাবে না, সেসব জায়গায় সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে হবে। প্রতিবেদনে উন্মুক্ত পদ্ধতি ছাড়াও কয়লাকে গ্যাসে পরিণত করে আহরণের সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়লা মাটির এত গভীরে যে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতেও তোলা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে গত বছরের ৮ আগস্ট ১৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, কমিটি প্রতিবেদনে দিনাজপুরের আরেক কয়লাক্ষেত্র বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে একটি উন্মুক্ত খনি করার সুপারিশ করেছে। তবে উন্মুক্ত খননের জন্য ওই এলাকার মাটি উপযুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিকে উন্মুক্ত কয়লা খনির বিরোধিতাকারী নাগরিক আন্দোলন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। রক্ষা কমিটি উন্মুক্ত খনির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দিয়েছে।
সরকারি বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। উন্মুক্ত খননের আগে বিভিন্ন বিষয়ে সমীক্ষা করতে হবে। সব সমীক্ষা এখনো করা হয়নি।
কমিটির প্রধান বলেন, উন্মুক্ত খনি হলে পানির স্তরে কোন ধরনের সমস্যা হবে, যে মাটি সেখান থেকে সরানো হবে তার ব্যবস্থা কী হবে, বালু ও মাটির ভার সহ্য করা আদৌ সম্ভব হবে বিষয়ে সমীক্ষার পর যদি দেখা যায় উন্মুক্ত খনি করলে কোনো সমস্যা হবে না তাহলেই কেবল ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত খনি হবে। আর যদি দেখা যায় উন্মুক্ত খনি হলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে তাহলে ভূগর্ভস্থ খনি করা হবে; তাতে যতটুকু কয়লা পাওয়া যায় ততটুকুই তুলতে হবে।
ক্ষতির বিষয়টি খনি করার আগে কিভাবে নিরূপণ চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে একটি পাইলট প্রজেক্ট করব। এটা ওপেন পিট হবে। যদি এ প্রজেক্ট সফল হয় তাহলে ফুলবাড়ীতে ওপেন পিট করা হবে।' তিনি বলেন, 'ওপেন পিট করার যৌক্তিকতা হলো, এই পদ্ধতিতে ৯৯ শতাংশ কয়লা উত্তোলন করা যায়।'
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত কয়লা খনিগুলোর অবস্থা, কোন গভীরতায় কয়লা রয়েছে, ভূতাত্তি্বক গঠন, পানির স্তর প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। ফুলবাড়ী কয়লাখনির বিষয়ে এশিয়া এনার্জির দেওয়া তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের সবচেয়ে বড় সমস্যা পানির স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা নিরূপণ করা। সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভূ-তাত্তি্বক জরিপ অধিদপ্তরসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানকে এসব বিষয়ে কাজ করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ী থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ মিলিয়ন লিটার পানি তোলার কথা বলেছে। খনি উন্নয়ন ও পরিচালনার ৩৮ বছরে এ হারে পানি তোলা হবে। এর মাত্র ১৫ ভাগ তারা রি-ইনজেক্ট করবে। এতে ওই এলাকার পানি সরবরাহ এবং কৃষিকাজে পানিপ্রাপ্তি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। তাই তাদের প্রস্তাব নিয়ে আরো পর্যালোচনার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে ১০ ভাগের বেশি কয়লা তোলা সম্ভব নয়, এমন প্রচারণার বিরোধিতা করা হয়েছে। বলা হয়েছে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে এখন ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ কয়লা তোলা সম্ভব। যেখানে যে পদ্ধতি উপযুক্ত সেখানে সেই পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এদিকে আন্দোলনকারীরা বলছেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে যে পরিমাণ কয়লা তোলা হবে তা ব্যবহার করার মতো অবকাঠামো বাংলাদেশে নেই। ফলে এ কয়লা রপ্তানি করা হবে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘি্নত হবে। আন্দোলনকারীদের এ বক্তব্যের সত্যতা রয়েছে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়ায় প্রতিদিন যে কয়লা তোলা হচ্ছে তার অর্ধেকও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ব্যবহার করতে পারে না।
এ বিষয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, "যদি উন্মুক্ত খনি এই সরকারের আমলে করা হয়, তাহলে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। কারণ শেখ হাসিনা ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এক জনসভায় বলেছিলেন, 'আমার দল সরকার গঠন করলে উন্মুক্ত কয়লা খনি হবে না।'"
টিপু বিশ্বাস বলেন, 'উন্মুক্ত খনি হলে ওই অঞ্চলের মাটি, পানি ও পরিবেশ ধ্বংস হবে। বিনিময়ে আমাদের দেওয়া হবে উত্তোলিত মোট কয়লার মাত্র ৬ শতাংশ। অথচ ওই অঞ্চলের তিন ফসলি জমির ফসলের মূল্য খনি থেকে প্রাপ্ত ৬ শতাংশ কয়লার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি।'
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত (উন্মুক্ত খননের) নেওয়া হলে লাখ লাখ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে।'
বিশেষজ্ঞ কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বড়পুকুরিয়া এবং ফুলবাড়ী বাদে অন্য তিনটি কয়লাক্ষেত্র খালাসপীর, দীঘিপাড়া ও জামালগঞ্জে উন্মুক্ত খনি করা যাবে না, সেসব জায়গায় সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে হবে। প্রতিবেদনে উন্মুক্ত পদ্ধতি ছাড়াও কয়লাকে গ্যাসে পরিণত করে আহরণের সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়লা মাটির এত গভীরে যে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতেও তোলা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে গত বছরের ৮ আগস্ট ১৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।
No comments