পবিত্র কোরআনের আলো-আক্রান্ত হলে তোমরাও যুদ্ধ করবে

১৯০। ওয়া ক্বাতিলূ ফী সাবীলিল্লাহিল্লাযীনা ইউক্বাতিলূনাকুম ওয়ালা তা'তাদূ; ইন্নাল্লাহা লা-ইউহিব্বুল মু'তাদীন।
১৯১। ওয়াক্বতুলূহুম হাইছু ছাকি্বফ্তুমূহুম ওয়া আখ্রিজূহুম মিন হাইছু আখ্রাজূকুম ওয়াল ফিত্নাতু আশাদ্দু মিনাল


ক্বাতলি; ওয়া লা-তুক্বাতিলূহুম 'ইন্দাল মাস্জিদিল হারামি হাত্তা ইউক্বাতিলূকুম ফীহি; ফা-ইন ক্বাতালূকুম ফাক্বতুলূহুম; কাযালিকা জাযাউল কাফিরীন।
১৯২। ফা-ইনিন্তাহাও ফাইন্নাল্লাহা গাফূরুর রাহীম।
[সুরা আল-বাকারা, আয়াত- ১৯০-১৯২]

অনুবাদ
১৯০। তোমরা আল্লাহর পথে সেসব লোকের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে; তবে সীমা লঙ্ঘন কোরো না। কারণ, আল্লাহ কখনো সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।
১৯১। (তাদের সীমা লঙ্ঘনের পর) যেখানেই তোমরা তাদের পাও, সেখানেই হত্যা করো। যেসব স্থান থেকে তারা তোমাদের বহিষ্কার করে দিয়েছে, তোমরাও তাদের সেসব স্থান থেকে বের করে দাও। জেনে রেখো, ফিতনা বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা নরহত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। তোমরা কাবাঘরের পাশে কখনো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ো না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সেখানে তোমাদের আক্রমণ না করে। তারা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাহলে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। এভাবেই অবাধ্যদের জন্য কঠোর পরিণতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
১৯২। তবে তারা যদি যুদ্ধ থেকে বিরত হয়, মনে রেখো, আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

ব্যাখ্যা
উলি্লখিত আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে মক্কার মুশরিক কুরাইশদের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করার সময়। বলা বাহুল্য, রাসুল (সা.) এবং তাঁর সাহাবাদের মদিনায় হিজরতই ছিল যুদ্ধের একটি অংশ। মক্কার কুরাইশরা তাঁদের প্রাণনাশের জন্য উদ্যত হয়েছিল বলেই তাঁদের হিজরত করতে হয়েছিল। সেটাই ছিল মক্কা থেকে কাফিরদের দ্বারা মুসলমানদের বহিষ্কার। ১৯১ নম্বর আয়াতে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে পাল্টা বহিষ্কারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে; এবং কাফিরদের যুদ্ধ ঘোষণার জবাবে যেখানেই তাদের পাওয়া যায়, সেখানেই হত্যা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আয়াতগুলোর শানেনজুল এ রকম : হিজরি ষষ্ঠ সালে রাসুল (সা.) সাহাবাদেরসহ ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কার পথে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু কাফিররা রাসুল (সা.)-কে মক্কায় আসতে বাধা দেয়। পরিশেষে এক আলোচনার মাধ্যমে স্থির হয়, পরবর্তী বছর হজের সময় মক্কাকে তিন দিনের জন্য রাসুল (সা.) এবং তাঁর সাহাবাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। পরবর্তী বছর জিলক্বদ মাসে রাসুল (সা.) সদলবলে মক্কা রওনা হলেন। জিলক্বদ, জিলহজ, মহররম ও রজব- এই চার মাস আরব সমাজে সম্মানিত বা নিষিদ্ধ মাস হিসেবে পরিচিত। এসব মাসে যুদ্ধ করা হারাম। কাজেই মুসলমানরা ইতস্তত করতে লাগলেন, যদি কাফির কুরাইশরা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে আমরা কী করব? তখন এই আয়াতগুলো নাজিল হয়।
শত্রু দ্বারা আক্রান্ত না হলে কাউকে আক্রমণ করার অনুমতি ইসলামে নেই। মক্কার কাফির কুরাইশদের দ্বারা মুসলমানরা শুরু থেকেই ছিল আক্রান্ত। কিন্তু এর পরও রাসুল (সা.) তাদের ওপর পাল্টা আক্রমণের নীতি অনুসরণ করেননি।
মদিনায় হিজরত করার পরও কুরাইশরা বারবার মদিনা আক্রমণের চেষ্টা করেছে, ইসলাম ধর্ম এবং এর নবীকে সমূলে উৎখাত করার চেষ্টা চালিয়েছে। সর্বপ্রথম বদরের যুদ্ধ, এর পর উহুদের যুদ্ধ এবং খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে কুরাইশদের আক্রমণে। এর পর হুদাইবিয়ার সন্ধির মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর মক্কায় সাময়িক পদার্পণের পথ সুগম হয়। ওই আয়াতের মাধ্যমে সীমা লঙ্ঘন না করে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.