বছরে অপচয় ১৩০ কোটি টন খাদ্য

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক ঘোষণায় এ নিয়ে উদ্বেগ আরো বেড়েছে। তাদের আশঙ্কা, উৎপাদন-ঘাটতির কারণে আগামী বছর বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।


উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে এত এত গবেষণা, চাষবাস ও খাদ্যপণ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সত্ত্বেও কেন এই উদ্বেগ_এবার সেই প্রশ্নের একটি জুতসই কারণ জানা গেল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করা হয় তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বা ১৩০ কোটি টনই অপচয় হয়। গত বছর খাদ্য অপচয় নিয়ে নিজেদের করা এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে।
গ্লোবাল ফুড লসেস অ্যান্ড ফুড ওয়েস্ট : এঙ্টেন্ট, কজেস অ্যান্ড প্রিভেনশন_শীর্ষক ওই গবেষণায় দেখা গেছে, সরবরাহ প্রক্রিয়া অর্থাৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর বিভিন্ন পর্যায়েই খাদ্য অপচয় হয়। মধ্য ও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি খাদ্য অপচয় হয়। আর এজন্য মূলত ওই সব দেশের ভোক্তারাই দায়ী। এমনকি অনেক সময় খাবারের উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও তারা খাদ্যপণ্য ফেলে দেয়। মধ্য ও উচ্চ আয়ের দেশে অপচয়ের পেছনে ভোক্তার আচরণ ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করা হয়েছে গবেষণায়।
তবে স্বল্প আয়ের দেশের ভোক্তারা খাবার অপচয় করে কম। এসব দেশগুলোতে খাদ্য অপচয় ও নষ্টের পেছনে প্রধানত আর্থিক অনটন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব, চাষবাসে কারিগরি সীমাবদ্ধতা, গুদামজাতকরণ ও পর্যাপ্ত হিমাগারের অভাবই দায়ী। তা ছাড়া ভিন্ন জলবায়ু পরিস্থিতি, অবকাঠামো, প্যাকেটজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর চেয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোয় খাদ্যের অপচয় বেশি হয়। ফসল উৎপাদন-পরবর্তী প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশে ৪০ শতাংশের বেশি খাদ্য নষ্ট ও অপচয় হয়। উন্নত দেশগুলোয় খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তার কাছে এ পরিমাণ খাদ্য নষ্ট ও অপচয় হয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ভোক্তারা অপচয় করে ২২ কোটি ২০ লাখ টন খাবার, যা সাহারা মরুভূমি এলাকায় উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় সমান। সাহারা এলাকায় বছরে ২৩ কোটি টন খাদ্য উৎপাদিত হয়।
ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে মাথাপিছু বার্ষিক খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ৯৫ থেকে ১১৫ কিলোগ্রাম (কেজি)। আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চল এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এ পরিমাণ ছয় থেকে ১১ কেজি।
খাদ্য অপচয় রোধ করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া উন্নত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে গবেষণায়। এ ছাড়া পরিবহন, অবকাঠামো, গুদামজাত ও প্যাকেটজাতকরণের ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে উন্নত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সূত্র : ডন।

No comments

Powered by Blogger.