সহিংসতার পথ অবশ্যই পরিত্যাজ্য- যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি

সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে কাজী রেজওয়ানুল আহসান নাফিস নামের ২১ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি তরুণের গ্রেপ্তার হওয়ার সংবাদ আমাদের জন্য উদ্বেগের। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।


এই প্রেক্ষাপটে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার সন্ত্রাসবাদের ঘোর বিরোধী।
নাফিসের গ্রেপ্তারের একটি দিক আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) যোগসাজশে তাঁকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা নিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই সমালোচনা রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গোয়েন্দা ফাঁদ পেতে; এফবিআইয়ের একজন সদস্য সন্ত্রাসবাদীর ছদ্মবেশে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেছেন; সন্ত্রাসী তৎপরতায় উৎসাহ জুগিয়েছেন এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ভবন উড়িয়ে দেওয়ার কথিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য এক হাজার পাউন্ড ওজনের নকল বিস্ফোরক তাঁকে সরবরাহ করেছেন। এ ধরনের পদ্ধতিকে আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, সন্ত্রাসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বা কোনো আদর্শ বাস্তবায়নের সহিংস কৌশল বা পন্থার প্রতি আমাদের ন্যূনতম সমর্থন আছে।
নাফিসের অপরাধ এখনো তদন্তাধীন বিষয়। তিনি নিজে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পারিবারিক সূত্রে যেটুকু তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাঁর মতো নরম প্রকৃতির তরুণের পক্ষে এ ধরনের ব্যাপক-বিধ্বংসী সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত থাকাকে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। নাফিসের বাবা তাঁর গ্রেপ্তারের সংবাদে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং দাবি করেছেন যে তাঁর ছেলে এ ধরনের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারেন না, তাঁকে ‘ফাঁসানো হয়েছে’। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের অনুপস্থিতিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেও আমরা বলতে চাই, নাফিস বাংলাদেশের তরুণ, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত না হচ্ছে, তাঁর প্রতি সব ধরনের আইনি ও কূটনৈতিক সহযোগিতার হাত বাড়ানো আমাদের কর্তব্য। সরকারের পক্ষ থেকে সে রকম আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এটা স্বস্তির কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগ বিশ্বজুড়ে প্রচারিত হয়েছে। আমরা চাইব নাফিস যেন সে রকম আচরণের শিকার না হন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকদের বৈঠক হয়েছে, সে বৈঠকের পর দেশটির আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা যেসব মানবিক ও আইনি সহযোগিতা পেয়ে থাকেন, নাফিসকে তার সবই দেওয়া হবে। আমাদের কূটনীতিকেরা নাফিসের সঙ্গে একান্তে কথা বলার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কনস্যুলার প্রবেশাধিকার চেয়েছেন। আমরা আশা করব, দ্রুতই এ প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে। নাফিসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি যেন কোনো ধরনের হয়রানি, হিংসা-বিদ্বেষের শিকার না হন, সেটা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমাদের রাষ্ট্রদূতের আহ্বানকে আমরা যথার্থ মনে করি।
সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে নাফিসের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হোক বা না হোক, তাঁর গ্রেপ্তারের ঘটনার মূল বার্তা হলো, সহিংস পথ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

No comments

Powered by Blogger.