মসলা ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি by রাজীব আহমেদ
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মসলা খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বৈঠক করেন। ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিলেন মসলার দাম না বাড়ানোর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা আশ্বস্ত হলেন।
জনগণকেও আশ্বাস দিলেন। বাস্তবে বাজারে মসলার দাম ঠিকই বাড়ল। জনগণের পকেট কেটে ফায়দা তুলে নিলেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বছরের পর বছর ধরে ওপরের এই চিত্রনাট্যই মঞ্চস্থ হয়ে আসছে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। গত ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মসলা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেন অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মর্তুজা রেজা চৌধুরী। সভায় ব্যবসায়ীরা এবারের ঈদে মসলার দাম না বাড়ানোর আশ্বাস দেন। তবে সে আশ্বাস বাস্তবে কার্যকর হয়নি। রাজধানীসহ সারা দেশে বাজারে ইতিমধ্যে সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার শিকার হচ্ছেন ক্রেতাসাধারণ।
বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের এ ব্যাপারে গতকাল রবিবার বলেন, 'মসলার দাম যে অস্বাভাবিক বেশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই তা খুঁজে বের করেছে। মসলার উচ্চমূল্যের কারণে আমরাও উদ্বিগ্ন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসকসহ জেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটিকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।'
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাব মতে, আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শুল্কসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল ১৩ টাকা ১১ পয়সা। ১০ শতাংশ পরিবহন খরচ ও দুই শতাংশ লাভ ধরে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়ায় ১৪ টাকা ৭২ পয়সা। এর সঙ্গে ৪ শতাংশ পরিবহন খরচ ও ২ শতাংশ লাভ ধরে পাইকারি পর্যায়ে দাম দাঁড়ায় ১৫ টাকা ৬০ পয়সা। শেষে খুচরা ব্যবসায়ীর জন্য ৫ শতাংশ পরিবহন খরচ ও ১০ শতাংশ লাভসহ বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম হওয়া উচিত ১৭ টাকা ৯৪ পয়সা। কিন্তু রাজধানীর বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে।
একই প্রক্রিয়ার হিসাব অনুযায়ী, আমদানি করা রসুনের দাম হওয়া উচিত কেজি প্রতি ১১০ টাকা, যা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। একইভাবে ৩৯৫ টাকার জিরা ৫৫০ থেকে ৬০০, ১৭৩০ টাকার এলাচ ২২০০ থেকে ২৪০০, ১৭১ টাকার দারুচিনি ৩০০ থেকে ৩৫০ এবং ১৩৯ টাকার হলুদ (আমদানি) ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরশেন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। তবে শুকনা মরিচ ও হলুদের দাম কমেছে। টিসিবির হিসাব মতে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম ২২ শতাংশ, রসুন ২৬ শতাংশ ও আদা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এলাচ, দারুচিনি, জিরা ইত্যাদি মসলার হিসাব রাখে না সরকারি ওই প্রতিষ্ঠান। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ওই সব মসলার দামও বেড়েছে।
আমদানির তথ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মসলার দামের একটি হিসাব করেছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেল। তাদের হিসাব অনুযায়ী, মসলাজাতীয় বিভিন্ন পণ্যের যে দাম হওয়া উচিত তার চেয়ে অনেক বেশি দাম দেখা গেছে খুচরা বাজারে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ওই হিসাব মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, অনেক সময় দেখানো দামের বেশি দামে আমদানি করতে হয়। আমদানিকারক দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরে ওই দাম সমন্বয় করা হয়। এমনও অভিযোগ রয়েছে, আমদানির ওই টাকা দেশের বাইরে যায় হুন্ডির মাধ্যমে।
ব্যবসায়ীদের সাফাই : মসলার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে চোরাচালানে জড়িতদের বড় ভূমিকা রয়েছে। একাধিক ব্যবসায়ী এমন মন্তব্য করে বলেন, দেশে মসলা আমদানির শুল্কহার বেশি। এর মধ্যে শুকনো মরিচ, জিরা, এলাচ ও দারুচিনিতে ৬০ শতাংশ করে শুল্ক দিতে হয়। আদায় দিতে হয় ৩৫ শতাংশ শুল্ক। শুল্ক ফাঁকি দিতে অনেকের চোরাইপথের দিকে নির্ভরতা বেশি। এভাবে দেশে যে পরিমাণ মসলা প্রয়োজন, তার বড় অংশই আসে চোরাইপথে ভারত থেকে। বিশেষ করে এলাচ, জিরা ইত্যাদি চোরাইপথেই বেশি আসে। এ কারণে দামের ক্ষেত্রে ওই সব চোরাই ব্যবসায়ীর ভূমিকা বেশি থাকে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানির ক্ষেত্রেও অনেক সময় শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা দাম কম দেখান। এর সঙ্গে ঘুষ, চাঁদাসহ নানা অদৃশ্য খরচ মিলিয়ে বাস্তবে সংশ্লিষ্ট পণ্যটির মূল্য দাঁড়ায় উল্লিখিত মূল্যের অনেক বেশি। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীদের মুনাফা এত বেশি নয়। কিন্তু বিষয়টি ব্যবসায়ীরা মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। আবার বেশি মুনাফার অভিযোগও কাঁধে নিতে হচ্ছে। বরং খুচরা ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক অনেক বেশি মুনাফা করেন। তবে তা ধরার ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ পাইকারি মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি এনায়েত উল্লাহ বলেন, 'অবৈধ পথে মসলা আমদানির কারণে বৈধ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় মার খাচ্ছেন। সরকারকে এ কথা বহুবার বলেও প্রতিকার হয়নি। গত বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে শুল্ক কমানোর একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। পরে দেখা যায়, কমার বদলে কিসমিসের শুল্ক আরো বেড়েছে।' তিনি অভিযোগ করেন, সীমান্তে তদারকি না থাকায় সহজেই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মসলা আসছে। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের এ ব্যাপারে গতকাল রবিবার বলেন, 'মসলার দাম যে অস্বাভাবিক বেশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই তা খুঁজে বের করেছে। মসলার উচ্চমূল্যের কারণে আমরাও উদ্বিগ্ন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসকসহ জেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটিকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।'
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাব মতে, আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শুল্কসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল ১৩ টাকা ১১ পয়সা। ১০ শতাংশ পরিবহন খরচ ও দুই শতাংশ লাভ ধরে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়ায় ১৪ টাকা ৭২ পয়সা। এর সঙ্গে ৪ শতাংশ পরিবহন খরচ ও ২ শতাংশ লাভ ধরে পাইকারি পর্যায়ে দাম দাঁড়ায় ১৫ টাকা ৬০ পয়সা। শেষে খুচরা ব্যবসায়ীর জন্য ৫ শতাংশ পরিবহন খরচ ও ১০ শতাংশ লাভসহ বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম হওয়া উচিত ১৭ টাকা ৯৪ পয়সা। কিন্তু রাজধানীর বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে।
একই প্রক্রিয়ার হিসাব অনুযায়ী, আমদানি করা রসুনের দাম হওয়া উচিত কেজি প্রতি ১১০ টাকা, যা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। একইভাবে ৩৯৫ টাকার জিরা ৫৫০ থেকে ৬০০, ১৭৩০ টাকার এলাচ ২২০০ থেকে ২৪০০, ১৭১ টাকার দারুচিনি ৩০০ থেকে ৩৫০ এবং ১৩৯ টাকার হলুদ (আমদানি) ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরশেন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। তবে শুকনা মরিচ ও হলুদের দাম কমেছে। টিসিবির হিসাব মতে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম ২২ শতাংশ, রসুন ২৬ শতাংশ ও আদা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এলাচ, দারুচিনি, জিরা ইত্যাদি মসলার হিসাব রাখে না সরকারি ওই প্রতিষ্ঠান। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ওই সব মসলার দামও বেড়েছে।
আমদানির তথ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মসলার দামের একটি হিসাব করেছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেল। তাদের হিসাব অনুযায়ী, মসলাজাতীয় বিভিন্ন পণ্যের যে দাম হওয়া উচিত তার চেয়ে অনেক বেশি দাম দেখা গেছে খুচরা বাজারে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ওই হিসাব মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, অনেক সময় দেখানো দামের বেশি দামে আমদানি করতে হয়। আমদানিকারক দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরে ওই দাম সমন্বয় করা হয়। এমনও অভিযোগ রয়েছে, আমদানির ওই টাকা দেশের বাইরে যায় হুন্ডির মাধ্যমে।
ব্যবসায়ীদের সাফাই : মসলার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে চোরাচালানে জড়িতদের বড় ভূমিকা রয়েছে। একাধিক ব্যবসায়ী এমন মন্তব্য করে বলেন, দেশে মসলা আমদানির শুল্কহার বেশি। এর মধ্যে শুকনো মরিচ, জিরা, এলাচ ও দারুচিনিতে ৬০ শতাংশ করে শুল্ক দিতে হয়। আদায় দিতে হয় ৩৫ শতাংশ শুল্ক। শুল্ক ফাঁকি দিতে অনেকের চোরাইপথের দিকে নির্ভরতা বেশি। এভাবে দেশে যে পরিমাণ মসলা প্রয়োজন, তার বড় অংশই আসে চোরাইপথে ভারত থেকে। বিশেষ করে এলাচ, জিরা ইত্যাদি চোরাইপথেই বেশি আসে। এ কারণে দামের ক্ষেত্রে ওই সব চোরাই ব্যবসায়ীর ভূমিকা বেশি থাকে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানির ক্ষেত্রেও অনেক সময় শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা দাম কম দেখান। এর সঙ্গে ঘুষ, চাঁদাসহ নানা অদৃশ্য খরচ মিলিয়ে বাস্তবে সংশ্লিষ্ট পণ্যটির মূল্য দাঁড়ায় উল্লিখিত মূল্যের অনেক বেশি। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীদের মুনাফা এত বেশি নয়। কিন্তু বিষয়টি ব্যবসায়ীরা মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। আবার বেশি মুনাফার অভিযোগও কাঁধে নিতে হচ্ছে। বরং খুচরা ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক অনেক বেশি মুনাফা করেন। তবে তা ধরার ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ পাইকারি মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি এনায়েত উল্লাহ বলেন, 'অবৈধ পথে মসলা আমদানির কারণে বৈধ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় মার খাচ্ছেন। সরকারকে এ কথা বহুবার বলেও প্রতিকার হয়নি। গত বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে শুল্ক কমানোর একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। পরে দেখা যায়, কমার বদলে কিসমিসের শুল্ক আরো বেড়েছে।' তিনি অভিযোগ করেন, সীমান্তে তদারকি না থাকায় সহজেই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মসলা আসছে। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
No comments