ড্রাইভার আজম এলেন না মামলার হুমকি দুদকের

রাজধানীর সেগুনবাগিচার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়। সকাল ৯টার পর ভিড় বাড়তে থাকে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের। দুদকের কিংবা র‌্যাব-পুলিশের গাড়ি দেখলেই কৌতূহল বেড়ে যায় তাঁদের। একইভাবে অপেক্ষায় ছিলেন নিয়োগ কেলেঙ্কারির বিষয়ে গঠিত দুদকের তদন্তদলের সদস্যরা।


অপেক্ষার প্রহর সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়; কিন্তু যাঁর জন্য সবাই অপেক্ষায়, তাঁর আর দেখা মেলে না। এই বিশেষ ব্যক্তিটি হলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের ব্যক্তিগত গাড়িচালক বহুল আলোচিত আজম খান। গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ে তাঁর হাজির হওয়ার কথা থাকলেও রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হাজির হননি। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে গত বুধবার তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে নোটিশ পাঠিয়েছিল দুদক।
তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক রাশেদুর রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সকাল থেকেই আমরা আজমের অপেক্ষায় ছিলাম। ২১ অক্টোবর (রবিবার) সকাল ১০টায় হাজির হওয়ার জন্য তার গ্রামের বাড়িতে নোটিশ পাঠিয়েছিলাম; কিন্তু এখন পর্যন্ত আজম আসেনি।' আজমের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ফোনেও কথা হয়নি। আজমও যোগাযোগ করেনি আমাদের সঙ্গে। রাত ৮টা পর্যন্ত তার অপেক্ষায় ছিলাম, যেহেতু আজম আসেনি, তাই তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে বিকেলে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'তাঁকে (আজম খান) দুদকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছিল; কিন্তু তিনি দুদকের ডাকে সাড়া না দিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যদি কাউকে ডাকা হয়, তিনি যদি সাড়া না দেন, আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।' জিজ্ঞাসাবাদে হাজির না হলে মামলায় শাস্তি তিন বছর বলে জানান তিনি।
দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, 'আমরা তাঁর প্রতি নমনীয় থাকতে চাই। মানবিক দিকটা প্রথমে বিবেচনা করতে চাই। তিনি যদি দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসতে নিরাপত্তাহীন বোধ করেন, তাহলে আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে তাঁর নিরাপত্তার জন্য বলব।' পূর্ব রেলে নিয়োগ বাণিজ্যে ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন মনে করায় দুদক তাঁকে দুইবার তলব করেছে বলে জানান গোলাম রহমান।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের সহকারী পরিচালক রাশেদুর রেজা জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আজম খানকে হাজির হতে নির্দেশ দিয়ে গত সপ্তাহে নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয় হয়, 'তদন্ত ১/৬৫-২০১২ অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান এবং রমনা থানার মামলা নম্বর ৩৩(৩) ১২, কোতোয়ালি সিএমপি চট্টগ্রাম থানায় মামলা নম্বর ৩১.৩২.৩৩.৩৪.৩৫.৩৬ তারিখ ১৩/০৯/১২ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আপনার বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।'
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে অজ্ঞাত স্থান থেকে সাক্ষাৎকার দেন আজম খান। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সেদিন ৯ এপ্রিল রাতে টাকার বস্তা নিয়ে গাড়িটি তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিতের বাসায় যাচ্ছিল। তাঁর এ বক্তব্যে সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গাড়িচালক আজমের এ বক্তব্যকে ভিত্তিহীন দাবি করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্য কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।
চলতি বছরের ৯ এপ্রিল রাতে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের ফটকে তখনকার রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিতের এপিএস ফারুকের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়। পূর্বাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা এবং রেল পুলিশের কমান্ড্যান্ট এনামুল হকও ওই গাড়িতে ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই অর্থ রেলের বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য ঘুষ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। এই টাকার পরিমাণ ছিল ৭০ লাখ। অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ইতিমধ্যে ইউসুফ আলী মৃধা ও এনামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চাকরিচ্যুত হন মন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক।

No comments

Powered by Blogger.