বিশ্বব্যাংক দলকে আর তথ্য দেয়নি দুদক : গোল্ডস্টেইন-দু-এক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে : দুদক

বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি-সংশ্লিষ্ট আরো যেসব নথি ও তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে চেয়েছিল, তা এখনো সরবরাহ করা হয়নি বলে জানালেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক এলেন গোল্ডস্টেইন।


নথি ও তথ্য দিতে গত সপ্তাহে দুদক সম্মতি জানিয়েছিল উল্লেখ করে গোল্ডস্টেইন বলেন, বিশেষজ্ঞ প্যানেল এখন দুদকের কাগজপত্রের অপেক্ষায় রয়েছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গোল্ডস্টেইন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বিষয়টি স্বীকার করে দুদকের কর্মকর্তারা কালের কণ্ঠকে বলেন, কথা ছিল বিশেষজ্ঞ প্যানেলও দুদককে দুর্নীতির কিছু প্রমাণ সরবরাহ করবে, তা তারা দেয়নি।
গোল্ডস্টেইন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, 'সরকারের মতো বিশ্বব্যাংকও চায় পদ্মা সেতুর দুর্নীতির তদন্ত এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন একসঙ্গে চলুক। তবে বিশ্বব্যাংকের দ্বিতীয় মিশন ঢাকা সফরে আসার পর এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। কিন্তু দ্বিতীয় মিশনের ঢাকা সফরের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।'
গত ১৪ থেকে ১৬ অক্টোবর বিশেষজ্ঞ প্যানেল তাদের প্রথম সফরে দুদকের কাছ থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র পেয়েছে। আরো কিছু লিখিত কাগজপত্র চাইলে পরে তা সরবরাহ করা হবে বলে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশেষজ্ঞ প্যানেল আমাদের কাছে যেসব তথ্য ও কাগজপত্র চেয়েছে, তা আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে।' তবে দুদকও এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছ থেকে দুর্নীতির কোনো প্রমাণাদি হাতে পায়নি বলে জানান তিনি। কথা রয়েছে, বিশেষজ্ঞ প্যানেলও দুদককে দুর্নীতির প্রমাণাদি সরবরাহ করবে।
দুদক সূত্র জানায়, তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ঢাকা সফরের অন্যতম একটি শর্ত ছিল, দুদক আগে যেসব অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল, তাদের আবার নতুন প্রক্রিয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের শর্তের আলোকে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। ড. মসিউর রহমান বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। ঈদুল আজহার আগে তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। তবে এসব প্রক্রিয়া ঈদুল আজহার পর হবে বলে জানা গেছে।
দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যেসব প্রমাণ কানাডার পুলিশের কাছে রয়েছে, তা বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সেগুলো পাওয়া যায়নি। ওই সব প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলা করা সহজ হবে।
এ প্রসঙ্গে দুদকের উপদেষ্টা আনিসুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, বিশেষজ্ঞ প্যানেল যাওয়ার পর কাজের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলাফল ঈদুল আজহার পর দৃশ্যমান হবে বলে জানান তিনি। আনিসুল হক বলেন, বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির প্রমাণ চাওয়া হলেও এখনো তারা সরবরাহ করেনি।
দুদকের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মধ্যে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে গোল্ডস্টেইন গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানান। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ প্যানেল বাংলাদেশের দুদক আইন, দণ্ডবিধিসহ বিভিন্ন আইন সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। গোল্ডস্টেইন আরো বলেন, বিশ্বব্যাংক চায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম দুদক আরো দ্রুত করবে। বিশেষজ্ঞ প্যানেলও তদন্ত কার্যক্রমে আরো গতি আনতে জোর দিয়ে গেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতির তদন্ত প্রক্রিয়া আরো গভীরভাবে পরিচালনা করতে দুদককে পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
গোল্ডস্টেইন সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং ক্রয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে বিশ্বব্যাংকের দ্বিতীয় মিশন ঢাকা সফরে আসবে। কবে নাগাদ এ মিশন আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়সূচি চূড়ান্ত হয়নি এবং এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে এ প্যানেলের ঢাকা সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের দ্বিতীয় মিশন ঢাকা সফরে আসবে।
প্রথম দফায় তিন দিনের সফর শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল গত মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের এই পর্যবেক্ষকদলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং এবং যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক রিচার্ড অল্ডারম্যান।

No comments

Powered by Blogger.