চাঁদাবাজিতে বাড়বে গরুর দাম by রেজোয়ান বিশ্বাস ও তোফাজ্জল হোসেন রুবেল
রাজধানীর আগারগাঁও রেডিও অফিস-সংলগ্ন পশুর হাটে গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় গরুর রশি ধরে কাঁদছিলেন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। তাঁকে ঘিরে উৎসুক ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। জানা গেল, বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে তিনি ২০টি গরু কেনেন সাড়ে সাত লাখ টাকায়।
৫০ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে গরু নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন। পথে ১১ জায়গায় তাঁকে চাঁদা দিতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। পাঁচজন রাখালসহ নিজের ও গরুর খাবার বাবদ খরচ পড়বে আরো এক লাখ টাকা। পথে চাঁদা নিয়েছে পুলিশসহ অনেকেই। গাড়ি থামালেই টাকা দিতে হয়েছে। কোথাও অস্ত্রের মুখে, কোথাও লাঠির মুখে। ২০টি গরু বিক্রি করে লাখখানেক টাকা লাভ হবে- এ আশায় প্রায় ৩০০ মাইল দূর থেকে ঢাকায় এসে এখন তিনি হতাশ। হিসাব মিলিয়ে দেখেন, তাঁর খরচই পড়েছে সোয়া ৯ লাখ টাকা। এখন বেশি দামে গরু বিক্রি না হলে লাভ থাকবে না। কিন্তু সে হিসাবে দাম বলছে না কেউই। আর এ কারণেই তাঁর কান্না।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি কোরবানির পশুর হাট ঘুরে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে বিক্রেতাদের কাছ থেকে। তাঁদের অভিযোগ, পথে পথে পুলিশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে।
আগারগাঁওয়ে গরু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে ভিড় জমান আরো অনেক ব্যবসায়ী। সিরাজগঞ্জের আব্দুল মতিন ও আব্দুল আলিম, কুষ্টিয়ার আব্দুর রশিদ, ফরিদপুরের সিরাজ মাতবর, পাবনার মোমেন ব্যাপারিসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী জানান, ঢাকায় কোরবানির পশু আনতে ট্রাক ভাড়া নিচ্ছে সাধারণ ভাড়ার চেয়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি। সেই সঙ্গে পথে একেক পয়েন্টে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে চাঁদা। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর লোকজনও তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে। এর বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোতো আছেই। অধিকাংশ এলাকায়ই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এই চাঁদাবাজি করছে। অনেক স্থানে তারা পুলিশের সঙ্গে মিশেই আদায় করছে টাকা।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, পথে চাঁদা তাঁদের আগেও দিতে হতো। তবে সেই পরিমাণ ছিল সহনীয়। ট্রাক ভাড়াও আগে অনেক কম ছিল। আগে ঈদ সামনে রেখে উত্তরবঙ্গ থেকে এক ট্রাক গরু ঢাকায় আনতে খরচ হতো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এখন একই ট্রাকে গরু আনতে তাঁদের খরচ হচ্ছে ৫০ হাজার টাকার মতো। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে চালক মমিন, মামুন, জাহাঙ্গীর, মোস্তাকিন, হেমায়েত জানান, দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঢাকায় গরু আনতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি তাঁদেরও মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হয় পুলিশ, সরকারদলীয় নেতা-কর্মীসহ মাস্তানদের। ফেরিঘাটের ঝামেলা আর জট তো আছেই। এসব কারণেই আগের চেয়ে তাঁরা ভাড়া বাবদ বেশি টাকা নিচ্ছেন গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
শহিদুল নামে একজন ট্রাকচালক বলেন, 'ভাই, এসব লেইখা লাভ নাইক্যা। আগে পুলিশ মামাগো ঠিক করেন। হ্যাগো ঠিক করবার না পারলে সাধারণ পাবলিকের আর কোরবানির মাংস খাওন লাগব না। গরুর পিকচারে (ছবিতে) জিবলা লাগাইয়া চাটন লাগব।'
শনি ও রবিবার রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা, বিক্রেতা আর ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা বলে প্রায় একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুর দেড়টায় তালতলা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন পশুর হাটে সুলতান হোসেন নামে এক ক্রেতা একটি গরুর দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা সিরাজ মাদবর ৮০ হাজার টাকা হাঁকেন। ক্রেতা সুলতান হোসেন দাম বলেন ৪০ হাজার টাকা। বিক্রেতার জবাব, 'পথে চাঁদা না দিতে হইলে এই দামে দিতে পারতাম। এখন সম্ভব নয়।'
গাবতলী পশুর হাটে কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী রশীদ গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি বেনাপোল থেকে গরু এনে বিক্রি করেন। একটি ট্রাক বেনাপোল থেকে যশোরে পৌঁছতেই চাঁদা দিতে হয় দেড় হাজার টাকা। এরপর পথে দু-একটি ছোট পার্টির চাঁদা বাদ দিলে আবার বড় ধাক্কা সামাল দিতে হয় দৌলতদিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে। তবে ঘাটে এবার চাঁদাবাজির কৌশল পাল্টেছে। প্রশাসন আর ফেরির বুকিং এজেন্টদের টাকা একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। ফেরি ভাড়া এক হাজার ৩০০ টাকার ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। আপত্তি করলেই শুরু হয় হয়রানি।
একই হাটে আরেক গরু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন জানান, গতকাল তাঁর ২০টি গুরু নিয়ে আসা ট্রাকটি পুলিশ আটক করে আমিনবাজার ব্রিজের পাশে। পুলিশ সরাসরি টাকা না চেয়ে গাড়িতে চোরাই গরু রয়েছে বলে অভিযোগ আনে। এরপর দেড় হাজার টাকা দিয়ে তিনি ট্রাকটি ছাড়িয়ে আনেন। তবে আগের চেয়ে হাটের পরিবেশ ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, 'এখানেও চাঁদা দিতে হয়, তবে সেটা সহনীয়।'
মেরুল বাড্ডা আফতাবনগর গরু-ছাগলের হাটে ময়মনসিংহ থেকে আসা ব্যবসায়ী মজিবুর জানান, তিনি প্রতিবছরই রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু নিয়ে আসেন। এবারও ৩৫টি গরু এনেছেন। তাঁর অভিযোগ, পথে চাঁদাবাজির কারণে গরুর দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, 'অনেকেই মনে করেন, বিক্রেতারা ইচ্ছে করে গরুর দাম বেশি হাঁকছেন। আসলে পথের চাঁদাবাজির খবর কেউ রাখেন না।' একই অভিযোগ আনলেন চান মিয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী।
আগারগাঁও-তালতলার পশুর হাটে সিরাজগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী রজব আলী, গাইবান্ধার কামাল ও মোবারক, কুষ্টিয়ার হাসেম ব্যাপারিসহ ৩০ জন ব্যবসায়ী প্রায় এক হাজার গরু এনেছেন। তাঁদের একটাই কথা, ট্রাক ভাড়া বেশি, চাঁদাবাজি বেশি, হাটের ভেতরে ইজারাদারদের টাকা দিতে হচ্ছে বেশি।
এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আগারগাঁও পশুর হাটের ইজারাদার কাজি আবুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পথে পথে চাঁদাবাজি ও ট্রাকের ভাড়া বেশি হওয়ায় গরুর দাম বেশি পড়ছে। চাঁদাবাজি বন্ধ হলে দামও কমে যাবে।' তবে ইজারাদাররা কোনো চাঁদাবাজি করছেন না বলেও তিনি জানান।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, গাবতলীতে চাঁদাবাজি করছে ইজারাদারের লোকজনও। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইজারাদার কমিটির পরিচালক সোহেল হাসিব বলেন, কোনো ধরনের চাঁদাবাজি নেই গাবতলী পশুর হাটে।
চাঁদাবাজি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে শাহআলী থানার এসআই রাজিব চন্দ্র কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভাই এত বড় বাজার কিছু ঘটনা তো ঘটবেই। তবে চাঁদাবাজি রোধ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ১১টি ওয়াচিং টাওয়ার বসানো হয়েছে। এর পরও মাঝেমধ্যে কিছু অভিযোগ আসে।'
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পথে পথে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছে ব্যবসায়ীরা। হাইওয়ে পুলিশ এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। তবে ঢাকার পশুর হাটে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জাল টাকা, অজ্ঞান পার্টির অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ আগের চেয়ে বেশি তৎপর।'
চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুলিশকে এ ব্যাপারে সব জায়গায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। চাঁদাবাজি কঠোরহস্তে দমন করা হচ্ছে।' এর পরও যদি কোথাও কোনো চাঁদাবাজি চলে এবং গরু ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহায়তা না পান, তাহলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে অভিযোগ করার জন্য আইজিপি অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রেও কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি কোরবানির পশুর হাট ঘুরে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে বিক্রেতাদের কাছ থেকে। তাঁদের অভিযোগ, পথে পথে পুলিশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে।
আগারগাঁওয়ে গরু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে ভিড় জমান আরো অনেক ব্যবসায়ী। সিরাজগঞ্জের আব্দুল মতিন ও আব্দুল আলিম, কুষ্টিয়ার আব্দুর রশিদ, ফরিদপুরের সিরাজ মাতবর, পাবনার মোমেন ব্যাপারিসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী জানান, ঢাকায় কোরবানির পশু আনতে ট্রাক ভাড়া নিচ্ছে সাধারণ ভাড়ার চেয়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি। সেই সঙ্গে পথে একেক পয়েন্টে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে চাঁদা। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর লোকজনও তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে। এর বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোতো আছেই। অধিকাংশ এলাকায়ই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এই চাঁদাবাজি করছে। অনেক স্থানে তারা পুলিশের সঙ্গে মিশেই আদায় করছে টাকা।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, পথে চাঁদা তাঁদের আগেও দিতে হতো। তবে সেই পরিমাণ ছিল সহনীয়। ট্রাক ভাড়াও আগে অনেক কম ছিল। আগে ঈদ সামনে রেখে উত্তরবঙ্গ থেকে এক ট্রাক গরু ঢাকায় আনতে খরচ হতো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এখন একই ট্রাকে গরু আনতে তাঁদের খরচ হচ্ছে ৫০ হাজার টাকার মতো। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে চালক মমিন, মামুন, জাহাঙ্গীর, মোস্তাকিন, হেমায়েত জানান, দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঢাকায় গরু আনতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি তাঁদেরও মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হয় পুলিশ, সরকারদলীয় নেতা-কর্মীসহ মাস্তানদের। ফেরিঘাটের ঝামেলা আর জট তো আছেই। এসব কারণেই আগের চেয়ে তাঁরা ভাড়া বাবদ বেশি টাকা নিচ্ছেন গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
শহিদুল নামে একজন ট্রাকচালক বলেন, 'ভাই, এসব লেইখা লাভ নাইক্যা। আগে পুলিশ মামাগো ঠিক করেন। হ্যাগো ঠিক করবার না পারলে সাধারণ পাবলিকের আর কোরবানির মাংস খাওন লাগব না। গরুর পিকচারে (ছবিতে) জিবলা লাগাইয়া চাটন লাগব।'
শনি ও রবিবার রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা, বিক্রেতা আর ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা বলে প্রায় একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুর দেড়টায় তালতলা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন পশুর হাটে সুলতান হোসেন নামে এক ক্রেতা একটি গরুর দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা সিরাজ মাদবর ৮০ হাজার টাকা হাঁকেন। ক্রেতা সুলতান হোসেন দাম বলেন ৪০ হাজার টাকা। বিক্রেতার জবাব, 'পথে চাঁদা না দিতে হইলে এই দামে দিতে পারতাম। এখন সম্ভব নয়।'
গাবতলী পশুর হাটে কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী রশীদ গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি বেনাপোল থেকে গরু এনে বিক্রি করেন। একটি ট্রাক বেনাপোল থেকে যশোরে পৌঁছতেই চাঁদা দিতে হয় দেড় হাজার টাকা। এরপর পথে দু-একটি ছোট পার্টির চাঁদা বাদ দিলে আবার বড় ধাক্কা সামাল দিতে হয় দৌলতদিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে। তবে ঘাটে এবার চাঁদাবাজির কৌশল পাল্টেছে। প্রশাসন আর ফেরির বুকিং এজেন্টদের টাকা একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। ফেরি ভাড়া এক হাজার ৩০০ টাকার ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। আপত্তি করলেই শুরু হয় হয়রানি।
একই হাটে আরেক গরু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন জানান, গতকাল তাঁর ২০টি গুরু নিয়ে আসা ট্রাকটি পুলিশ আটক করে আমিনবাজার ব্রিজের পাশে। পুলিশ সরাসরি টাকা না চেয়ে গাড়িতে চোরাই গরু রয়েছে বলে অভিযোগ আনে। এরপর দেড় হাজার টাকা দিয়ে তিনি ট্রাকটি ছাড়িয়ে আনেন। তবে আগের চেয়ে হাটের পরিবেশ ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, 'এখানেও চাঁদা দিতে হয়, তবে সেটা সহনীয়।'
মেরুল বাড্ডা আফতাবনগর গরু-ছাগলের হাটে ময়মনসিংহ থেকে আসা ব্যবসায়ী মজিবুর জানান, তিনি প্রতিবছরই রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু নিয়ে আসেন। এবারও ৩৫টি গরু এনেছেন। তাঁর অভিযোগ, পথে চাঁদাবাজির কারণে গরুর দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, 'অনেকেই মনে করেন, বিক্রেতারা ইচ্ছে করে গরুর দাম বেশি হাঁকছেন। আসলে পথের চাঁদাবাজির খবর কেউ রাখেন না।' একই অভিযোগ আনলেন চান মিয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী।
আগারগাঁও-তালতলার পশুর হাটে সিরাজগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী রজব আলী, গাইবান্ধার কামাল ও মোবারক, কুষ্টিয়ার হাসেম ব্যাপারিসহ ৩০ জন ব্যবসায়ী প্রায় এক হাজার গরু এনেছেন। তাঁদের একটাই কথা, ট্রাক ভাড়া বেশি, চাঁদাবাজি বেশি, হাটের ভেতরে ইজারাদারদের টাকা দিতে হচ্ছে বেশি।
এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আগারগাঁও পশুর হাটের ইজারাদার কাজি আবুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পথে পথে চাঁদাবাজি ও ট্রাকের ভাড়া বেশি হওয়ায় গরুর দাম বেশি পড়ছে। চাঁদাবাজি বন্ধ হলে দামও কমে যাবে।' তবে ইজারাদাররা কোনো চাঁদাবাজি করছেন না বলেও তিনি জানান।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, গাবতলীতে চাঁদাবাজি করছে ইজারাদারের লোকজনও। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইজারাদার কমিটির পরিচালক সোহেল হাসিব বলেন, কোনো ধরনের চাঁদাবাজি নেই গাবতলী পশুর হাটে।
চাঁদাবাজি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে শাহআলী থানার এসআই রাজিব চন্দ্র কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভাই এত বড় বাজার কিছু ঘটনা তো ঘটবেই। তবে চাঁদাবাজি রোধ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ১১টি ওয়াচিং টাওয়ার বসানো হয়েছে। এর পরও মাঝেমধ্যে কিছু অভিযোগ আসে।'
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পথে পথে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছে ব্যবসায়ীরা। হাইওয়ে পুলিশ এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। তবে ঢাকার পশুর হাটে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জাল টাকা, অজ্ঞান পার্টির অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ আগের চেয়ে বেশি তৎপর।'
চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুলিশকে এ ব্যাপারে সব জায়গায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। চাঁদাবাজি কঠোরহস্তে দমন করা হচ্ছে।' এর পরও যদি কোথাও কোনো চাঁদাবাজি চলে এবং গরু ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহায়তা না পান, তাহলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে অভিযোগ করার জন্য আইজিপি অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রেও কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments