ইরানের সঙ্গে বৈঠকের খবর অসত্য: যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেহরান ও ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস বলেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।


আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পত্রিকাটির এই দাবি এবং হোয়াইট হাউসের তা প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য অর্থবহ হয়ে উঠেছে। কেননা এবারের নির্বাচনে পররাষ্ট্রনীতি বিশেষ করে লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন উপদূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলা এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বারাক ওবামা ও মিট রমনির অবস্থান সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন ভোটাররা।
ওবামা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা গোপন বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ইরান একটা বিষয় স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ৬ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের আগে তারা এ আলোচনায় বসতে রাজি নয়।
কিন্তু মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র টমি ভিয়েটর গত শনিবার বলেন, মার্কিন নির্বাচনের পর তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসার সমঝোতা নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। তিনি বলেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটাতে কূটনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে তাঁরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে শুরু থেকে বলে আসছে যে তাঁরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। এর জন্য তাঁদের কোনো পরিকল্পনা নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ, ইরান গোপনে পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে তেহরানের দাবি, তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের আলোচনা চলছিল। কিন্তু সেই আলোচনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও ফলাফল শূন্য।
এদিকে রাশিয়া গত বৃহস্পতিবার জানায়, ইরানের প্রধান আলোচক ও ছয় জাতি প্রতিনিধি ক্যাথারিন অ্যাস্টনের মধ্যে নভেম্বরে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী রমনি বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন, ইরানের ব্যাপারে ওবামার দুর্বল মনোভাব রয়েছে। এ ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কঠোর মনোভাবের প্রতি তিনি সমর্থন জানিয়ে আসছেন। তবে চলতি মাসের গোড়ার দিকে তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেন। তিনি বলেন, যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ ‘দীর্ঘসূত্রতার ব্যাপার’।
ওবামাও ইরানের বিরুদ্ধে নিকট ভবিষ্যতে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে। তবে তিনি ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরি প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর। প্রেসিডেন্ট ওবামার এই অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ভিয়েটর বলেন, ‘ওবামা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানো ঠেকাবেন। তাই এটা করতে যা করা দরকার, আমরা তা-ই করব।’
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়ক টাইমস বলেছে, দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। তবে চুক্তিতে খামেনি সই করেছেন কি না তা জানায়নি পত্রিকাটি। এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.