পাঠকের মন্তব্য- আসল অপরাধীরা কি সব সময়ই আড়ালে থেকে যাবে?

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এসব মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


জজ মিয়া সিনড্রম
বিশিষ্ট কলাম লেখক আসিফ নজরুল তাঁর ‘সময়চিত্র’ কলামে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, রামুর বৌদ্ধপল্লিতে হামলার ব্যাপারে মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার মতো এসব ঘটনায় জজ মিয়া নাটক সাজানো হতে পারে। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আহমেদ সুজন শেখ লিখেছেন: এমন চমৎকার ও সর্বজনগ্রাহ্য কলাম লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যথার্থই লিখেছেন, আসল গডফাদারদের রক্ষা করার জন্য এ রকম আর কত জজ মিয়া নাটক সাজানো হবে। আসল অপরাধীরা কি সব সময়ই আড়ালে থেকে যাবে? তাহলে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মধ্যে তো আমরা কোনো তফাত খুঁজে পাব না।
জান্নাতুল ফেরদৌস: খুব ভালো লেখা, কিন্তু আমরা যদি জনগণ এখনই এর প্রতি সচেতন না হই, তাহলে সব লেখাই পণ্ডশ্রম...
শাওন: লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ মিথ্যার স্বরূপ উন্মোচনের জন্য এবং অপ্রিয় সত্যকে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে প্রকাশের জন্য। দুর্ভাগ্য আমাদের, জনগণ হিসেবে আমরা নিজেদের ভাগ্যকে দুই অপশক্তির হাতে বারবার তুলে দিচ্ছি।

‘নখদন্তহীন’ দুদকের ওপর যত কাজের বোঝা
দুদকের জনবলকাঠামো, আইনি ক্ষমতার সঙ্গে বর্তমানে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের চাপ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। অধিকাংশ পাঠকই দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন। এ সম্পর্কে মহিউদ্দিন মাসউদ লিখেছেন, দুদক নামের একটি প্রতিষ্ঠান রাখতে হবে তাই রাখা। দেশের মানুষের ও দাতাদেরও একই চাহিদা বলে দুদক এখনো আছে। কিন্তু সেটি কোনো অবস্থাতেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধরদের সব সুবিধার প্রতিবন্ধকতা তৈরির জন্য নয়। তাই দুদক নখদন্তহীন।
নাহিয়ান সালেহিন: দুদকের ভূমিকা এমন দাঁড়িয়েছে যে বড় বড় দুর্নীতির ব্যাপারে দুদকের তদন্ত করা মানেই হলো দুর্নীতিবাজদের মুক্তির সনদ দেওয়া। ‘চালক ও চাপরাশিদের কথায় দেশ চলবে না’—দুদকের চেয়ারম্যানের এমন আপত্তিকর মন্তব্য আভাস দেয়, দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ওরা সরাসরি কাজ করছে।
মুস্তাফিজ রহমান: সরকারদলীয়দের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে দুদক বিশেষ ভূমিকা রাখায় সরকারি অনেক খাতে দুর্নীতির হিড়িক পড়ে গেছে। বিশেষ করে, সুরঞ্জিতপুত্র সৌমেন ও পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের সততার সনদ দিয়ে দেওয়ায় দুদকের আসল রূপ দেশবাসীর চোখে ধরা পড়ে গেছে।

নতুন নম্বরপ্লেট-সনদ নিতে হবে সব মোটরযানকে
দেশের প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ মোটরযানে নতুন নম্বরপ্লেট সংযোজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্রতিবেদনে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। মিজান লিখেছেন, যে দেশে ড্রাইভিং কোডের কোনো নিয়মই মানা হয় না, সেখানে আবার ডিজিটাল নম্বরপ্লেট কি উটকো ধরনের ডিজিটাল চুরি। আগে যানবাহন চলাচলের সঠিক রাস্তা বানান, তারপর এসব ডিজিটাল নম্বরপ্লেট নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন।
মফিজউদ্দিন: গাড়ি চুরি রোধে নম্বরপ্লেটে প্রযুক্তি সংযোজন করা হোক, যাতে চুরি বা ছিনতাই হওয়া গাড়ি দ্রুত উদ্ধার করা যায়। প্রয়োজনে ফি আরও বাড়ানো হোক। এর পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে গাড়ি উদ্ধার করতে না পারলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা বিধিতে সংযোজন করা হোক।
মিয়া মোহাম্মদ ফারুক: গাড়ির সামনে বা পেছনে গাড়ির মালিকের পেশা উল্লেখ করে বেআইনি স্টিকার লাগানো হয়। যেমন: সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম, সংবাদপত্র, আইনজীবী, ডাক্তার, পুলিশ, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, শ্রম মন্ত্রণালয়, সচিব, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি। এসব অবৈধ স্টিকার লাগানো বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ সরকার নেবে কি?

মালালা, আপনাকে অভিবাদন
আলী রীয়াজ তাঁর ‘দূরদেশ’ কলামে পাকিস্তানের সাহসী কিশোরী মালালার কথা তুলে ধরেছেন। এ সম্পর্কে হাফিজুর রহমান লিখেছেন: শিক্ষা-দীক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। ইসলাম ধর্মমতে, জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য কর্তব্য। শিক্ষিত না হলে কীভাবে মানুষ পবিত্র কোরআন শরিফ বুঝবে? আল্লাহর হুকুম যথাযথভাবে পালন করতে হলেও তো জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। মালালার বিরুদ্ধে অভিযোগের যে যুক্তিই তালেবান হাজির করুক না কেন, এগুলো যে কোনো ধর্মের ভিত্তিতে নয়, তা বোঝার জন্য ধর্মবিশেষজ্ঞ হতে হয় না। কূপমণ্ডূকতাই কেবল এমন ধরনের কার্যক্রমের ভিত্তি। মালালা, আপনাকে অভিনন্দন।
মনজুর: যুগ পাল্টাচ্ছে, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে, যা একসময় ছিল কল্পনা, কল্পবিজ্ঞান কাহিনি, আজ প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তা আমাদের হাতের মুঠোয়। এই যুগে ধর্মের নামে নারী নির্যাতন, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অশ্রদ্ধা, নিষ্পেষণ, মানুষ হত্যা সত্যিই অচল। ধর্ম পালন হোক মানসিক শান্তি আর চারিত্রিক উন্নতির জন্য একান্ত ব্যক্তিগত একটি পথ। জোরজবরদস্তি করে আর যা-ই হোক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আদায় করা যায় না।
নূরুল আলম: আফগান তালেবানরা যে অশিক্ষিত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তালেবানের কথা বলতে গিয়ে অনেকে ইরানের প্রসঙ্গ এনেছেন। কিন্তু মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইরানে নারীশিক্ষার হার সবচেয়ে বেশি। ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ জন নারী। সে দেশে উচ্চশিক্ষিত নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা আনার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ইরানের সঙ্গে আফগানিস্তানের তুলনা চলে না। তালেবানের কারণে ন্যূনতম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নারীরা। আর মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইরান।

টক শোতে আমাদের গলা কাটতে ব্যস্ত সবাই
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে প্রথম আলোর পাঠকেরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মধ্যে মাহফুজা বুলবুল লিখেছেন: মধ্যরাতে ঘুম কামাই করে বিভ্রান্ত হওয়ার জন্য ওই বস্তাপচা টক শো কেউ দেখে! আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
মহসিন ভূঁইয়া: প্রধানমন্ত্রী রাত জেগে টক শো দেখেন, এটা তাঁর কথায় প্রমাণিত। সমস্যা হলো, তিনি তাঁর চারপাশের লোকজনের দ্বারা যেভাবে তুষ্ট বাক্য ও বন্দনায় অভ্যস্ত, টেলিভিশনে তার বিপরীত দৃশ্য। তাঁর কি কোনো তথ্য উপদেষ্টা নেই? একজনকে নিয়োগ দিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। উপদেশ হবে, মধ্যরাতে সব টক শোর পরিবর্তে সুইট শো প্রচার করতে হবে। বক্তারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের নিবেদিত নেতা হবেন।
আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রীর বোঝা উচিত মানুষ রাতের ঘুম হারাম করে টক শো দেখে বলেই টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তা প্রচার করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিভিশনে প্রচারিত টক শো সম্পর্কে বলেছেন, ‘মধ্যরাতে টেলিভিশনের টক শোতে আমাদের গলা কাটতে, আমাদের ধ্বংস করতে ব্যস্ত থাকে সবাই।’ এতে বোঝা গেল, প্রধানমন্ত্রীও তাঁর মূল্যবান সময় ও ঘুম নষ্ট করে টক শো নামক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো দেখেন। দয়া করে এখন থেকে পত্রিকায় প্রকাশিত পাঠকের মন্তব্যগুলোও পড়বেন। এতে পাঠকেরা আরও বেশি মন্তব্য লিখতে উৎসাহিত হবেন।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.