কাছে টানা হচ্ছে জ্যেষ্ঠ নেতাদের- নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু আ.লীগের by আনোয়ার হোসেন

আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে দলকে সংগঠিত করতে মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন,


দলকে গোছানোর পাশাপাশি আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও আব্দুল জলিলের মতো জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব কেলেঙ্কারি বা দুর্নীতির অভিযোগ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণার বড় বিষয় হয়ে উঠতে পারে, সেসব বদনাম ঘোচাতে সরকার ইতিমধ্যে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে কোনো রিস্ক নেওয়া যাবে না। এ জন্যই হলমার্কের তানভীরকে গ্রেপ্তার ও ডেসটিনির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে মন্ত্রী ও উপদেষ্টাকে সরানো হয়েছে। এখন পদ্মা সেতুর বিষয়ে একটা সুরাহায় আসতে পারলে আগাম নির্বাচন দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
গত এক মাসে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতা, সাংসদ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা এবং জেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক মিলে অন্তত ১০টি বৈঠক বা মতবিনিময় সভা করেছেন। প্রায় প্রতিটি সভাতেই তিনি সাধারণভাবে চারটি পরামর্শ দিয়েছেন। তা হলো: আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল করা হবে, তাই এখনো যেসব সাংগঠনিক শাখার সম্মেলন হয়নি, সেগুলো দ্রুত শেষ করা; সরকারের সাফল্য এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দুর্নীতির কথা জনগণের সামনে তুলে ধরা, মন্ত্রী ও সাংসদদের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের দূরত্ব কমানো এবং দলের ঐক্য সুদৃঢ় করা।
এসব বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়েছেন এমন একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতিই ছিল প্রতিটি আলোচনার মূল সুর। এ ছাড়া এলাকায় দলীয় সাংসদদের কার কী অবস্থা, সেটা জানাও এসব সভার উদ্দেশ্য ছিল।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দলীয় সরকারের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই নির্বাচন মাথায় রেখে করা হয়। আওয়ামী লীগের তো নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। নির্বাচন করবে দল। সে জন্য দলকে শক্তিশালী করার কর্মসূচি চলছে।
আর আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আগামী নির্বাচনের জন্য ‘ওয়ার্ম আপ’ বলে মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
দলটির আরেকটি সূত্র জানায়, সাবেক সচিব রশিদুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল সারা দেশে আওয়ামী লীগের সাংসদদের অবস্থা, দলীয় নেতা-কর্মীরা কী ধরনের প্রার্থী চান সামনের নির্বাচনে এবং প্রতিটি সংসদীয় আসনের মানুষের মনোভাব কী, তা বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করছেন। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ মূল্যায়ন গুরুত্ব পাবে বলে সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজে গোয়েন্দা সংস্থাকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।
অবশ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের এখনো এক বছরের কিছু বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অনেক বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।
কাছে টানা হচ্ছে জ্যেষ্ঠ নেতাদের: দলে সংস্কারপন্থী বলে পরিচিতি পাওয়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেও দূরত্ব কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও আব্দুল জলিলকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাঁদের মতে, আগামীতে রাজনীতির মাঠ গরম হলে যাতে সক্রিয় সহযোগিতা পাওয়া যায়, সে জন্য এই তিন নেতাকে দলের সভাপতির বিশেষ ক্ষমতায় জাতীয় কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। গত শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির বৈঠকে এই তিন নেতাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে তাঁর পাশে বসান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, তাঁরা উপদেষ্টা কমিটিতে আছেন। জাতীয় কমিটিতে আসাটাও স্বাভাবিক। এ ছাড়া তোফায়েল আহমেদসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্প্রতি কক্সবাজারের রামুতেও নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তোফায়েলকে গাজীপুরের উপনির্বাচনেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তিনি তা ভালোভাবে পালন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.