যে রোগে ভুগছে স্বদেশ! by সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী ও মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া
শরীর থাকলে রোগবালাই থাকবে, তা অতীব স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু রোগের ভিন্নতা আর মাত্রা যদি বারবার গতিপথ বদলায় এবং ক্রমেই চলতে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি কোনো রোগ নয়, বড় কোনো রোগের উপসর্গ।
সাম্প্র্রতিক সময়ে হলমার্ক কেলেঙ্কারি, রামুর আগুন, পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং আবার সুরঞ্জিত বাবুর কালো বিড়াল প্রসঙ্গ; আমাদের এই রক্তস্নাত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের শরীরের কেউ কেউ বড় কোনো রোগের উপসর্গ দেখতে পাচ্ছে। বিভিন্ন রোগের উপসর্গ গোড়ার দিকেই ছিল; কিন্তু বর্তমান সময়ে মাত্রার ভিন্নতা সাধারণ জনগণকেও ভাবিয়ে তুলছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, গত সাড়ে তিন বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে লুটপাট হয়েছে। এর বড় একটি অংশ গেছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পকেটে; যার বেশির ভাগ অর্থ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা বেশ জোরালো। এ আশঙ্কা আমাদের নয়; স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ আশঙ্কার কারণ মোটা দাগে দুটি; তারল্য এবং আস্থার সংকট। ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট মানে ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি ধেয়ে আসা অশনিসংকেত; আর এ অশনিসংকেত পুরোমাত্রায় কেন্দ্রীভূত হবে প্রথমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নিয়ে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ সংকট উত্তরণে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে পরিচালনা পর্ষদকে তথাকথিত স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বলয় থেকে মুক্ত করা। যখন দেখা যায়, একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষিকা হয়ে রাজনৈতিক প্রলেপ মেখে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হওয়ার সুবাধে ল্যান্ডক্রুজার জিপে চলাচল করেন, তখন বিজ্ঞদের এ কথার তাৎপর্য আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত অবিলম্বে এসব লোপাট হওয়া অর্থের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এ পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে শুধু ব্যাংকের অর্থ লোপাট হওয়ার মাত্রা কমাবে না, সঙ্গে ব্যাংকের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার মাত্রাও বাড়াবে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির উপসর্গ সরতে না সরতেই রামুর সাম্প্রদায়িক ব্যামোতে ভুগছে স্বদেশ। মধ্যরাতে রামুতে বৌদ্ধমন্দির ভাঙা আর বাড়িঘর পোড়ানো এটা কোনো নিছক ঘটনা নয়, তা আজ নাবালক শিশুও হলফ করে বলে দিতে পারে। এর পেছনে আরো বৃহত্তর অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কোন কারণ বিদ্যমান? একজন বিদগ্ধজনের এই অমীমাংসিত প্রশ্নটি কেবলই আমাদের মনে অহর্নিশ ঘুরপাক খায়। এ অমীমাংসিত প্রশ্নটি ২০০৩ সালে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ঘটনার ক্ষেত্রেও উদয় হয়েছিল; যা এই রামুর আগুন, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির দৃশ্য ওই ঘটনাটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। রাতের আঁধারে শত শত মানুষ এসে জ্বালিয়ে দিল আট-দশটি পাহাড়ি গ্রাম। তখনো প্রশাসনের কেউ কিছু জানল না। রামুতে ট্রাক ভর্তি করে মানুষ এসে আগুন দিল, এখনো প্রশাসন কিছু জানল না। এই না জানা গূঢ় রহস্যের শেষ কোথায়? আমরা জানি, সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে 'ইনোসেন্স অব মুসলিম' নামে যে ফিল্ম নির্মিত হয়েছে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এবং একজন মুসলমান হিসেবে আমরাও মনে করি, আঘাত লাগাটা অতি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এই আঘাত ও ক্ষোভকে পুঁজি করে যারা বরাবরই এ দেশে রাজনীতি করে আসছে, রামুতে তারাই এ কাণ্ডটি ঘটিয়েছে। বিজ্ঞজনরা বলছেন, 'তাদেরই অবিকশিত, অবদমিত উন্মাদনা ভবিষ্যতের জন্য তখন জমা রেখেছিল; যা রামুর ঘটনায় উপচে পড়েছে।' কেউ আবার বেশ কয়েক মাস আগে ঘটে যাওয়া মিয়ানমারে সাম্প্র্রদায়িক দাঙ্গার আঁচড় বলেও মনে করছেন।
দুটি রোগের ফল দগদগে ক্ষতের মাঝেই আবার দেখা দিল আরেকটি ইনফেকশনসদৃশ পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস। অনিবার্য কারণে ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে পিএসসি। কারণ অনিবার্য হলেও তা যে প্রশ্নপত্র ফাঁস, তা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা জানি, একটি দেশের সুশাসন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অনেক খুঁটির ওপর নির্ভরশীল; এর মধ্যে সরকারি কর্মকমিশন একটি। যেখান থেকে মেধার চূড়ান্ত সনদ নিয়ে দেশ গঠনে তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এই খুঁটির রসদস্বরূপ কাঁচামাল যদি হয় ভেজালমিশ্রিত, তাহলে খুঁটির স্থায়িত্বশীলতার প্রশ্ন আসতেই পারে। আজকে যাঁরা পিএসসির মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পাবেন তাঁরাই তো হবে আগামী দিনের রাষ্ট্রকাঠামোর অপরাপর খুঁটি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একশ্রেণীর মেধাহীন মানুষের প্রথম শ্রেণীর চাকরির নিশ্চয়তা মিললেও তাঁদের হাতে জাতির ভাগ্য উত্তরণের নিশ্চয়তা মিলবে কি? আর এ কারণেই রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এত বেশি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর ঘুষপ্রীতি। জানা যায়, দেশে প্রথম প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় ১৯৭৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায়। বিজি প্রেস থেকেই এ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল এবং সর্বশেষ ৬ অক্টোবর ৩৩তম বিসিএসের। এ নিয়ে গত ৩৩ বছরে ৬৮ বার নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ঘটনার উৎস, কারণ ও দোষীদের শনাক্ত করতে ২৯ বার তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, রিপোর্টও জমা দিয়েছে কিন্তু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি একটিরও। এর মূল কারণ দলীয় বিবেচনায় পিএসসিতে লোকবল নিয়োগ; বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে। কেউ বলছেন, সব কিছুতে দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পেলে যে রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলতে পারে না, এর বড় প্রমাণ হতে পারে সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ইউজিসি, পিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয়- এ রকম আরো কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান। দেশে এত কিছু ছাপিয়ে সুরঞ্জিত বাবুর কালো বিড়াল যেন তাঁর পিছু ছাড়ছে না; আর ছাড়বে বলে আপাতত মনেও হচ্ছে না। রেলে নিয়োগ-বাণিজ্যের সন্দেহের আগুন যে বিড়ালের লেজ ছেড়ে তাঁর ওই এত বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের লেজে লেগে যাচ্ছে, তা বাবু টের না পেলেও অধম জনগণ ঠিকই ঠাহর করতে পারছে।
মনে রাখতে হবে, কোনো সরকার তখনই সফল হয়, যখন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় এবং যথাযথ নিয়ম মেনে চলে। প্রতিষ্ঠান চালায় ব্যক্তি। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম সচল রাখা ও তা মনিটরিং করার কাজটি করতে হয় ব্যক্তিকে। কাজেই ব্যক্তি যদি দুর্বল, অযোগ্য, অদক্ষ, অসৎ হয়; তবে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কাঠামো ভেঙে পড়ে। প্রতিষ্ঠান অচল হয়। প্রতিষ্ঠানের অচলতার ভার পড়ে রাষ্ট্রের ওপর। বাংলাদেশে এখন তাই ঘটছে- এই উদিত দুঃখের দেশে বিজ্ঞজনের এ কথাটি আজ সরকার পরিচালনাকারীদের বোঝাই কিভাবে?
লেখকদ্বয় : সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;
ভারপ্রাপ্ত প্রধান, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগ, জবস আইরিস বাংলাদেশ।
Common Email address: shahdatmahbub@gmail.com
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, গত সাড়ে তিন বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে লুটপাট হয়েছে। এর বড় একটি অংশ গেছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পকেটে; যার বেশির ভাগ অর্থ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা বেশ জোরালো। এ আশঙ্কা আমাদের নয়; স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ আশঙ্কার কারণ মোটা দাগে দুটি; তারল্য এবং আস্থার সংকট। ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট মানে ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি ধেয়ে আসা অশনিসংকেত; আর এ অশনিসংকেত পুরোমাত্রায় কেন্দ্রীভূত হবে প্রথমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নিয়ে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ সংকট উত্তরণে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে পরিচালনা পর্ষদকে তথাকথিত স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বলয় থেকে মুক্ত করা। যখন দেখা যায়, একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষিকা হয়ে রাজনৈতিক প্রলেপ মেখে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হওয়ার সুবাধে ল্যান্ডক্রুজার জিপে চলাচল করেন, তখন বিজ্ঞদের এ কথার তাৎপর্য আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত অবিলম্বে এসব লোপাট হওয়া অর্থের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এ পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে শুধু ব্যাংকের অর্থ লোপাট হওয়ার মাত্রা কমাবে না, সঙ্গে ব্যাংকের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার মাত্রাও বাড়াবে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির উপসর্গ সরতে না সরতেই রামুর সাম্প্রদায়িক ব্যামোতে ভুগছে স্বদেশ। মধ্যরাতে রামুতে বৌদ্ধমন্দির ভাঙা আর বাড়িঘর পোড়ানো এটা কোনো নিছক ঘটনা নয়, তা আজ নাবালক শিশুও হলফ করে বলে দিতে পারে। এর পেছনে আরো বৃহত্তর অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কোন কারণ বিদ্যমান? একজন বিদগ্ধজনের এই অমীমাংসিত প্রশ্নটি কেবলই আমাদের মনে অহর্নিশ ঘুরপাক খায়। এ অমীমাংসিত প্রশ্নটি ২০০৩ সালে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ঘটনার ক্ষেত্রেও উদয় হয়েছিল; যা এই রামুর আগুন, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির দৃশ্য ওই ঘটনাটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। রাতের আঁধারে শত শত মানুষ এসে জ্বালিয়ে দিল আট-দশটি পাহাড়ি গ্রাম। তখনো প্রশাসনের কেউ কিছু জানল না। রামুতে ট্রাক ভর্তি করে মানুষ এসে আগুন দিল, এখনো প্রশাসন কিছু জানল না। এই না জানা গূঢ় রহস্যের শেষ কোথায়? আমরা জানি, সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে 'ইনোসেন্স অব মুসলিম' নামে যে ফিল্ম নির্মিত হয়েছে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এবং একজন মুসলমান হিসেবে আমরাও মনে করি, আঘাত লাগাটা অতি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এই আঘাত ও ক্ষোভকে পুঁজি করে যারা বরাবরই এ দেশে রাজনীতি করে আসছে, রামুতে তারাই এ কাণ্ডটি ঘটিয়েছে। বিজ্ঞজনরা বলছেন, 'তাদেরই অবিকশিত, অবদমিত উন্মাদনা ভবিষ্যতের জন্য তখন জমা রেখেছিল; যা রামুর ঘটনায় উপচে পড়েছে।' কেউ আবার বেশ কয়েক মাস আগে ঘটে যাওয়া মিয়ানমারে সাম্প্র্রদায়িক দাঙ্গার আঁচড় বলেও মনে করছেন।
দুটি রোগের ফল দগদগে ক্ষতের মাঝেই আবার দেখা দিল আরেকটি ইনফেকশনসদৃশ পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস। অনিবার্য কারণে ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে পিএসসি। কারণ অনিবার্য হলেও তা যে প্রশ্নপত্র ফাঁস, তা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা জানি, একটি দেশের সুশাসন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অনেক খুঁটির ওপর নির্ভরশীল; এর মধ্যে সরকারি কর্মকমিশন একটি। যেখান থেকে মেধার চূড়ান্ত সনদ নিয়ে দেশ গঠনে তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এই খুঁটির রসদস্বরূপ কাঁচামাল যদি হয় ভেজালমিশ্রিত, তাহলে খুঁটির স্থায়িত্বশীলতার প্রশ্ন আসতেই পারে। আজকে যাঁরা পিএসসির মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পাবেন তাঁরাই তো হবে আগামী দিনের রাষ্ট্রকাঠামোর অপরাপর খুঁটি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একশ্রেণীর মেধাহীন মানুষের প্রথম শ্রেণীর চাকরির নিশ্চয়তা মিললেও তাঁদের হাতে জাতির ভাগ্য উত্তরণের নিশ্চয়তা মিলবে কি? আর এ কারণেই রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এত বেশি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর ঘুষপ্রীতি। জানা যায়, দেশে প্রথম প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় ১৯৭৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায়। বিজি প্রেস থেকেই এ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল এবং সর্বশেষ ৬ অক্টোবর ৩৩তম বিসিএসের। এ নিয়ে গত ৩৩ বছরে ৬৮ বার নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ঘটনার উৎস, কারণ ও দোষীদের শনাক্ত করতে ২৯ বার তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, রিপোর্টও জমা দিয়েছে কিন্তু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি একটিরও। এর মূল কারণ দলীয় বিবেচনায় পিএসসিতে লোকবল নিয়োগ; বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে। কেউ বলছেন, সব কিছুতে দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পেলে যে রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলতে পারে না, এর বড় প্রমাণ হতে পারে সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ইউজিসি, পিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয়- এ রকম আরো কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান। দেশে এত কিছু ছাপিয়ে সুরঞ্জিত বাবুর কালো বিড়াল যেন তাঁর পিছু ছাড়ছে না; আর ছাড়বে বলে আপাতত মনেও হচ্ছে না। রেলে নিয়োগ-বাণিজ্যের সন্দেহের আগুন যে বিড়ালের লেজ ছেড়ে তাঁর ওই এত বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের লেজে লেগে যাচ্ছে, তা বাবু টের না পেলেও অধম জনগণ ঠিকই ঠাহর করতে পারছে।
মনে রাখতে হবে, কোনো সরকার তখনই সফল হয়, যখন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় এবং যথাযথ নিয়ম মেনে চলে। প্রতিষ্ঠান চালায় ব্যক্তি। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম সচল রাখা ও তা মনিটরিং করার কাজটি করতে হয় ব্যক্তিকে। কাজেই ব্যক্তি যদি দুর্বল, অযোগ্য, অদক্ষ, অসৎ হয়; তবে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কাঠামো ভেঙে পড়ে। প্রতিষ্ঠান অচল হয়। প্রতিষ্ঠানের অচলতার ভার পড়ে রাষ্ট্রের ওপর। বাংলাদেশে এখন তাই ঘটছে- এই উদিত দুঃখের দেশে বিজ্ঞজনের এ কথাটি আজ সরকার পরিচালনাকারীদের বোঝাই কিভাবে?
লেখকদ্বয় : সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;
ভারপ্রাপ্ত প্রধান, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগ, জবস আইরিস বাংলাদেশ।
Common Email address: shahdatmahbub@gmail.com
No comments