পশুর হাটের ইজারা- ৪৭ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ১ নম্বর খেয়াঘাটের দুই পাশের খালি জায়গায় (শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপারে) কোরবানির পশুর হাট থেকে গত বছর ৪৮ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করেছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।


এবার স্থানীয় সাংসদের ডিও লেটারের মাধ্যমে শেখ রাসেল সঞ্চৃতি সংসদ নামের একটি সংগঠন মাত্র ৮৭ হাজার ৮৪৩ টাকায় সেখানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছ থেকে তারা এই অনুমোদন নিয়েছে। এতে সিটি করপোরেশন এবার ৪৭ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের দাবি, বিআইডব্লিউটিএ সিটি করপোরেশন এলাকায় সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের অনুমতি দিতে পারে না।
অনুসন্ধানে ও নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাংসদ নাসিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজী জহিরুল ইসলাম শেখ রাসেল সঞ্চৃতি সংসদ বন্দরের সভাপতি। জহিরুল ওই টাকা দিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর ৪৫ হাজার বর্গফুট তীরভূমিতে কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি নেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা সরকারি হাট-বাজার ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলার ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সব ধরনের হাট-বাজার ইজারা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। একই নীতিমালার ৫(খ)-তে বলা হয়েছে, হাট-বাজারের তদারকের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। এই নীতিমালায় যেসব হাট-বাজারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ওই হাট-বাজার ছাড়া যদি ঈদ বা অন্য কোনো বিশেষ উপলক্ষে হাট-বাজার বা মেলা বসানোর প্রয়োজন পড়ে, তবে সংশ্লিষ্ট ইউএনও/পৌরসভা/সিটি করপোরেশন জেলা প্রশাসকের পূর্ব অনুমতি গ্রহণ করে প্রচলিত নীতিমালার বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক ইজারা প্রদান করবে। ইজারা থেকে পাওয়া অর্থের ২০ শতাংশ অর্থ ভূমি রাজস্ব খাতে জমা দিতে হবে। বাকি ৮০ শতাংশ অর্থ সংশ্লিষ্ট পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয় হিসেবে গণ্য হবে। উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা রাজস্ব তহবিলে জমা দিতে হবে।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের ঊর্ধ্বতন উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংসদ নাসিমের ডিও লেটারের পরিপ্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ ওই জায়গা ২১ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ঈদুল আজহা উপলক্ষে অস্থায়ীভাবে গরুর হাট বসানোর জন্য শেখ রাসেল সঞ্চৃতি সংসদকে অনুমতি দিয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া গরুর হাট বসানোর অনুমতি বিআইডব্লিউটিএ দিতে পারে কি না, এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নদীর তীরভূমি এলাকায় তারা অনুমতি দিতে পারে। তবে তারা কিছু শর্ত সাপেক্ষে এ অনুমতি দিয়েছে। শর্তগুলো হলো গরুর হাট পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল বলেন, বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন পেয়ে শেখ রাসেল সঞ্চৃতি সংসদ গরুর হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে। তবে জেলা প্রশাসন গরুর হাট বসানোর অনুমতি এখনো দেয়নি।
তবে কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই জায়গা বিআইডব্লিউটিএর, সিটি করপোরেশনের নয়। সিটি করপোরেশনকে আমরা এখানে হাট বসাতে দেব না। প্রয়োজনে আমরা সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে আদালতে যাব।’
সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘বন্দর খেয়াঘাটের এই গরুর হাট থেকে গত বছর রাজস্ব এসেছিল ৪৮ লাখ টাকা। এ বছর এই হাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ লাখ টাকা। বিআইডব্লিউটিএ সিটি করপোরেশন এলাকায় সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া গরুর হাট বসানোর অনুমতি দিতে পারে না। এতে ব্যক্তিবিশেষ লাভবান হলেও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাবে সিটি করপোরেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জেলা প্রশাসন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমি নৌপরিবহনমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে সাংসদ নাসিম ওসমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে নাসিম ওসমান ফোন ধরেননি।

No comments

Powered by Blogger.