নির্বাচন আসন্ন : কোথায় যাচ্ছে আমেরিকা? by জন অ্যাভলন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পররাষ্ট্রনীতি কখনো কখনো বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও এই পররাষ্ট্রনীতি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির সঙ্গে লাখো মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। কিন্তু বলা যাবে না, এই সংখ্যা মিলিয়ন থেকে বিলিয়নে পেঁৗছবে।


অথচ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্য আছে, যেখানকার ভাসমান ভোটার এই বিষয়টির ওপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকে।
কিন্তু বিশ্ব তো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য থেমে থাকবে না। আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে আলোচনা হওয়া না হওয়ার কারণে তো লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে যাওয়াও বন্ধ হয়নি। আফগানিস্তানে আক্রমণও বন্ধ হয়নি। সিরিয়া কিংবা ইরানও তো তাদের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। ইরান কি তাদের পারমাণবিক বোমা বানানোর পথে এগিয়ে যাচ্ছে না?
বলতে দ্বিধা নেই, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এসব অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণেই ওবামা-রমনি ডিবেটে রমনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ধরাশায়ী করার মতো অবস্থায় ফেলতে পেরেছেন। কারণ তাঁর মতে, আমেরিকার দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি আজ প্রমাণিত।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামার জায়গায় যদি রমনি-রায়ান প্রশাসন কাজ করত, তাহলে তিনি কী ভূমিকা নিতেন? তিনি কি বারাক ওবামার গৃহীত পদক্ষেপ থেকে অতিরিক্ত কিংবা ভিন্ন কিছু গ্রহণ করতে পারতেন? মনে হয় না। তাঁকেও একই পথে চলতে হতো।
আসলে গভর্নর রমনির পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে খুব বেশি একটা অভিজ্ঞতা নেই। এটা বারাক ওবামার ক্ষেত্রেও একসময় প্রযোজ্য ছিল। তিনি যখন গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন, তখনো কি তাঁর অভিজ্ঞতা আজকের মতো ছিল? আমাদের মনে আছে, বারাক ওবামা কিন্তু ইরাক যুদ্ধের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তিনি চাইছিলেন না ইরাকে যুদ্ধ চলুক। ড্রোন হামলার ব্যাপারেও তাঁর প্রস্তাব ছিল, যাতে তা ব্যবহার করা না হয়। কিন্তু পরের অবস্থাটা কী দাঁড়াল? তালেবান ও বিন লাদেনকে শায়েস্তা করার কাজে ড্রোনের ব্যবহার বাড়েনি, এটা কি কেউ বলতে পারবে?
২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে অভিজ্ঞতা তেমন ছিল না। সেই অভিজ্ঞতার ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য নির্ভর করেছিলেন নিকট অতীতে পররাষ্ট্রসম্পর্কিত সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে জো বাইডেন প্রাপ্ত কিছু অভিজ্ঞতার ওপর। যে কারণে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত ডিবেটে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা দেয় পররাষ্ট্রনীতি। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে বারাক ওবামার প্রশাসন। এই অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে একটি বিষয় কিন্তু চলে আসে তাদের সামনে। তা হলো রমনি-রায়ান প্রশাসন সে ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করবে? সমস্যা কি শেষ হয়ে যাবে? নতুন প্রশাসন কী ভূমিকা নেবে, তার পরিষ্কার কোনো দিকনির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সৈন্য গুটিয়ে নেবে। এটা আগেরই ঘোষণা। এটা কি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতি ইঙ্গিত করে না? যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধি কেউ খুন হবে আর তার বিচার হবে না- এটা কেমন কথা! জো বাইডেন মনে করেন, বিচারের আওতায় আনতে হবে খুনিদের। তারা যে এখনো আরামে ঘুরে বেড়াচ্ছে! বিলম্বিত বিচার বিচারপ্রক্রিয়াকেই বাধাগ্রস্ত করে।
যে বিতর্ক হয়ে গেল, তার মধ্যে কিছু ব্যাখ্যা ও পরিসংখ্যানের ব্যাপারে সন্দেহ কিংবা বিতর্ক থেকে যেতে পারে। বক্তব্যগুলো যে সবই সত্য হবে, তাও হয়তো নয়। পররাষ্ট্রনীতি, বিশেষ করে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে মিট রমনি অনুষ্ঠানে সামান্যই পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তার মধ্যে তিনি বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর খরচ বৃদ্ধিতে তিনি আমেরিকার জিডিপির ৪ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করবেন। আর এমন হলে আগামী এক দশকে এর জন্য ব্যয় হবে দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। সামাজিক কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট করে এই ব্যয় নির্ধারিত হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে যে ধকল তৈরি হয়েছে, এত বড় ব্যয় কি তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে? তিনি কিন্তু সেই প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এখন দরজায় কড়া নাড়ছে। এ সময় ভোটাররা সুনির্দিষ্ট বিষয় জানতে চাইবে। কারা, কী ও কখন করবে, তার সঠিক তথ্য পরিবেশন করা এখন প্রার্থীদের জন্য জরুরি। ভাসমান ভোটারদের ভাসা ভাসা ইঙ্গিত প্রদান করে মন জয় করা সম্ভব হবে না। তবে এটাও ভাবার দরকার আছে, পররাষ্ট্র বিষয়ে বেশি নজর দেওয়ারও কোনো যুক্তি থাকে না। পরিকল্পনাগুলো প্রকাশিত হলে সারা বিশ্বে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। সেটা থেকেও ভোটারদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
লেখক : নিউজ উইক ও দ্য ডেইলি বিস্টের সিনিয়র কলামিস্ট
দ্য টেলিগ্রাফ থেকে ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.