একজন শাহরিয়ার মোল্লা-বেতনে যার অরুচি!

গতকাল সমকালের শেষ পাতায় চমকে দেওয়ার মতো একটি চমৎকার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম 'বেতন নেন না ১০ বছর!' রাজনীতির নরম-গরম, হজম-বদহজমের খবরে ঠাসা পত্রিকায় এমন খবর তো পাঠককে চমকে দিতেই পারে। গতকাল সমকালের অনলাইন সংস্করণে খবরটি বহুল পঠিত খবরের প্রায় শীর্ষে উঠেছিল।


একজন পাঠক সমকাল সম্পাদককে টেলিফোন করে এই মর্মে মন্তব্য করেছেন যে, এনবিআর কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোল্লাকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক দেওয়া হোক। কাজ করছেন, সরকারের কোষাগার থেকে অর্থ নিচ্ছেন না এহেন অনুপম দৃষ্টান্ত তো অনুসরণীয়। ভদ্রলোক যে কৌতুকভরে কথাগুলো বলেছেন তা বলাই বাহুল্য। সব শেষে তিনি বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ভদ্রলোকের অর্জিত সম্পদের বিবরণও আপনাদের ছাপা উচিত। দুর্মুখরা বলছেন, সরকারি চাকরি করলেই যে বেতন-ভাতা নিতে হবে তার তো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে নিজের মতো করে অফিস সাজানোতেও হয়তো ক্ষতি নেই। তবে এই টাকা কারা জোগালেন। যারাই উদারহস্তে মোল্লা সাহেবের মনের মতো করে অফিসটি সাজিয়েছেন তারা তো দাতা হাতেমতাই নন। এনবিআর কর্মকর্তার সুনজরে থেকে কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়া তো মোটেই অসম্ভব কাজ নয়। কোনো স্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই, তাই আমরা এ কথা বলতে পারি না মক্কেলদের টাকায়ই তিনি তার অফিস সাজিয়েছেন। এ ব্যাপারে এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্য, বেতন না নেওয়া দোষের কিছু নয়। এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এনবিআর প্রধানের এহেন বক্তব্যে অনেকেই সন্তুষ্ট হবেন বলে মনে হয় না। একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজের অফিসটি বিলাসবহুল করে সাজিয়ে নেবেন, তার অর্থের উৎস জানা হবে না এ কেমন কথা। দেশের একজন সাধারণ নাগরিকও তার জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূতভাবে অঢেল খরচ করলে তাও তো এনবিআরের নজরে এলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মোল্লা সাহেবের ব্যাপারে তার ব্যত্যয় স্বাভাবিক বলে মনে নাও হতে পারে। পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার জন্য এনবিআরের নড়েচড়ে বসাই তো সঙ্গত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চাইলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পারে। মোল্লা সাহেবের বেতন না নিয়ে চাকরি করার ব্যাপারে সঙ্গত কারণেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তার মন্তব্য : তাই নাকি, এমন লোকও আছেন! যে লোক গত ১০ বছরে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেননি, তার ব্যাপারে দুদক কষ্ট করে একটু খোঁজ-খবর নিলে মন্দ হয় না। তবে দুদকের ঘাড়ে এখন বড় বড় দুর্নীতি তদন্তের বোঝা। এই মুহূর্তে দুদক বিশ্বব্যাংকের একটি বড় টিমের সঙ্গে পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির প্রমাণ নিয়ে গুরুতর আলোচনায় ব্যস্ত। তা ছাড়া হলমার্ক ও ডেসটিনি নিয়েও তাদের শিরঃপীড়া কম নয়। একটি দৈনিক তো এ ব্যাপারে একটি কার্টুন ছেপে ফেলেছে। বোঝা একটু হালকা হলে 'দুদক' কি মোল্লা সাহেবের ব্যাপারটি একটু খতিয়ে দেখবে।
 

No comments

Powered by Blogger.