চারদিক- অলিম্পিক ও গণিত অলিম্পিয়াড by ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ২৭ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বক্রীড়ার সবচেয়ে মর্যাদার আসর অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হলো। এবার পদক তালিকার শীর্ষস্থানটি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। আর দ্বিতীয় স্থানটি চীনের। যুক্তরাষ্ট্র শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে। গত অলিম্পিকে চীন পদক তালিকার শীর্ষে ছিল।
এবার পাঁচটি ইভেন্টে আমাদের পাঁচজন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে। এবারও ফলাফল অপরিবর্তিত, অর্থাৎ হিটেই আউট।
১৯৮০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই অলিম্পিক গেমস যুক্তরাষ্ট্র বর্জন করেছিল। আবার ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমস সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্জন করেছিল। তবে আমাদের জন্য তখন সুখবর ছিল, লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ। ১৯৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে সেই গৌরবের অংশীদার হয়ে আনন্দ-উৎসবে মেতেছিলাম। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান ডন দেশের দ্রুততম মানব। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সাইদুর রহমানের অংশগ্রহণের সংবাদ যখন জানলাম, তখন গৌরবের মাত্রাটা আরও বেড়ে গিয়েছিল।
এ বছর ৪ থেকে ১৬ জুলাই আর্জেন্টিনার মারডেল প্লাটা শহরে ১০০টি দেশের ৫৪৮ জন প্রতিযোগী নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। এই অলিম্পিয়াডে আমাদের দেশের শিক্ষার্থী ধনঞ্জয় বিশ্বাস রৌপ্য পদক, সৌরভ দাশ ও নূর মুহম্মদ সফিউল্লাহ ব্রোঞ্জ পদক এবং আবিদ হাসান ও মীর্জা মো. তানজীম শরীফ মুগ্ধ সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪তম। আমাদের পাশের দেশ ভারত দুটি স্বর্ণ, তিনটি রৌপ্য পদক ও একটি সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়ে ১১তম এবং পাকিস্তান একটি রৌপ্য ও একটি সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়ে ৭৩তম অবস্থানে। কোরিয়া প্রথম, চীন দ্বিতীয় এবং যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় অবস্থানে। মেধার এই প্রতিযোগিতায় এশিয়ার দেশগুলো বরাবরই ভালো করে থাকে।
২০০৩ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজনের জন্য দেশের খ্যাতিমান গণিতবিদ ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। সেই আয়োজনে আমি স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির পর দেশের কয়েকজন সৃজনশীল মানুষের চেষ্টায় ও প্রথম আলোর সহযোগিতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৩ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি—দুই দিনব্যাপী প্রথম জাতীয় পর্যায়ে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। দেশের প্রায় সব অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। তারপর প্রতিবছরই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০০৫ সালে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা প্রথমবার মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। সেবার আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পারেনি। তবে পরবর্তী বছর থেকে সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। ২০০৯ সাল থেকে ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে আসছে। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রৌপ্য পদক পেয়েছে। আর মাত্র ৩ পয়েন্টের জন্য স্বর্ণপদক থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এবার অলিম্পিক গেমস ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড উভয় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অষ্টমবার। অলিম্পিক গেমসের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডেও প্রতিযোগীরা নিজ নিজ দেশের পতাকা বহন করে। অলিম্পিক গেমস থেকে এযাবৎ কোনো পদক পায়নি, তবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে একটি রৌপ্য ও ছয়টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। মেধার লড়াইয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা সাফল্য অর্জন করে লাল-সবুজের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এমআইটির মতো বিশ্বের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে পড়াশোনা করছে। গণিত অলিম্পিয়াডের পথ ধরে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অলিম্পিয়াড, ইনফরমেটিক অলিম্পিয়াড, রসায়ন অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, দাবা অলিম্পিয়াড ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। আরও সুখবর হলো, এ বছর ১৫-২৪ জুলাই এস্তোনিয়ায় অনুষ্ঠিত ৪৩তম আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে আমাদের দেশ দ্বিতীয়বারের মতো অংশগ্রহণ করে শিঞ্জিনি সাহা ব্রোঞ্জ পদক এবং শোভন বিশ্বাস ও আহমেদ মাকসুদ সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রীড়ায় আমাদের ক্রীড়াবিদদের সাফল্যে সরকারের উচ্চমহল থেকে তাদের সংবর্ধনাসহ পুরস্কৃত করা হয়। এটা প্রশংসনীয়। যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড থেকে পদক অর্জন করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে, তাদেরও সরকারিভাবে সম্মানিত করা উচিত।
ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস
কোষাধ্যক্ষ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
১৯৮০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই অলিম্পিক গেমস যুক্তরাষ্ট্র বর্জন করেছিল। আবার ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমস সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্জন করেছিল। তবে আমাদের জন্য তখন সুখবর ছিল, লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ। ১৯৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে সেই গৌরবের অংশীদার হয়ে আনন্দ-উৎসবে মেতেছিলাম। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান ডন দেশের দ্রুততম মানব। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সাইদুর রহমানের অংশগ্রহণের সংবাদ যখন জানলাম, তখন গৌরবের মাত্রাটা আরও বেড়ে গিয়েছিল।
এ বছর ৪ থেকে ১৬ জুলাই আর্জেন্টিনার মারডেল প্লাটা শহরে ১০০টি দেশের ৫৪৮ জন প্রতিযোগী নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। এই অলিম্পিয়াডে আমাদের দেশের শিক্ষার্থী ধনঞ্জয় বিশ্বাস রৌপ্য পদক, সৌরভ দাশ ও নূর মুহম্মদ সফিউল্লাহ ব্রোঞ্জ পদক এবং আবিদ হাসান ও মীর্জা মো. তানজীম শরীফ মুগ্ধ সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪তম। আমাদের পাশের দেশ ভারত দুটি স্বর্ণ, তিনটি রৌপ্য পদক ও একটি সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়ে ১১তম এবং পাকিস্তান একটি রৌপ্য ও একটি সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়ে ৭৩তম অবস্থানে। কোরিয়া প্রথম, চীন দ্বিতীয় এবং যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় অবস্থানে। মেধার এই প্রতিযোগিতায় এশিয়ার দেশগুলো বরাবরই ভালো করে থাকে।
২০০৩ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজনের জন্য দেশের খ্যাতিমান গণিতবিদ ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। সেই আয়োজনে আমি স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির পর দেশের কয়েকজন সৃজনশীল মানুষের চেষ্টায় ও প্রথম আলোর সহযোগিতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৩ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি—দুই দিনব্যাপী প্রথম জাতীয় পর্যায়ে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। দেশের প্রায় সব অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। তারপর প্রতিবছরই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০০৫ সালে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা প্রথমবার মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। সেবার আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পারেনি। তবে পরবর্তী বছর থেকে সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। ২০০৯ সাল থেকে ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে আসছে। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রৌপ্য পদক পেয়েছে। আর মাত্র ৩ পয়েন্টের জন্য স্বর্ণপদক থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এবার অলিম্পিক গেমস ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড উভয় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অষ্টমবার। অলিম্পিক গেমসের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডেও প্রতিযোগীরা নিজ নিজ দেশের পতাকা বহন করে। অলিম্পিক গেমস থেকে এযাবৎ কোনো পদক পায়নি, তবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে একটি রৌপ্য ও ছয়টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। মেধার লড়াইয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা সাফল্য অর্জন করে লাল-সবুজের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এমআইটির মতো বিশ্বের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে পড়াশোনা করছে। গণিত অলিম্পিয়াডের পথ ধরে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অলিম্পিয়াড, ইনফরমেটিক অলিম্পিয়াড, রসায়ন অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, দাবা অলিম্পিয়াড ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। আরও সুখবর হলো, এ বছর ১৫-২৪ জুলাই এস্তোনিয়ায় অনুষ্ঠিত ৪৩তম আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে আমাদের দেশ দ্বিতীয়বারের মতো অংশগ্রহণ করে শিঞ্জিনি সাহা ব্রোঞ্জ পদক এবং শোভন বিশ্বাস ও আহমেদ মাকসুদ সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রীড়ায় আমাদের ক্রীড়াবিদদের সাফল্যে সরকারের উচ্চমহল থেকে তাদের সংবর্ধনাসহ পুরস্কৃত করা হয়। এটা প্রশংসনীয়। যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড থেকে পদক অর্জন করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে, তাদেরও সরকারিভাবে সম্মানিত করা উচিত।
ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস
কোষাধ্যক্ষ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
No comments