অন্য রকম শর্মার খোজে

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে একটি রেস্তরাঁর দরজা খুলতেই সুশোভিত শীতল বাতাসে জুড়িয়ে গেল মন। ছিমছাম পরিবেশ, আধো আলো আধো অন্ধকার মনের মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি করছিল। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ মনে যেমন নাড়া দিচ্ছিল তেমনি ক্ষুধাকে কয়েক গুণ বাড়িয়েও দিচ্ছিল। রেস্তরাঁর প্রতিটি টেবিল মনে হলো মানুষে পরিপূর্ণ।


চারদিকে চেয়ে কোনার দিকে একটি ফাঁকা টেবিল পেয়ে বসে পড়লাম। চারদিকে চোখ বুলিয়ে মনে হলো ছোট্ট একটু জায়গা কত সুন্দর করে গুছিয়ে ও মনোরম করে রাখা যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে এই রেস্তরাঁটি। হ্যাঁ, বলছি ঢাকার বেইলী রোডের শর্মা হাউজের কথা। এই রেস্তরাঁটি গত বছরের ২ নভেম্বর যাত্রা শুরু করেছিল। খুব বড় পরিসরে যাত্রা শুরু না করলেও ইতোমধ্যেই এই রেস্তরাঁ ভোজনবিলাসীদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান সময়ে শর্মা একটি জনপ্রিয় খাবার। শর্মা যে কয়েক ধরনের হতে পারে তা এখানে না এলে বোঝা যেত না। এই যেমন এ্যারাবিয়ান শর্মা, শর্মা রোল, শর্মা প্লেট ইত্যাদি। বীফ, চিকেনের শর্মা হলেও গতানুগতিক শর্মার চেয়ে এর রয়েছে স্বাদের ভিন্নতা। জার্মান রেসিপি অনুসারে শর্মা তৈরি করা হয়। শর্মা হাউজের কর্ণধার নাজমুল করিম জানান, ইয়ং জেনারেশনের কাছে শর্মা খুব জনপ্রিয় খাবার। আর শর্মার মধ্যে বনলেস শর্মাই তাদের সবচেয়ে ফেবারিট। রোল শর্মার পাশাপাশি বার্গার স্টাইল বা এ্যারাবিয়ান শর্মা নজর কাড়ছে ভোজনবিলাসীদের। প্রতিটি শর্মারই স্বাদের ভিন্নতা রয়েছে। শর্মার সঙ্গে পরিবেশন করা হয় চিলি সস ও মেন্যুস সস যেগুলো আপনার শর্মার খাওয়াকে আরও লোভনীয় করে তোলে। এই সসগুলো শর্মা হাউজ নিজেরাই তৈরি করে। শর্মা ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় প্রায় ১৬-১৭ রকমের বাহারি নামের পিৎজা। বার্সোলনা, ফোরসিজনস, মেক্সিকান হট পিৎজা ভোজনরসিকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। অর্ডার দিয়ে গরম গরম সুস্বাদু পিৎজা খাওয়ার মজাই অন্য রকম। এই শর্মা হাউজের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে মাশরুমের স্যান্ডুইচ। এছাড়াও বিফ ও চিকেনের স্যান্ডুইচও পাওয়া যায়। আসল কথাটি তো বলতেই ভুলে গেছি, এই শর্মা হাউজের অন্যতম আর্কষণীয় খাবার হচ্ছে অরিজিনাল ইতালিয়ান পাস্তা। আপনি খেলেই বুঝতে পারবেন অরিজিনাল ইতালিয়ান পাস্তা স্বাদে অতুলনীয়। এছাড়া এখানে তুর্কীর পাস্তাও রয়েছে। তবে ইতালিয়ান পাস্তাই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। শর্মা, পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডুইচ, ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, সালাদ ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে আপনি নানা ধরনের কোমল পানীয়ও খেতে পাবেন এখানে।
এবার এখানকার চিকেন নিয়ে কিছু কথা বলি। নিজেদের তত্ত্বাবধানে চিকেন তদারকি করা হয় বলে আপনি এখানে ফ্রেশ চিকেন পাবেন। এ ব্যাপারে নাজমুল করিম বলেন, ‘সমাজের বিভিন্ন উঁচু শ্রেণীর লোক যেমন বিচারপতি, সচিবসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এখানে খেতে আসেন, তাই আমরা খাবারের মানের ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকি।’ এখানে শর্মার জন্য আলাদা করে চিকেন এবং বিফ মসলা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তৈরি করে থাকে। যেখানে খাবার তৈরি করা হয় সেখানে গিয়ে দেখা গেল খাবার তৈরিতে ফ্রেশ তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। রান্নাঘরটি অনেক পরিচ্ছন্ন, ফলে বোঝাই যায় এখানকার খাবার স্বাস্থ্যসম্মত। এই শর্মা হাউজের সার্ভিস সিস্টেমও অনেক ভাল। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনাই বেশি। কারণ সুলভ মূল্যে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয় এখানে। মজার বিষয় হলো এখানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কাস্টমার আসে। এই যেমন ধরুন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনা বেশি হয়, তারপর দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন অফিসিয়াল লোকজনের ভিড় দেখা যায় আর সন্ধ্যার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই খেতে আসেন এখানে।
দেশী ভোজনরসিক ছাড়াও এই শর্মা হাউজে বিদেশীদেরও রয়েছে নিয়মিত যাতায়াত। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে এই রেস্তরাঁটি থাকে খুবই জমজমাট। এই রেস্তরাঁটিতে আপনি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে যেমন খাবার খেতে পারেন তেমনি পার্সেল করেও নিয়ে যেতে পারেন আপনার প্রিয় মানুষটির জন্য। শর্মা হাউজে ছোট ছোট পার্টিরও সুব্যবস্থা রয়েছে, ফলে আপনি ঘরোয়া কোন অনুষ্ঠান এখানেই করে ফেলতে পারেন। বেইলী রোডের শর্মা হাউজটির বয়স অনেক কম হলেও এটি খাবারের উন্নত মান ও স্বাদ, ছিমছাম মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, ভাল সার্ভিস, সুলভ মূল্য ইত্যাদি কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ভোজনরসিকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটু নিরিবিলি পরিবেশে সুলভ মূল্যে স্বাস্থ্যসম¥ত উন্নতমানের সুস্বাদু খাবার খেতে চাইলে ঘুরে আসুন বেইলী রোডের শর্মা হাউজে।

আরিফ রহমান
ছবি : কামরুল হাসনাত জসিম

No comments

Powered by Blogger.