ফেসবুক ভুলে ল্যাম্পপোস্টের নিচেঃ ‘নবজীবন’ নিয়ে ব্যস্ত স্বপ্নবাজ তরুণরা by মাহাবুর আলম সোহাগ
বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের অনেকেই ব্যস্ত কোনো উদ্যানে নির্জনে গল্পগুজব নিয়ে, কেউ ব্যস্ত ফেসবুকে চ্যাটিং নিয়ে, কেউ বর্তমান যুগের রাজনীতির আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে, কেউবা আবার খেলাধুলা নিয়ে। সব মিলিয়ে দেখা গেছে সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে।
এদের মধ্যে ব্যতিক্রম একদল তরুণ-তরুণীর দেখা পাওয়া গেল, তারা ব্যস্ত অন্য কিছু নিয়ে। এদের ভাবনা নিজেদের নিয়ে নয়, এদের চিন্তা-চেতনা আর আলোচনাও একটা বিষয়কে কেন্দ্র করেই। এরা অভিযান শুরু করেছে একদল পথশিশুকে নিরক্ষরমুক্ত করতে।
আর ব্যতিক্রমী এই পরিকল্পনার উদ্যোক্তা হলেন তারেক মাহামুদ নামে এক তরুণ। অথচ তিনি নিজেও একজন শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
প্রতিদিন তিনি কাজ থেকে ফিরে সন্ধ্যায় ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনের ল্যাম্পপোস্টের নিচে একজন পথশিশুকে নিয়ে পড়াতে বসাতেন। নিজের টাকায় ওই শিশুকে বই খাতা ও পোশাক কিনে দেন তারেক। এভাবেই চলতে থাকে তার একক কার্যক্রম। আর তার এই মহৎ কাজটি প্রতিনিয়িত পর্যবেক্ষণ করতেন ফুটপাতে চলাচলকারী পথচারীরা।
এভাবেই কেটে যায় তারেকের বেশ কিছুদিন। তার এই কাজ দেখে এক সময় ভিড় করতে থাকে অন্যসব পথশিশুরাও। তারা প্রতিদিন এসে দেখতো তাদের এক বন্ধু পড়ালেখা করছে। এক সময় তাদেরও আগ্রহ জেগে যায় পড়ালেখার প্রতি।
অপরদিকে তারেকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দেখে আরও ৫ তরুণ-তরুণী এগিয়ে আসে তাকে সহযোগিতা করতে। তারা হলেন, এপি তালুকদার, সুমন রাব্বি, শাহানাজ পারভিন, মারুফ সায়ুম ও মিতুল। এরা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু। প্রত্যেকে শিক্ষার্থী, পাশাপাশি চাকরিজীবী।
এরপর তারা “পথশিশুদের নতুন জীবনের লক্ষে ঐক্যবদ্ধ আমরা ক’জন” স্লোগান নিয়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ‘নবজীবন’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে শুরু করে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
এদিকে, আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তাদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। বর্তমানে নবজীবনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ (যদিও প্রতিদিন উপস্থিত হয় মাত্র ১৮-২০ জন)।
এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আগের সেই স্থান ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে মোটামুটি বড় আকারে শুরু হয় পথশিশুদের লেখাপড়ার আয়োজন।
তাদের এই কার্যক্রম চলে সপ্তাহের শনি থেকে বৃহস্পতিবার।
শুধু কি লেখাপড়া, সেই সঙ্গে প্রতি রাতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও মাঝে মধ্যে তাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া হয় চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে।
এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দিবসে তাদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
এসব বিষয়ে বাংলানিউজের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ‘নবজীবন’ এর উদ্যোক্তা তারেক মাহামুদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা যারা এই শিশুদের লেখাপড়া শিখানোর কাজে জড়িত তারা সবাই ছোটখাটো চাকরি করি। সবাই প্রতিমাসে নিজেদের টাকা দিয়ে তাদের বই এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করি।”
এত কিছু থাকতে কেনো এ উদ্যোগ জানতে চাইলে তিনি জানান, “আমরা বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছি ইন্টারনেটে, বিভিন্ন কাজে বা অকাজে। আগে আমিও তাই করতাম। আমার মনে হয়, ফেসবুকে আমি অযথা অনেক সময় কাটাচ্ছিলাম। পরে ভাবলাম, এ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। অনেক চিন্তা ভাবনা করে সবশেষে এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।”
“আমার মনে হয়েছে পথশিশুদের সামান্য শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে তারা নিজেদের চিনতে শিখবে। এতে করে তারা নিজেরাই নিজেদের পরিবর্তন আনবে।”
এ পর্যন্ত কারো কোনো সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মাহামুদ বলেন, “গত পহেলা বৈশাখে দি অ্যাডভান্স অব বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানি শিশুদের নতুন জামা কাপড় দিয়েছিল। এছাড়া পথচারীরা আমাদের এই কাজ দেখে অনেকে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন।”
এখানে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা বিষয়ে জানতে চাইলে পথশিশু রত্না বাংলানিউজকে বলে, “এখন আমি আমার নিজের নাম লেখতে পারি। সেই সঙ্গে আমি আমার বাবা মায়ের নামও লেখতে পারি।”
পথশিশু আলিম বলে, “ভাইয়ারা আমাকে অনেক আদর করে পড়ালেখা শেখায়। আমি এখন টাকা গুনতে পারি। নিজের নামও লেখতে পারি।”
ব্যস্ত নগরী ঢাকায় সবাই আমরা ব্যস্ত। তারপরও আমাদের অনেকেই অজান্তে বা জ্ঞাতসারেই অযথা অনেক সময় নষ্ট করে থাকি। এর সমান্তরালে শত ব্যস্ততার মাঝেও তারেক ও তার দলবল ভাবছে অবহেলিত ‘অচ্ছ্যুৎ ’ পথশিশুদের নিয়ে।
তবে পথশিশুদের নিয়ে ভাবনা শুধু তারেকের দলবলের নয়, এই “নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর” এই ভাবনাটা আমাদের সবার ভাবা উচিৎ বলে মনে হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সরকার এসব শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়না অনেক ক্ষেত্রেই। কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা থাকেন, দেখা যায় প্রকল্ডের ফান্ড শুষে নিজেদের অর্থ-বিত্তের শ্রীবৃদ্ধিতে তারা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে শেষ পর্যন্ত অবস্থা হয় “যেই লাউ, সেই কদু”।
তবে এই নেতিবাচক বাস্তবতার বিপরীতে তারেকের মত তরুণরা দেশের রাজধানী শরে অনগ্রসর অসহায় কয়েকটি শিশুকে জীবনের মহাস্রোতে ঘুরে দাঁড় করাতে মরিয়া হয়ে লড়ছেন, এটা খুব আশা জাগানিয়া একটি ঘটনা। এ ধরনের আশার প্রদীপ একটা দুটো করে জ্বলে উঠলে আমাদের অনেক প্রতিকারহীন কষ্টই হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে সময় খুব একটা সময় আর লাগবে না। তাদের এই মহতি কর্মযজ্ঞ দেশের সব অঞ্চলের তরুণ-যুবাদের অনুপ্রাণিত করুক, আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ুক ‘নবজীবনের’ ধ্যান-ধারণা— এই প্রত্যাশা দেখা গেছে পথ চলতে তেজগাঁও কলেজের ল্যাম্পপোস্টের নিচে নবজীবনের কর্মকাণ্ড দেখে হঠাৎ থমকে দাঁড়ানো পথিকদের সবার চোখে-মুখে।
আর ব্যতিক্রমী এই পরিকল্পনার উদ্যোক্তা হলেন তারেক মাহামুদ নামে এক তরুণ। অথচ তিনি নিজেও একজন শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
প্রতিদিন তিনি কাজ থেকে ফিরে সন্ধ্যায় ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনের ল্যাম্পপোস্টের নিচে একজন পথশিশুকে নিয়ে পড়াতে বসাতেন। নিজের টাকায় ওই শিশুকে বই খাতা ও পোশাক কিনে দেন তারেক। এভাবেই চলতে থাকে তার একক কার্যক্রম। আর তার এই মহৎ কাজটি প্রতিনিয়িত পর্যবেক্ষণ করতেন ফুটপাতে চলাচলকারী পথচারীরা।
এভাবেই কেটে যায় তারেকের বেশ কিছুদিন। তার এই কাজ দেখে এক সময় ভিড় করতে থাকে অন্যসব পথশিশুরাও। তারা প্রতিদিন এসে দেখতো তাদের এক বন্ধু পড়ালেখা করছে। এক সময় তাদেরও আগ্রহ জেগে যায় পড়ালেখার প্রতি।
অপরদিকে তারেকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দেখে আরও ৫ তরুণ-তরুণী এগিয়ে আসে তাকে সহযোগিতা করতে। তারা হলেন, এপি তালুকদার, সুমন রাব্বি, শাহানাজ পারভিন, মারুফ সায়ুম ও মিতুল। এরা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু। প্রত্যেকে শিক্ষার্থী, পাশাপাশি চাকরিজীবী।
এরপর তারা “পথশিশুদের নতুন জীবনের লক্ষে ঐক্যবদ্ধ আমরা ক’জন” স্লোগান নিয়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ‘নবজীবন’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে শুরু করে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
এদিকে, আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তাদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। বর্তমানে নবজীবনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ (যদিও প্রতিদিন উপস্থিত হয় মাত্র ১৮-২০ জন)।
এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আগের সেই স্থান ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে মোটামুটি বড় আকারে শুরু হয় পথশিশুদের লেখাপড়ার আয়োজন।
তাদের এই কার্যক্রম চলে সপ্তাহের শনি থেকে বৃহস্পতিবার।
শুধু কি লেখাপড়া, সেই সঙ্গে প্রতি রাতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও মাঝে মধ্যে তাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া হয় চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে।
এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দিবসে তাদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
এসব বিষয়ে বাংলানিউজের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ‘নবজীবন’ এর উদ্যোক্তা তারেক মাহামুদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা যারা এই শিশুদের লেখাপড়া শিখানোর কাজে জড়িত তারা সবাই ছোটখাটো চাকরি করি। সবাই প্রতিমাসে নিজেদের টাকা দিয়ে তাদের বই এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করি।”
এত কিছু থাকতে কেনো এ উদ্যোগ জানতে চাইলে তিনি জানান, “আমরা বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছি ইন্টারনেটে, বিভিন্ন কাজে বা অকাজে। আগে আমিও তাই করতাম। আমার মনে হয়, ফেসবুকে আমি অযথা অনেক সময় কাটাচ্ছিলাম। পরে ভাবলাম, এ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। অনেক চিন্তা ভাবনা করে সবশেষে এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।”
“আমার মনে হয়েছে পথশিশুদের সামান্য শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে তারা নিজেদের চিনতে শিখবে। এতে করে তারা নিজেরাই নিজেদের পরিবর্তন আনবে।”
এ পর্যন্ত কারো কোনো সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মাহামুদ বলেন, “গত পহেলা বৈশাখে দি অ্যাডভান্স অব বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানি শিশুদের নতুন জামা কাপড় দিয়েছিল। এছাড়া পথচারীরা আমাদের এই কাজ দেখে অনেকে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন।”
এখানে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা বিষয়ে জানতে চাইলে পথশিশু রত্না বাংলানিউজকে বলে, “এখন আমি আমার নিজের নাম লেখতে পারি। সেই সঙ্গে আমি আমার বাবা মায়ের নামও লেখতে পারি।”
পথশিশু আলিম বলে, “ভাইয়ারা আমাকে অনেক আদর করে পড়ালেখা শেখায়। আমি এখন টাকা গুনতে পারি। নিজের নামও লেখতে পারি।”
ব্যস্ত নগরী ঢাকায় সবাই আমরা ব্যস্ত। তারপরও আমাদের অনেকেই অজান্তে বা জ্ঞাতসারেই অযথা অনেক সময় নষ্ট করে থাকি। এর সমান্তরালে শত ব্যস্ততার মাঝেও তারেক ও তার দলবল ভাবছে অবহেলিত ‘অচ্ছ্যুৎ ’ পথশিশুদের নিয়ে।
তবে পথশিশুদের নিয়ে ভাবনা শুধু তারেকের দলবলের নয়, এই “নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর” এই ভাবনাটা আমাদের সবার ভাবা উচিৎ বলে মনে হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সরকার এসব শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়না অনেক ক্ষেত্রেই। কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা থাকেন, দেখা যায় প্রকল্ডের ফান্ড শুষে নিজেদের অর্থ-বিত্তের শ্রীবৃদ্ধিতে তারা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে শেষ পর্যন্ত অবস্থা হয় “যেই লাউ, সেই কদু”।
তবে এই নেতিবাচক বাস্তবতার বিপরীতে তারেকের মত তরুণরা দেশের রাজধানী শরে অনগ্রসর অসহায় কয়েকটি শিশুকে জীবনের মহাস্রোতে ঘুরে দাঁড় করাতে মরিয়া হয়ে লড়ছেন, এটা খুব আশা জাগানিয়া একটি ঘটনা। এ ধরনের আশার প্রদীপ একটা দুটো করে জ্বলে উঠলে আমাদের অনেক প্রতিকারহীন কষ্টই হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে সময় খুব একটা সময় আর লাগবে না। তাদের এই মহতি কর্মযজ্ঞ দেশের সব অঞ্চলের তরুণ-যুবাদের অনুপ্রাণিত করুক, আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ুক ‘নবজীবনের’ ধ্যান-ধারণা— এই প্রত্যাশা দেখা গেছে পথ চলতে তেজগাঁও কলেজের ল্যাম্পপোস্টের নিচে নবজীবনের কর্মকাণ্ড দেখে হঠাৎ থমকে দাঁড়ানো পথিকদের সবার চোখে-মুখে।
No comments