গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়-সোহেল তাজের পদত্যাগ

এটা খুব অবাক ব্যাপার যে একজন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের জন্য দরখাস্ত দিয়েও তিন বছর ধরে তিনি তাঁর পদ ছেড়ে আসার সরকারি ছাড়পত্র পাননি। সরকারি কম্বলটি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু কম্বল তাঁকে ছাড়ে না। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর পাঁচ মাস না যেতেই ‘ব্যক্তিগত’ কারণে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর পদত্যাগ তখনই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল।


পদত্যাগের আসল কারণটি তিনি নিজেও বলেননি, আবার সরকার থেকেও কিছু জানা যায়নি। ফলে নানা জল্পনাকল্পনা ও গুজব পল্লবিত হয়, যা সরকারের ভাবমূর্তির জন্য মোটেও ভালো হয়নি; বরং সরকার যদি উদ্যোগী হয়ে তাঁর পদত্যাগের পেছনের কোনো ন্যায্য কারণ অনুসন্ধান করে তা প্রতিকারের কার্যকর পদক্ষেপ নিত, তাহলে হয়তো আজ সরকারকে এ রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
তানজিম আহমদ সোহেল তাজ শুধু একজন প্রতিমন্ত্রী, একজন সাংসদ বা ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রতিশ্রুতিশীল নেতাই নন; তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর পুত্রও। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংস জেলহত্যার শিকার জাতীয় চার নেতার অন্যতম ছিলেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ। তাঁরই পুত্র সোহেল তাজ ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। এলাকাবাসী তাঁকে ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন। কিন্তু তাঁর দল আওয়ামী লীগ তাঁকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি। স্মরণযোগ্য যে, তাঁর বাবা তাজউদ্দীন আহমদও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সোহেল তাজ অনেক আগে থেকেই তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন। এলাকাবাসীর বিপদ-আপদে তাদের সহায়তা করেছেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর সেই সময়ের বিজয়ী দলের নেতা-কর্মীদের হামলা, হয়রানি, মামলা-মোকদ্দমায় বিপর্যস্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্দিনের সময় তিনি তাঁদের পাশে দাঁড়ান। পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তিনি একজন দরদি জননেতার আসনে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি তিন বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা না হলে হয়তো সোহেল তাজ এভাবে সংসদ সদস্যপদ ছাড়তেন না।
সোহেল তাজের মন্ত্রিত্বকালে বা তারপর সাংসদ হিসেবে তাঁর কাজে কখনো কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তাঁর মতো একজন মানুষকে কেন প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদ পদ ছাড়তে হলো, তা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অনুসন্ধান করে দেখা দরকার। দেশে যখন সততার মড়ক চলছে, তখন অন্তত আওয়ামী লীগকে একজন সৎ ও পরিচ্ছন্ন মনের তরুণ নেতাকে ধরে রাখা উচিত ছিল। তাঁর পদত্যাগ শুধু আওয়ামী লীগের জন্যই নয়, দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্যও ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.