গণশুনানিতে জ্বালানি তেলের দাম ধার্য করবে বিইআরসি-প্রবিধানমালা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে by রশিদ মামুন
পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের মূল্য নির্ধারণে প্রবিধানমালা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে। প্রবিধানমালার আলোকে জ্বালানি তেলের খুচরা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ, পরিবহন এবং মজুদের সকল প্রকার রেগুলেটরি নির্দেশনা জারি করবে বিইআরসি।
বিইআরসি সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ রবিবার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গত সপ্তাহে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শীঘ্র অনুমোদন হবে। প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত হলে বিদ্যুতের মতোই জ্বালানি তেলের খুচরা দাম নির্ধারণ করবে কমিশন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবিধানমালা অনুমোদন হলে মন্ত্রণালয় এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করছে তা আর পারবে না। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আমদানিকারক এবং সরবরাহকারীর আবেদনের ভিত্তিতে গণশুনানির মাধ্যমে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করবে। এখন বিদ্যুতের দাম যে পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হচ্ছে একই প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩-এর ৫৯ ধারার ক্ষমতাবলে বিদ্যুত উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, এনার্জি বিপণন ও বিতরণ, এনার্জি সরবরাহ এবং মজুদকরণ বিষয়ে প্রবিধানমালা তৈরি করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কমিশনকে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য কমিশন প্রবিধানমালা তৈরি করলেও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ে কমিশনের এখন পর্যন্ত কোন প্রবিধানমালা নেই। সরকারের সময় প্রথম দফায় ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম দুই টাকা কমানোর সময় বিইআরসির কাছে প্রেরণ করা হয়। তবে পরবর্তীতে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কমিশনের কাছে আবেদন তো দূরের কথা কোন মতামতও নেয়া হয়নি। এখন নির্বাহী ক্ষমতা বলে, জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করছে জ্বালানি বিভাগ।
প্রবিধানমালায় দেখা যায়, আইনের ধারা ৩৪-এর বিধান অনুযায়ী, ট্যারিফ নির্ধারণ বা পরিবর্তনের জন্য কোন লাইসে›িস কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে উপ-প্রবিধান ৩(২) ও ৩(৩)-এর বিধান অনুসরণ করে আবেদন করতে পারবে। উপ-প্রবিধান (১)-এ আবেদনপত্রের সঙ্গে কমিশন নির্ধারিত ফিস বাংলাদেশের যে কোন তফসিলী ব্যাংক থেকে কমিশনের নামে প্রদত্ত ডিমান্ড ড্রাফট বা পে-অর্ডার আকারে জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্রের সঙ্গে একটি মূল এবং একটি ইলেক্ট্রনিক ফরম্যাটে সিডিতে কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে মোট ১১ ধরনের তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে প্রস্তাবিত ট্যারিফ শিডিউল অনুযায়ী সেবা কার্যক্রম শুরু করার প্রত্যাশিত তারিখ; যে সকল ব্যক্তির নিকট ট্যারিফ সিডিউল প্রেরণ করা হবে তাদের নাম ও ঠিকানা; ট্যারিফ ঘোষণার জন্য খসড়া বিজ্ঞপ্তির একটি অনুলিপি; যে ধরনের সেবা প্রদান করা হবে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং তৎসংক্রান্ত প্রত্যেকটি সেবার জন্য প্রস্তাবিত ট্যারিফ; ট্যারিফ ও ট্যারিফ নির্ধারণ বা পরিবর্তন সংবলিত শর্তাবলী লাইসেন্সি ও ভোক্তাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত আছে মর্মে একটি ঘোষণাপত্র; প্রস্তাবিত ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী লেনদেন ও রাজস্ব আয়ের একটি প্রাক্কলিত হিসাব। এতে যে মাসে সেবা প্রদান শুরু হবে তার পরবর্তী ১২ মাসে প্রদেয় সেবা ও প্রাপ্য রাজস্ব আয়ের মাসওয়ারী প্রাক্কলিত হিসাবের উল্লেখ থাকতে হবে। প্রস্তাবিত ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণী; আবেদনকারীর বা অন্য কোন নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান এর একই প্রকার পরিবহন, মজুদকরণ, বিপণন ও বিতরণ সেবা বা অন্য কোন সহায়ক সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ট্যারিফের সঙ্গে প্রস্তাবিত ট্যারিফের একটি তুলনামূলক বিবরণী; সেবার বিস্তারিত শর্তসহ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য লাইসেন্সির সঙ্গে আন্তঃসংযোগ ও সহায়ক চুক্তির অনুলিপি।
প্রবিধান ৬-এর অধীনে কোন আবেদনপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করার পর প্রবিধান ৮ অনুযায়ী গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নোটিস প্রদানের পর কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি আবেদনটি মূল্যায়ন করবে। আবেদনপত্র মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
গণশুনানির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আবেদন গ্রহণের অনধিক ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে গণশুনানির ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডার এবং যে কোন ব্যক্তির জেরা করার সুযোগ থাকবে। কেন আবেদনকারী দাম বৃদ্ধি করতে চায় তা কমিশনের কাছে যৌক্তিক হওয়ার পর কমিশন নির্ধারিত পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে।
কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের ট্যারিফের এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি মানদ- প্রতিষ্ঠা করা, যা লাইসেন্সি ব্যবহার করবে। এই পদ্ধতি নিরপেক্ষ, ন্যায্য, স্বচ্ছ, সহজ, সরল ও নির্ভরযোগ্য এবং পূর্বেই অনুমানযোগ্য। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীর স¦ার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি তাকে উৎসাহিত করার জন্য এটা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এখানে বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার এবং ঝুঁকি অনুযায়ী ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত মুনাফা অর্জনের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে। একই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন এবং সেবা গ্রহণকারীও যাতে সুলভে ও ন্যায্যমূল্যে নির্ভরযোগ্য সেবা পান তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি মনে করেন, বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে এসব বিষয় বিবেচনা করা হয় না। যাতে অবচয় এবং সিস্টেম লসের মাত্রা বেড়ে যায়। জনগণের ওপর এর বাড়তি চাপ পড়ে। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে দাম বাড়লে জনগণ সাশ্রয়ী দামে জ্বালানি তেল পাবে বলেও জানান তিন।
তবে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আইনী ক্ষমতা বলে বিইআরসিকে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের দায়িত্ব দিলে আগেভাগে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাবে এতে মজুদ হবে। এবং মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে।
বিইআরসি সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, মজুদ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করেই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ছাড়াও অধিকাংশ দেশের রেগুলেটরি কমিশনই জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করে। তাদের ওখানে সমস্যা না হলে আমাদের এখানে হবে কেন।
No comments