আবারও এ্যাপোলোর ভুল চিকিৎসা

জনগণকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবার ইতিহাসে আনন্দ বা গৌরবের কিছু এখনো যুক্ত হয়নি। তবে কিছুদিন পর পর নামিদামি প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসার খবর প্রকাশিত হয়।


তারা একদিকে অযৌক্তিক বিশাল অঙ্কের বিল ধরিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। চিকিৎসকের অবহেলা বা অজ্ঞতার কারণে রোগীর অন্ধত্ব, পঙ্গুত্ববরণ ইত্যাদি কথাও হরহামেশা শোনা যায়। এবার শোনা গেল দেশের দামি হাসপাতাল এ্যাপোলোর এক চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতার কারণে রোগীর বন্ধ্যাত্ববরণ। তাও কি এ শাস্তি হয়েছে রোগীর বিনে পয়সায়! রোগীর জরায়ু কেটে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, তাতে কি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১২ দিনে চিকিৎসাসেবার খরচ নিয়েছে ১৭ লাখ টাকা। চার মাসের গর্ভবতীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ওই ডাক্তার ডিঅ্যান্ডসি (ডিলেশন অ্যান্ড কিউরিটেজ) করতে হবে বলেন। তা করতে গিয়ে তিনি রোগীর জরায়ু নষ্ট করে দিলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হন। পরে একেবারে জরায়ু অপসারণের অপারেশন করে তবে ছাড়েন। রোগী ভাগ্যগুণে প্রাণ নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ-জাতীয় ভুল হওয়া ও ভুল চিকিৎসার নজির কোথাও নেই। প্রথমত, চার মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে ডিঅ্যান্ডসি করা অপরাধ। দ্বিতীয়ত, রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য জরায়ু কেটে ফেলা এবং পরে তা উৎপাটন করার প্রয়োজন পড়ল রোগী বাঁচানোর জন্য- এমন ভুল নজিরবিহীন বলে অন্য বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন। তাহলে প্রশ্ন, এ্যাপোলোর ওই চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কি না। অথবা কোনো জটিল সমস্যার সম্মুখীন হলে যেকোনো চিকিৎসক রোগীর স্বাস্থ্য ও প্রাণ রক্ষার্থে অন্য চিকিৎসক, এমনকি অন্য হাসপাতালের সহায়তা নিতে পারেন। এটাই করা উচিত। তা না করে অনভিজ্ঞ হাতে অপারেশনের তীক্ষ্ন ধারালো বস্তুটা চালাতে হাত কাঁপল না কেন। দুটি কারণ, চিকিৎসার নামে ধাপে ধাপে টাকার অঙ্ক বেড়েছে। আর ন্যায়নীতি, নৈতিকতার যে বৈশিষ্ট্য ডাক্তারদের থাকা উচিত, তার ভীষণ অভাব। আরো আছে রাষ্ট্রের আইন-প্রশাসনের শৈথিল্য।
ওই ডাক্তার অন্য এক রোগীর টিউমার অপসারণ করতে গিয়ে 'মব' (কাপড়জাতীয় বস্তু) ভেতরে রেখেই সেলাই করে দিয়েছেন। সে রোগী দীর্ঘ চার বছর দুঃসহ যন্ত্রণা বইতে বইতে অবশেষে ধরা পড়ে আসল ব্যাপার। পুনর্বার অপারেশন করে অন্য ডাক্তার তা বের করেন। জনসাধারণের মধ্যে 'বড়' 'উন্নত' হাসপাতাল হিসেবে বিজ্ঞাপিত করে নিম্নমানের চিকিৎসা দিয়ে উচ্চ হারের অর্থ আত্মসাৎ করা নিশ্চয়ই অপরাধ। তদুপরি দেশের চিকিৎসাসেবার বদনাম ছড়ানো। সর্বোপরি জনগণকে এই আর্থিক ও শারীরিক-মানসিক ক্ষতির ফাঁদ থেকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দেবেন।

No comments

Powered by Blogger.