টোকিওতে আফগানিস্তান-বিষয়ক সম্মেলন-কাবুলকে ১৬০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দাতাদের

জাপানের রাজধানী টোকিওতে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত আফগানিস্তান-বিষয়ক সম্মেলনে দাতাদেশগুলো কাবুলকে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে যেন নতুন করে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে এ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।


সম্মেলনের সমাপনী বিবৃতিতে ২০১৫ সালের মধ্যে আফগানিস্তানের জন্য এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বেসামরিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে সহায়তার অর্থ ছাড়ের বিষয়টি কয়েকটি শর্তের ওপর নির্ভর করছে। এসব শর্তের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সম্মেলনে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা আফগানিস্তান থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহারের পরবর্তী সময়কে কাবুলের ‘উত্তরণের দশক’ হিসেবে অভিহিত করেন।
সমাপনী বিবৃতিতে বলা হয়, আফগানিস্তানের উত্তরণের প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কাবুলকে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশটিকে অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে।
আফগান সরকারের আয়-ব্যয়ের বিস্তর ফারাক কমানো এবং দেশটির অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য গতকালের সম্মেলন ডাকা হয়। নিরাপত্তা খরচ বাদে আফগান সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৬০০ কোটি ডলার। এর মাত্র এক-তৃতীয়াংশের অর্থের জোগান দেওয়া হয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। কাজেই দীর্ঘ সময় ধরে আফগানিস্তানের অর্থনীতি বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
২০১৪ সালে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে আর কোনো বিদেশি সেনা মারা পড়বে না—এই ভেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো অনেকটাই উদ্বেগমুক্ত। তবে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্র ও জঙ্গিদের হাতে চলে যেতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো ভীতসন্ত্রস্ত।
সম্মেলনে আফগানিস্তানকে বিপুল সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অর্থ ছাড়ের জন্য দেশটির প্রশাসনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে প্রাথমিক বক্তৃতায় আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার অঙ্গীকার করেছেন।
বান কি মুন বলেন, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আফগানিস্তান কিছুটা অগ্রগতি ঘটিয়েছে। তবে এখনো তা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বেকার সমস্যার সমাধান ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত না করা গেলে বিপুল বিনিয়োগ এবং ১০ বছরের যুদ্ধকালীন উৎসর্গ বৃথা যাবে।’
হিলারি ক্লিনটন বলেন, এক দশক ধরে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তা অব্যাহত রাখার জন্য হোয়াইট হাউস কংগ্রেসকে অনুরোধ জানাবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাহিনী আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করার পরও যাতে এ সহযোগিতা অব্যহত থাকে, সে ব্যবস্থা তারা করবে। তিনি আরও বলেন, সহায়তার অর্থ আফগানিস্তানের অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারে ব্যয় করা হবে।
একজন মার্কিন কূটনীতিক জানান, সহায়তার অর্থ দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বিফলে যাবে না—এমন শর্তের ভিত্তিতে আফগানিস্তানকে অর্থ-সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া অর্থের যথার্থ ব্যয়ের মাধ্যমে জনগণের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কি না, তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে।
আফগানিস্তান সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দাতাদেশসহ প্রায় ৮০টি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.