সংবর্ধনা-ওরা বদলে যাবে, বদলে দেবে

কেউ তাদের অভিহিত করলেন ‘তারাদল’, কেউ ‘আলোকবর্তিকা’ হিসেবে। কেউ কেউ তাদের মধ্যে খুঁজেছেন ভবিষ্যতের আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, ইউনূস, সাকিব কিংবা কোনো দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ককে। সামনে বসা সারি সারি মেধাবী মুখ এমন প্রশংসাবৃষ্টিতে ভাসতে ভাসতে শপথ নিয়েছে দেশকে ভালোবাসার, নিজেকে বদলানোর ও বদলে দেওয়ার।


গতকাল রোববার প্রথম আলোর উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল দেশপ্রেমের জয়গান। ফয়’স লেকে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।
আড্ডা, গান, বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি আর কথামালায় কেটেছে প্রায় চার হাজার মেধাবীর সারা বেলা। কখনো তারা হ্রদের জলে নৌকা নিয়ে ঘুরেছে, কখনো নাগরদোলা, ট্রেন, ভিডিও গেম, র‌্যাম্প কার ইত্যাদিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। কখনো তারা মেতেছে পুরোনো সেই দিনের কথায়, সদ্য পার করা স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণায়। তবে বেলা দুইটা থেকে আবার সবাই মুগ্ধ শ্রোতা। গান ও কথামালার শ্রোতা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গানের ফাঁকে ফাঁকে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর উপসম্পাদক আনিসুল হক, সহযোগী সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক খুশিমোহন বিশ্বাস, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাসিনা জাকারিয়া, কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক আনিস ফারুক, কনকর্ডের ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্টের ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান চৌধুরী, মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং কবির বকুল প্রমুখ। আনিসুল হক মেধাবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের আলোয় বাংলাদেশ জ্বলে উঠবে। তোমরা একেকটি মোমবাতি। ২০ বছর পর বাংলাদেশের দায়িত্ব নেবে তোমরা। তখন বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে পরিচিত হবে। তোমরা জাগলে দেশটা জাগবে।’
বক্তা ও শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে মাঝে মাঝে মেধাবীরা ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ রব তুলেছে। মাঝে মাঝে দৃপ্ত কণ্ঠে তারা বলেছে, ‘মাদককে না’। খুশিমোহন বিশ্বাস বলেন, ‘তোমরা মাদক ছোঁবে না, ধরবে না। নিজেকে দেশের কাজে লাগাও।’ হাসিনা জাকারিয়া প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে হাজার হাজার তারার মেলা। তোমাদের মাঝ থেকে ভবিষ্যতে রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইনরা বের হয়ে আসবে।’ সমগ্র অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে জমিয়ে রাখেন প্রথম আলো বন্ধুসভার কেন্দ্রীয় সম্পাদক সাইদুজ্জামান রওশন। তিনি কয়েকজন মেধাবীকে বক্তৃতার জন্য আহ্বান জানান। মেধাবীদের একজন বলেই ফেলল ভবিষ্যতে তাদের অনেকে জাতীয় সংসদে সাংসদ হিসেবে যাবে। তরুণ জাদুকর রাজীব বসাকের জাদু প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা যুক্ত করেছে। এর আগে বন্ধুসভা চট্টগ্রাম শাখার সদস্যদের বৃন্দ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পর্দা ওঠে। ব্যান্ড মৃত্তিকার দেশ ও মানবপ্রেমের গানও হূদয় ছুঁয়েছে। মাহমুদুজ্জামান বাবুর ‘আমি বাংলার গান গাই’-এর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছে হাজার হাজার আলোকিত মুখ। কনা মঞ্চে এসেই ‘লাজুক পাতায়,’ ‘ঝির ঝির বৃষ্টি’ ইত্যাদি গানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মোহিত করেন। ন্যান্সির ‘বাহির বলে দূরে থাক’ কিংবা ‘আমি তোমার মনের ভিতর’ গানগুলো শোনা গেল সমবেত সংগীতের মতো। আসিফ এসে ভবিষ্যতের চিকিৎসক বা প্রকৌশলীদের বদলে যাওয়ার মিছিলে নিয়ে গেলেন। তাঁর ‘বদলে যাও বদলে দাও’, ‘দুঃখ সারি সারি’ কিংবা ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ গানের সঙ্গে মাতোয়ারা হয় কৃতী শিক্ষার্থীরা। একইভাবে ব্যান্ড লালনের ‘পাগল’, ‘এক চোখেতে হাসন কাঁদে আরেক চোখে লালন’ গানগুলো উঠতি তরুণদের আনন্দ দিয়েছে। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে কনকর্ড ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। প্রচার সহযোগী ছিল মাছরাঙা টেলিভিশন ও এবিসি রেডিও। কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে আইসক্রিম বিতরণ করেছে পোলার।

No comments

Powered by Blogger.