দেশী মাছ কেনা, চাষ সহায়ক যন্ত্রাদি গবেষণা কর্ম-রমনা পার্কে মৎস্য মেলা by মোরসালিন মিজান

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এখানে মাছ খাওয়াই কাজ শুধু। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। সভা-সেমিনার করতে হবে। কে জানত? অথচ এটিই এখন বাস্তবতা। এখন এমন অনেক কিছুই করতে হচ্ছে। মৎস্যমেলা সে সবের একটি। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে মৎস্য অধিদফতর এর আয়োজন করে আসছে।


এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার থেকে মেলা শুরু হয়েছে রাজধানীর রমনাপার্ক এলাকায়। এবার চল্লিশটির মতো স্টল। এসব স্টলে মাছের পাশাপাশি মাছ চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের উপস্থাপনাও আছে। মাছের খাবার, ওষুধ ইত্যাদি দিয়েও সাজানো হয়েছে স্টল। মেলায় দেশী মাছ। ফরমালিনমুক্ত। তাই বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
মেলায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে একটি কৃত্রিম পুকুর। এর স্বচ্ছ পানিতে ব্রুড রুই, ব্রুড চিতল, ব্রুড কাতল ও উন্নতমানের ব্রুড ব্ল্যাক কার্পের ছোটাছুটি। ফ্রিজে মাছ দেখে অভ্যস্ত শহুরে প্রজন্ম দৃশ্যটা দারুণ উপভোগ করছিল! বয়স্করাও দেখছিলেন কৌতূহল নিয়ে। পুকুরের চারপাশ দিয়ে ঘুরছিলেন। ছবি তুলছিলেন। এর ঠিক পাশেই সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের স্টল। এখানে মাছের কোন নড়াচড়া নেই। সব কাঁচের বৈয়ামে। মেডিসিন দিয়ে রাখা। দর্শনার্থীদের সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই আগ্রাবাদের ল্যাব থেকে মেলায় নিয়ে আসা হয়েছে বৈয়ামগুলো। এসবে পুরে রাখা মাছগুলোর বিচিত্র সব নাম রূপমান মাছ, রঙ্গিলা মাছ, তাপসী মাছ, সবুজ চেউ, রাঙ্গা চইক্কা, দাড়কুটা, চাশা চিংড়ি, লইট্টা ইত্যাদি। বিশেষায়িত মাছগুলো কাছে গিয়ে দেখছিলেন দর্শনার্থীরা। কোন কোন স্টলে শুধু এ্যাকুরিয়ামের মাছ। তাঁদের বাহারি সংগ্রহ শহুরে সৌখিন মানুষকে আকৃষ্ট করেছে খুব।
মাছ নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। সরকারী একটি প্রতিষ্ঠান এ কাজে নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানটির স্টলে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন গবেষণা কর্মের উপস্থাপনা। স্টলের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রায়হান হোসেন জানান, তাঁরা হারিয়ে যাচ্ছে এমন কিছু মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছেন। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে চিত্রা, পাবদা, কুচিয়া, মেনি ইত্যাদি। তাঁদের গবেষণার ফসল উন্নত জাতের গিফট তেলাপিয়া দেখা যাচ্ছিল কাঁচের পাত্রে। সাধারণ তেলাপিয়া থেকে এটি আকারে অনেক বড়। এছাড়া ঝিনুক থেকে মুক্তা উৎপাদনেও গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ সফল হয়েছে বলে জানান তিনি। মেলায় মৎস্য চাষসহায়ক যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন উপকরণ, মৎস্য খাদ্য এবং ওষুধেরও বিক্রি এবং প্রদর্শনী হচ্ছে। তবে যেসব স্টলে মাছ বিক্রি হচ্ছে সেসব স্টলে ভিড় বেশি। একবারে উপচে পড়া। ময়মনসিংহের রূপালী হ্যাচারির স্টলে গিয়ে দেখা গেল বড় পাতিলভর্তি পানি। তাতে জ্যান্ত শিং আর মাগুর। সবই দেশী। তাই দাম নিয়ে অত কথা বলার সময় ছিল না। কেনায় ব্যস্ত হয়েছিলেন অফিস ফেরত মানুষ। একই স্টলে বিক্রি হচ্ছিল শিং মাগুরের পোনা। পোনা চাষের জন্য স্টলের মালিক জাহাঙ্গীর আলম গোল্ড মেডেল জিতেছেন। জনকণ্ঠকে তিনি বললেন, আমার এখানে সব দেশী মাছ। সারাদেশের মানুষ জানে। এ স্টলে প্রতিটি পোনা বিক্রি হচ্ছিল এক টাকা করে। বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাত্র ১০০ থেকে ১২০ দিন পর একই মাছ পাইকারি বিক্রি করা যাবে চার শ’ থেকে পাচ শ’ টাকা কেজি দরে।
তবে এমন নিখুঁত ব্যবসায়ী সবাই না। মেলায় স্টল পাওয়া অনেকেই রাজধানী শহরের আড়তদার। তাঁদের একজন নিউমার্কেটের খলিল ব্যাপারী। বিভিন্ন জাতের বড় বড় মাছ তাঁর স্টলে। তবে বাজারের চেহারা। এর পরও বিক্রি থেমে আছে বলা যাবে না। কারণ এটুকু নিশ্চিত যে, মেলায় ফরমালিন দেয়া মাছ নেই। এবং সবই দেশী মাছ। আরেক আড়তদার যাত্রাবাড়ীর শাহীন। তাঁর স্টলেও ভাল বিক্রি। জানালেন, এখানে সবই সামুদ্রিক মাছ এবং রফতানিযোগ্য। তবে আড়তদারদের স্টলে রাখা মাছের দাম বাজারের দামের চেয়ে মোটেও কম নয় বলে অভিযোগ করছিলেন কোন কোন ক্রেতা। তাঁদের একজন আশিক উদ্দিন বললেন, মাছ কেনার জন্যও এখন ভাই বাজেট লাগে। সব সময় পারি না। তাই মেলায় আসলাম। এখন মেলায়ও যদি বাজারের দামে মাছ কিনতে হয় তাহলে লাভ কী?
অবশ্য সরকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের স্টলে মাছের দাম কিছুটা সহনীয়। এ স্টলে রীতিমতো কাড়াকাড়ি চলছিল মাছ নিয়ে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে এ উৎসব শুধু বেচাকেনার না হয়ে মৎস্য সম্পদ বাঁচানোর জন্য হোক এমনটি সচেতন মহলের আশা। মৎস্যমেলা আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

No comments

Powered by Blogger.