মাদকাসক্তি-নিরাময় কেন্দ্রগুলোর নিরাময় দরকার

মাদকাসক্ত ব্যক্তি যখন মারণ নেশা থেকে মুক্তির জন্য নিরাময় কেন্দ্রের শরণাপন্ন হন তখন শুধু ওই ব্যক্তির নিকটজনরাই নন, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও একটি শুভ সংবাদ তৈরি হয়। সবাই আশা করেন, মাদকাসক্ত ব্যক্তিটি যেন চিরতরে মাদকের ভয়াল গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসেন, স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হন।


মাদকাসক্ত ব্যক্তির আত্মোপলব্ধিই তাকে আসক্তি থেকে মুক্তির প্রেরণা জোগায়। তার চেষ্টার ক্ষেত্রে আন্তরিকতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একবার মাদকের দাসত্ব গ্রহণ করার পর তা থেকে বের হওয়ার পথটি সুগম নয়। এক্ষেত্রে ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের শুশ্রূষা ও সুপরামর্শ দরকার। তাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতাই মাদকমুক্তির কঠিন কাজটি সম্ভব করে তোলে। কিন্তু এক্ষেত্রে গাফিলতি হলে আসক্ত ব্যক্তির নিরাময়ের আশা বিফল হয়। বিস্ময়কর হলেও সত্য, দেশের অনেক মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের অবস্থাই বেহাল। রোববারের সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর কয়টি নির্ভরযোগ্য তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। অনেক নিরাময় কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, প্রশিক্ষিত লোকবল ও বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। কার্যত নিরাময়ের নামে আসক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এগুলো। আসক্তরা এসব কেন্দ্রে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন। নিরাময় দূরের কথা, নতুন আসক্তি নিয়ে হতাশার জীবনে ফিরে আসতে হচ্ছে অনেককে। পরিস্থিতিটি উদ্বেগজনক। মাদকাসক্তি ক্রমেই বাড়ছে, নিত্যনতুন মাদকের ছোবলে তরুণ সমাজ বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় নিরাময়ের পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা থাকা দরকার। নিরাময় কেন্দ্রগুলো অনুমোদিত হওয়া দরকার এবং অনুমোদনের নীতি যথাযথভাবে অনুসৃত হওয়া উচিত। বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত বিশেষ তদারকির মাধ্যমে ভুয়া ও অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। অনুমোদিত যেসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছে না সেগুলোর অনুমোদনও পুনর্বিবেচনা করা উচিত। সর্বাগ্রে, সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত নিরাময় কেন্দ্রগুলোর দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানো দরকার। মাদকমুক্ত দেশ গঠনের জন্য নিরাময় কেন্দ্রগুলোর আশু নিরাময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলেই গণ্য হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.