চিনির দাম, খাদ্যপণ্যের মান by নিয়ামত হোসেন
বাজারে চিনির দামে যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় কেজি প্রতি ৬০ টাকা দরে চিনি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। টিসিবি নাকি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করবে বলে জানা গেছে। এদিকে বাজারে এখন ৫২ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে চিনি পাওয়া যাচ্ছে। চিনির দামের ক্ষেত্রে এই রকম অবস্থা হলো কেন সেটাই প্রশ্ন।
বাজারে যদি কম দামে চিনি পাওয়া যায় তাহলে বেশি দামের চিনি লোক নেবে কেন? এটা যেমন একটা প্রশ্ন, তেমনি আরেকটি প্রশ্ন : সরকারীভাবে বিক্রিতে যদি দাম বেশি থেকে তাহলে বাজারের কম দাম এক লাফে উপরে ওঠে যাবে না কি? তৃতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে, সরকারী বিক্রির দামের সঙ্গে টিসিবির দামে পার্থক্য থাকবে কেন?
হতে পারে বিভিন্ন সময় আমদানি করা জিনিস, তাই দামের ক্ষেত্রে তারতম্য। কিন্তু সরকারকে সমগ্র বিষয় বিবেচনা করে এবং বাজার দেখে তারপরই দামের ক্ষেত্রে সমন্বয় করা দরকার। লোক যেখানে সস্তা পাবে সেটাই কিনতে আগ্রহী হবে। আর যদি দেখা যায় সরকারী চিনি বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে বেশি দামে তাহলে বাজারে চিনির দাম সরকারী দামের কাছে চলে যাবে বা তারচেয়ে অনেক উপরে ওঠে যাবে। দামের ক্ষেত্রে এই সমন্বয়হীনতা থাকায় সুযোগ নেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারে যাতে মানুষ কম মূল্যে তথা ন্যায্যমূল্যে চিনি পা বিশেষ করে যাতে রমজানে এই সুবিধা ভোগ করতে পারে, উদ্যোগটি সেই লক্ষ্যেই নেয়া। দামের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার এই সুযোগ অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজে লাগালে কম দামে চিনি বিক্রির সরকারী শুভ উদ্যোগটিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা নস্যাৎ করে দিতে পারে। সেজন্য চিনির দামের ক্ষেত্রে একটা সমন্বয় প্রয়োজন, রমজানে যাতে সবাই সস্তা তথা ন্যায্যমূল্যে চিনি পায় সেটা নিশ্চিত রাখা দরকার।
দেশে বহু সৎ ব্যবসায়ীর মধ্যে এমন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী দীর্ঘকাল ধরে অন্যায়ভাবে অতিমুনাফা করে চলেছেন তাতে এটা ধারণা করা যায় রমজানের এই সুযোগ তারা অতিমুনাফা কামানোর চেষ্টা ছেড়ে দেবে না। সারা বছরই তারা সুযোগ নেয়, কোন উপলক্ষ এলে তো কথাই নেই! যেভাবে পারা যায়, যতভাবে পারা যায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে অতিমুনাফা কামানোর সুযোগ নেবেই। বার বার এমনই দেখা গেছে। বাজারে সরবরাহ যথেষ্ট, ঘাটতি নেই পণ্যের তারপরও দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কে যে বাড়াচ্ছে, কার ইশারায় বাড়ছে সেটা কেউ যেন জানে না। আজ বাজারে গিয়ে একটা জিনিস কেউ কিনলে কাল যদি সেই দামে সেই জিনিস না পায়, তাহলে তার মনে যে প্রশ্ন জাগে, সে প্রশ্নের সদুত্তর সে কোনদিন পায় না। কেউ বলে কোম্পানি বাড়িয়ে দিয়েছে, কেউ বলে আমরা জানি না কে বাড়িয়েছে, বেশি দামে আমাদের কিনতে হয়েছে তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই! সব বিক্রেতা যে দাম বাড়ানোর প্রশ্নের জবাব দেয় তাও নয়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেটা হয় দাম বাড়ানোর ব্যাপারে অনেক ক্রেতারা তেমন প্রশ্নই করতে চান না। কারণ তাঁরা জানেন, প্রশ্ন করে লাভ নেই। বিক্রেতা যে দাম চাইবে সে দামই দিতে হবে, আর সেই দাম না দিলে চলে যেতে হবে জিনিস না কিনে! অতএব জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, যথার্থ উত্তর পাওয়া যাবে না!
রমজান আসন্ন। কিন্তু এখনই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকে। কোন কোনটির দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে, কোনটির দাম বাড়ল বলে! দাম বাড়ার এই ব্যাপারটা ঘটে অদ্ভুতভাবে। কোন ঘাটতি নেই, বাজারে যথেষ্ট পণ্য, বিদেশী বাজারেও দাম কমে গেছে, কিন্তু কী অজ্ঞাত কারণে আমাদের বাজারে দামটি কিছুতেই কমছে না। আমাদের বাজারের একটা বৈশিষ্ট্যের কথা প্রায় সবার জানা। সেটা হচ্ছে কোন জিনিসের দাম যত সহজে অথবা তুচ্ছ কারণে যত শীঘ্রই বেড়ে যায়, সে দাম আর সহজে কমে না। কোন কোন ক্ষেত্রে কমেই না। আরও বাড়তে থাকে। সুতরাং বাজারে একটা বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে দাম বাড়তেই থাকবে, কমবে না!
অতিমুনাফা কিছু ব্যক্তির কাছে যে খুবই লোভনীয় জিনিস সেটা পরিষ্কার। এই অতি মুনাফার লোভে কোন কোন ব্যবসায়ী দাম অকারণে অন্যায়ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছেন, কোন কোন ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা গড়ছে সিন্ডিকেট। যেসব জিনিস বেশি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা সেগুলোর মজুদ গড়ে তোলা, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা, তারপর দাম বাড়িয়ে দিয়ে বেশি মুনাফা আদায় করাÑএই হচ্ছে কোন কোন সিন্ডিকেটওয়ালার কৌশল। এই কৌশল বার বার তারা কাজে লাগিয়েছে এবং কামিয়ে নিয়েছে বাড়তি অনেক মুনাফা। ক্রেতাদের পকেট থেকে গেছে এসব টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্রেতারা, লাভবান হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
রমজান আসার আগেই নিত্যপণ্যের উর্ধগতি লক্ষ্য করা যায়। এ সময় যেসব পণ্য বেশি লাগে সেগুলোর দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আমদানি যথেষ্ট, বাজারেও রয়েছে প্রচুর পণ্য তারপরও দাম বাড়বে কেন? এ প্রসঙ্গে দেশে উৎপন্ন আলুর কথা উল্লেখ করা যায়। আলুর মৌসুমে মোটামুটি দাম কমই ছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই শুরু হলো দাম বৃদ্ধি। বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়ে গেছে পঁচিশ টাকায়। আলুর উৎপাদন এবার যথেষ্ট। সে তুলনায় পঁচিশ টাকা হওয়া উচিত নয়। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদিত হচ্ছে, মানুষ কি সেটা সস্তায় খাবে না? আলুর মৌসুমে আলু এত হয় যে বহু আলু চাষী আলু রাখার জায়গা পান না। দেশের নানা স্থানে যদি হিমাগারের সংখ্যা হতো পর্যাপ্ত, তাহলে আলুসহ অনেক কৃষি পণ্য আরও বেশি করে রাখা যেত। দেশের কোন কোন এলাকায়, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে বেশি সময় ধরে হিমাগারের সংখ্যা কম। উৎপাদিত বাড়তি সব আলু রাখার ব্যবস্থা থাকলে তাতে চাষীদেরও লাভ হতো, দেশেরও লাভ হতো এজন্য হিমাগার স্থাপন জরুরী। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে দেশে নানা স্থানে অনেক হিমাগার স্থাপনের উদ্যাগ নেয়া দরকার।
বাজারে মুরগির ডিমের দাম সেই যে বেড়ে গেল এখন সেটা কমার কোন লক্ষণ নাই। আলু, ডিম দুটোই প্রায় প্রত্যেক পরিবারের নিত্য ব্যবহার্য পণ্য। দুটোরই দাম কমানো উচিত। ডিম বিশেষ করে শিশুদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
বাঙালীর পাতে মাছ থাকবে নাÑএটা এককালে ভাবাই যেত না। সেকাল অবশ্য এখন নেই এই মাছের দেশে। অনেক মাছ হারিয়ে গেছে। অবশ্য বেশ কিছু বিপন্ন প্রজাতির মাছ রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং চাষ করা হচ্ছে অনেক ধরনের মাছের। রক্ষা সেখানেই। চাষ করা মাছে আসলের মতো স্বাদ নেই। অনেকেই এমন অভিযোগ করলেও চাষ করা মাছ আছে বলে তবু অনেকের পাতে মাছ উঠছে। বিশেষ করে পাঙ্গাশ, তেলাপিয়ার কথা এখানে বলা যায়। এ দুটোর দামও নিতান্ত কম নয়। এখন অবশ্য কৈ, মাগুর, রুই, পাবদা ইত্যাদি বহু মাছের চাষ হচ্ছে। যাঁরা এসব আসল মাছ খেয়েছেন তাঁদের মুখে চাষ করা এসব মাছ ভাল না লাগলেও নতুন প্রজন্ম শহুরে বাঙালীর মুখে এগুলোকেই সুস্বাদু লাগবে। কারণ ভবিষ্যতে এসব মাছের আসলগুলোই দুর্মূল্য বা বিলুপ্ত হয়ে যাবে! যাই হোক মাছের বাজারের দিকেও এই রমজান উপলক্ষে বিশেষ দৃষ্টি কর্তৃপক্ষের দেয়া উচিত, যাতে কোন মাছ ব্যবসায়ী কোন মাছের বর্তমান উচ্চ মূল্যকে আরও উচ্চে নিয়ে যেতে না পারে সেটা দেখা জরুরী।
রমজানে ফলমূল জরুরী। ফলমূল মানেই যেন অনেকের কাছে আতঙ্ক! কারণ কোনটাতে কী কেমিক্যাল বা কি দেয়া আছে কে জানে। তাই এখন থেকেই সারা রমজানে ফলমূল তথা কলা আপেল আম ইত্যাদি সারা মাসজুড়ে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকা দরকার। যারা বিষাক্ত কেমিক্যাল এসবে মেশাবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আসন্ন রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। কেমিক্যাল বা অপরাপর অপদ্রব্য মিশিয়ে খাদ্যপণ্যকে অখাদ্য করে মানুষের কাছে গছানোর চেষ্টা করতে পারে। চিনির দামে যেমন সমন্বয় প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন খাদ্যপণ্যের যথার্থ মান যাতে ঠিক থাকে সেটা নিশ্চিত করা। এসব অপচেষ্টা বন্ধ করা জরুরী। চিনির দামে সমন্বয়সহ গৃহীত উদ্যোগের সুফল যাতে সাধারণ মানুষ পায় এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে না পারে সেটাই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
হতে পারে বিভিন্ন সময় আমদানি করা জিনিস, তাই দামের ক্ষেত্রে তারতম্য। কিন্তু সরকারকে সমগ্র বিষয় বিবেচনা করে এবং বাজার দেখে তারপরই দামের ক্ষেত্রে সমন্বয় করা দরকার। লোক যেখানে সস্তা পাবে সেটাই কিনতে আগ্রহী হবে। আর যদি দেখা যায় সরকারী চিনি বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে বেশি দামে তাহলে বাজারে চিনির দাম সরকারী দামের কাছে চলে যাবে বা তারচেয়ে অনেক উপরে ওঠে যাবে। দামের ক্ষেত্রে এই সমন্বয়হীনতা থাকায় সুযোগ নেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারে যাতে মানুষ কম মূল্যে তথা ন্যায্যমূল্যে চিনি পা বিশেষ করে যাতে রমজানে এই সুবিধা ভোগ করতে পারে, উদ্যোগটি সেই লক্ষ্যেই নেয়া। দামের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার এই সুযোগ অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজে লাগালে কম দামে চিনি বিক্রির সরকারী শুভ উদ্যোগটিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা নস্যাৎ করে দিতে পারে। সেজন্য চিনির দামের ক্ষেত্রে একটা সমন্বয় প্রয়োজন, রমজানে যাতে সবাই সস্তা তথা ন্যায্যমূল্যে চিনি পায় সেটা নিশ্চিত রাখা দরকার।
দেশে বহু সৎ ব্যবসায়ীর মধ্যে এমন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী দীর্ঘকাল ধরে অন্যায়ভাবে অতিমুনাফা করে চলেছেন তাতে এটা ধারণা করা যায় রমজানের এই সুযোগ তারা অতিমুনাফা কামানোর চেষ্টা ছেড়ে দেবে না। সারা বছরই তারা সুযোগ নেয়, কোন উপলক্ষ এলে তো কথাই নেই! যেভাবে পারা যায়, যতভাবে পারা যায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে অতিমুনাফা কামানোর সুযোগ নেবেই। বার বার এমনই দেখা গেছে। বাজারে সরবরাহ যথেষ্ট, ঘাটতি নেই পণ্যের তারপরও দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কে যে বাড়াচ্ছে, কার ইশারায় বাড়ছে সেটা কেউ যেন জানে না। আজ বাজারে গিয়ে একটা জিনিস কেউ কিনলে কাল যদি সেই দামে সেই জিনিস না পায়, তাহলে তার মনে যে প্রশ্ন জাগে, সে প্রশ্নের সদুত্তর সে কোনদিন পায় না। কেউ বলে কোম্পানি বাড়িয়ে দিয়েছে, কেউ বলে আমরা জানি না কে বাড়িয়েছে, বেশি দামে আমাদের কিনতে হয়েছে তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই! সব বিক্রেতা যে দাম বাড়ানোর প্রশ্নের জবাব দেয় তাও নয়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেটা হয় দাম বাড়ানোর ব্যাপারে অনেক ক্রেতারা তেমন প্রশ্নই করতে চান না। কারণ তাঁরা জানেন, প্রশ্ন করে লাভ নেই। বিক্রেতা যে দাম চাইবে সে দামই দিতে হবে, আর সেই দাম না দিলে চলে যেতে হবে জিনিস না কিনে! অতএব জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, যথার্থ উত্তর পাওয়া যাবে না!
রমজান আসন্ন। কিন্তু এখনই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকে। কোন কোনটির দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে, কোনটির দাম বাড়ল বলে! দাম বাড়ার এই ব্যাপারটা ঘটে অদ্ভুতভাবে। কোন ঘাটতি নেই, বাজারে যথেষ্ট পণ্য, বিদেশী বাজারেও দাম কমে গেছে, কিন্তু কী অজ্ঞাত কারণে আমাদের বাজারে দামটি কিছুতেই কমছে না। আমাদের বাজারের একটা বৈশিষ্ট্যের কথা প্রায় সবার জানা। সেটা হচ্ছে কোন জিনিসের দাম যত সহজে অথবা তুচ্ছ কারণে যত শীঘ্রই বেড়ে যায়, সে দাম আর সহজে কমে না। কোন কোন ক্ষেত্রে কমেই না। আরও বাড়তে থাকে। সুতরাং বাজারে একটা বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে দাম বাড়তেই থাকবে, কমবে না!
অতিমুনাফা কিছু ব্যক্তির কাছে যে খুবই লোভনীয় জিনিস সেটা পরিষ্কার। এই অতি মুনাফার লোভে কোন কোন ব্যবসায়ী দাম অকারণে অন্যায়ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছেন, কোন কোন ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা গড়ছে সিন্ডিকেট। যেসব জিনিস বেশি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা সেগুলোর মজুদ গড়ে তোলা, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা, তারপর দাম বাড়িয়ে দিয়ে বেশি মুনাফা আদায় করাÑএই হচ্ছে কোন কোন সিন্ডিকেটওয়ালার কৌশল। এই কৌশল বার বার তারা কাজে লাগিয়েছে এবং কামিয়ে নিয়েছে বাড়তি অনেক মুনাফা। ক্রেতাদের পকেট থেকে গেছে এসব টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্রেতারা, লাভবান হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
রমজান আসার আগেই নিত্যপণ্যের উর্ধগতি লক্ষ্য করা যায়। এ সময় যেসব পণ্য বেশি লাগে সেগুলোর দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আমদানি যথেষ্ট, বাজারেও রয়েছে প্রচুর পণ্য তারপরও দাম বাড়বে কেন? এ প্রসঙ্গে দেশে উৎপন্ন আলুর কথা উল্লেখ করা যায়। আলুর মৌসুমে মোটামুটি দাম কমই ছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই শুরু হলো দাম বৃদ্ধি। বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়ে গেছে পঁচিশ টাকায়। আলুর উৎপাদন এবার যথেষ্ট। সে তুলনায় পঁচিশ টাকা হওয়া উচিত নয়। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদিত হচ্ছে, মানুষ কি সেটা সস্তায় খাবে না? আলুর মৌসুমে আলু এত হয় যে বহু আলু চাষী আলু রাখার জায়গা পান না। দেশের নানা স্থানে যদি হিমাগারের সংখ্যা হতো পর্যাপ্ত, তাহলে আলুসহ অনেক কৃষি পণ্য আরও বেশি করে রাখা যেত। দেশের কোন কোন এলাকায়, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে বেশি সময় ধরে হিমাগারের সংখ্যা কম। উৎপাদিত বাড়তি সব আলু রাখার ব্যবস্থা থাকলে তাতে চাষীদেরও লাভ হতো, দেশেরও লাভ হতো এজন্য হিমাগার স্থাপন জরুরী। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে দেশে নানা স্থানে অনেক হিমাগার স্থাপনের উদ্যাগ নেয়া দরকার।
বাজারে মুরগির ডিমের দাম সেই যে বেড়ে গেল এখন সেটা কমার কোন লক্ষণ নাই। আলু, ডিম দুটোই প্রায় প্রত্যেক পরিবারের নিত্য ব্যবহার্য পণ্য। দুটোরই দাম কমানো উচিত। ডিম বিশেষ করে শিশুদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
বাঙালীর পাতে মাছ থাকবে নাÑএটা এককালে ভাবাই যেত না। সেকাল অবশ্য এখন নেই এই মাছের দেশে। অনেক মাছ হারিয়ে গেছে। অবশ্য বেশ কিছু বিপন্ন প্রজাতির মাছ রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং চাষ করা হচ্ছে অনেক ধরনের মাছের। রক্ষা সেখানেই। চাষ করা মাছে আসলের মতো স্বাদ নেই। অনেকেই এমন অভিযোগ করলেও চাষ করা মাছ আছে বলে তবু অনেকের পাতে মাছ উঠছে। বিশেষ করে পাঙ্গাশ, তেলাপিয়ার কথা এখানে বলা যায়। এ দুটোর দামও নিতান্ত কম নয়। এখন অবশ্য কৈ, মাগুর, রুই, পাবদা ইত্যাদি বহু মাছের চাষ হচ্ছে। যাঁরা এসব আসল মাছ খেয়েছেন তাঁদের মুখে চাষ করা এসব মাছ ভাল না লাগলেও নতুন প্রজন্ম শহুরে বাঙালীর মুখে এগুলোকেই সুস্বাদু লাগবে। কারণ ভবিষ্যতে এসব মাছের আসলগুলোই দুর্মূল্য বা বিলুপ্ত হয়ে যাবে! যাই হোক মাছের বাজারের দিকেও এই রমজান উপলক্ষে বিশেষ দৃষ্টি কর্তৃপক্ষের দেয়া উচিত, যাতে কোন মাছ ব্যবসায়ী কোন মাছের বর্তমান উচ্চ মূল্যকে আরও উচ্চে নিয়ে যেতে না পারে সেটা দেখা জরুরী।
রমজানে ফলমূল জরুরী। ফলমূল মানেই যেন অনেকের কাছে আতঙ্ক! কারণ কোনটাতে কী কেমিক্যাল বা কি দেয়া আছে কে জানে। তাই এখন থেকেই সারা রমজানে ফলমূল তথা কলা আপেল আম ইত্যাদি সারা মাসজুড়ে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকা দরকার। যারা বিষাক্ত কেমিক্যাল এসবে মেশাবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আসন্ন রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। কেমিক্যাল বা অপরাপর অপদ্রব্য মিশিয়ে খাদ্যপণ্যকে অখাদ্য করে মানুষের কাছে গছানোর চেষ্টা করতে পারে। চিনির দামে যেমন সমন্বয় প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন খাদ্যপণ্যের যথার্থ মান যাতে ঠিক থাকে সেটা নিশ্চিত করা। এসব অপচেষ্টা বন্ধ করা জরুরী। চিনির দামে সমন্বয়সহ গৃহীত উদ্যোগের সুফল যাতে সাধারণ মানুষ পায় এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে না পারে সেটাই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
No comments