আমি নিজেকে বাচাল বলেছি ॥ মাহফুজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বাচাল’ বলার অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা ১০টি মানহানি মামলায় এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যন মাহফুজুর রহমানকে চার মাসের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিনের শুনানিতে মাহফুজুর রহমান আদালতে বলেন, ‘আমি নিজেকে ‘বাচাল‘ বলেছি।


এডিট-টেডিট করে আমারটা ফেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীরটা জোড়া লাগিয়ে চালিয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমার কথাটা বিকৃত করা হয়েছে।’ রবিবার মাহফুজুর রহমান আদালতে হাজির হয়ে আবেদন করলে বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
মাহফুজুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাকে সহায়তা করেন মোঃ আবু তালেব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল। তাকে সহায়তা করেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আলী জিন্নাহ।
শুনানিতে মাহফুজুর রহমানের আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতে বলেন, ‘মাহফুজুর রহমান এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান। তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রীকে বাচাল বলেছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। ওনি বাচাল বলতে পারেন না। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবরের প্রতিবাদও জানানো হয়েছিল।’
এ সময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘কোন ভিডিও ফুটেজ ছিল কিনা?’ জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল কেএম জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, ‘৪ জুন একুশে টিভিতে ফুটেজটা প্রচারিত হয়েছিল।’ আদালত বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন সম্মানিত ব্যক্তি। সবাই তাকে সম্মান করে। তার ক্ষেত্রে ভাষা ব্যবহারে মার্জিত হতে হবে।’ আদালত আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা? এ সময় জাহিদ সরওয়ার বলেন, ‘একজন নাগরিক রাষ্ট্রেরই অংশ। তারা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মামলা করেছে।’
এরপর আদালত মাহফুজুর রহমানকে ডেকে বলেন, ‘আপনি এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন কিনা?’ জবাবে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘না এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করিনি।’ আদালত বলেন,‘আপনি বাচাল বলেছেন কিনা?’ জবাবে মাহফুজ বলেন, ‘আমি নিজেকে বাচাল বলেছি। এডিট-টেডিট করে আমারটা ফেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীরটা জোড়া লাগিয়ে চালিয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমার কথাটা বিকৃত করা হয়েছে।’ পরে আদালত জামিনের আদেশ দেন।
মোঃ আবু তালেব সাংবাদিকদের বলেন, মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে সারাদেশে মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকি ১০ মামলায় আদালত তাকে জামিন দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে এটিএন বাংলা চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আরে, প্রাইম মিনিস্টার কত না কথা বলেন। প্রাইম মিনিস্টারের বক্তৃতা শুনছেন না, ওইটাও বলছে, আমরা কি ড্রয়িংরুম পাহারা দেয়ার দায়িত্ব নিছি? এইটা হচ্ছে বেশি কথা বলতে বলতে বাচালের ফট করে একটা মিসটেক হয়ে যায় না, এ রকম একটা মিসটেক হয়ে গেছে।’
তার ওই বক্তব্য অন্য একটি টেলিভিশনে প্রচার করা হলে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় তার বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মানহানি মামলা দায়ের করা হয়। পরে এর মধ্যে তিনটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকি ১০টির মধ্যে ৭টিতে বিচারিক আদালত তাকে তলব করছে এবং ৩টি মামলা তদন্ত অবস্থায় আছে।

No comments

Powered by Blogger.