আরেক মামলায় লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিল পুলিশ
র্যাবের গুলিতে পঙ্গু হওয়া লিমন হোসেনকে আসামি করে আরেকটি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এ মামলারও বাদী র্যাব। এর ১৪ মাস আগে র্যাবের দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলায় লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এ খবর জানতে পেরে কলেজছাত্র লিমন প্রথম আলোকে বলে, ‘আমি কল্পনাও করিনি পুলিশ আমার নামে এ মিথ্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেবে।’ তার অভিযোগ, গত বছরের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে নিজ বাড়ির কাছের মাঠে গরু আনতে গেলে র্যাব সদস্যরা তাকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এরপর র্যাব নিজেদের অপরাধ ঢাকা দিতে স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তের সঙ্গে লিমনকে আসামি করে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করে, এর একটি অস্ত্র মামলা। অপরটি বন্দুকযুদ্ধ করে র্যাবকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলা।
লিমনের আইনজীবী মানিক আচার্য বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলার অভিযোগপত্র ১ জুলাই ঝালকাঠির আদালতের জেনারেল রেজিস্ট্রার কর্মকর্তার (জিআরও) কাছে জমা দেন, যা এত দিন গোপন ছিল। গতকাল রোববার এ মামলার ধার্য তারিখে শুনানিকালে জিআরও নাজমুল হক অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করেন। এর আগে একই তদন্ত কর্মকর্তা গত বছরের ২৪ এপ্রিল অস্ত্র আইনে করা মামলায় লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ওই মামলাটি বর্তমানে ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এ অভিযোগ গঠনের জন্য রয়েছে।
আইনজীবী মানিক আচার্য বলেন, লিমন নিরপরাধ, এটা পুরো দেশবাসী জানে। মিথ্যা অভিযোগে অভিযোগপত্র দিয়ে নির্দোষ এই কিশোরের বিরুদ্ধে আরেক দফা নিষ্ঠুর আচরণ করল পুলিশ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুসরাত জাহানের আদালতে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলার গতকাল ধার্য তারিখ ছিল। উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ব্যবহারিক পরীক্ষার কারণে লিমন হাজির হতে পারেনি। তার পক্ষে আদালতে সময়ের প্রার্থনা করেন আইনজীবীরা। এ সময় জিআরও অভিযোগপত্র উপস্থাপন করলে আদালত আগামী ২ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র পর্যালোচনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন।
অভিযোগপত্রে বিবরণ: সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে র্যাবের করা এই মামলায় আদালতে দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। একটি অভিযোগপত্রে স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত মোরসেদ জোমাদ্দার, জামাল, হাটু মিজান, জাহাঙ্গীর, লাবু জমাদ্দার, হালিম জমাদ্দার ও সুমনকে আসামি করা হয়। অপরটিতে শুধু লিমনকে আসামি করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তাতে বলা হয়, লিমন অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৬) হওয়ায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচারকার্য কিশোর অপরাধ আদালতে অনুষ্ঠিত হবে। তাই তার বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হলো।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত বছরের ২৩ মার্চ সন্ত্রাসী মোরসেদ জোমাদ্দার তাঁর দলবল নিয়ে রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে পুরাতন জমাদ্দারহাট শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির কলাবাগানে বৈঠক করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সেখানে অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা র্যাবের ওপর গুলিবর্ষণ করে, র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে লিমনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তার পাশেই পাওয়া যায় আমেরিকার তৈরি একটি পিস্তল ও একটি গুলির খোসা।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আমি প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করিয়া আসামি লিমন ও অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে র্যাবের ডিএডি (উপসহকারী পরিচালক) লুৎফর রহমানের দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। ঘটনার সময় সকল আসামিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল বলিয়া মামলার সার্বিক তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে।’
লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ ইচ্ছা করলে লিমনকে অব্যাহতি দিতে পারত। কিন্তু র্যাবের চাপের কারণে পুলিশ তা পারেনি। আমি এ মামলা থেকে লিমনের অব্যাহতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।’
লিমনকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে মানবাধিক সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এর পরিচালক নূর খান বলেন, কিশোর লিমনের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাব যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, কোনো সভ্য সমাজে তা কল্পনাও করা যায় না। তিনি মামলা দুটির বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার মাধ্যমে পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এই অভিযোগপত্রের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছুটিতে ঢাকায় আছি, পরে ফোন দেন।’ পরে দফায় দফায় কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পরে যোগাযোগ করা হলে ঝালকাঠির জেলা পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে যা পেয়েছেন, সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন দিয়েছেন। তার আগে সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) মতামত নিয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ সুপারের কোনো হাত থাকে না।
ঝুলে আছে লিমনের মায়ের করা মামলার তদন্ত: লিমনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বরিশাল র্যাব-৮-এর ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ছয়জন র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম গত বছরের ১০ এপ্রিল রাজাপুর থানায় একটি মামলা করেন। লিমনের মায়ের আইনজীবী নাসিমুল হাসান বলেন, বহু টালবাহানার পর আদালতের নির্দেশে ওই মামলাটি পুলিশ গ্রহণ করে। এরপর ১৪ মাস পার হয়েছে, পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি।
জানতে চাইলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুল হালিম তালুকদার দাবি করেন, মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
গরিব শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান লিমনের পঙ্গু হওয়ার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর ঘটনাটি সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। সাধারণ মানুষের আর্থিক সহায়তায় তার চিকিৎসা হয়। কৃত্রিম পা নিয়ে এখন সে চলাফেরা করে। চলতি বছর সে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
লিমনের আইনজীবী মানিক আচার্য বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলার অভিযোগপত্র ১ জুলাই ঝালকাঠির আদালতের জেনারেল রেজিস্ট্রার কর্মকর্তার (জিআরও) কাছে জমা দেন, যা এত দিন গোপন ছিল। গতকাল রোববার এ মামলার ধার্য তারিখে শুনানিকালে জিআরও নাজমুল হক অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করেন। এর আগে একই তদন্ত কর্মকর্তা গত বছরের ২৪ এপ্রিল অস্ত্র আইনে করা মামলায় লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ওই মামলাটি বর্তমানে ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এ অভিযোগ গঠনের জন্য রয়েছে।
আইনজীবী মানিক আচার্য বলেন, লিমন নিরপরাধ, এটা পুরো দেশবাসী জানে। মিথ্যা অভিযোগে অভিযোগপত্র দিয়ে নির্দোষ এই কিশোরের বিরুদ্ধে আরেক দফা নিষ্ঠুর আচরণ করল পুলিশ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুসরাত জাহানের আদালতে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলার গতকাল ধার্য তারিখ ছিল। উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ব্যবহারিক পরীক্ষার কারণে লিমন হাজির হতে পারেনি। তার পক্ষে আদালতে সময়ের প্রার্থনা করেন আইনজীবীরা। এ সময় জিআরও অভিযোগপত্র উপস্থাপন করলে আদালত আগামী ২ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র পর্যালোচনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন।
অভিযোগপত্রে বিবরণ: সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে র্যাবের করা এই মামলায় আদালতে দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। একটি অভিযোগপত্রে স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত মোরসেদ জোমাদ্দার, জামাল, হাটু মিজান, জাহাঙ্গীর, লাবু জমাদ্দার, হালিম জমাদ্দার ও সুমনকে আসামি করা হয়। অপরটিতে শুধু লিমনকে আসামি করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তাতে বলা হয়, লিমন অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৬) হওয়ায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচারকার্য কিশোর অপরাধ আদালতে অনুষ্ঠিত হবে। তাই তার বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হলো।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত বছরের ২৩ মার্চ সন্ত্রাসী মোরসেদ জোমাদ্দার তাঁর দলবল নিয়ে রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে পুরাতন জমাদ্দারহাট শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির কলাবাগানে বৈঠক করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সেখানে অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা র্যাবের ওপর গুলিবর্ষণ করে, র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে লিমনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তার পাশেই পাওয়া যায় আমেরিকার তৈরি একটি পিস্তল ও একটি গুলির খোসা।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আমি প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করিয়া আসামি লিমন ও অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে র্যাবের ডিএডি (উপসহকারী পরিচালক) লুৎফর রহমানের দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। ঘটনার সময় সকল আসামিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল বলিয়া মামলার সার্বিক তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে।’
লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ ইচ্ছা করলে লিমনকে অব্যাহতি দিতে পারত। কিন্তু র্যাবের চাপের কারণে পুলিশ তা পারেনি। আমি এ মামলা থেকে লিমনের অব্যাহতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।’
লিমনকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে মানবাধিক সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এর পরিচালক নূর খান বলেন, কিশোর লিমনের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাব যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, কোনো সভ্য সমাজে তা কল্পনাও করা যায় না। তিনি মামলা দুটির বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার মাধ্যমে পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এই অভিযোগপত্রের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছুটিতে ঢাকায় আছি, পরে ফোন দেন।’ পরে দফায় দফায় কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পরে যোগাযোগ করা হলে ঝালকাঠির জেলা পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে যা পেয়েছেন, সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন দিয়েছেন। তার আগে সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) মতামত নিয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ সুপারের কোনো হাত থাকে না।
ঝুলে আছে লিমনের মায়ের করা মামলার তদন্ত: লিমনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বরিশাল র্যাব-৮-এর ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ছয়জন র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম গত বছরের ১০ এপ্রিল রাজাপুর থানায় একটি মামলা করেন। লিমনের মায়ের আইনজীবী নাসিমুল হাসান বলেন, বহু টালবাহানার পর আদালতের নির্দেশে ওই মামলাটি পুলিশ গ্রহণ করে। এরপর ১৪ মাস পার হয়েছে, পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি।
জানতে চাইলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুল হালিম তালুকদার দাবি করেন, মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
গরিব শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান লিমনের পঙ্গু হওয়ার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর ঘটনাটি সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। সাধারণ মানুষের আর্থিক সহায়তায় তার চিকিৎসা হয়। কৃত্রিম পা নিয়ে এখন সে চলাফেরা করে। চলতি বছর সে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
No comments