ইহুদি বস কে ছাড় দিয়েছিলেন অধঃস্তন হিটলার!
এতদিন ছিল রটনা মাত্র। হাতে গরম প্রমাণ মিলতেই সেই রটনা পালটে গেল ঐতিহাসিক ঘটনায়। কি সেই ঘটনা? ঘটনাটি হলো, ইহুদি বিদ্বেষী হিটলার জীবনে মাত্র একজন ইহুদিকেই রেয়াত করেছিলেন। বলা ভালো, ইউরোপ ও দুনিয়াশুদ্ধ ইহুদিদের জবাই করার হুকুম দিলেও একজন ইহুদিকেই তিনি ছাড় দিয়েছিলেন।
ফ্যুয়েরারের হুকুম তামিল করে নাজি গোয়েন্দারা অবশ্য সেই ইহুদির গায়ে হাত দেয়া দূর অস্ত্, বরং তাকে সসম্মানে জার্মানি থেকে প্লেনে চাপিয়ে আফ্রিকায় পাঠিয়ে দেয়। তা কে সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি? তিনি হলেন, আর্নস্ট হেস। প্রশ্ন উঠতে পারে হেস কি এমন কেউকেটা ছিলেন? উত্তরটা খুব নিরীহ, তবে সমীহ আদায় করার পক্ষে যথেষ্ট। উত্তরটা হলো, হেস হলেন একজন দেশভক্ত জার্মান ইহুদি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির হয়ে লড়া এক অক্লান্ত সফল যোদ্ধা। ইংরেজ, রুশ, ফরাসিদের বিরুদ্ধে অসম সাহসে যুদ্ধে লড়েছিলেন। মরতে মরতে বেঁচেও যান। যুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানিকে চূড়ান্ত হেনস্তা ও অপমানিত হতে হয়েছিল। সেই ঘটনার প্রতিবাদে দেশের প্রতিটি শহরে তিনি ইউরোপের অন্য শক্তিগুলির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী জনমত গড়ে তুলেছিলেন। দেশের নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করতেন প্রবীণ সেনাকর্তা হেস। এ তো গেল হেসের জীবনের একটা দিক। তার চেয়েও বড় কথা তিনি ছিলেন হিটলারের কমান্ডিং অফিসার। অর্থাৎ ‘খাঁটি ইহুদি’ হেস ছিলেন ‘খাঁটি ইহুদি বিদ্বেষী’ হিটলারের ‘ইমিডিয়েট বস’!
দেশপ্রেমিক হেসের সঙ্গে হিটলারের ব্যক্তিগত সম্পর্কও ভালো ছিল। জার্মান সেনাবাহিনীতে কড়া শৃঙ্খলা মেনে চলা ও কার্যকর করার পিছনে হেসের মতো অনেকের অবদান ছিল। হেসকে দেখে সেনা অফিসার হিটলারও অনুপ্রাণিত হতেন। হিটলারের শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতাও ছিল হেসের প্রতি। আর তা থেকেই জীবনের নীতি বিরোধী প্রথম ও একমাত্র কাজ হয়তো করেছিলেন রাগ, হিংসা ও ঘৃণার প্রতীক এই মানুষটি। সেই কাজটি হলো, একজন ইহুদিকে জীবিত মুক্তি দেয়া।
ঐতিহাসিক সুজান মোজে সম্প্রতি একটি চিঠি আবিষ্কার করেছেন। সেই বহুকাঙ্খিত চিঠিটির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। নাজি বাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস প্যারামিলিটারি অর্গানাইজেশনের এক সিনিয়র অফিসার লিখেছিলেন। সরকারি নথির (হিটলারের আদেশনামার বয়ান ও নম্বর উল্লেখ করে) বর্ণনা দিয়ে চিঠিটি লেখা হয়েছিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। ১৯৪০ সালের ১৯ আগস্ট চিঠিটি লেখা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, ফ্যুয়েরার নির্দেশ দিয়েছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিশ্বস্ত সৈনিক কমান্ডিং অফিসার আর্নস্ট হেসকে যেন কোনওভাবেই জেরা করা না হয়। তাকে সসম্মানে, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদায় দেশ ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে ফোনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গবেষক সুজান জানিয়েছেন, “এতদিন ইতিহাসে যে রটনা ছিল তার লিখিত প্রমাণ মানবজাতি হাতে পেল। এটা একটা চমকপ্রদ নথি।” হেসের জীবিত অশীতিপর কন্যা উরসুলা এই ঘটনা সমর্থন করে জানিয়েছেন, বাবার জীবনদান করেছিলেন হিটলার। কিন্তু ইহুদিদের ওপর যা হয়েছিল তা মানবসভ্যতার ইতিহাসে বৃহত্তম বর্বরোচিত ঘটনা। অন্যদিকে, সুজান জানিয়েছেন, গেস্টাপোদের কাজকর্ম নিয়ে জার্মান সরকারের যে ফাইলের স্তূপ আছে তার মধ্যে থেকেই তিনি ওই গুরুত্বপূর্ণ চিঠিটি উদ্ধার করেছেন। এই চিঠিটিট অস্তিত্ব এতদিন অজানা ছিল ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদেরও। জানতেন না জার্মান গোয়েন্দারা।
বার্লিন থেকে জার্মান ভাষায় প্রকাশিত ইহুদিদের পত্রিকা ‘জিউস ভয়েস’ সুজান চিঠিটি ব্যাপারে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। হেসের জীবনের শেষ দিনগুলি কেমন ছিল তাও লিখেছেন তিনি। ১৯৮৩ সালে হেস প্রয়াত হন। তবে হেসের পরিবারের অন্য সদস্যদের মেরে ফেলা হয় কুখ্যাত অসউইচের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। বেঁচে যান শুধু আর্নস্ট হেস।
সত্যিই বস হওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। তাও আবার হিটলারের বস! ইহুদি বসকেও ছেড়ে দিয়েছিলেন হিটলার। একেই কি বলে জার্মান ডিসিপ্লিন? সূত্র: ওয়েবসাইট।
No comments