আমারই চেতনার রঙে... by কিশোর রহমান
আমার মনে হয়েছে, কাউকে ভুল বোঝার আগে চিন্তা করতে হবে—আমি নিজে ভুল করছি না তো। যা দেখছি ঠিক দেখছি তো। বোধ হয় আমরা সব সময় ঠিক দেখিও না। দেখি, দূরে রেললাইনের দুই মাথা এক হয়ে গেছে। আসলে সমান্তরাল দুটি লাইন কখনোই এক হয় না।
মরুভূমির মরীচিকা যে জলের নহর নয়, অনেকক্ষণ হাঁটার পর তা বোঝা যায়। দেরিতে হলেও দৃষ্টির বিভ্রম দূর হয়।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বনকিশোর একটি নিভৃত গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড়াল নদ। ধারেই বিশাল বটছায়ায় একটি পাঠাগার। ছায়ায় দাঁড়িয়ে নদের দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়। পাঠাগারে একটু বসলে চিন্তার খোরাক পাওয়া যায়। গ্রামের যুবক জাহিদুল ইসলাম তাঁর বন্ধুদের নিয়ে বছর দশেক আগে গ্রামটি বদলে দেওয়ার কাজে নেমেছিলেন। তখন গ্রামের মানুষ যেখানে-সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করত। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ছিল দু-একটি পরিবারে। রোগ-ব্যাধি গ্রাম ছাড়ে না। গ্রামের মানুষের ছিল না জ্ঞানচর্চার অভ্যাস। জাহিদুল ইসলামের দল কাজে হাত দিয়েই বুঝতে পারে, সবাই তাদের ভুল বুঝছে। কেউ এ কাজকে ভালো চোখে দেখছে না। সহযোগিতা করছে না। ভাবছে, এর মধ্যে নিশ্চয় কোনো স্বার্থ নিহিত রয়েছে। এবার জাহিদুল ইসলামের দল তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য কাজ করতে লাগল। অবশেষে তারা সফল হলো। সরকারি ঘোষণার আগেই তারা গ্রামকে শতভাগ স্যানিটেশনের আওতায় নিয়ে আসে। এ জন্য নিজ হাতে তারা তৈরি করেছে স্যানিটারি ল্যাট্রিন। রাস্তার ধারে বৃক্ষ রোপণ করেছে। মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গ্রামকে মাদকমুক্ত গ্রাম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। গড়ে তুলেছে পাঠাগার। যারা সুযোগ পায়, পাঠাগারে এসে বই পড়ে। আর যারা সময় করতে পারে না, তাদের বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়া হয়। আবার পড়া বই ফেরত নিয়ে আসা হয়। এখন এমন হয়েছে, গ্রামের সব ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব যেন জাহিদুল ইসলামের দলের কাঁধেই পড়েছে। গত বছর কয়েকজন অসাধু মাছ ব্যবসায়ী নদে মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। গ্রামের লোকেরা ছুটে আসে জাহিদুলের কাছে। নদের পানি ঠিক করে দিতে হবে। তারা গোসল করতে পারছে না। জাহিদুল ইসলামের দল উদ্যোগ নিল। নদ থেকে পালালেন দখলদার মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এই দলের সৌজন্যে গ্রামের মানুষের সবাই জানে তাদের নিজ নিজ রক্তের গ্রুপ। একজনের রক্তের প্রয়োজন হলে আরেকজন প্রস্তুত রয়েছে রক্ত দেওয়ার জন্য। রক্তের অভাবে এই গ্রামের কোনো মানুষ আর মরবে না। বলতে গেলে দিনে দিনে গ্রামটি একটি তীর্থস্থানে পরিণত হচ্ছে। গত বছর আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের নিয়ে এসেছিলেন রাজশাহীতে। শুনেই চলে আসেন গ্রামটি দেখতে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে অনেক্ষণ সময় কাটান।
জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভার বন্ধু। তিনি রাজশাহী বন্ধুসভার সঙ্গে রয়েছেন। বন্ধুসভার আদর্শকে তিনি বুকের ভেতর ধারণ করেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রথম যারা বিরোধিতা করেছে, জাহিদুল ইসলাম এখন তাদের একজন প্রিয় মানুষ। জাহিদুল ইসলামরা প্রমাণ করেছেন, হাত বাড়াতে জানলে শত্রু হয়ে উঠতে পারে বন্ধু। দেখার মধ্যেই সব। দেখতে জানলে অসুন্দর হয়ে উঠতে পারে সুন্দর। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, চুনি উঠল রাঙা হয়ে। আমি চোখ মেললুম আকাশে, জ্বলে উঠল আলো পুবে-পশ্চিমে। গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম “সুন্দর”, সুন্দর হলো সে।’
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বনকিশোর একটি নিভৃত গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড়াল নদ। ধারেই বিশাল বটছায়ায় একটি পাঠাগার। ছায়ায় দাঁড়িয়ে নদের দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়। পাঠাগারে একটু বসলে চিন্তার খোরাক পাওয়া যায়। গ্রামের যুবক জাহিদুল ইসলাম তাঁর বন্ধুদের নিয়ে বছর দশেক আগে গ্রামটি বদলে দেওয়ার কাজে নেমেছিলেন। তখন গ্রামের মানুষ যেখানে-সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করত। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ছিল দু-একটি পরিবারে। রোগ-ব্যাধি গ্রাম ছাড়ে না। গ্রামের মানুষের ছিল না জ্ঞানচর্চার অভ্যাস। জাহিদুল ইসলামের দল কাজে হাত দিয়েই বুঝতে পারে, সবাই তাদের ভুল বুঝছে। কেউ এ কাজকে ভালো চোখে দেখছে না। সহযোগিতা করছে না। ভাবছে, এর মধ্যে নিশ্চয় কোনো স্বার্থ নিহিত রয়েছে। এবার জাহিদুল ইসলামের দল তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য কাজ করতে লাগল। অবশেষে তারা সফল হলো। সরকারি ঘোষণার আগেই তারা গ্রামকে শতভাগ স্যানিটেশনের আওতায় নিয়ে আসে। এ জন্য নিজ হাতে তারা তৈরি করেছে স্যানিটারি ল্যাট্রিন। রাস্তার ধারে বৃক্ষ রোপণ করেছে। মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গ্রামকে মাদকমুক্ত গ্রাম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। গড়ে তুলেছে পাঠাগার। যারা সুযোগ পায়, পাঠাগারে এসে বই পড়ে। আর যারা সময় করতে পারে না, তাদের বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়া হয়। আবার পড়া বই ফেরত নিয়ে আসা হয়। এখন এমন হয়েছে, গ্রামের সব ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব যেন জাহিদুল ইসলামের দলের কাঁধেই পড়েছে। গত বছর কয়েকজন অসাধু মাছ ব্যবসায়ী নদে মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। গ্রামের লোকেরা ছুটে আসে জাহিদুলের কাছে। নদের পানি ঠিক করে দিতে হবে। তারা গোসল করতে পারছে না। জাহিদুল ইসলামের দল উদ্যোগ নিল। নদ থেকে পালালেন দখলদার মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এই দলের সৌজন্যে গ্রামের মানুষের সবাই জানে তাদের নিজ নিজ রক্তের গ্রুপ। একজনের রক্তের প্রয়োজন হলে আরেকজন প্রস্তুত রয়েছে রক্ত দেওয়ার জন্য। রক্তের অভাবে এই গ্রামের কোনো মানুষ আর মরবে না। বলতে গেলে দিনে দিনে গ্রামটি একটি তীর্থস্থানে পরিণত হচ্ছে। গত বছর আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের নিয়ে এসেছিলেন রাজশাহীতে। শুনেই চলে আসেন গ্রামটি দেখতে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে অনেক্ষণ সময় কাটান।
জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভার বন্ধু। তিনি রাজশাহী বন্ধুসভার সঙ্গে রয়েছেন। বন্ধুসভার আদর্শকে তিনি বুকের ভেতর ধারণ করেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রথম যারা বিরোধিতা করেছে, জাহিদুল ইসলাম এখন তাদের একজন প্রিয় মানুষ। জাহিদুল ইসলামরা প্রমাণ করেছেন, হাত বাড়াতে জানলে শত্রু হয়ে উঠতে পারে বন্ধু। দেখার মধ্যেই সব। দেখতে জানলে অসুন্দর হয়ে উঠতে পারে সুন্দর। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, চুনি উঠল রাঙা হয়ে। আমি চোখ মেললুম আকাশে, জ্বলে উঠল আলো পুবে-পশ্চিমে। গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম “সুন্দর”, সুন্দর হলো সে।’
No comments