কালের পুরাণ-ফাতিমা ভুট্টোর চোখে একাত্তর by সোহরাব হাসান
এই প্রথম ভুট্টো পরিবারের একজন সদস্য স্বীকার করলেন ১৯৭১ সালে লাখ লাখ নারী দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলেন। তাঁর নাম ফাতিমা ভুট্টো। একাত্তরের ট্র্যাজেডির অন্যতম খলনায়ক পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাতনি।
ভুট্টো কিংবা তাঁর কন্যা বেনজির ভুট্টো কখনোই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা স্বীকার করেননি। সম্প্রতি পেঙ্গুইন/ভাইকিং থেকে প্রকাশিত হয় ফাতিমা ভুট্টোর আত্মজীবনীমূলক বই Songs of Blood and Sword, বাংলায় ‘রক্ত ও তরবারির গান’।
ফাতিমা ভুট্টো একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে সুসান ব্রাউনমিলারের Against Our Will: Men Women and Rape বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এতে লেখা হয়েছে ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যুদ্ধের কৌশল হিসেবে চার লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে। বাঙালি জনগোষ্ঠীকে শায়েস্তা করা ও দুর্দশায় ফেলার অংশ হিসেবেই তারা এ কাজ করেছে।’ ব্রাউন মিলার তাঁর বইয়ে ঢাকার ১৩ বছরের মেয়ে খাদিজার করুণ কাহিনী লিখেছেন, যার উদ্ধৃতি রয়েছে ফাতিমার বইয়েও।
‘খাদিজা যখন অপর চারটি মেয়ের সঙ্গে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছিল তখনই একদল পাকিস্তানি সেনা তাদের অপহরণ করে। পাঁচটি মেয়েরই ঠাঁই হয় মোহাম্মদপুরে অবস্থিত একটি সামরিক পতিতালয়ে। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস ধরে তাদের সেখানে আটক রাখা হয়। প্রতিদিন দুই সেনাসদস্য খাদিজার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। অন্যদের ওপর দশজন করে সেনা পীড়ন করত। খাদিজা যাতে চিৎকার দিতে না পারে সে জন্য দুর্বৃত্তরা তার মুখ বেঁধে রাখত। সেনাদের চাহিদা না মেটানো পর্যন্ত মেয়েদের প্রতিদিনের খাবারও বন্ধ থাকত।’
এরপর ফাতিমা লিখেছেন, নারীর ওপর এই অত্যাচারের পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনারা বুদ্ধিজীবী, গবেষক ও সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে। করাচিতে খবর ছড়িয়ে পড়ে, পাকিস্তানি সেনারা ঢাকায় ২০০ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। সিন্ধুতেও তারা নাকি একই ধরনের গণহত্যা চালানোর পরিকল্পনা এঁটেছিল। পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এ খবর জানতে পেরে সিন্ধুর দায়িত্বে নিয়োজিত জেনারেল গুলহাসানকে টেলিফোন করে বলেন, ‘আমি শুনেছি তোমরা পূর্ব পাকিস্তানে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছ। যদি সিন্ধুতেও তোমরা একই কৌশল নাও তাহলে আমিই হব দ্বিতীয় মুজিব এবং তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব।’
ফাতিমা ভুট্টো আরও লিখেছেন, একাত্তরে সেনাবাহিনীর অপকর্ম উদ্ঘাটনে প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে যে কমিশন গঠন করা হয়েছিল সেনাবাহিনী তার পুরো প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেয়নি। অনেক তথ্য তারা কাটছাঁট করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে একাত্তরে নিহতের সংখ্যা দুই লাখ বলে ধারণা করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, সেনা বাহিনী লাখ লাখ বেসামরিক মানুষকে হতাহত করেছে। যার সংখ্যা ৩০ লাখ ধারণা করা হয়। হামুদুর রহমান কমিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তান কর্মকর্তাদের দাবি নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে দুই লাখের কথা বলা হয়। তবে ফাতিমা ভুট্টো হামদুদুর রহমান কমিশন কিংবা ভারতের গবেষক শর্মিলী বসুর তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করেন। তিনি লিখেছেন, সংখ্যা নিয়ে যত বিতর্কই থাক না কেন বেসামরিক ব্যক্তি, বিশেষ করে নারীদের প্রতি পাকিস্তানি সেনা বাহিনী অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
তারা অস্বীকার করলেও সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের যত্রতত্র ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে । স্বাধীন বাংলাদেশেও তারা যথাযথ মর্যাদা পাননি। শেখ মুজিবুর রহমান লাঞ্ছিত নারীদের বীরাঙ্গনা হিসেবে সম্মানিত করতে চাইলেও তাঁরা সমাজ ও পরিবারে লজ্জা ও অপমান নিয়েই বেঁচে ছিলেন।
একাত্তরের রাজনৈতিক সংকটের বিবরণ দিতে গিয়ে ফাতিমা লিখেছেন, ইয়াহিয়া খানের রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার এক সপ্তাহ পর বাংলাদেশে অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করা হয় (এখানে তথ্যগত ভ্রান্তি আছে, তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষনা করেন ২৬ মার্চ ১৯৭১, বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা আসে ১০ এপ্রিল) । ইয়াহিয়া খান সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানান। এই যুদ্ধ বছর শেষে পাকিস্তানের ভাঙন কেবল অনিবার্য করেনি, ভারত ও পাকিস্তান আরেকবার সরাসরি যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে।
ফাতিমা অন্যান্য পাকিস্তানি লেখকের মতো, তাঁর বইয়ে ভুট্টোকে নায়ক বানানোর পাশাপাশি বাঙালি নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রতিনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেননি। তিনি লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন, রাজনৈতিক বঞ্চনার প্রতিকারের অংশ হিসেবেই ছয়দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচিতে এক মাথা এক ভোটের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া বাকি সবকিছু প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকার কথা রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে কেন্দ্রে যাতে পুঁজি স্থানান্তর না হতে পারে সে জন্য পৃথক আর্থিক নীতি ও মুদ্রাব্যবস্থা চালুর কথাও বলা হয়েছে এতে। অন্যদিকে কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, প্রাদেশিক সরকার বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে এবং বিদেশি মুদ্রার ওপরও তাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে। চূড়ান্তভাবে প্রদেশগুলোর নিজস্ব সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী থাকার কথাও বলা হয়েছে। অবশ্যই, ভদ্রভাবে আওয়ামী লীগ স্বায়ত্তশাসনের অধিক, তাদের নিজস্ব দেশই দাবি করেছিল।
ফাতিমা আরও লিখেছেন, মুজিব চেয়েছিলেন তাঁর দল এককভাবে সংবিধান রচনা করবে এবং তাঁকে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। সেনাবাহিনী যদিও ভুট্টোকে আওয়ামী লীগের সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তাতে তিনি (ভুট্টো) আশ্বস্ত হতে পারেননি।
এরপর ফাতিমার বিশ্লেষণ হচ্ছে, সেনাবাহিনী এই দুজনকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে এবং যাতে শান্তিপূর্ণ কোনো সমাধান না হয় তা নিশ্চিত করেছে। তাঁর ভাষায়, এরপর ‘সারা পূর্ব পাকিস্তানে দাঙ্গা ও রক্তের বন্যা বইতে লাগল।’
বইটি মূলত পাকিস্তানের রাজনীতি, ভুট্টো পরিবারের দ্বন্দ্ব-কলহ ও ক্ষমতার লড়াই নিয়ে আবর্তিত। প্রসঙ্গ ক্রমে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথাও। বাঙালিদের প্রতি অধিকাংশ পাকিস্তানির যে বিদ্বেষভাব রয়েছে, ফাতিমা ভুট্টোর লেখায় তার ছাপ নেই, বরং তাদের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি লক্ষ্য করা গেছে।
তা হলে কি নতুন প্রজন্মের পাকিস্তানিদের চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে?
সোহরাব হাসান: কবি ও সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net
ফাতিমা ভুট্টো একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে সুসান ব্রাউনমিলারের Against Our Will: Men Women and Rape বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এতে লেখা হয়েছে ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যুদ্ধের কৌশল হিসেবে চার লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে। বাঙালি জনগোষ্ঠীকে শায়েস্তা করা ও দুর্দশায় ফেলার অংশ হিসেবেই তারা এ কাজ করেছে।’ ব্রাউন মিলার তাঁর বইয়ে ঢাকার ১৩ বছরের মেয়ে খাদিজার করুণ কাহিনী লিখেছেন, যার উদ্ধৃতি রয়েছে ফাতিমার বইয়েও।
‘খাদিজা যখন অপর চারটি মেয়ের সঙ্গে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছিল তখনই একদল পাকিস্তানি সেনা তাদের অপহরণ করে। পাঁচটি মেয়েরই ঠাঁই হয় মোহাম্মদপুরে অবস্থিত একটি সামরিক পতিতালয়ে। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস ধরে তাদের সেখানে আটক রাখা হয়। প্রতিদিন দুই সেনাসদস্য খাদিজার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। অন্যদের ওপর দশজন করে সেনা পীড়ন করত। খাদিজা যাতে চিৎকার দিতে না পারে সে জন্য দুর্বৃত্তরা তার মুখ বেঁধে রাখত। সেনাদের চাহিদা না মেটানো পর্যন্ত মেয়েদের প্রতিদিনের খাবারও বন্ধ থাকত।’
এরপর ফাতিমা লিখেছেন, নারীর ওপর এই অত্যাচারের পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনারা বুদ্ধিজীবী, গবেষক ও সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে। করাচিতে খবর ছড়িয়ে পড়ে, পাকিস্তানি সেনারা ঢাকায় ২০০ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। সিন্ধুতেও তারা নাকি একই ধরনের গণহত্যা চালানোর পরিকল্পনা এঁটেছিল। পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এ খবর জানতে পেরে সিন্ধুর দায়িত্বে নিয়োজিত জেনারেল গুলহাসানকে টেলিফোন করে বলেন, ‘আমি শুনেছি তোমরা পূর্ব পাকিস্তানে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছ। যদি সিন্ধুতেও তোমরা একই কৌশল নাও তাহলে আমিই হব দ্বিতীয় মুজিব এবং তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব।’
ফাতিমা ভুট্টো আরও লিখেছেন, একাত্তরে সেনাবাহিনীর অপকর্ম উদ্ঘাটনে প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে যে কমিশন গঠন করা হয়েছিল সেনাবাহিনী তার পুরো প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেয়নি। অনেক তথ্য তারা কাটছাঁট করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে একাত্তরে নিহতের সংখ্যা দুই লাখ বলে ধারণা করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, সেনা বাহিনী লাখ লাখ বেসামরিক মানুষকে হতাহত করেছে। যার সংখ্যা ৩০ লাখ ধারণা করা হয়। হামুদুর রহমান কমিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তান কর্মকর্তাদের দাবি নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে দুই লাখের কথা বলা হয়। তবে ফাতিমা ভুট্টো হামদুদুর রহমান কমিশন কিংবা ভারতের গবেষক শর্মিলী বসুর তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করেন। তিনি লিখেছেন, সংখ্যা নিয়ে যত বিতর্কই থাক না কেন বেসামরিক ব্যক্তি, বিশেষ করে নারীদের প্রতি পাকিস্তানি সেনা বাহিনী অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
তারা অস্বীকার করলেও সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের যত্রতত্র ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে । স্বাধীন বাংলাদেশেও তারা যথাযথ মর্যাদা পাননি। শেখ মুজিবুর রহমান লাঞ্ছিত নারীদের বীরাঙ্গনা হিসেবে সম্মানিত করতে চাইলেও তাঁরা সমাজ ও পরিবারে লজ্জা ও অপমান নিয়েই বেঁচে ছিলেন।
একাত্তরের রাজনৈতিক সংকটের বিবরণ দিতে গিয়ে ফাতিমা লিখেছেন, ইয়াহিয়া খানের রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার এক সপ্তাহ পর বাংলাদেশে অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করা হয় (এখানে তথ্যগত ভ্রান্তি আছে, তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষনা করেন ২৬ মার্চ ১৯৭১, বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা আসে ১০ এপ্রিল) । ইয়াহিয়া খান সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানান। এই যুদ্ধ বছর শেষে পাকিস্তানের ভাঙন কেবল অনিবার্য করেনি, ভারত ও পাকিস্তান আরেকবার সরাসরি যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে।
ফাতিমা অন্যান্য পাকিস্তানি লেখকের মতো, তাঁর বইয়ে ভুট্টোকে নায়ক বানানোর পাশাপাশি বাঙালি নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রতিনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেননি। তিনি লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন, রাজনৈতিক বঞ্চনার প্রতিকারের অংশ হিসেবেই ছয়দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচিতে এক মাথা এক ভোটের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া বাকি সবকিছু প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকার কথা রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে কেন্দ্রে যাতে পুঁজি স্থানান্তর না হতে পারে সে জন্য পৃথক আর্থিক নীতি ও মুদ্রাব্যবস্থা চালুর কথাও বলা হয়েছে এতে। অন্যদিকে কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, প্রাদেশিক সরকার বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে এবং বিদেশি মুদ্রার ওপরও তাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে। চূড়ান্তভাবে প্রদেশগুলোর নিজস্ব সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী থাকার কথাও বলা হয়েছে। অবশ্যই, ভদ্রভাবে আওয়ামী লীগ স্বায়ত্তশাসনের অধিক, তাদের নিজস্ব দেশই দাবি করেছিল।
ফাতিমা আরও লিখেছেন, মুজিব চেয়েছিলেন তাঁর দল এককভাবে সংবিধান রচনা করবে এবং তাঁকে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। সেনাবাহিনী যদিও ভুট্টোকে আওয়ামী লীগের সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তাতে তিনি (ভুট্টো) আশ্বস্ত হতে পারেননি।
এরপর ফাতিমার বিশ্লেষণ হচ্ছে, সেনাবাহিনী এই দুজনকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে এবং যাতে শান্তিপূর্ণ কোনো সমাধান না হয় তা নিশ্চিত করেছে। তাঁর ভাষায়, এরপর ‘সারা পূর্ব পাকিস্তানে দাঙ্গা ও রক্তের বন্যা বইতে লাগল।’
বইটি মূলত পাকিস্তানের রাজনীতি, ভুট্টো পরিবারের দ্বন্দ্ব-কলহ ও ক্ষমতার লড়াই নিয়ে আবর্তিত। প্রসঙ্গ ক্রমে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথাও। বাঙালিদের প্রতি অধিকাংশ পাকিস্তানির যে বিদ্বেষভাব রয়েছে, ফাতিমা ভুট্টোর লেখায় তার ছাপ নেই, বরং তাদের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি লক্ষ্য করা গেছে।
তা হলে কি নতুন প্রজন্মের পাকিস্তানিদের চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে?
সোহরাব হাসান: কবি ও সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net
No comments