বিদ্যুৎ নেই, তবু ৭ হাজার কিলোমিটার নতুন লাইন by অরুণ কর্মকার
ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি শহর-বন্দরে এক ঘণ্টা অন্তর লোডশেডিং চলছে। কোথাও কোথাও এক ঘণ্টার কম ব্যবধানেও লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে বিদ্যুৎ কখন আসবে, কখন যাবে তার কোনো ঠিক নেই।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদনস্বল্পতাই এর কারণ। তবে গ্রাহককে দেওয়ার মতো বিদ্যুৎ উৎপাদিত না হলেও নতুন নতুন বিতরণ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণে এসব লাইন করা হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে খুঁটি, তার প্রভৃতি কেনাবেচার বাণিজ্য। বিদ্যুৎ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এ খবর জানা গেছে।
বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ অন্তত ৪০ শতাংশ কম। ফলে শহর-বন্দরে সকাল-সন্ধ্যা, দিন-রাত নির্বিশেষে চলছে লোডশেডিং। এর প্রভাব পড়ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও পানি সরবরাহের ওপর। গ্রামাঞ্চলে একটানা ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংও বিরল ঘটনা নয়। এমনকি কখনো কখনো সারা দিন বা একাধিক দিনও বিদ্যুৎহীন থাকছে কোনো কোনো এলাকা।
বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির এই করুণ হাল হলেও গ্রামাঞ্চলে নতুন নতুন বিতরণ লাইন স্থাপনের কাজ সরকারের শাসনমেয়াদ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। বিতরণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডই (আরইবি) চলতি অর্থবছরের মধ্যে সাত হাজার কিলোমিটার লাইন স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ গত অর্থবছরে আরইবি নতুন লাইন স্থাপন করেছে মাত্র ৩০৭ কিলোমিটার।
আরইবি ছাড়া পঞ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডেরও (পিডিবি) কিছু বিতরণ লাইন স্থাপন ও পুনঃ স্থাপনের কাজ চলছে। অথচ এই প্রতিটি কোম্পানির বিদ্যমান লাইনে সংযুক্ত গ্রাহকেরা লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে আরইবির ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে সাতটিই হচ্ছে বিতরণ লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প। অথচ আরইবির প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার কিলোমিটার বিদ্যমান বিতরণ লাইনের অন্তত এক-চতুর্থাংশ বর্তমানে থাকছে বিদ্যুৎহীন। অনেক এলাকায় লাইন স্থাপন করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের উপযোগী (এনার্জাইজড) করা হচ্ছে না সরবরাহ কম থাকায়।
মন্ত্রণালয়গুলোর সূত্র জানায়, এর পরও নতুন বিতরণ লাইন স্থাপনের প্রধান কারণ রাজনৈতিক। প্রতিটি সরকারের মতো বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মন্ত্রী ও সাংসদেরা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ ও বিতরণ লাইন স্থাপনের জন্য তদবির শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এসব লাইন হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে যে সাত হাজার কিলোমিটার লাইন স্থাপন করা হচ্ছে তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে দুই হাজার কিলোমিটার; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ মিলে দেড় হাজার; রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে দেড় হাজার; বরিশাল বিভাগে ৫০০; খুলনা বিভাগে এক হাজার ৪০০ এবং গোপালগঞ্জে ১০০ কিলোমিটার।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের একজন সাংসদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাইন তো হতিছে। কারেন্টের দেহা মিলবেনে কবে কে জানে।’ তিনি বলেন, তাঁরাই তদবির করে লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা করে এখন নিজেরাই যদি এর যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে তো মানুষ বিভ্রান্ত হবে। তাই প্রকৃত ঘটনা বুঝলেও প্রকাশ্যে কিছু বলা যায় না। তবে লাইন যখন হচ্ছে, বিদ্যুৎ একদিন পাওয়া যাবেই—এই তাঁদের আশা।
বিভিন্ন স্তরের আরও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি প্রথম আলোকে বলেন, অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে জনগণকে বিদ্যুৎ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি সরকারের ছিল। বিদ্যুৎ তো এখনো দেওয়া যাচ্ছে না। লাইন স্থাপন করায় জনগণ অন্তত মনে করবে যে বিদ্যুৎ আসছে।
এদিকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও পিডিবির সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন সর্বোচ্চ প্রায় সাত হাজার মেগাওয়াট প্রকৃত চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদিত হচ্ছে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এর মধ্যে আবার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি ব্যবহূত হয় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো (অক্সিলারি) ও সঞ্চালন ব্যবস্থার পদ্ধতিগত লোকসানে। অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ হচ্ছে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াটের মতো। বাকি তিন হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট ‘ডিমান্ড সাইড ম্যানেজমেন্ট (ডিএসএম)’-এর নামে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
এই ডিএসএমের মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখা, রাত আটটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করা, ঢাকার একেক এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি একেক দিন ভাগ করে দেওয়া প্রভৃতি। এর পরও যে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে, তা পোষানো হয় ঘন ঘন লোডশেডিং করে।
বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ অন্তত ৪০ শতাংশ কম। ফলে শহর-বন্দরে সকাল-সন্ধ্যা, দিন-রাত নির্বিশেষে চলছে লোডশেডিং। এর প্রভাব পড়ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও পানি সরবরাহের ওপর। গ্রামাঞ্চলে একটানা ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংও বিরল ঘটনা নয়। এমনকি কখনো কখনো সারা দিন বা একাধিক দিনও বিদ্যুৎহীন থাকছে কোনো কোনো এলাকা।
বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির এই করুণ হাল হলেও গ্রামাঞ্চলে নতুন নতুন বিতরণ লাইন স্থাপনের কাজ সরকারের শাসনমেয়াদ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। বিতরণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডই (আরইবি) চলতি অর্থবছরের মধ্যে সাত হাজার কিলোমিটার লাইন স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ গত অর্থবছরে আরইবি নতুন লাইন স্থাপন করেছে মাত্র ৩০৭ কিলোমিটার।
আরইবি ছাড়া পঞ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডেরও (পিডিবি) কিছু বিতরণ লাইন স্থাপন ও পুনঃ স্থাপনের কাজ চলছে। অথচ এই প্রতিটি কোম্পানির বিদ্যমান লাইনে সংযুক্ত গ্রাহকেরা লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে আরইবির ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে সাতটিই হচ্ছে বিতরণ লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প। অথচ আরইবির প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার কিলোমিটার বিদ্যমান বিতরণ লাইনের অন্তত এক-চতুর্থাংশ বর্তমানে থাকছে বিদ্যুৎহীন। অনেক এলাকায় লাইন স্থাপন করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের উপযোগী (এনার্জাইজড) করা হচ্ছে না সরবরাহ কম থাকায়।
মন্ত্রণালয়গুলোর সূত্র জানায়, এর পরও নতুন বিতরণ লাইন স্থাপনের প্রধান কারণ রাজনৈতিক। প্রতিটি সরকারের মতো বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মন্ত্রী ও সাংসদেরা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ ও বিতরণ লাইন স্থাপনের জন্য তদবির শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এসব লাইন হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে যে সাত হাজার কিলোমিটার লাইন স্থাপন করা হচ্ছে তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে দুই হাজার কিলোমিটার; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ মিলে দেড় হাজার; রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে দেড় হাজার; বরিশাল বিভাগে ৫০০; খুলনা বিভাগে এক হাজার ৪০০ এবং গোপালগঞ্জে ১০০ কিলোমিটার।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের একজন সাংসদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাইন তো হতিছে। কারেন্টের দেহা মিলবেনে কবে কে জানে।’ তিনি বলেন, তাঁরাই তদবির করে লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা করে এখন নিজেরাই যদি এর যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে তো মানুষ বিভ্রান্ত হবে। তাই প্রকৃত ঘটনা বুঝলেও প্রকাশ্যে কিছু বলা যায় না। তবে লাইন যখন হচ্ছে, বিদ্যুৎ একদিন পাওয়া যাবেই—এই তাঁদের আশা।
বিভিন্ন স্তরের আরও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি প্রথম আলোকে বলেন, অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে জনগণকে বিদ্যুৎ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি সরকারের ছিল। বিদ্যুৎ তো এখনো দেওয়া যাচ্ছে না। লাইন স্থাপন করায় জনগণ অন্তত মনে করবে যে বিদ্যুৎ আসছে।
এদিকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও পিডিবির সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন সর্বোচ্চ প্রায় সাত হাজার মেগাওয়াট প্রকৃত চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদিত হচ্ছে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এর মধ্যে আবার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি ব্যবহূত হয় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো (অক্সিলারি) ও সঞ্চালন ব্যবস্থার পদ্ধতিগত লোকসানে। অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ হচ্ছে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াটের মতো। বাকি তিন হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট ‘ডিমান্ড সাইড ম্যানেজমেন্ট (ডিএসএম)’-এর নামে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
এই ডিএসএমের মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখা, রাত আটটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করা, ঢাকার একেক এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি একেক দিন ভাগ করে দেওয়া প্রভৃতি। এর পরও যে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে, তা পোষানো হয় ঘন ঘন লোডশেডিং করে।
No comments