অর্থনৈতিক উন্নয়ন-রাজনীতিতে স্থিতিশীলতার তাগিদ
অর্থনীতিতে উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার তাগিদ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ বা সিপিডি। মর্যাদার এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে তাদের মতামত শনিবার সরকার ও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছে।
চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার কতটা হবে তা নিয়ে সরকারের হিসাবের সঙ্গে এ সংস্থার মতের অমিল রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির হার যে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক_ সেটা নিয়ে সিপিডি কিংবা অর্থনীতির চর্চার সঙ্গে যুক্ত কারও দ্বিমত রয়েছে বলে মনে হয় না। এটাও স্বীকৃত যে, এ হার আরও বাড়ানো সম্ভব। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যে মন্দার ধারা, বাংলাদেশ তার ঝাপটা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে এবং তাতে কিছু সাফল্যও রয়েছে। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে, মূল্যস্ফীতির উচ্চ হারের অন্যতম কারণ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, খাদ্যশস্য, চিনিসহ আরও কয়েক ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের চড়া মূল্য। এভাবে আমরা মূল্যস্ফীতিও আমদানি করছি বলে অভিমত রয়েছে। সরকার চাইলেই যে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, সেটা বলা চলে না। তবে অর্থনৈতিক নীতি-কৌশলগুলোকে দূরদর্শিতা ও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা গেলে পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। একই সঙ্গে চাই নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি এবং স্বল্প ও মধ্য আয়ের জনগোষ্ঠীর আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা। এ জন্য অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো। এ জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে। গত দুই দশকে রাজপথ বারবার উত্তপ্ত হয়েছে। সরকারের পতন ঘটানোসহ বর্িিভন্ন দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য নির্বাচনের যে বিকল্প নেই, সেটাও স্বীকৃত। হরতাল-অবরোধে জনদুর্ভোগ বাড়ে, অর্থনীতিরও ক্ষতি হয় নিদারুণ, কিন্তু তাতে সরকারের পতন ঘটে না। এ পথ কাঙ্ক্ষিতও নয়। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নাকি 'শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের' ব্যবস্থাপনায় দলীয় সরকারকে ক্ষমতায় রেখে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। এর পক্ষে-বিপক্ষে যারাই থাকুক, সবাই কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিটিই সামনে আনছেন। আলোচনার মাধ্যমে এর ফয়সালা সূত্র পাওয়া যাবে, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সবারও প্রত্যাশা অভিন্ন। এ বছরে আমাদের স্বাধীনতার চার দশক পূর্ণ হয়েছে। শাসন পদ্ধতি নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এ সময়ে কম হয়নি। কিন্তু সবাই এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে, গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্রের শর্তই হচ্ছে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও সহিষুষ্ণতার মনোভাবের প্রকাশ। এ পথেই রাজনৈতিক প্রশ্নে মতপার্থক্যের নিরসন ঘটাতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টির কাজেও তা সহায়ক হবে। রাজনীতির অঙ্গন সুস্থির থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়, এ অভিজ্ঞতা বারবার হয়েছে। রাজনীতিকরা বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন, এটাই কাম্য।
No comments